রচনা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
রচনা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৯

পরিবেশ উন্নয়নে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা বাংলা রচনা







ভূমিকা :– বানিজ্যিক বাজার ও কাঁচা মালের প্রভূত সম্ভাবনার ক্ষেত্র ভারতবর্ষে থাকায় ভারতবর্ষ বিদেশিদের দ্বারা বারবার লুণ্ঠিত হয়েছে । বর্তমানে বিশ্বয়নের কুফলের ফলে সেই লুণ্ঠনের পরিমাণ আরো বেড়েছে । যে ভারতের পরিবেশ ও সংস্কৃতি বিশ্বের আঙিনায় নিজেকে প্রমাণ করে নিজেদের গৌরব প্রতিষ্ঠা করেছে , সেই পরিবেশ ও সংস্কৃতি আজ লুণ্ঠিত । আমাদের দেশের নিমগাছ , হলুদগাছ , বাসমতি চাল , অবিশ্বাস্য হলেও আর আমাদের নেই , এমনকি আমাদের দেশের মাটি আজ অপরের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত । ভারতের আকাশে , বাতাসে দূষণের ছড়াছড়ি । ভারতের মাটিতে যে চাষ হয় তা নিয়ন্ত্রণ করে ধনী দেশ , আর সেই সব ধনী দেশ যে সব মারাত্মক গ্যাস উৎপাদন করে, তা পৌঁছে যায় আমাদের মতো গরীব দেশগুলিতে । সেই প্রেক্ষিতে পরিবেশ উন্নয়নে দেশের ছাত্র সমাজের একটি বিশিষ্ঠ ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না ।



আইনগত দিক :– ভারতীয় সংবিধানের ৫১ ( ক ) ধারায় ভারতীয় নাগরিকদের ভারতীয় পরিবেশ রক্ষার কথা বলা হয়েছে । ছাত্র ছাত্রী ভারতীয় নাগরিক হিসেবে সেই দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ । আসলে লোকসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় নাগরিকের চেতনা ব্যাক্তিগত স্বার্থ দেখতে গিয়ে জাতীয়  স্বার্থ তথা পরিবেশগত দায়বদ্ধতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে , দেখা দিচ্ছে নানান দূষণ । সেক্ষেত্রে সচেতন নাগরিক হিসেবে পরিবেশ রক্ষায় ও উন্নয়নে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য ।



পরিবেশ সচেতনায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা :– সচেতনতাই পারে যে কোন উন্নয়নকে গতিশীল করতে । সেই উন্নয়নে ছাত্র ছাত্রীকেই অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে । সেজন্য যা করতে হবে তাহলো – ক) পারিপাশ্বিক পরিবেশ সমন্ধে নিজেদের সচেতন হওয়া । খ) জন সাস্থ্য সম্পকে অবহিত হয়ে , সেই বিষয়ে প্রচার করা । গ) সবরকম দূষণ ও তার কারন সমন্ধে পারস্পরিক আলোচনা করে যথাসম্ভব তা বন্ধ করার জন্যে কর্মসূচি গ্রহণ । ঘ) নিজেদের বাড়িতে পয়ঃ প্রণালী ঠিক রাখা । ঙ) যে সব কারণে ব্যাক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি বিঘ্নিত হয় সেসব কাজ না করা । আহার , নিদ্রা , পরিষ্কার – পরিছন্নতা , বিষয়ে সচেতন হওয়া । সুষম খাদ্য সমন্ধে চেতনা গড়ে তোলা । চ ) অবৈজ্ঞানিক মানসিকতা ও কুসংস্কার দূরীকরনে সচেষ্ট হওয়া । ছ) ঘর গৃহস্থালির বজ্য পদার্থ যেখানে সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা । জ) হাসপাতাল , নার্সিংহোম বি, স্কুল , কলেজ প্রভুতি জায়গায় সবসময় পরিচ্ছন্ন রাখা । ঝ) ধূমপান , মদ্যপান , ড্রাগ সেবন প্রভুতি থেকে বিরত থাকা । স্কুল , কলেজ , রাস্তাঘাট , পার্ক ,বাস , ট্রাম , ট্রেন , প্রভুতি জায়গায় খাবারের পরিত্যক্ত প্যাকেট না ফেলা । বাড়ির সংলগ্ন পরিবেশের পক্ষে উপযোগী – গাছ লাগানো  ও পুরানো গাছ না কাটা । রোগ প্রতিরোধে গাছপালার যে ভূমিকা আছে , সেই সব গাছ যে আমদের বন্ধু তা জেনে , সবাইকে জানানো ।



প্রতিবন্ধীদের প্রতি সামাজিক দায়িত্ব বাংলা রচনা






ভূমিকা: বৈচিত্র্যময় উপাদান নিয়ে মানব সমাজ গঠিত। সমাজের সদস্যদের মধ্যে বৈচিত্র্য আরো বেশি। সমাজে বসবাসরত মানুষদের মধ্যে পৃথক পৃথক সত্ত্বা বিদ্যমান। অভ্যন্তরীণ গুণাগুণ, দোষ-ত্রুটি ছাড়া বাহ্যিকভাবেও রয়েছে অনেক পার্থক্য। মানুষের মধ্যে কেউ লম্বা, কেউ খাটো, কেউ ফর্সা, কেউ কালো আবার অনেকেই আছে এমন যাদের মধ্যে কারো হাত নেই কারো পা নেই, কারও বা দৃষ্টি শক্তি নেই। আবার অনেকে কানে শোনে না কথাও বলতে পারে না। সমাজে এসব মানুষ হলো ব্যতিক্রম। এদেরকে সাধারণভাবে প্রতিবন্ধী বলা হয়।

প্রতিবন্ধী কারা: স্বাভাবিক মানুষের বাইরে যেসব মানুষের শারীরিক ও মানসিক ত্রুটির কারণে জীবনের স্বাভাবিক গতি বাধাগ্রস্ত তাদের বলা হয় প্রতিবন্ধী। অন্যভাবে বলা যায় জীবনে চলার পথে স্বাভাবিক কাজকর্ম ও চিন্তা করতে যাদের প্রতিবন্ধকতা আছে তাদেরকেই প্রতিবন্ধী বলা হয়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO)-এর মতে “একজন প্রতিবন্ধী হচ্ছেন তিনি, যার স্বীকৃত শারীরিক ও মানসিক ক্ষতিগ্রস্ততার দরুন যথোপযুক্ত কর্মসংস্থানের প্রত্যাশা কমে যায়।” জাতিসংঘের প্রদত্ত সংজ্ঞানুযায়ী প্রতিবন্ধীতা হলো এমন কোনো বাঁধা বা সীমাবদ্ধতা (শারীরিক বা মানসিক ক্ষতিগ্রস্ততার কারণে উদ্ভুত), যা একজন মানুষের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে পুর্ণভাবে ব্যাহত করে। আবার অন্যভাবে বলা যায়, কতিপয় প্রতিবন্ধকতার কারণে ব্যক্তি যদি সামাজিক নেতিবাচক মনোভাব ও কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতার দরুন স্বাভাবিক জীবনযাপনে বাঁধার সম্মুখীন হয় তাহলে তাকে প্রতিবন্ধী বলা হয়। মোট কথা, বয়স, লিঙ্গ, জাতি, সংস্কৃতি বা সামাজিক অবস্থান অনুযায়ী আর দশজন যে কাজগুলো করতে পারে অসামর্থ্যরে কারণে সে কাজগুলো প্রাত্যহিক জীবনে করতে না পারার অবস্থাই হলো প্রতিবন্ধীতা।

প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা: UNDP (United Nations Development Programm) এর মতে, বর্তমান বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫% কোনো না কোনো ভাবে প্রতিবন্ধীতার শিকার। ২০১৩ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর জরিপে পৃথিবীতে মোট জনসংখ্যার ১০ ভাগ প্রতিবন্ধী। সেই হিসেবে বাংলাদেশে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ১ কোটি ৬০ লাখ। পুরুষ-নারী প্রতিবন্ধীর অনুপাত ৪৮ঃ৫২। শারীরিক প্রতিবন্ধী ৩৮ লাখ, মানসিক প্রতিবন্ধী ৪২ লাখ, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ৩৩ লাখ, শ্রবণ ও অন্যান্য প্রতিবন্ধী ২৫ লাখ। সিএসআইডি পরিচালিত গবেষণায় প্রকাশ করা হয়েছে যে, দেশের ৪০.৯৫ ভাগ নারী ও কিশোরী প্রতিবন্ধীতার শিকার জন্মগত কারণে, ৩.৩২ ভাগ শিকার হয় ভুল ও অপচিকিৎসায়। এ ছাড়া বিভিন্ন অসুখ, জ্বর, পোড়া ও দুর্ঘটনায় ৫৫.৭৪ ভাগ মানুষ প্রতিবন্ধী হয়ে যায়।

প্রতিবন্ধীদের সামাজিক অবস্থান: সমাজে প্রতিবন্ধীদের অবস্থান অত্যন্ত অবহেলিত। পরিবার থেকে শুরু করে সব স্থানেই প্রতিবন্ধীদেরকে খাটো করে দেখা হয়। আর দশজন স্বাভাবিক মানুষের মতো প্রতিবন্ধীদের সামাজিক সব অধিকার ভোগ করার কথা থাকলেও বরাবরই তারা তা থেকে বঞ্চিত। আত্মীয়-স্বজন সামাজিক মান মর্যাদার ভয়ে তাদের দূরে সরিয়ে রাখেন। সমাজে তাদের অবাধ চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। শিক্ষা, চাকরি, কর্মসংস্থান, বিয়ে, স্বাস্থ্যসেবা প্রভৃতি ক্ষেত্রে তারা বৈষম্যের শিকার হয়। বিভিন্ন ধরণের বৈষম্যের শিকার হয়ে তারা সমাজে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করতে পারে না।

পরিবারের মধ্যে প্রতিবন্ধীদের অবস্থান: যেকোনো মানুষের সামাজিক অবস্থান তৈরি হয় পরিবার থেকেই। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে একথা আরো বেশি প্রযোজ্য। আমাদের দেশের প্রতিবন্ধীরা কোনো না কোনোভাবে পরিবারে অবহেলার শিকার। তবে কোনো পরিবারে বেশি, কোনো পরিবারে কম। অবহেলার কারণে প্রতিবন্ধীতাকে অভিশাপ মেনে নিয়ে তারা অবহেলিত বঞ্চিত জীবনযাপনে বাধ্য হয়। দরিদ্র পরিবারগুলোতে প্রতিবন্ধীদের অবস্থা আরো করুণ। অনেক সময় তাদের অনাহার অর্ধাহারে থেকে দিন পার করতে হয়। অধিকাংশ পরিবারেই প্রতিবন্ধীদের বোঝা হিসেবে গণ্য করা হয়।

প্রতিবন্ধীদের প্রতি দায়িত্ব: প্রতিবন্ধীরা আমাদের সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদেরকে অবহেলায় পিছনে ফেলে রেখে সমাজ এগিয়ে যাবে তা কখনই সম্ভব নয়। সমাজের অংশ হিসেবে তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। এ দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে পালন করলে প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয় বরং সম্পদে পরিণত হবে। নিন্মে প্রতিবন্ধীদের প্রতি দায়িত্বগুলো আলোচনা করা হলো-

দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন: প্রতিবন্ধীদের প্রতি দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রথম করণীয় হলো তাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। অনেক বাবা মা আছেন যারা তাদের প্রতিবন্ধী শিশুদের বাইরে আনতে এবং অন্য শিশুদের সাথে মিশতে দিতে লজ্জা পান। কিন্তু আমাদেরকে এ ধরণের মন মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে।

প্রতিবন্ধীদেরকে সামাজিক স্বীকৃতিদান:প্রতিবন্ধীদেরকে সমাজের অংশ হিসেবে মেনে নিতে হবে। সামগ্রিক সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে প্রতিবন্ধীদের স্বীকৃতি দিতে হবে। সমাজের যাবতীয় সুযোগ সুবিধা ভোগের ক্ষেত্রে তাদেরকে গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে তাদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

শিক্ষার ব্যবস্থা: বাংলাদেশে ৯৭% শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও মোট প্রতিবন্ধী শিশুদের মাত্র ১১% স্কুলে ভর্তির সুযোগ পায়। যা সময়ের প্রেক্ষাপটে খুবই নগণ্য। এ জন্য প্রতিবন্ধীদের প্রতিবন্ধীতার ভিত্তিতে শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে দায়িত্ব: বেশির ভাগ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল এমন কি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজের মতো চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধীদের জন্য হুইল চেয়ার প্রবেশ করার মতো ঢালু পথ নেই। যা খুবই দুঃখজনক। প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসা দেশের সর্বত্র বিনামূল্যে করা, চিকিৎসকদের চেম্বারে দেখানোর ক্ষেত্রে, তাদেরকে আগে সুযোগ করে দেয়া আমাদের সকলের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব।

প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা: ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রতিবন্ধীদের জন্য মাসিক ২০০ টাকা হারে বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করে। কিন্তু এ ভাতা বর্তমান সময়ের তুলনায় অনেক কম। তাই এ ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করে প্রতিবন্ধীদেরকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতার পরিধি বাড়াতে হবে।

চলার পথে সহায়তা করা: আমাদের চলার পথে বিভিন্ন প্রতিবন্ধী দেখতে পাই। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদেরকে রাস্তা পারাপারে, শারীরিক প্রতিবন্ধীদেরকে হাত ধরে বা অন্যভাবে সহযোগিতা করা আমাদের সামাজিক দায়িত্ব। এছাড়া আরো কিছু দায়িত্ব হলো-

- সামাজিক গণসচেতনতা বৃদ্ধির কর্মসূচী গ্রহণ করতে হবে।

- প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানে আলাদা শিল্প কারখানা স্থাপন করা উচিত।

- শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের বিশেষ সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে।

- প্রতিবন্ধীদের বিনোদনের জন্য তাদের উপযোগী খেলাধুলা বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে।

- চাকরি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী কোটা বৃদ্ধি করা উচিত।

- প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষায় বিশেষ আইন প্রণয়ন করে তার যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে।

উপসংহার: যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সমাজে অবহেলিত ও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বঞ্চিত। অনেকের পারিবারিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। জীবনযাত্রার মান অনেক নিম্ন। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে এতো বিপুল সংখ্যক প্রতিবন্ধীকে পুনর্বাসন করা অত্যন্ত দূরহ। তাই সমাজের সচেতন সকল স্তরের বিশেষ করে বিত্তবান মানুষদের প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে এগিয়ে আসা উচিত।




একটি ছুটির দিন বাংলা রচনা






ভূমিকা :– নিত্য – নৈমিত্তিক একঘেয়ে জীবনের মাঝে একটি ছুটির দিন আনন্দের দিন , বিনোদনের দিন , কর্মব্যস্ততার মাঝে ক্লান্তি অপনোদনের দিন । ছুটির আনন্দ মুক্তির আনন্দ । তাই সারা সপ্তাহের ক্লান্তির ভাব নিঃশেষে হালকা করে নেবার জন্য ছুটির প্রয়োজন ও আয়োজন । তবু ছুটির একটা অন্য মজা আছে । অবশ্য সেই ছুটি যদি হয় ওট অতিরিক্ত সংযোজন , তবেই । হটাৎ করে অপ্রত্যাশিত ভাবেই ছুটিটা পেয়ে গেলাম । মা - বাবাও যান অসুস্থ এক বন্ধুকে দেখতে । অথাৎ ষোলো আনা ছুটি ।




গুরুত্ব :– ছুটির দিন মানেই সবার সঙ্গে জমিয়ে গল্প করার দিন , প্রিয় শখের চর্চার দিন , ভালোভাবে সবাইকে নিয়ে ভোজনের দিন , সেই সঙ্গে অলস ভাবে সময় কাটাবারও দিন । আসলে ছুটি মানেই নির্দিষ্ট নিয়ম বন্ধ্ণের বাইরে নিজের মতো করে স্বাধীন বিচরণের এক অফুরন্ত অবসর । সেদিন মানুষের কাছে তা হয়ে ওঠে আনন্দের দিন ।



বর্ণনা :– সাত সকালেই লেখাপড়া সঙ্গো করে জানালার ধারে বসলাম । মেঘ না চাইতেই জল । দিনটা আমারই জন্য কিনা কে জানে । জানালার ধারে বসতেই আরম্ভ হয় ঝরঝর ঝিরিঝিরি অকাল বর্ষণ । দমকা একটা হাওয়া এসে হটাৎ বৃষ্টি ধারায় আমাকে ভিজিয়ে দিয়ে যায় । হটাৎ মনে পড়ে যায় দুটো পংক্তি – " ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এল , বৃষ্টি এল খাতার পর । "
অমনি উপন্যাসের আবহের মতোই বাজ পড়ে কাছে কোথাও । বৃষ্টির অবিরাম ধারাপাত, সঙ্গে উদ্দাম হাওয়ার তাণ্ডব । প্রবল বাতাস যেন যুদ্ধ ঘোসনা করে চলেছে সমস্ত পুরাতনের বিরুদ্ধে । পুরাতনির প্রথাভঙ্গে তার অসীম আগ্রহ । বিশাল বিশাল দ্বৈতের মতো গাছগুলো অপরূপ ভঙ্গিমায় কার কাছে যেন জানাতে থাকে সকরুণ মিনতি । মেঘদূতের আকাশের শ্যামল কৃষ্ণ আভা যেন মনে করিয়ে দেয় রাধিকা – দয়িতকে । মনে পড়ে যায় আরো এক মুহুতের কথা । আষাঢ় মাসের মেঘের প্রথম উন্নেষে বিরহী যক্ষের সেই অমর অভিব্যক্তির চিরন্তন কাহিনীর প্রারমবক্ষণ ।




উপলদ্ধি :– বৃষ্টির খামখেয়ালীতে মানুষ জনের আনন্দ আছে , কিন্তু দুর্দশারও সীমা নেই । পায়ে কাদার আশ্লেষ নিয়ে কমরত মানুষজনের বিব্রত মুখেই দুর্দশার যথেষ্ট বদ্ধ প্রকাশ । দিনের বিচিত্র লীলা শেষ হয় । রাত্রি আসে । এখনো বাইরে বৃষ্টির ছিটেফোটা । শোবার আয়োজন ও সারা । শুনে যাব , হটাৎ বাধা পড়ে । পাশের বাড়ির ভদ্রলোক গান চেঁচিয়ে  ধরেছেন । ইন্দ্রণাথের নতুনদার ' ঠুন ঠুন পেয়ালা ' কত মধুর ছিল জানি না , তবে কিনা এই বৃষ্টিতে কুকুরের দল নিজেদের নিয়েই ব্যাস্ত , নইলে শ্রেষ্টতের পরীক্ষা হয়ে যেত আজই । যদিও বা ভদ্রলোক থামেন , এতক্ষন ধরে যাদের প্রায় অগ্রাহ করে এসেছি , সেই ব্যাঙ মশাইয়ের দল যেন আমার এই অপরাধের প্রতিবাদটাই আরো জোড়ে জানান দিতে থাকে । ঘুম আসেনা –নিদ্রাহীন রাত । ' রজনী শাওন ঘন / ঘন দেয়া গরজন ' ও কেবল কবির কাব্যই মানায় । বাদল রানীর এই বিকৃতিটা সুবিধা ঠেকে না আদো । আজকের দিনটার সব ভালো , কিন্তু ব্যাঙের ডাক ?




অনুসরণে লেখা যায় :– একটি ছুটির দিনের উপলদ্ধি




স্বেচ্ছায় রক্তদান বাংলা রচনা




ভূমিকা: সভ্যতার উষালগ্ন থেকেই মানুষ আপদে-বিপদে একে অন্যের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এবং সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। দুঃস্থ মানবতার পাশে এসে দাঁড়ানো এবং ব্যথিত জনের দুঃখ-কষ্ট, যন্ত্রণা এবং হাহাকার দূর করে মুখে হাসি ফুটানোই হলো মহৎ হৃদয়ের মানুষের স্বভাবজাত ধর্ম। আজকের দিনে অন্যের জীবন বাঁচাতে ‘স্বেচ্ছায় রক্তদান’ কর্মসূচি মানবতার নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে। নিজের রক্ত দিয়ে অন্যের জীবন বাঁচানোর উদ্যোগ মানুষকে মানবতাবোধে সমৃদ্ধ করে তোলে।

রক্তদান কী: কোনো কারণে মানবদেহে প্রয়োজনীয় রক্তের অভাব ঘটলে তার জীবন সংকটময় হয়ে পড়ে। হঠাৎ করে কোনো দুর্ঘটনা অথবা আঘাতের ফলে অত্যধিক রক্তপাত হলে প্রাণের সংশয় দেখা দেয়। কোনো অসুখের ফলে শরীরের রক্তের পরিমাণ কমে যেতে পারে। আবার কখনও অপারেশনের সময় রক্তের অভাব পূরণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। আর প্রয়োজনীয় রক্তের অভাব দূর করার জন্য যে ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে তাই হলো রক্তদান। এটি অন্যতম একটি মহৎ কাজ।

রক্তের গ্রুপ: মানুষের রক্তের ৪টি গ্রুপ আছে। সে গুলো হলো- A, B, AB এবং O গ্রুপ। বিজ্ঞানী Landois রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ে প্রথম কৃতিত্ব দেখান। রক্ত নেওয়ার সময় প্রথমে রোগীর রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করা হয়। তারপর রক্তের গ্রুপের সঙ্গে মিলিয়ে সুস্থ দেহের রক্ত রোগীর দেহে সঞ্চালন করা হয়। তবে তার আগে অবশ্য Rh গ্রুপও দেখা হয়।

রক্তদানের নিয়ম: রক্তদানের মাধ্যমে রোগীর জীবন বাঁচানোর প্রক্রিয়াটি একটু জটিল ধরণের হয়। উপযুক্ত বৈশিষ্ট্যের রক্ত হলেই তা রোগীর শরীরে সঞ্চালন করা যাবে। রক্তগ্রহণের জন্য কিছু আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতি প্রচলিত আছে। প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ সবল দেহের অধিকারী যেকোনো ব্যক্তি রক্ত দিতে পারে। তবে তার কোনো মারাত্মক রোগ থাকবে না। তার বয়স ১৮-৫৭ বছরের মধ্যে হতে হবে। একজন রক্তদাতা প্রতি তিন মাস পর পর রক্ত দিতে পারে। রক্তদাতার শরীরের তাপমাত্রা থাকতে হবে ৯৯ ডিগ্রির নিচে। রক্তচাপ থাকবে ১০০/৬০ থেকে ২০০/৯০ এর মধ্যে। অনেক সময় রক্তদাতার শরীর থেকে রক্ত নিয়ে ব্লাড ব্যাংকে সংরক্ষণ করা হয় এবং প্রয়োজন বিবেচনা করে তা ব্যবহার করা হয়।

রক্তদান ও সংরক্ষণ নীতি: রক্তদান হলো শুভ চেতনাসম্পন্ন মানুষের কাছে এক মহান ব্রত। এ মহান কাজে অংশগ্রহণের জন্য একজন সুস্থ ব্যক্তির দেহ থেকে ২৫০ সি.সি. রক্ত একসাথে টেনে নেয়া যায়। এতে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা রক্ত সংরক্ষণের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে। প্রতিটি চিকিৎসা কেন্দ্রে এবং হাসপাতালে এখন ব্লাড ব্যাংক রয়েছে। ১৯৩৭ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরে প্রথম ব্লাড ব্যাংক স্থাপিত হয়। একজন সুস্থ মানুষের দেহ থেকে ২৫০ সি.সি রক্ত নিয়ে একটি ব্যাগে রাখা হয়। এ ব্যাগটি ৫০ সি. সি. অ্যাসিড সাইট্রেট ডেক্সট্রোজ সম্বলিত থাকে। ১৯১৪ সালে বৈজ্ঞানিক Houstain ব্যাগে রক্ত জমাট না বাঁধার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। রক্তের বিশুদ্ধ থাকা নির্ভর করে উপযুক্ত তাপমাত্রা এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর। সাধারণত ৪ ডিগ্রি থেকে ৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপ সমন্বিত ফ্রিজে তিন মাস পর্যন্ত রক্ত বিশুদ্ধ থাকে।

রক্তদানে সমস্যা: রক্তদান একটি স্পর্শকাতর বিষয়। সে জন্য এর নিয়ম-নীতি সুষ্ঠুভাবে মেনে চলা উচিত। অনেক সময় রক্ত সংগ্রহের ভালো কোনো ব্যবস্থা না থাকায় সমস্যা দেখা দেয়। রক্ত যাতে দূষিত না হয় সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে। রক্ত দূষিত হলে তা ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। আবার কিছু পেশাদার রক্তদাতাগণ অর্থের জন্য রক্ত বিক্রি করে এবং একে লাভজনক ব্যবসা মনে করে। লোভের ফলে এখানে দুর্নীতি প্রবেশ করতে পারে। এতে রোগীর মৃত্যু হতে পারে।

রক্ত গ্রহণে সতর্কতা: রক্ত গ্রহণের সময় রক্ত গ্রহীতা এবং রক্তদাতাকে একই শ্রেণির রক্তের অধিকারী হতে হয়। রক্তের গ্রুপ যদি না মিলে তাহলে গ্রহীতার রক্তে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এতে করে রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কাও তৈরি হয়। তাছাড়া রক্ত গ্রহণের সময় কোনো প্রকার ব্যবহৃত সুই বা সিরিঞ্জ ব্যবহার করা যাবে না। নতুন সুই বা সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে হবে।

রক্তদানে বিভিন্ন কর্মসূচি: স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে রক্তদান কর্মসূচির কাজ শুরু হয়। বর্তমানে এদেশের প্রত্যেক জেলায় ব্লাড ব্যাংক স্থাপিত হয়েছে। এখন মানুষের মধ্যে স্বেচ্ছায় রক্তদানের প্রবণতা বেড়েছে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে সাধারণ মানুষকে রক্তদানে অনুপ্রাণিত করা হচ্ছে। বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানও রক্তদানের কাজে এগিয়ে আসছে। এদের মধ্যে রেড ক্রিসেন্ট, সন্ধানী ও বাঁধন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়াও বিভিন্ন ক্লাব-সংঘ, স্কুল, কলেজ থেকে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও আলোচনা সভা থেকে রক্ত সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।



রক্তদান সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা: আমাদের দেশে অনেকের মধ্যে রক্তদান সম্পর্কে কিছু ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে। রক্তদানের কথা শুনলে অনেকে ভয়ে চমকে উঠে। তারা মনে করে রক্তদান স্বাস্থ্যহানি ঘটায়। তাদের ধারণা পুরোটাই ভ্রান্ত। কারণ আমাদের দেহে প্রতিদিন রক্ত কোষ সৃষ্টি হচ্ছে এবং পুরাতন রক্ত কোষ অকেজো হয়ে পড়ছে। রক্ত না দিলেও পুরাতন রক্ত কোষ অকেজো হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পায় না। তাই প্রতি তিন মাস পর পর যে কোনো প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ সবল মানুষ রক্ত দিতে পারে।

উপসংহার: রক্তদান ধনী-গরীবের বৈষম্য, সাদা-কালোর ভেদাভেদ এবং ধর্মীয় ব্যবধান ঘুচিয়ে দেয়। রক্তদান মানব জাতির জন্য এক মহান সেবাকর্ম। এক ব্যাগ রক্তই একজন মুমূর্ষু ব্যক্তির জীবন বাঁচাতে পারে। এ জন্য আমাদের সকলকে রক্তদানে এগিয়ে আসতে হবে এবং এ ব্যাপারে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।




ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক বাংলা রচনা





ভূমিকা: সূর্যের আলো পুরো পৃথিবীকে আলোকিত করে। পৃথিবীর রূপ-বৈচিত্র্য আমাদের সামনে দৃশ্যমান করে।তেমনি, শিক্ষা থেকে অর্জিত জ্ঞান আমাদের মন ও জীবনকে আলোকিত করে। জন্মের পর একটি শিশুর শিক্ষা গ্রহণের প্রথম পাঠ শুরু হয় তার পরিবারে। কিন্তু তার পরেই তাকে শিক্ষাদানের মহান দায়িত্ব অর্পিত হয় শিক্ষকের ওপর। শিক্ষক তার নিজের অর্জিত শিক্ষা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দিয়ে গড়ে তোলেন তার শিক্ষার্থীকে। নিজের সমস্ত জ্ঞান তিনি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেন। এই শিক্ষা দান ও গ্রহণের মধ্য দিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে গড়ে ওঠে সম্পর্কের এক অটুট বন্ধন। যে সম্পর্কের সামনে শ্রদ্ধায়, ভালবাসায় মাথা নত করি আমরা সবাই।

ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক: যিনি শেখান তিনি শিক্ষক, যিনি শেখেন তিনি শিক্ষার্থী বা ছাত্র। তাই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে দাতা-গ্রহীতার সম্পর্ক বিদ্যমান। তবে সেই দান ও গ্রহণের বিষয় হলো শিক্ষা ও জ্ঞান। একজন শিক্ষার্থীর কাছে তার শিক্ষক সর্বোচ্চ সম্মানিত আসনে অধিষ্ঠিত ব্যক্তি। আবার শিক্ষকের কাছে তার শিক্ষার্থীরা সন্তানের মতো প্রিয়। নিজের বিদ্যা-বুদ্ধি ও শ্রম দিয়ে একজন শিক্ষক তার শিক্ষার্থীকে গড়ে তোলেন এবং নিজেকে সেই শিক্ষার্থীর আলোকিত জীবনের গর্বিত অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। শিক্ষার্থীরাও তাদের শিক্ষা জীবন এমন কি ব্যক্তি জীবনেরও প্রতিটি পদক্ষেপে, সাফল্যে-ব্যর্থতায় শিক্ষককে স্মরণ করে। শিক্ষক যেমন ছাত্রকে সফল করেন তেমনি ছাত্রের ব্যর্থতার দায়ভারও তিনি নিজের কাঁধে তুলে নেন। তাই ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক হলো সাফল্য-ব্যর্থতা, গ্লানি কিংবা গর্বে সমান অংশীদারিত্বের সম্পর্ক।

ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের স্বরূপ: খুব আশ্চর্য সুন্দর একটি সম্পর্ক হলো ছাত্র ও শিক্ষকের সম্পর্ক। এই সম্পর্ক একই সাথে খুবই সাবলীল, মধুর, স্বতঃস্ফুর্ত আবার গাম্ভীর্যপূর্ণ। শিক্ষক প্রয়োজনে শিক্ষার্থীর ওপর অবিভাবকসূলভ কঠোরতা, শাসন আরোপ করেন। আবার কখনো বা বন্ধুর মতো ভালবাসেন, পরামর্শ দেন, উৎসাহ যোগান, সব সময়ই পাশে থাকেন। শিক্ষার্থীরা শিক্ষককে অবিভাবকের মতো সম্মান করে, আদেশ-উপদেশ মেনে চলে, শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। শিক্ষকের সাথে ছাত্রের সম্পর্ক পথ প্রদর্শক আর পথিকের সম্পর্কের মতো। শিক্ষক পথ দেখান, ভবিষ্যতের দিক-নির্দেশনা দেন। আর শিক্ষার্থী সেই দেখানো পথে চলে, নির্দেশনা মেনে চলে। উদারতা স্নেহের, মায়া, ভালবাসা আর শাসনের মধ্য দিয়ে একজন শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের ভেতরে স্বপ্নের বীজ বপন করেন। শিক্ষার্থীরা সেই স্বপ্নকে লালন করে। তাই ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক স্বপ্নদ্রষ্টা ও স্বপ্ন স্রষ্টারও।

ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের গুরুত্ব: শিক্ষক হলেন মানুষ গড়ার কারিগর। তাই শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকের সম্পর্ক যত বেশি ভাল হবে, সুন্দর হবে, বন্ধুত্বপূর্ণ হবে শিক্ষক তার শিক্ষার্থীকে তত ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন। শিক্ষকের সান্নিধ্যে এসে শিক্ষার্থীরা জীবনকে জনতে, চিনতে ও বুঝতে শেখে। সব কিছুকে নতুন করে দেখতে শেখে। শিক্ষক শিক্ষার্থীর দেখার চোখ খুলে দেয়, জ্ঞানের দরজা খুলে দেয়। তাদেরকে জ্ঞানের পথে, আলোর পথে নিয়ে যায়। শিক্ষক জীবন সম্পর্কে যে দর্শন চিন্তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয় তার ভিত্তিতেই তারা তাদের জীবনের ব্রত ঠিক করে। একজন ভাল শিক্ষক একজন বখে যাওয়া শিক্ষার্থীকেও সঠিক পথে নিয়ে আসতে পারেন, তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন।

সম্পর্ক যেমন ছিল: আগের দিনে ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক ছিল অকৃত্রিম। শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষককে শ্রদ্ধা করত দেবতার মতো। শিক্ষকের এক একটি আদেশ-উপদেশকে তারা বেদবাক্য বলে মনে করত। শিক্ষকেরাও শিক্ষার্থীদেরকে ভালবাসত আপন সন্তানের মতো। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের নির্দেশনা অলঙ্গণীয় মনে করে অক্ষরে অক্ষরে তা পালন করতো। শিক্ষকদের সেবা করাও তাদের শিক্ষার অংশ ছিল। শিক্ষকেরাও তার শিক্ষার্থীকে সঠিক শিক্ষা দিতে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অটুট বন্ধনের উদাহরণ পাওয়া যায় মহাভারতে। পঞ্চপান্ডব তাদের গুরু অর্থাৎ শিক্ষককে এত শ্রদ্ধা করতো যে শত্রুপক্ষে থাকা সত্ত্বেও যুদ্ধক্ষেত্রে অস্ত্রত্যাগ করে তারা তাকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে। গুরুও তাদেরকে বিজয়ী হওয়ার আশীর্বাদ করেন। ছাত্র শিক্ষক সম্পর্কের নজির স্থাপনকারী বাদশা আলমগীরের কথাও আমরা জানি। দ্বিগ্বীবিজয়ী আলেকজেন্ডারের শিক্ষক ছিলেন দার্শনিক এরিস্টটল। তাদের মধ্যে ছিল দৃঢ় সম্পর্ক। তাই আলেকজেন্ডার তার শিক্ষককে তার হৃদয় দিয়ে সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা করতেন। এরিস্টটলও তাকে ভীষণ ভালবাসতেন। আর তাইতো আলেকজেন্ডারের মৃত্যুতে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েন।

সম্পর্কের বর্তমান প্রেক্ষাপট: ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কে এখন প্রবেশ করেছে কৃত্রিমতা, ব্যক্তিগত স্বার্থ আর লাভের হিসেব। একটা সময় ছিল যখন ছাত্ররা নিজ হাতে শিক্ষকের পা ধুয়ে দিত। আজ সেই হাতে তারা শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে। আবার শিক্ষক যে হাত আশীর্বাদে, উৎসাহে, শুভকামনায় ছাত্রের মাথায় রাখত, সেই হাতে তারা কোমলমতি শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাতে ক্ষতবিক্ষত করছে। শিক্ষার্থীরা এখন শিক্ষককে ব্যবহার করতে চায় অসদুপায়ে ভাল ফল লাভের আশায়। অন্যদিকে শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদেরকে ব্যবহার করে অর্থ লাভের হাতিয়ার হিসেবে। আগে যেখানে শিক্ষকতা মহান পেশা ছিল এখন তা ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে এখন স্বার্থের সম্পর্ক বিদ্যমান। ছাত্র শিক্ষক উভয়ই এখন শিক্ষাঙ্গনের রাজনীতিতে যুক্ত। ফলে সেখানেও তাদের মধ্যে রয়েছে আপোসের সম্পর্ক। তবে প্রতিটি ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক এমন নয়, এখনও সৎ শিক্ষক ও ভাল ছাত্ররা আছে। তবে তাদের পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে।

সম্পর্কে অবনতির কারণ: শিক্ষক-ছাত্রের সম্পর্কে যে চরম অবনতির সৃষ্টি হয়েছে তার অন্যতম প্রধান কারণ হলো মানুষের সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়। একজন শিক্ষক তার মূল্যবোধকে ভুলে গিয়ে, নীতি নৈতিকতাকে বিসর্জন দিয়ে ছাত্রদেরকে শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনের জন্য ব্যবহার করছেন। ছাত্রদেরকে জিম্মি করে তাদের কাছ থেকে বাড়তি সুবিধা আদায় করছেন। এমনকি শিক্ষার্থীরা তাদের পাশবিকতারও শিকার হচ্ছে। যাকে মানুষ গড়ার কারিগর বলা হয় তিনি তার নীতি ভুলে ছাত্রদেরকে ডিগ্রী লাভের শর্টকার্ট উপায় বলে দিচ্ছেন। শিক্ষক এবং ছাত্রের মধ্যে নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধের চর্চা নেই। অবিভাবকেরাও সচেতন নন। ফলে ছাত্ররা বিনাশ্রমে সর্বোচ্চ ফলাফলের জন্য শিক্ষকের সঙ্গে আঁতাত করছে। শিক্ষক-ছাত্রের লেনদেনের সম্পর্কের কারণে সৃষ্টি হচ্ছে প্রশ্ন ফাঁসের মতো অপরাধ।

শিক্ষকের কাছে প্রত্যাশা: একজন শিক্ষকের কাছে তার শিক্ষার্থীর প্রত্যাশা হলো শিক্ষক তাকে জীবনোপযোগী, যুগোপযোগী শিক্ষা দেবেন। তাকে জ্ঞান অর্জনের পথ দেখাবেন, আলোর পথের যাত্রী করবেন। শিক্ষক তার ছাত্রের ভেতর জ্ঞান লাভের, অজানাকে জানার, অদেখাকে দেখার এবং চেনা-জানা বিষয়গুলোকে নতুন করে চেনার আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করে দেবেন, ভবিষ্যতের দিক নির্দেশনা দেবেন। তাদেরকে উৎসাহ, প্রেরণা, শক্তি যোগাবেন। সব সময় ছায়া হয়ে মাথার ওপরে থাকবেন। শিক্ষক তাদেরকে ভাল মন্দ, ভুল-সঠিকের দৃষ্টিভঙ্গি শেখাবেন। সর্বোপরি শিক্ষকের কাছে প্রত্যাশা হলো তিনি তার ছাত্রকে ভালমানুষ হিসেবে, সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবেন।

ছাত্রের কাছে প্রত্যাশা: শিক্ষক জ্ঞানদাতা, তাই বলে তিনি কেবল দিয়েই যাবেন তা নয়। বরং শিক্ষার্থীর কাছে তারও কিছু প্রত্যাশা থাকে। শিক্ষার্থীর কাছে শিক্ষকের সব চেয়ে বড় প্রত্যাশা হলো শিক্ষার্থীরা তার দেয়া শিক্ষায় প্রকৃত অর্থেই শিক্ষিত হবে। তার দেখানো পথে চলবে। ছাত্ররা তাকে সম্মান করবে, শ্রদ্ধা করবে, শিক্ষক হিসেবে তার প্রাপ্য মর্যাদা দেবে। শিক্ষক যেমন ছাত্রের অনেক বড় শুভাকাঙ্ক্ষী। তেমনি শিক্ষক প্রত্যাশা করেন তার ছাত্ররাও তাকে ভালবাসবে, তার প্রতি অনুগত থাকবে।

ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক উন্নয়নে করণীয়: একজন শিক্ষক তখনই সফল হন যখন তিনি নিজ শিক্ষায় তার ছাত্রকে শিক্ষিত করতে পারেন। আর ছাত্রও তখনই সফল হয় যখন সে সেই শিক্ষাকে আত্মস্থ করতে পারে, উপলব্ধি করতে পারে। আর এ জন্য প্রয়োজন ছাত্র শিক্ষক সুসম্পর্ক। কিন্তু বর্তমানে এই সম্পর্ক খুবই নাজুক। তাই এই সম্পর্ক উন্নয়নে যা করতে হবে তা হলো-

- শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে অবশ্যই পরস্পরের উপর অর্পিত দায়িত্ব-কর্তব্যগুলো পালন করতে হবে।

- পরস্পরের কাছে যে প্রত্যাশাগুলো রয়েছে সেগুলো পুরণ করতে হবে।

- কোনো পরিস্থিতিতেই কেউ কারো প্রতি অসাদাচরণ করবে না। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে। শিক্ষক তাদের প্রতি স্নেহশীল থাকবেন।

- শিক্ষকদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। তাদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে যাতে তারা স্বচ্ছল জীবনযাপন করতে পারে।

- শিক্ষকের দ্বারা শিক্ষার্থী অনেক বেশি প্রভাবিত হয় তাই শিক্ষকের উচিত নিজের গুণাবলীগুলো শিক্ষার্থীর ভেতরে ছড়িয়ে দেয়া।

- শিক্ষকতাকে শুধুমাত্র মহান পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিলেই হবে না বরং তা সামাজিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

- অবিভাবকের উচিত সন্তানকে নৈতিক শিক্ষা দেয়া। যেন তারা শিক্ষককে সম্মান করে।

- সর্বোপরি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে সকলেরই উচিত একসাথে কাজ করা।

উপসংহার: একজন ভাল শিক্ষক একজন ছাত্রের জীবন আমূল বদলে দিতে পারেন। তাকে নবজন্ম দিতে পারেন। সম্ভাবনা আর সাফল্যের দুয়ারে পৌঁছে দিতে পারেন। তাই ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের ভিত্তি মজবুত ও দৃঢ় হওয়া প্রয়োজন। স্মেহভালবাসা আর শ্রদ্ধা-সম্মানে যে সম্পর্ক রচিত হয় সেই সম্পর্ক যেন সর্বদাই অটুট থাকে। ছাত্র-শিক্ষকের পবিত্র সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখা সকলেরই নৈতিক দায়িত্ব।





সার্বজনীন শিক্ষা বাংলা রচনা







ভূমিকাঃ যেকোনো জাতির উন্নতির মূলে শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় শিক্ষাই তাদের উন্নতির মূল কারণ। আর তাই শিক্ষাকে সার্বজনীন করার বিষয়টি বাংলাদেশসহ প্রত্যেকটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সার্বজনীন শিক্ষার নিশ্চয়তাই যেকোনো জাতিকে সুখ, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের দিকে নিয়ে যায়। বর্তমান বিশ্বে সার্বজনীন শিক্ষার বিষয়টি বেশ জোরালোভাবে আলোচিত হচ্ছে।

শিক্ষা কীঃ সাধারণ অর্থে জ্ঞান বা দক্ষতা অর্জনই হলো শিক্ষা। ব্যাপক অর্থে পদ্ধতিগত জ্ঞান লাভের প্রক্রিয়াকে শিক্ষা বলা হয়। শিক্ষার ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Education যা ল্যাটিন শব্দ Educare বা Educatum থেকে এসেছে।

সার্বজনীন শিক্ষাঃ যখন কোনো দেশের নারী-পুরুষ সকলকে উপযুক্ত শিক্ষা দেয়া হয় তখন তাকে গণশিক্ষা বা সার্বজনীন শিক্ষা বলা হয়। দেশের অধিকাংশ নরনারী গ্রামে বাস করে। সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হলে সবার আগে গ্রামের কথা ভাবতে হবে। যেকোনো দেশের গ্রাম-অঞ্চলের শিক্ষা নিশ্চিত হলেই সার্বজনীন শিক্ষা সম্ভব হবে। আর সার্বজনীন শিক্ষা নিশ্চিত হলে দেশের মানুষের মধ্যে চিন্তা চেতনার পরিবর্তন ঘটবে। সমাজের প্রত্যেকটি স্তরে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিয়ে জাতিকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলাই সার্বজনীন শিক্ষার উদ্দেশ্য।



সার্বজনীন শিক্ষার প্রয়োজনীয়তাঃ শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। তাই শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আমাদের দেশের শিক্ষার হার অনেক কম। ২০১১ সালের আদম শুমারী রিপোর্ট অনুসারে বাংলাদেশের সাক্ষরতার ৫১.৮%। বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি সাক্ষরতার হার ঢাকা জেলায় ৭০.৫%। আবার সর্বনিন্মো সাক্ষরতার হার সুনামগঞ্জ জেলায় ৩৫.১০%। আর এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে গণশিক্ষা বা সার্বজনীন শিক্ষার কোনো বিকল্প নাই। শিক্ষা ব্যবস্থাকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন। যেকোনো দেশের উন্নয়নের প্রধান শর্ত সার্বজনীন শিক্ষা।

বাংলাদেশে সার্বজনীন শিক্ষার উদ্দেশ্যঃ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সার্বজনীন শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি হতে পারে তা নিন্মে বর্ণনা করা হলো-

১) নিরক্ষর লোকদের সাক্ষরতা দান এবং উৎপাদনশীল কাজে উৎসাহিত করা।

২) দরিদ্র ও মেধাবীদের মেধা বিকাশে সাহায্য করা।

৩) ন্যূনতম লেখাপড়া ও হিসাব-নিকাশের শেখানোর ব্যবস্থা করা।

৪) শিক্ষার মাধ্যমে জ্ঞান-মেধা ও মানবীয় শক্তির বিকাশ ঘটানো।

৫) নিজেদের অধিকার ও দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে তোলা।

৬) শিক্ষার মাধ্যমে সমস্ত দেশ ও জাতিকে আলোকিত করা।

বাংলাদেশে সার্বজনীন শিক্ষা কার্যক্রমের সূচনাঃবাংলাদেশের দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার (১৯৮০-১৯৮৫) ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গণশিক্ষা কার্যক্রম হাতে নেয়। আর এই গণশিক্ষা কার্যক্রমের অন্যতম লক্ষ্য ছিল গ্রামীণ অশিক্ষিতদের মধ্যে সাক্ষরতা দান এবং সচেতন করে তোলা। তাদের উদ্দেশ্য শুধু লিখানো এবং পড়ানো এর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। তাদের উদ্দেশ্য ছিল গ্রামের সকল লোকজন যেন চিঠিপত্র পড়া, সংবাদপত্র পড়া এবং সংসারের আয় ব্যয়ের হিসাব নিকাশ প্রভৃতি কাজ করতে পারে তা নিশ্চিত করা। এ কাজ সফল করার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়েছিল।

সার্বজনীন শিক্ষার প্রতিকূলতাঃ যদিও সরকার অনেক আগে থেকেই সার্বজনীন শিক্ষার জন্য চেষ্টা করে আসছে কিন্তু নানা প্রতিকূলতার জন্য তা বাস্তবায়নে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। নিন্মে সার্বজনীন শিক্ষার পথে প্রতিকূলতাগুলো বর্ণনা করা হলো-

১) আমাদের দেশের ছাত্র-ছাত্রীর তুলনায় বিদ্যালয় এবং শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে।

২) পিতা-মাতার আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে অনেক শিশু প্রাথমিক শিক্ষাই সম্পূর্ণ করতে পারে না।

৩) অনেক অভিভাবক আছে যারা তাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার বিষয়ে আগ্রহী নয়।

৪) বিদেশের শিশুরা বছরে ১০০০-১২০০ ঘণ্টা বিদ্যালয়ে কাটায়। আর আমাদের দেশের শিশুরা বছরে মাত্র ৫০০-৬০০ ঘণ্টা বিদ্যালয়ে কাটায়।

৫) অনেক ছেলেমেয়ে পারিবারিক বিভিন্ন কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাসের কারণে শিক্ষা হতে বঞ্চিত হচ্ছে।

এনজিও (NGO) সমূহের গণশিক্ষা কার্যক্রমঃ বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় নানা প্রতিকূলতায় পরিপূর্ণ। আর এই প্রতিকূলতা সামনে নিয়ে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এনজিও গণশিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারে ইউনেস্কোর ভূমিকা খুবই প্রশংসনীয়। বিনামূল্যে বই, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি, চক পেন্সিল ও খাতার জন্য ইউনেস্কো নানাভাবে আর্থিক সাহায্য প্রদান করে। আবার ইউনিসেফ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন শিশুদের স্কুলে যেতে উৎসাহিত করতে বিনামূল্যে বিস্কুট বিতরণ করে থাকে। এ ছাড়াও ব্র্যাক, প্রশিকা, গণসাক্ষরতা ও ওয়াল্ডভিশন প্রভৃতি এনজিও গ্রাম-অঞ্চলে শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পাালন করে আসছে।

বর্তমান সরকারের সার্বজনীন শিক্ষা কার্যক্রমঃগণশিক্ষা বা সার্বজনীন শিক্ষাকে পরিপূর্ণ রূপ দেওয়ার জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিদ্যালয়, মসজিদ, ক্লাব ও বাড়ির আঙ্গিনায় বয়স্কদের শিক্ষাদানের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সরকারি স্কুলগুলোতে দুই শিফটে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার স্কুলগুলোতে দুই শিফটে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। তাছাড়া বয়স্ক নারী-পুরুষদেরকে সাক্ষরতা দানের জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের ব্যবস্থা করছে। সরকারের কার্যক্রমের ফলে দেশের অনেক জেলা নিরক্ষরমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ঃ বাংলাদেশে ১৯৯২ সালে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম চালু করে। আর দেশের স্বল্প শিক্ষিত লোকদের উচ্চ শিক্ষায় উৎসাহী করার জন্য উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন বিজ্ঞান ভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বিশেষ পরিকল্পনায় এসএসসি কার্যক্রম চালুর মাধ্যমে দেশের ঝরে পড়া মেধা শক্তিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ঘরে বসেই বেতার ও টেলিভিশনের মাধ্যমে ২ থেকে ৪ বছরের মেয়াদে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া যায়। এই কার্যক্রমের ফলে অনেকেই লেখাপড়ার সুযোগ

উপসংহারঃ নেপোলিয়ন বলেছিলেন, ‘Give me an educated mother; I will give you an educated nation.’ অর্থাৎ তোমরা আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদেরকে একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দিব। যে জাতি যতো বেশি উন্নত সে জাতি ততো বেশি শিক্ষিত। শিক্ষাই পারে কোনো দেশকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরতে। তাই সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন মানুষেরও এগিয়ে আসা উচিত। তাহলেই দেশ ও জাতি অন্ধকার থেকে মুক্তি পাবে এবং জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব হবে।





সড়ক দুর্ঘটনা : কারণ ও প্রতিকার বাংলা রচনা




ভূমিকাঃ বর্তমান সমাজে ঘর থেকে বের হলেই প্রত্যেক মানুষকে সড়ক দুর্ঘটনা নামক আতংক তাড়া করে বেড়ায়। প্রতিদিন দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেই থাকে। যার ক্ষয়ক্ষতি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়। জনসচেতনতা এবং প্রয়োজনীয় সরকারি বেসরকারি পদক্ষেপই এই মহামারীকে রুখে দিতে পারে।



সড়ক দুর্ঘটনার ধরনঃ প্রতিদিন সংবাদপত্রে যে খবরটি অনিবার্য তা হলো সড়ক দুর্ঘটনা। এই দুর্ঘটনাগুলো ঘটে বিভিন্নভাবে যানবাহনগুলোর মুখোমুখি সংঘর্ষে। এছাড়া গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়া, এমন কি পায়ে হেঁটে রাস্তা পার হওয়ার সময়ও দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এসব দুর্ঘটনা দেখে মনে হয় মৃত্যু যেন ওঁত পেতে বসে আছে রাস্তার অলিতে-গলিতে।

সড়ক দুর্ঘটনার কারণঃ নিম্নে সড়ক দুর্ঘটনার বিভিন্ন কারণ আলোচনা করা হলো-

অতিরিক্ত গতি ও ওভারটেকিং: সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে গাড়িগুলোর অতিরিক্ত গতি ও ওভারটেকিং কে দায়ী করা হয়। পুলিশ রিপোর্টেও বলা হয় অতিরিক্ত গতি ও চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানো এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। এছাড়া গাড়ি দ্রুতবেগে ব্রিজে ওঠার সময় দুর্ঘটনা ঘটার ইতিহাস অনেক রয়েছে।

অপ্রশস্ত রাস্তাঃ বাংলাদেশের অধিকাংশ রাস্তাই অপ্রশস্ত। যার ফলে দিন দিন সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। ঢাকা থেকে যাতায়াতের সবচেয়ে ব্যস্ত ঢাকা-আরিচা এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে। এই রাস্তাগুলো প্রয়োজনের তুলনায় প্রশস্ত নয়। ফলে এ দুটি পথেই দুর্ঘটনা ও হতাহত বেশি হয়। তাছাড়া দেশের সর্বত্র অপ্রশস্ত রাস্তায় অতিরিক্ত গাড়ি চলাচলের জন্য প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।

ওভার লোডিংঃ ওভার লোড মানে ধারণক্ষমতার বেশি মাল বহন করা। ফলে চালকরা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটায়।

আইন অমান্যঃ সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ আইন অমান্য করা। এক জরিপে দেখা যায় ৯১ শতাংশ চালক জেব্রা ক্রসিংয়ে অবস্থানরত পথচারীদের আমলই নেয় না। পাশাপাশি ৮৫ ভাগ পথচারী নিয়ম ভেঙ্গে রাস্তা পার হয়। তাছাড়া এক সমীক্ষায় বলা হয় ঢাকা শহরের ৮৪ শতাংশ রিকশাচালক ট্রাফিক আইন ও নিয়ম সম্পর্কে অজ্ঞ। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে অহরহ।

জনসংখ্যার চাপ ও অপ্রতুল পরিবহন ব্যবস্থাঃদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে যানবাহনের সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। রাজধানী ঢাকায় বর্তমানে প্রতি কিলোমিটারে ২৪৭টির বেশি গাড়ি চলে। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার আওতাধীন মোট ২২৩.৩০ কিলোমিটার রাস্তায় আনুমানিক গাড়ি চলে ৫ লাখ ৫০ হাজার। অন্যান্য বড় শহরেও অনেকটা একই চিত্র পরিলক্ষিত হয়। ফলে দুর্ঘটনার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ট্রাফিক অব্যবস্থাপনাঃ বাংলাদেশে সড়ক পথের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫ হাজার কিলোমিটার। এসব পথে প্রতিদিন অসংখ্য যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু এই বিশাল যানবাহন সুশৃঙ্খল ব্যবস্থার মধ্যে আনার মতো ট্রাফিক ব্যবস্থা এদেশে আজও গড়ে ওঠেনি।

প্রযুক্তির ব্যবহারঃ আধুনিক যুগ সম্পূর্ণ প্রযুক্তি নির্ভর। এই প্রযুক্তির ব্যবহার সঠিকভাবে না করলে অনেক সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে যায়। গাড়ির চালকরা গাড়ি চালানোর সময় ফোনে কথা বলে, গান শোনে। ফলে অসতর্ক হয়ে পড়েন। এতে করে গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।

এছাড়া ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, অদক্ষ ও লাইসেন্স বিহীন চালক, সড়কের ওপর অবৈধ হাটবাজার, অবৈধ স্থাপনা, বিকল্প রাস্তার ব্যবহার না করে যখন-তখন রাস্তা খোঁড়াখুড়ি, যানবাহনে ব্যবহৃত তেলে ভেজাল এবং রাস্তার মধ্যে প্রয়োজনীয় ডিভাইডার না থাকা প্রভৃতির কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে।

সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতিঃ সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি অসীম। এর ফলে কেবল মানুষের মৃত্যু নয়, অপূরণীয় আরো হাজারো ক্ষতির বোঝা চাপিয়ে দেয় জনসাধারণের জীবনে। নিম্নে সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরা হলো-

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা World Health Organisation (WHO)-এর হিসাব মতে ২০১০ সালে সারা পৃথিবীতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ১০ লাখ ১৮ হাজার মানুষ নিহত হয়। ২ কোটিরও বেশি মানুষ আহত হয় এবং প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করে। যা খুবই মর্মান্তিক ও অপ্রত্যাশিত। যে হারে সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২০ সাল নাগাদ সড়ক দুর্ঘটনা বর্তমানের তুলনায় ৬০ ভাগ বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী ২০০৮ সালে সারা দেশে ৭০৪৮ জন সড়ক দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয় যার মধ্যে ৩,৭৬৪ জন নিহত ও ৩,২৮৪ জন আহত হয়। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, দুর্ঘটনায় হতাহতের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ সেক্টর (এআরসি)-এর গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশে বছরে গড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় ১২০০০ এবং আহত হয় ৩৫,০০০ জন।

সড়ক দুর্ঘটনায় শিশুদের ক্ষয়ক্ষতিঃ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)- এর মতে, সারা পৃথিবীতে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ১ লাখ ৮০ হাজার শিশু মারা যায়। আর আহত হয় হাজার হাজার শিশু যাদের বয়স ১৫ বছরের নিচে। ২০১০ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৯৬ শতাংশ শিশু অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের ।

সড়ক দুর্ঘটনায় অর্থনৈতিক ক্ষতিঃ বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় যে ক্ষতি হয় তার আর্থিক পরিমাণ দাঁড়ায় বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা যা জিডিপির দুই ভাগ। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর হিসাব মতে আন্তর্জাতিকভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে প্রায় ৫২০ বিলিয়ন ডলার। উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশে এর পরিমাণ ৬৫ বিলিয়ন ডলার।

সড়ক দুর্ঘটনায় পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষতিঃ সড়ক দুর্ঘটনা পারিবারিক ও সামাজিক জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। এর ফলে হঠাৎ করে বিপর্যয় নেমে আসে একটি পরিবারে। সেই শোক গোটা পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের বুকে শেলের মতো বিধে থাকে সারা জীবন। অনেক সময় সড়ক দুর্ঘটনায় সমাজ ও দেশ হারায় তার কৃতি সন্তানদের। এ দুর্ঘটনা অনেককে চিরদিনের জন্য পঙ্গু করে দেয়।

সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের উপায়ঃ সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের দেশের স্বাভাবিক ঘটনা। আমাদের মতো ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক বিশ্বের খুব কম দেশেই আছে। তাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। এ জন্য করণীয়-

বেপরোয়া গতি ও ওভারটেকিং নিষিদ্ধকরণ। আর এ জন্য গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা বেঁধে দেয়া উচিত।

ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং আইন লঙ্ঘনকারীদের কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

লাইসেন্স প্রদানে জালিয়াতি প্রতিরোধ করতে হবে।

লাইসেন্স প্রদানের আগে চালকের দক্ষতা ও যোগ্যতা যাচাই-বাছাই করতে হবে।

ফিটনেস, সার্টিফিকেটবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামানো প্রতিরোধ করতে হবে।

পথচারীকে সতর্কভাবে চলাফেরা করা।

অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন বন্ধ করা।

মহাসড়কের পাশে হাট-বাজার ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা।

সড়ক দুর্ঘটনার শাস্তি অর্থাৎ সিআরপিসির ৩০৪ বি ধারায় শাস্তির মেয়াদ ৩ বছর থেকে ১০ বছর করা।

মোটরযান অধ্যাদেশের ১৪৩, ১৪৬ ও ১৪৯ ধারায় যে আর্থিক ক্ষতিপূরণ এবং শাস্তির বিধান উল্লেখ আছে তা বাড়ানো।

সড়ক নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট আইনের ভূমিকা আরো বেশি সক্রিয় করা।

প্রতিমাসে মহাসড়কে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে যানবাহনের ত্রুটি-বিচ্যুতি পরীক্ষা করা।

প্রতিটি গাড়ির চালককে স্মরণ রাখতে হবে সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।

সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি পরিবহন মালিক, পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, গাড়ি চালক সমিতি এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

সড়ক নিরাপত্তা ও সরকারঃ সরকার সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠান করে। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোট অথরিটি (বিআরটিএ) গঠন করা হয়। এর আগে সড়ক ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য ১৯৬১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি জারিকৃত এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) গঠিত হয়। এছাড়া গঠিত হয়েছে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় বোর্ড (ডিটিসিবি) এসব সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ গঠন করে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কাজ করে চলেছে। এছাড়া এর পাশাপাশি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) দুর্ঘটনা রিসার্চ সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। দেশের সড়ক বা মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ২০০৫ সালের ১১ জুন দেশের হাইওয়ে সড়কগুলিতে হাইওয়ে পুলিশ নিযুক্ত করা রয়েছে। সরকার এবং এসব সংস্থা যদি সর্বদা সতর্ক থাকে তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বাংলাদেশ অবশ্যই এগিয়ে যাবে।

উপসংহারঃ প্রত্যেক মানুষকেই মৃত্যুবরণ করতে হবে। কিন্তু দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ কারোই কাম্য নয়। আমরা সবাই চাই স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি। সড়ক দুর্ঘটনা যতো বড় সমস্যা হোক না কেনো সকলের সামগ্রিক চেষ্টা ও আন্তরিকতার মাধ্যমে এটি প্রতিরোধে কাজ করতে হবে। যাতে আর কোনো মায়ের কোল খালি না হয়। সচেতন হতে হবে আমাদের সবাইকে। তাই আজ আমাদের স্লোগান হোক ‘নিরাপদ সড়ক চাই।’




আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বাংলা রচনা




ভূমিকাঃ

‘মা তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতন।’এ কেবল নোবেল বিজয়ী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যক্তিগত অনুভূতি নয়, এ হচ্ছে সর্বকালের মানুষের চিরন্তন অনুভূতি। মাতৃদুগ্ধ যেমন শিশুর সর্বোত্তম পুষ্টি, তেমনি মাতৃভাষার মাধ্যমেই ঘটতে পারে একটি জাতির শ্রেষ্ঠ বিকাশ। মানুষের পরিচয়ের সেরা নির্ণায়ক মাতৃভাষা। মাতৃভাষা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের এক মৌলিক সম্পদ। মা ও মাটির মতোই প্রতিটি মানুষ জন্মসূত্রে এই সম্পদের উত্তরাধিকারী হয়। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে পূর্ব বাংলার জনগণ রক্তের বিনিময়ে অর্জন করেছিল সেই মাতৃভাষার মর্যাদা।

মাতৃভাষা কীঃ সাধারণ অর্থে মাতৃভাষা বলতে আক্ষরিক অর্থে মায়ের ভাষাই বোঝায়। একটি বৃহত্তর অঞ্চলে একই সাথে বিভিন্ন ভাষা প্রচলিত থাকে। এর মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ যে ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করে, সেটাই হচ্ছে সে অঞ্চলের মানুষের মাতৃভাষা। মাতৃভাষা মায়ের মুখের আঞ্চলিক বুলি মাত্র নয়, মাতৃভাষা হচ্ছে একটি দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠির ভাষা। যা তারা স্বতস্ফূর্তভাবে ব্যবহার করে। মাতৃভাষা বহতা নদীর মতো শত ধারায় প্রবহমান। বাঙালির মাতৃভাষা হচ্ছে বাংলা। বাংলা আমাদের প্রাণের স্পন্দন, বাংলা আমাদের অহংকার। কবি অতুল প্রসাদ সেন এর ভাষায়-

‘মোদের গরব মোদের আশাআমরি বাংলা ভাষা।’

মাতৃভাষার গুরুত্বঃ প্রখ্যাত ভাষাবিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন- ‘মা, মাতৃভূমি এবং মাতৃভাষা এই তিনটি জিনিস সবার কাছে পরম শ্রদ্ধার বিষয়।’ মাতৃভাষার মাধ্যমেই মানুষ প্রকাশ করে তার আশা-আকাক্সক্ষা, আবেগ-অনুভূতি। মাতৃভাষাই মানবজীবনের সকল ক্ষেত্রে তৃপ্তি ও পরিপূর্ণতা দান করে। জাতীয় জীবনে মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। জাতীয় জীবনের সার্বিক ক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করতে হলে মাতৃভাষার কোনো বিকল্প হতে পারে না। শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা, শিল্প-সংস্কৃতি ও সাহিত্যের বিকাশে মাতৃভাষা হচ্ছে প্রধান মাধ্যম। কবি রামনিধি গুপ্তের ভাষায়-

নানান দেশের নানান ভাষাবিনা স্বদেশি ভাষা; পুরে কি আশা।

মাতৃভাষার মর্যাদার লড়াইঃ বাঙালি পরিচয়ে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর মতো গৌরবজ্জ্বল মহিমা যুগে যুগে বহুবার বাঙালি অর্জন করেছে। বিদেশি শাসনের অপচ্ছায়ায় বারবার ম্লান হয়ে গেছে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। খ্রিস্টীয় নবম শতকে এর উপর জেঁকে বসেছে সংস্কৃত, ত্রয়োদশ শতক থেকে ফারসি ও আরবি, আঠারো শতক থেকে ইংরেজি ও ফরাসি, অতঃপর এই অশুভ ধারাবাহিকতায় ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পরে বাংলার উপরে নেমে আসে উর্দুর অপচ্ছায়া। পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল মুহম্মদ আলী জিন্নাহ যখন ঢাকার বুকে দাঁড়িয়ে দম্ভ করে ঘোষণা দেন 'Urdu and only Urdu shall be the state language of Pakistan' তখন প্রতিবাদে, ক্ষোভে ফেটে পড়ে বাংলাভাষী লাখো জনতা। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচারী পাকিস্তানি মিলিটারির রাইফেলের গুলিকে উপেক্ষা করে বীর বাঙালি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। ঢাকার রাজপথ সেদিন লাল হয়ে যায় রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ নাম না জানা অনেক তরুণের তাজা রক্তে। ভাষার জন্য জীবন দেবার এরকম নজির পৃথিবীর ইতিহাসে আর নেই। এজন্যই বাঙালি একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহিদ দিবস হিসেবে পালন করে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসঃ বাঙালি জাতির জীবনে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর আরো একটি ঐতিহাসিক গৌরবম-িত ও আনন্দঘন দিন। এই দিনে বাঙালি অর্জন করেছে তার প্রাণের সম্পদ একুশে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা UNESCO প্যারিসে অনুষ্ঠিত ৩০তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। জাতিসংঘের ১৮৮টি দেশের এই স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন বাংলা ভাষার জন্য বাঙালির গৌরবময় আত্মদান বিশ্বমর্যাদা পায় তেমনি পৃথিবীর ছোট-বড়ো প্রত্যেকটি জাতির মাতৃভাষার প্রতিও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শিত হয়।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পটভূমিঃ একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা দেবার জন্য যারা উদ্যোগ গ্রহণ করেন তারা হলেন; কানাডায় বসবাসরত একটি বহুজাতিক ভাষাপ্রেমী গ্রুপ ‘মাদার ল্যাংগুয়েজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’-এর ভিন্নভিন্ন ভাষাভাষী দশ জন সদস্য। আশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে, এই দশ জন সদস্যের মধ্যে বাংলা ভাষাভাষী যে দুইজন ব্যক্তি ছিলেন তাদের নাম দুই অমর ভাষা শহিদেরই নামÑ রফিক ও সালাম। এই গ্রুপটি ১৯৯৮ সালের ২৯ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালনের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে একুশে ফেব্রুয়ারিকে এই দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রাদানের প্রস্তাব করে। জাতিসংঘ থেকে জানানো হয়, বিশেষ কোনো গোষ্ঠী নয়, বরং বাংলা ভাষাভাষী রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব উত্থাপন করা সমীচীন। অতঃপর ভাষাপ্রেমিক জনাব রফিকুল ইসলাম এবং জনাব আব্দুস সালাম বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২৮ অক্টোবর, ১৯৯৯ তারিখে একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’-এর ঘোষণাপত্রটি ইউনেস্কোর সদর দফতরে পৌঁছে দেয়। বাংলাদেশের এই প্রস্তাবের পক্ষে ২৮টি দেশ লিখিত সমর্থন জানায়। ইউনেস্কোর টেকনিক্যাল কমিটি কমিশন-২ এ প্রস্তাবটি উত্থাপিত হয় ১২ নভেম্বর ১৯৯৯ তারিখে। সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের প্রায় ৩০০ প্রতিনিধির সমর্থন লাভ করে প্রস্তাবটি গ্রহণযোগ্যতার স্বীকৃতি পায়। এরপর ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর সাধারণ সম্মেলনে ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষা হিসেবে সিয়েরালিওনের স্বীকৃতিঃ সিয়েরালিওন আফ্রিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের নাম। গৃহযুদ্ধে আক্রান্ত এ দেশটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয় জাতিসংঘ। জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে শান্তি রক্ষায় অংশ নেয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বিনা রক্তপাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সাফল্যের সাথে সেখানে শান্তি স্থাপন করতে সক্ষম হয়। সেনাবাহিনীর মুখে মুখে বাংলা ভাষা শুনে তারাও মুগ্ধ হয়। তারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতির পাশাপাশি বাংলা ভাষাকে তাদের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। অন্য কোনো একটি দেশের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া বাংলা ভাষা তথা বাঙালির জন্য গর্বের বিষয়।

স্মৃতি সংগ্রহ ও সংরক্ষণঃ ভাষা একটি দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। আর এই ঐতিহ্যকে আজও বাঙালি অন্তরে ধারণ করে রেখেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু সংগ্রহশালায় আজও সংরক্ষিত আছে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত সেই আমগাছের অবশিষ্ট অংশ, যেখানে গুলি চালানো হয়েছিল ভাষা শহিদদের উপরে। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে অতি যত্নের সাথে সংরক্ষণ করা হয়েছে ভাষা আন্দোলনের অনেক মূল্যবান তথ্য ও চিত্র।

স্বরণে ও বরণে একুশঃ ঐতিহ্য ও আচার অনুষ্ঠান পালনে বাঙালির তুলনা মেলা ভার। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১শে ফেব্রুয়ারিকে বাঙালি অনেক আগ্রহ অনুরাগ আর ভালোবাসার সাথে পালন করে। “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো ২১ শে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি” আপামর বাঙালি জনতা এই আত্মার গানটি গেয়ে শহিদ মিনার প্রাঙ্গনে সমাবেত হয়ে, পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহিদদের প্রতি অপার শ্রদ্ধা নিবেদন করে দিনটি শুরু করে। প্রভাতফেরীর সেই ঐতিহ্য আজও ধরে রেখেছে বাঙালি। বাঙালির রঙে রঙে, পোশাক-আশাকে প্রকাশ প্রায় একুশের আমেজ। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে সরকারি ও বেসরকারিভাবে আয়োজন করা হয় জারি, সারি, ভাওয়াইয়া গান, বাংলা কবিতা, নৃত্য ও আলোচনার অনুষ্ঠান।

২১-এর দীক্ষাঃ শুধু মাত্র উৎসবের মধ্যে একুশকে সীমাবদ্ধ রাখা মোটেই আমাদের কাম্য হতে পারে না। একুশ আমাদের যে শিক্ষা দিয়েছে তা আমাদের দীক্ষা হিসেবে নিতে হবে। একুশ হবে আমাদের কর্মচাঞ্চল্যের উদ্দীপনা। ২১-এর সত্যিকার ইতিহাস আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। বাংলাভাষার বিকাশ ঘটানোর জন্য আমাদের সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে। যে লক্ষ্যে আমাদের দেশের মেধাবী ছাত্ররা জীবন দিয়ে গেছে সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদেরই পদক্ষেপ নিতে হবে।

উপসংহারঃ

‘একুশ আমার চেতনাএকুশ আমার গর্ব’কেবল বাংলা ভাষাকে নয়, পৃথিবীর সকল ভাষার নিজস্ব মহিমা অক্ষুন্ন রাখার দীপ্ত শপথ নেবার দিন হচ্ছে একুশে ফেব্রুয়ারি- আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাঙালি হিসেবে আজ আমাদের সবার অঙ্গীকার সর্বস্তরে বাংলা-ভাষার প্রচার ও প্রসার।




চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান বাংলা রচনা






ভূমিকা: আধুনিক সভ্যতার যাবতীয় অগ্রগতির মূলে আছে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর সব আবিষ্কার। আক্ষরিক অর্থে বিজ্ঞান হলো, বিশেষ জ্ঞান। আর এই বিশেষ জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে প্রকৃতির রহস্য উম্মোচন করে মানবকল্যাণে নতুন নতুন আবিষ্কার করাই বিজ্ঞানের কাজ। আধুনিক সভ্যতার এই পর্যায়ে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সর্বত্রই বিজ্ঞানের জয়জয়কার। বিশেষত চিকিৎসাক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন সাধন করেছে বিজ্ঞান। চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানের আর্শীবাদে মানুষ অনেক জটিল ও দূরারোগ্য ব্যাধিকে জয় করতে সক্ষম হয়েছে।

চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান: “Health is Wealth” অর্থাৎ স্বাস্থ্যই সম্পদ। কেননা প্রচুর ধন-সম্পদের মালিক হয়েও স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে সুখী হওয়া যায় না। আর সুস্বাস্থ্যের নিশ্চয়তার জন্য চাই উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা। চিকিৎসাশাস্ত্রে নতুন নতুন আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে সুস্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা। বিজ্ঞানের আর্শীবাদে আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা চরম উৎকর্ষের দিকে এগিয়ে গেছে। চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর অগ্রগতি ক্রমাগত মানুষের জীবনযাত্রার মান বাড়িয়ে দিচ্ছে।

প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থা: প্রাচীন কালে মানুষ রোগবালাইকে স্রষ্টার অভিশাপ কিংবা অশরীরী শক্তির অশুভ দৃষ্টি বলে মনে করতো। রোগ মুক্তির কোনো উপায় তাদের জানা ছিল না। ফলে রোগ-বালাই, দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে আদি মানবেরা নির্বিচারে মারা পড়ত। পরবর্তীতে মানুষ রোগের হাত থেকে মুক্তি পেতে লতাপাতা, তাবিজ-কবচ, পানিপড়া, ঝাড়-ফুঁক প্রভৃতির উপর নির্ভর করা শুরু করে। এই অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতিকে একত্রে বলা হয় কবিরাজি চিকিৎসা ব্যবস্থা। এই কবিরাজি চিকিৎসা ব্যবস্থার ভিত্তিমূল হচ্ছে ধর্মীয় বিশ্বাস, এবং কুসংস্কার।

আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার উদ্ভব ও বিকাশ: সপ্তম শতাব্দীর কিছু পূর্বে সনাতন চিকিৎসা ব্যবস্থার পাশাপাশি ইউনানী চিকিৎসা ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটে। যদিও সর্বপ্রথম গ্রীসে এর উৎপত্তি, তবে আরবের মুসলিম চিকিৎসকেরা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। এক্ষেত্রে ইবনে সিনা, আল রাজি প্রমুখ মনীষীদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। ১৮১০-১৮৩৯ মধ্যবর্তী সময়কালে জার্মান বংশোদ্ভুত চিকিৎসক স্যামুয়েল হ্যানিম্যানের আবিষ্কৃত হোমিওপ্যাথি আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। সর্বোপরি আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটেছে আঠারো শতক থেকে উনিশ শতকের মধ্যবর্তী সময়কালে। মূলত আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি পুরোপুরি বিজ্ঞান নির্ভর।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান: উনিশ শতকে উদ্ভব ঘটলেও চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কারগুলোর বেশিরভাগই হয়েছে বিশ শতকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উল্লেখযোগ্য অবদানগুলোর মধ্যে আছে- কালাজ্বরের জীবাণু আবিষ্কার (১৯০০), সহযোগী হৃৎপি- আবিষ্কার (১৯০৮), কোলেস্টেরল (১৯১২), পেনিসিলিন (১৯২৮), রক্তরস আবিষ্কার (১৯৪০), কিডনী ডায়ালাইসিস মেশিন (১৯৪৩), ডিএনএ (১৯৫৩), পেসমেকার (১৯৫৩) ইত্যাদি। এ ছাড়াও ক্লোরোমাইসিন, স্ট্রেপটোমাইসিন, ওপেন হার্ট সার্জারি ও বাইপাসের সহযোগী যন্ত্রপাতি আবিষ্কার চিকিৎসা বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ অবদান। শব্দ তরঙ্গ ও আলোকরশ্মির সাহায্যে অস্ত্রোপচার না করেই মূত্রথলি ও পিত্তকোষের পাথর চূর্ণ করা চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অভাবনীয় সাফল্য। দূরারোগ্য ঘাতক ব্যাধি এইডসএর জীবাণু আবিষ্কার (১৯৮৪), আধুনিক কন্টাক্ট লেন্স (১৯৫৬) ছাড়াও ১৯৭৮ সালে সর্বপ্রথম টেস্টটিউবের মাধ্যমে মানব শিশুর জন্ম এবং ১৯৯৭ সালে ভেড়ার দেহকোষের সাহায্যে পূর্ণাঙ্গ শিশু ভেড়া ডলির জন্মগ্রহণের মাধ্যমে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান বিপ্লব ঘটিয়েছে। এতো সবের পরেও বিজ্ঞান থেমে থাকেনি বরং উত্তরোত্তর চিকিৎসা ক্ষেত্রে নানা আবিষ্কার অব্যাহত রেখেছে।

রোগ নির্ণয়ে বিজ্ঞান: রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান অনবদ্য সাফল্যের দাবিদার। রঞ্জনরশ্মি, এক্সরে, আলট্রাসনোগ্রাফি, ইসিজি, সিটি স্ক্যান, লেজার, মাইক্রোস্কোপ প্রভৃতি যন্ত্র আবিষ্কারের ফলে রোগ নির্ণয় অনেক সহজ হয়ে গেছে। আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে যকৃত, কিডনি, পিত্তথলিসহ শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অবস্থা নিরুপণ করা সম্ভব। আলোক তন্তু বা ফাইবার অপটিকস্ এর সাহায্যে ফুসফুস, পাকস্থলী, শিরা, ধমনী, বৃহদন্ত, ক্ষুদ্রান্ত্র প্রভৃতির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সঠিক রোগ নির্ণয় করা যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের যুগান্তকারী পরিবর্তনের ফলে ক্যান্সার, টিউমার প্রভৃতি দূরারোগ্য ব্যাধি সহজেই ধরা পড়ছে, যথাসাধ্য চিকিৎসা প্রদান সম্ভব হচ্ছে। রক্ত এবং মূত্র পরীক্ষার মাধ্যমে তৎক্ষণাৎ রোগ নির্ণয় করা যাচ্ছে।

রোগ প্রতিরোধে বিজ্ঞান: বিজ্ঞানের সহায়তায় রোগ প্রতিরোধেরও বিভিন্ন পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। শিশুদের আটটি মারাত্মক রোগ পোলিও, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হেপাটাইটিস-বি, যক্ষ্মা, হাম, হুপিং কাশি, ডিপথেরিয়া এবং ধনুষ্টংকারের প্রতিরোধক টীকা আবিষ্কারের ফলে শিশু মৃত্যুর হার অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া বসন্ত, জরায়ু ক্যান্সার প্রভৃতি জটিল রোগের প্রতিরোধক টীকা আবিষ্কার মানুষকে স্বস্তি দিয়েছে। অন্যদিকে, মাতৃত্বকালীন বিভিন্ন টীকা মাতৃ মৃত্যু হ্রাস ও নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে সহায়তা করছে।

রোগ নিরাময়ে বিজ্ঞান: চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের আর্শীবাদেই অনেক দূরারোগ্য ও জটিল রোগ থেকে মানুষ মুক্তি লাভ করছে। এমনকি অধ্যাপক কুরি ও মাদাম কুরি আবিষ্কৃত রেডিয়ামের সাহায্যে ক্যান্সারের মতো ঘাতক ব্যাধিরও চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে। আগুনে পোড়া কিংবা অ্যাসিড দগ্ধ মানুষকেও প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে স্বাভাবিক আকৃতি দেয়া সম্ভব হচ্ছে বিজ্ঞানেরই অবদানের ফলে। অন্যদিকে দুর্ঘটনায় অঙ্গহানি ঘটলেও বর্তমানে মানুষকে আর পঙ্গু হয়ে জীবনযাপন করতে হচ্ছে না কেননা বিজ্ঞানের আর্শীবাদে মানবদেহে কৃত্রিম অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন করার মতো অবিশ্বাস্য কাজটিও সম্ভব হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে কোনো রোগই চিকিৎসা বিজ্ঞানের আওতার বাইরে থাকবে না।

ওষুধ শিল্পে বিজ্ঞান: চিকিৎসার অপরিহার্য অঙ্গ হলো ওষুধ। বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলেই পেনিসিলিনের মতো মহৌষধ আবিষ্কৃত হয়েছে। এছাড়াও জ্বর, কাশি, সর্দি, মাথাব্যাথা, গ্যাসট্রিক প্রভৃতি সাধারণ অসুখ-বিসুখের জন্যেও নানা ধরণের ওষুধ আবিষ্কার করেছে বিজ্ঞান। বর্তমানে বিভিন্ন ধরণের ওষুধ আবিষ্কারের ফলে চিকিৎসাক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হয়েছে। ওষুধ আবিষ্কারে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ফলে অনেক জটিল রোগে অস্ত্রোপচার না করে কেবল ওষুধের মাধ্যমে রোগ নিরাময় করা যাচ্ছে।

চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানের গুরুত্ব: চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান মানব সভ্যতার অগ্রগতির ক্ষেত্রে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানের আবিষ্কারের পূর্বে রোগে, দুর্ঘটনায় প্রতিনিয়ত মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ত। মহামারীর কবলে পড়ে গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যেত। চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অপরিমেয় অবদান মানুষকে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেছে; দিয়েছে সুখী, সমৃদ্ধ, সুস্থ জীবন। আর শারীরিকভাবে সুস্থ এসব মানুষই দেশ ও জাতিকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অসুস্থ, অথর্ব মানুষ জাতিকে ভালো কিছু দিতে অক্ষম।

উপসংহার: প্রকৃতপক্ষে, চিকিৎসা ক্ষেত্র আজ পুরোপুরি বিজ্ঞান নির্ভর। রোগ-ব্যাধি-জরা থেকে মুক্তি পেতে প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের যে সাধনা, তা সফল হয়েছে বিজ্ঞানের সহায়তায়। মানুষ এখন আর বিনা চিকিৎসায়, রোগে কাতর হয়ে অকাল মৃত্যুকে বরণ করে নেয় না বরং বিজ্ঞান-ভিত্তিক চিকিৎসার আশ্রয়ে রোগমুক্তির চেষ্টা করে। বলতে গেলে, চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানের এই অগ্রগতির ফলে মানুষ প্রায় সকল রোগ-ব্যাধিকেই জয় করে ফেলেছে। মোটকথা, অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো চিকিৎসা ক্ষেত্রেও বিজ্ঞান বিপ্লব সাধন করেছে।






আর্সেনিক দূষণ ও তার প্রতিকার বাংলা রচনা






ভূমিকা: পানির অপর নাম জীবন। মানুষের জীবন রক্ষাকারী পানি আজ বিষাক্ত হয়ে পড়ছে আর্সেনিকের কারণে। আর্সেনিকযুক্ত পানি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারত্মক হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করে মানুষ ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। ৩০ বছর আগেও দেশের অগভীর নলকূপের পানি বিশুদ্ধ ছিল, কিন্তু ক্রমেই তা আর্সেনিক দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে আর্সেনিক বিষক্রিয়ার কোনো চিকিৎসা নেই।

আর্সেনিকের পরিচিতি: আর্সেনিক একটি বিষাক্ত খনিজ মৌলিক পদার্থ। এর কোনো স্বাদ বা গন্ধ নেই। আর্সেনিকের রাসায়নিক সংকেত A_{s} । পারমাণবিক সংখ্যা ৩৩ এবং পারমাণবিক ভর ৭৪.৯। অর্ধপরিবাহী ও শংকর ধাতু তৈরিতে আর্সেনিক ব্যবহৃত হয়। এটি মৌলিক পদার্থ হিসেবে থাকলে পানিতে দ্রবীভূত হয় না এবং বিষাক্তও হয় না। কিন্তু বাতাসে জারিত হয়ে অক্সাইড গঠন করলে এটি বিষাক্ত হয়ে ওঠে।

আর্সেনিকের উৎস: মানুষের দেহে, মৃত্তিকায় এবং সমুদ্রের পানিতে সামান্য পরিমাণ আর্সেনিক লক্ষ্য করা যায়। মাটির উপরিভাগের চেয়ে অভ্যন্তরে আর্সেনিক বেশি পরিমাণে পরিলক্ষিত হয়। মাটির নীচে পাথরের একটি স্তর আছে যাতে পাইরাইট্স্ (Fes_{2}) নামে একটি যৌগ আছে। এই যৌগে আর্সেনিক বিদ্যমান। তবে সবচেয়ে বেশি আর্সেনিক দেখা যায় শিলাখন্ডের ভূ-ত্বকে। আর্সেনিক সালফাইড, অক্সাইড ও আর্সেনাইড আর্সেনিকের প্রধান উৎস বলে বিবেচিত। আমাদের দেশে আর্সেনিকের মূল উৎস হলো নলকূপের পানি।

আর্সেনিক দূষণ: দেশে বর্তমানে আর্সেনিক দূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। মাটির নীচে বিশেষ স্তরে আর্সেনিক সঞ্চিত থাকে এবং নলকূপের পানির মাধ্যমে তা উত্তোলিত হয়। বিগত কয়েক দশক যাবত কৃষি উৎপাদনে রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে ফলে তা বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে দূষিত করছে নদী, নালা, খাল, বিল এবং সমুদ্রের পানি। এই অধিক মাত্রায় রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহার আর্সেনিক দূষণের একটি অন্যতম কারণ। মাটির বিশেষ যে স্তরে আর্সনোপাইরাইট নামক পদার্থ আছে ভূ-গর্ভস্থ থেকে অতিরিক্ত পানি উত্তোলনের কারণে তা পানির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। প্রতিদিন কৃষিকাজ থেকে শুরু করে নিত্য ব্যবহারের জন্য আমরা যে কোটি কোটি লিটার পানি উত্তোলন করি তাতে ভূগর্ভে যে সাময়িক শূন্যতার সৃষ্টি হয় এতে বায়ু এবং অক্সিজেন মিশ্রিত পানির সাথে আর্সেনিক মিশে যাচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে আর্সেনিক দূষণ।

আর্সেনিকের প্রকাশ: ১৯৭৮ সালে ভারতে সর্বপ্রথম আর্সেনিক দূষণের খবর পাওয়া যায়। ভারতের উত্তর ও দক্ষিণ পরগনার কোনো কোনো এলাকায় মানুষের দেহে আর্সেনিকের প্রভাব চোখে পড়ে। পরবর্তীতে তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সনাক্ত করা হয়।

বিষক্রিয়ার লক্ষণ: মানুষের দেহে আর্সেনিকের লক্ষণ তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশ পায় না। অনেক ক্ষেত্রে এর লক্ষণ প্রকাশ পায় ৬ মাস বা তারও পরে। পানিতে কি পরিমাণ আর্সেনিক আছে তার উপর ভিত্তি করে এর বিষক্রিয়া প্রকাশ পায়। বেশি মাত্রায় আর্সেনিক মিশ্রিত পানি অনেক দিন যাবত পান করলে এর লক্ষণ প্রকাশ পায় দ্রুত। প্রথমে দেহে কিংবা হাতের তালুতে বাদামী ছোপ দেখা যায়। পরবর্তীতে হাতের আঙ্গুলগুলোয় পচন ধরে। অনেক সময় আর্সেনিকের প্রতিক্রিয়ার ফলে মানুষের পায়ের তালুর চামড়া পুরু হয়ে যায় এবং আঙ্গুলগুলোও বেঁকে যায়। আর্সেনিক আক্রান্ত ব্যক্তি ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীর জিহ্বা, মাড়ি, ঠোঁটে লালভাব দেখা যায়। ক্ষুধামন্দা, খাদ্যে অরুচি এবং বমিবমি অনুভব করে। ধীরে ধীরে হৃদযন্ত্র নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। মানুষের রক্তে শ্বেত ও লোহিত কণিকার পরিমাণ কমে যায়। অনেক সময় রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত এবং গর্ভবতীদের ভ্রুনের মারত্মক ক্ষতি হয়।


প্রতিকার ও পদক্ষেপ: আর্সেনিক বিষক্রিয়া থেকে মুক্তির জন্য আপাতত প্রতিরোধক ব্যবস্থাই সবচেয়ে উপযোগী। বিজ্ঞানীরা আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা পদ্ধতি আজও আবিষ্কার করতে পারেনি। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে ০.০৫ মিলিগ্রাম আর্সেনিক মানুষের দেহের জন্য সহনীয় বলা হলেও বর্তমান রিপোর্টে বলা হয়েছে বাংলাদেশের জন্য এ মাত্রা ০.০১ মিলি গ্রামের বেশি হলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হবে। তাই প্রতিরোধ ও প্রতিকারের দিকেই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। গবেষণায় দেখা যায় কম গভীরতা সম্পন্ন নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা বেশি। বিশেষ করে ১০০-২০০ মিটার গভীরতায় আর্সেনিকের উপস্থিতি কম। আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধ এবং প্রতিকারের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে-

- গভীর নলকূপের পানি খাবার এবং রান্নার কাজে ব্যবহার করতে হবে।

- বৃষ্টির পানিতে আর্সেনিক থাকেনা। তাই বৃষ্টির পানি জমিয়ে রেখে ব্যবহার করতে হবে।

- রেডিও টেলিভিশন ও গ্রাম্য আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আর্সেনিক সম্পর্কে সচেতন করা।

- পুকুর এবং খাল-বিলের পানিতে আর্সেনিক থাকেনা এ ক্ষেত্রে পুকুরে, খাল বা বিলের পানি ছেঁকে ২০ মিনিট ফুটিয়ে পান করতে হবে।

- আর্সেনিক আক্রান্ত গ্রামে নতুন নতুন জলাশয় বা পুকুর খনন করে পানির ব্যবস্থা করতে হবে।

- সরকারি সহায়তার মাধ্যমে আর্সেনিক বিশোধন প্ল্যান্ট স্থাপন করা।

- সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময় পর পর নলকূপের পানি পরীক্ষা করতে হবে।

- বালতি, কলসি এবং SOES, CSIR-এর যৌথ প্রচেষ্টায় উদ্ভাবিত ফ্লাই এ্যাশ দিয়ে ফিল্টারের মাধ্যমে পানি বিশুদ্ধ করা।

- আর্সেনিকযুক্ত নলকূপগুলোকে লাল রং দিয়ে চিহ্নিত করে সেগুলো থেকে পানি পান বন্ধ করে দিতে হবে।

- আর্সেনিক কোনো সংক্রামক বা ছোঁয়াছে রোগ নয় তাই আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ নিতে হবে।



আমাদের করণীয়: আর্সেনিক যেহেতু ছোঁয়াছে রোগ নয় তাই আতঙ্কিত না হয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং গ্রাম পর্যায়ে আর্সেনিক থেকে মুক্ত থাকার পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারি এবং বেসরকারি সহায়তা বৃদ্ধি করতে হবে।

উপসংহার: খাবার পানির মাধ্যমে আর্সেনিক মানুষের শরীরে প্রবেশ করে, তাই আর্সেনিকমুক্ত বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। যক্ষ্মা, কলেরা, বসন্ত ইত্যাদি রোগের মতো এ রোগকেও নির্মূল করার পদক্ষেপ নিতে হবে। জনগণকে সচেতন হতে হবে এবং আর্সেনিক আক্রান্ত এলাকায় সরকারকে নিরাপদ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।





রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক বাংলা রচনা




ভূমিকাঃ ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী দেশ ভারত। তাই স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকে ভারতের সাথে বাংলাদেশের গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠে। দুটি দেশের মধ্যে যে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মিল রয়েছে সেটিই মূলত এই সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে।

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কঃ প্রতিবেশী হিসেবে ভারত বাংলাদেশ পরস্পর একে অপরকে সর্বদা সহযোগিতা করে থাকে। যার ফলে উভয়ের মাঝেই সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তবে সম্পর্কের ভালো ও খারাপ উভয়দিকই রয়েছে। নিম্নে সে বিষয় সম্পর্কে আলোকপাত করা করা হলো-

সম্পর্কের ভালো দিকঃস্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হতে আজ পর্যন্ত ভারতের সাথে বাংলাদেশের খুব ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। সম্পর্কের এ ভালো দিকগুলো হলো-

স্বাধীনতা যুদ্ধঃ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটা নতুন ভূ-খন্ডের সৃষ্টি হয়। যেখানে ভারত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ভারতের সহযোগিতা ছাড়া এত অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্ভবপর ছিল না। সে সময় বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। তারা অসংখ্য বাঙালি যুবককে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ যোদ্ধা হিসেবে গড়ে তোলে। শুধু তাই নয় ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী মিলে গঠন করেছিল যৌথবাহিনী। এর ফলেই মাত্র ৯ মাসের মধ্যে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করতে সমর্থ হয়। তাছাড়া স্বাধীনতার প্রথম স্বীকৃতিটাও আসে ভারতের কাছ থেকে।

বাণিজ্যঃ ভারতের সাথে বাংলাদেশের ব্যাপক বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ বিভিন্ন দ্রব্যাদি ভারত থেকে এদেশে আমদানি করা হয়। আবার বাংলাদেশ থেকেও বিভিন্ন জিনিস ভারতে রপ্তানি করা হয়। যার ফলে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক দিক দিয়ে একটা মধুর সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সময় বাণিজ্যিক চুক্তিও সম্পাদিত হয়েছে। যা দুটি দেশের অর্থব্যবস্থাকে অনেকখানি প্রভাবিত করছে।

সন্ত্রাস প্রতিরোধ এবং অবৈধ মাদক পাচার রোধ চুক্তিঃ কোনো সন্ত্রাসী চক্র এবং তাদের সহযোগিরা যদি দেশবিরোধী সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালায় এবং তাতে রাষ্ট্রীয় সীমানা ব্যবহার করে তবে দুটি দেশ প্রয়োজনীয় ও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় করতে পারবে। এছাড়া অবৈধ মাদক পাচার এবং তার অপব্যবহার বন্ধের জন্য চুক্তি সম্পাদান করেছে উভয় দেশ। সেটি ভারত ও বাংলাদেশের সন্ত্রাস দমনে সাহায্য করে।

ঋণ সহায়তা চুক্তিঃ কোনো দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য প্রতিবেশী বা অন্য কোনো দেশের ঋণ সহায়তা দরকার। সেটি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। সম্প্রতি তথা ২০১০ সালের ৭ আগস্ট ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সাত হাজার কোটি টাকার ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যার সঠিক বিনিয়োগে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হতে পারে।

যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ ভারতের সাথে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। দুদেশের মধ্যে বিমান যোগাযোগ ছাড়াও রেল ও সড়ক যোগাযোগ চালু হয়েছে। যার মাধ্যমে পণ্য পরিবহন ও যাত্রী বহনের সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে।

বিদ্যুৎ সুবিধাঃ বিদ্যুৎ ছাড়া বর্তমান যুগকে কল্পনাই করা যায় না। তাই দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ২০১০ সালের ২৬ জুলাই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৩৫ বছর মেয়াদি বিদ্যুৎ সঞ্চালন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এছাড়া ২০১০ সালের ১২ জানুয়ারি যে ৫০ দফা ঘোষণা দেয়া হয় সেখানেও বাংলাদেশকে ভারত ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিতে সম্মত হয়।

সম্পর্কের নেতিবাচক দিকঃ ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কের যেমন ভালো দিক রয়েছে। বিপরীতে খারাপ দিকও কম নয়। উভয় দেশের সম্পর্কের খারাপ দিকগুলো হলো-

পানি বণ্টন সমস্যাঃ স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশ প্রথম যে সমস্যার সম্মুখীন হয় তা হলো পানি বণ্টন সমস্যা। বাংলাদেশের প্রায় সকল নদীর পানির উৎস হচ্ছে ভারত। তাই আমাদের পানির প্রবাহ মূলত ভারতের উপর নির্ভরশীল। আর বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হওয়ায় পানির প্রয়োজনীয়তা খুব বেশি। কিন্তু ভারত বরাবরই এ প্রয়োজনীয়তাকে আগ্রহ্য করে এসেছে। ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের ফলে পদ্মার প্রবাহ স্তিমিত হয়ে গেছে। বর্তমানে যে টিপাইমুখ বাঁধ দেয়ার কথা বলা হচ্ছে যা কার্যকর হলে বাংলাদেশ ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

বিএসএফের কর্মকান্ডঃ ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা নির্বিচারে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা করলেও তার কোনো বিচার হয় না। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত শত শত মানুষ সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়। যা দুটি দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটা বড় হুমকি।

গ্যাস রপ্তানির ক্ষেত্রে বিতর্কঃ বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার আরেকটি সমস্যা হচ্ছে গ্যাস রপ্তানির ক্ষেত্রে সমস্যা। রপ্তানি করার মতো যথেষ্ট গ্যাস আমাদের দেশে মজুদ নেই। কিন্তু ভারত গ্যাস রপ্তানি করার জন্য বাংলাদেশকে ব্যাপক চাপ প্রয়োগ করছে। ফলে উভয় দেশের মাঝে সমস্যা নতুন করে রূপ নিচ্ছে।

অবাধ বাণিজ্য চুক্তিঃ ভারত এবং বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে রয়েছে চরম ভারসাম্যহীনতা। তার উপর আবার প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে অবাধ বাণিজ্য চুক্তি। এর ফলে ভারতের পণ্য মুক্তভাবে বাংলাদেশে প্রবেশাধিকার পাবে। যে কারণে বাংলাদেশের পণ্য ও শিল্প কারখানা ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

ট্রানজিট সমস্যাঃ ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় যে সাতটি রাজ্য রয়েছে তা এক অর্থে বাংলাদেশের ভূমি দ্বারা বিচ্ছিন্ন। এসব রাজ্যে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে কিন্তু সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে এ সমস্ত সম্পদকে কাজে লাগিয়ে উক্ত অঞ্চলের উন্নয়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সহজ যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার জন্য ভারত বাংলাদেশের ওপর দিয়ে সাতটি রাজ্যে যাওয়ার ট্রানজিট দাবি করছে। অন্যদিকে বাংলাদেশও ভৌগোলিক অখ-তা ও আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এটিকে সমর্থন দিতে পারছে না। ফলে উভয় দেশের মধ্যে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে।

অন্যান্য সমস্যাঃ উপরিউক্ত সমস্যা ছাড়াও ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে আরো কিছু সমস্যা রয়েছে। যেমন- নদী ও সমুদ্রসীমা নির্ধারণ সংক্রান্ত সমস্যা, সীমানা চিহ্নিতকরণ ও ছিটমহল বিনিময় সংক্রান্ত সমস্যা প্রভৃতি। তাদের বিমাতাসুলভ আচরণের আরেকটি বড় উদাহারণ হচ্ছে ক্রিকেটে বাংলাদেশ প্রায় ১ যুগ আগে টেস্ট স্ট্যাটাস পেলেও প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আজ পর্যন্ত একটি পূর্ণাঙ্গ সিরিজের জন্য আমন্ত্রণ জানায়নি।

সমস্যা সমাধানের উপায়ঃ ভারতের সাথে বাংলাদেশের বহুবিধ সমস্যা রয়েছে। তবে এসব সমস্যাকে জটিল না করে বরং সমাধানের পথ খুঁজে বের করা উচিত। নিম্নে এরকম কিছু সমাধানের উপায় উল্লেখ করা হলো-

* ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তার বাস্তবায়ন ঘটলে পানি বণ্টন সমস্যা অনেকখানি সমাধান হবে।

* ভারতের বিএসএফ কর্তৃক সীমান্তে বিনা কারণে হত্যাকান্ড ঘটে। তার সুষ্ঠু বিচার হলে এ সমস্যা থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব হবে।

* ভারত যাতে আগ্রাসীভাবে কোনো কিছু বাংলাদেশের উপর চাপিয়ে দিতে না পারে সেজন্য বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে।

* ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে জনমত গঠন ও জাতীয় আন্দোলনের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে মূখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।

* ভারত যদি বাংলাদেশের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে না আসে তাহলে বিষয়টি আন্তর্জাতিক ফোরামে উত্থাপন করা যেতে পারে।

* সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ সরকারকেই বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ সরকারের জোরালো উপস্থাপনই বিশ্ব সংস্থার কাছে এদেশের সমস্যাগুলো গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে।

* সর্বোপরি পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ, ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থ ভুলে জাতীয় স্বার্থে বাংলাদেশ ও ভারতকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তবেই সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া যাবে।

উপসংহারঃ প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত-বাংলাদেশ একে অপরের উপর কম-বেশি নির্ভরশীল। তাই উভয় দেশের উন্নয়নের স্বার্থে সুসস্পর্ক বজায় রাখা অপরিহার্য। কিন্তু ভারতের সাথে বাংলাদেশের এমন কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো খুবই জটিল। সেক্ষেত্রে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের কথা মাথায় রেখে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বাংলাদেশকে সামনের দিকে পা বাড়াতে হবে।


                                   সমাপ্ত