শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৯

সমাজসেবা বাংলা রচনা





ভূমিকা: মানুষ যেদিন থেকে গুহাবাস ছেড়ে সমাজবদ্ধ ও সুশৃঙ্খল জীব হিসেবে বসবাস করতে অভ্যস্ত হলো, সেদিন থেকে এক বৃহত্তর মঙ্গল কামনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার অঙ্গীকার গ্রহণ করলো। মানুষ আজ সভ্যতার চরম শিখরে আরোহন করছে। আর এটা মানুষের একক প্রচেষ্টায় সম্ভব হয়নি বরং যুগ যুগান্তর ধরে চলে আসা মানব সম্প্রদায়ের বৃহত্তর স্বার্থ অর্জনের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। সমাজজীবন মাত্রই সহযোগিতা, সহিষ্ণুতা, মনুষ্যত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ ও প্রতিফলন। সমাজ সেবার মাধ্যমে একটি কর্মমুখর, সচল ও উন্নত সমাজ গঠন করা সম্ভব। সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর মধ্যেই জীবনের যথার্থ সার্থকতা নিহিত। অপরের কল্যাণ কামনাকে প্রাধান্য দিয়ে নিজের স্বার্থকে ত্যাগ করার নামই সমাজসেবা।

সমাজসেবার বৈশিষ্ট্য: প্রখ্যাত কবি কামিনী রায় তাঁর ‘পরার্থে’ কবিতায় যথার্থই উল্লেখ করেছেন-

‘আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেহ অবনী পরে,
সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।’সমাজে একসাথে বাস করতে গেলে কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য ব্যক্তির উপর আপনা আপনিই বর্তায়। প্রকৃত সামাজিক জীব হিসেবে প্রত্যেক মানুষের উচিত স্ব স্ব অবস্থান থেকে যথাসাধ্যভাবে এসব দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলো পালন করা। বৃহত্তর জনগোষ্ঠির কল্যাণ কামনাই সমাজ সেবা। যে বিশ্বমানব গোষ্ঠির জন্য নিজেকে নিবেদিত রাখে সেই প্রকৃত মহৎ হৃয়ের মানুষ। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন- ‘আপনা রাখিলে ব্যর্থ জীবন সাধনা/জনম বিশ্বের তরে পরার্থে কামনা।’ পাশ্চাত্য মনীষী Ruskinবলেন- “There are three kinds of duties; duties towards God, duties towards Parents and duties towards mankind.”

সমাজ সেবার ধর্মীয় মূল্যবোধ: বিভিন্ন ধর্মে সমাজ সেবাকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়েছে। বিশ্বনবী হযরত মুহম্মদ (স.) বলেছেন- ‘মানুষের মধ্যে তিনিই শ্রেষ্ঠ যিনি মানুষের উপকার করেন। মানব সেবা সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিয়ে স্বামী বিবেকানন্দ বলে গেছেন- ‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’। মানবতার কল্যাণ সাধনের মহান ব্রতে উদ্বুদ্ধ হয়ে মহাপুরুষ বুদ্ধদেব সংসার জীবন, সুখ-ঐশ্বর্য ও সাম্রাজ্য সব কিছুর সাথে যোগাযোগ ছিন্ন করে পথে বের হয়েছিলেন। বিভিন্ন ধর্ম শাস্ত্র-, প্রবিত্র কুরআনে, রামায়ন-মহাভারতে, মহাকাব্যে, পুরাণে সমাজ সেবা তথা জনসেবাকেই শ্রেষ্ঠ ধর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

সমাজ সেবার গুরুত্ব: পারস্য কবি শেখ সাদী বলে গেছেন-

সেজদা ও তসবিহ দেখে, খোদ এলাহি ভুলবে না
মানবসেবার কুঞ্জি ছাড়া স্বর্গদ্বার খুলবে না’সুতরাং একথা অকপটে বলা যায় যে, ইহলৌকিক ও পরলৌকিক মুক্তির পথ নিশ্চিত করতে সমাজ সেবার গুরুত্ব অপরিসীম। মানবতার সেবা তথা সমাজসেবার মাধ্যমেই জীবনের প্রকৃত আত্মতৃপ্তি লাভ করা যায়। সমাজসেবার মহান ব্রতে সবাই একতাবদ্ধভাবে এগিয়ে আসলে সমাজের রূপই পাল্টে যায়, যার প্রভাব উন্নত দেশ ও জাতি গঠনে ব্যাপক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। অন্যের কল্যাণ কামনায় নিয়োজিত করতে পারার মধ্যেই মানুষের জীবন সুখময় ও আনন্দময় হয়ে ওঠে। যে জাতি যতো সমৃদ্ধ ও উন্নত তাদের মধ্যে জাতীয় ঐক্য ও সমাজসেবার প্রবণতা ততো বেশি।

সমাজসেবার ধরণ ও পদ্ধতি: রজনীকান্ত সেন সমাজসেবার পরিচয় ও পদ্ধতি উল্লেখ করে বলেছেন:

‘অন্নহীনে অন্নদান, বস্ত্রহীনে বস্ত্রদান তৃষ্ণাতুরে জল দান,
ধর্ম ধর্মহীনে, মুর্খজনে বিদ্যাদান,
বিপন্নে আশ্রয়, রোগীর ঔষধ দান,
ভয়ার্তে অভয়, গৃহহীনে গৃহদান,
অন্ধেরে নয়ন, পীড়াতে আরোগ্যদান,
শোকার্তে সান্তনা, স্বার্থ শূণ্য হয়
যদি এ দ্বাদশ দান
স্বর্গের দেবতা নহে দাতার সমান’।সমাজে কেউ বিত্তবান, আবার কেউ অসহায়। যারা সম্পদশালী তারা আর্থিকভাবে সাহায্য দিয়ে সমাজের দীন-দুঃখীদেরকে সাহায্য করতে পারে। আর যাদের সে সামর্থ্য নেই, তারা সান্তনা দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে, অসুস্থকে সেবা দিয়ে, সাধ্যমতো শ্রম দিয়ে অপরের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করতে পারে। সমাজসেবা করতে যখন বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের লোক একতাবদ্ধ হয় তখন সমাজে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাথে সঙ্গতি রেখে পাঠ কার্যক্রম পরিচালনা ও স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ যথা-অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খরা, বন্যা, ভূমিকম্প-এসবের সময় জনসাধারণের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে এবং পূর্ব থেকে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

রাজনৈতিক দল ও সমাজ সেবা: সমাজ সেবার সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর এক নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। সমাজসেবা করার এক অন্যতম মাধ্যম হতে পারে রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিক দলগুলো জনবল, প্রশাসনিক ও আর্থিক সব দিক দিয়েই ক্ষমতাসম্পন্ন। তারা যদি ন্যায়-নিষ্ঠার সাথে এসব ক্ষমতাকে কাজে লাগায় তাহলে সমাজে মানুষ উপকৃত হবে। আর তারা যেহেতু জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হন সেহেতু জনগণের কল্যাণসাধনা তাদের ক্ষমতা অর্জনের প্রধান ব্রত হওয়া উচিত। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ প্রতিশ্রুতিমূলক কথাবার্তা আর আশার আলো দেখিয়ে ক্ষমতা অর্জন এবং অধীকৃত ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার দিকেই তাদের প্রাণান্ত প্রচেষ্ঠা।

সমাজসেবার নিয়মিত চর্চা: সভা-সমাবেশ, সিম্পোজিয়াম, পোস্টার ছাপানোসহ বিভিন্নভাবে জনমনে সমাজসেবা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সমাজ সেবা প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা একটি প্রথা। যুগের বিবর্তনে সমাজ ক্রমশ বিকাশ ও উন্নতি লাভ করছে। সমাজ সেবার প্রবণতা যদি প্রাচীন আমল থেকে প্রচলিত না থাকতো তাহলে বর্তমানে আমরা এমন সুসভ্য সমাজজীবন উপভোগ করতে পারতাম না।

মহান আদর্শ: সমাজসেবার ক্ষেত্রে বাংলার ক্ষুদিরাম, নূর হোসেন, হাজী মুহম্মদ মহসীন, শেরে বাংলা ফজলুল হক, মওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান, আফ্রিকার বর্ণপ্রথা বিরোধী বিশ্বখ্যাত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা, আর্জেন্টিনার চে গুয়েভার প্রমুখ মহান নেতার নাম উল্লেখযোগ্য। জনকল্যাণে আত্মনিয়োগ করার মাধ্যমেই ইতিহাসে তারা চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তারা শুধুমাত্র অর্থদিয়ে নয়, নিঃস্বার্থভাবে জীবন দিয়ে মানবকল্যাণে আত্মনিয়োগ করে গেছেন। এসব মহৎপ্রাণ ব্যক্তির জীবনাদর্শ অনুসরণ করে সমাজসেবায় আমরা নিজেদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে পারি।

আন্তর্জাতিক সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা:বিশ্বব্যাপী মানুষের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পৃথিবীর সবদেশে সমাজসেবার ধারণা জনপ্রিয়তা লাভ করছে। সামাজিক সুযোগ-সুবিধাগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে বিশ্বব্যাপী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান। এদের মধ্যে OIC, RED CRESENT SOCIETY, UNO, UNICEF, UNESCO প্রভৃতি সংস্থার নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন এনজিও, রামকৃষ্ণ মিশন, বাঁধন ইত্যাদি।

উপসংহার: সমাজসেবায় মনুষ্যত্বের বিকাশ লাভ হয়। সমাজসেবার মাধ্যমে একজন অপর জনের কাছাকাছি আসতে পারে। ফলে সমাজে মানুষের সাথে মানুষের আত্মার বন্ধন গড়ে ওঠে। নিঃস্বার্থ সমাজসেবা মানুষের অনিন্দ্য সুন্দর গুণাবলির একটি। প্রত্যেক মানুষের উচিত নিজের ভিতরে লুকিয়ে থাকা হিংসা-বিদ্বেষ, কপটতা-ভন্ডমি, এসব কুপ্রবৃত্তিকে শক্ত হাতে দমন করে সমাজসেবার মহান আদর্শে নিজেকে পরিচালিত করা।






মাতা-পিতার প্রতি কর্তব্য বাংলা রচনা




ভূমিকা: পৃথিবীতে হাজারও সম্পর্কের মাঝে সব থেকে তাৎপর্যপূর্ণ সম্পর্কের বন্ধন গড়ে ওঠে সন্তান এবং মাতাপিতার মধ্যে। যারা আমাদেরকে এই পৃথিবীতে এনে এর অফুরন্ত সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ করে দিল তারা আমাদের শ্রদ্ধেয় বাবা-মা। খুব অসহায় অবস্থায় একটি শিশু জন্মগ্রহণ করে। পৃথিবীতে এসে পিতা-মাতার যথাযথ লালন-পালন, আদর, স্নেহ, মমতা ও শিক্ষা-দীক্ষার মাঝে বেড়ে ওঠে সন্তান। সুতরাং সন্তানের জীবনে পিতামাতার অবদান অনস্বীকার্য। পিতা-মাতার এই অবদান পরিমাপ করা বা এর মূল্য নির্ণয় করা কোনো সন্তানের পক্ষেই পুরোপুরিভাবে সম্ভব নয়। সন্তানের জন্য পিতামাতা একমাত্র নিরাপদ স্থান। সুতরাং প্রত্যেক সন্তানের উচিত মাতা-পিতার প্রতি তাদের যে কর্তব্য তা সঠিকভাবে পালন করা এবং সব সময় তাদের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখা।

মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য: সন্তানের জন্য আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নিয়ামত হচ্ছে তার মাতাপিতা। একারণে সন্তানের জীবনে মাতা-পিতার গুরুত্বও সবচেয়ে বেশি। তাদের অধিকার প্রদান করাই সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সন্তানদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে সব থেকে প্রথমে যেটা আসে তা হলো পিতা-মাতার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, তাদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা। বাবা-মা’র সন্তুষ্টি অনুযায়ী সন্তানের পথ চলা উচিত। প্রত্যেক সন্তানের উচিত সব সময় পিতা-মাতার বাধ্য থাকা এবং তাদের আদেশ নিষেধ মেনে চলা। বাবা-মায়ের যখন বার্ধক্য চলে আসে তখন তারা নবজাতক শিশুর মতোই অসহায় হয়ে পড়েন। এক্ষেত্রে পিতা-মাতাকে বোঝা না ভেবে তাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করা সন্তানের দায়িত্ব। ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে- ‘যে ব্যক্তি বৃদ্ধ অবস্থায় তার বাবা-মাকে পেল কিন্তু তাদের সেবা-যত্ন করল না তার মতো হতভাগা আর কেউ নেই।’ পাশ্চাত্য মনীষী রাস্কিন মনে করেন পৃথিবীতে মানুষের তিনটি কর্তব্য আছে-‘‘Duty towards God, duty towards parents and duty towards mankind’’. ফলে পেশাগত সফলতা টিকিয়ে রাখতে এবং তথাকথিত অভিজাত সমাজে নিজের মূল্যবোধ বজায় রাখতে গিয়ে সন্তানের কাছে তার নিজের বৃদ্ধ বাবা-মার স্থান হয় বৃদ্ধাশ্রম। এই অপসংস্কৃতির হাওয়া আমাদের দেশেও বইছে। আমাদের শিক্ষিত সচেতন সমাজের উচিত এটা রোধ করা। তাই পিতা-মাতা মনে কষ্ট পায় এমন কোনো কাজ করা উচিত নয়।

বিভিন্ন ধর্মে পিতামাতার স্থান: ধর্ম যাই হোক সন্তান এবং পিতা-মাতার মধ্যকার ভালোবাসার অনুভূতিগুলো একই রকম ও অকৃত্রিম। প্রত্যেক ধর্মেই মাতাপিতাকে মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। ইসলাম ধর্মের পবিত্র কুরআন এবং হাদীস শরীফে মাতা-পিতাকে সর্বোচ্চ আসনে ভূষিত করে বলা হয়েছে। হাদিসে আছে- ‘পৃথিবীতে যদি সৃষ্টিকর্তা ব্যতীত অন্য কাউকে সেজদা করার হুকুম দেওয়া হতো, তবে তা হতো মাতা-পিতাকে সেজদা করা।’ হিন্দু ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ আছে ‘জননী স্বর্গ অপেক্ষা গরীয়সী। পিতা স্বর্গ, পিতা ধর্ম, পিতাই পরম তপস্যার ব্যক্তি।’ খ্রিস্টান ধর্মেও একই রকমের কথা উল্লেখ আছে। বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটকে বলা হয়েছে ‘মাতাপিতার সেবা করাই সবচেয়ে উত্তম’।

মাতাপিতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল মহান ব্যক্তিদের দৃষ্টান্ত: ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় পৃথিবীতে মরেও যারা অমর এবং চিরস্মরণীয় হয়ে মানুষের হৃদয়ে আজও বেঁচে আছেন। তাঁরা সকলেই মাতৃ ও পিতৃভক্তির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আমাদের প্রিয় নবী রাসূল (স.) শৈশবেই তাঁর মাকে হারিয়ে দুধমাতা হালিমার স্নেহ-মমতায় বেড়ে ওঠেন। দুধমাতা হলেও তিনি তাঁকে নিজের মায়ের মতোই ভালোবাসতেন। হযরত বায়েজীদ বোস্তামি ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নাম ইতিহাসে মাতৃভক্তদের তালিকায় চিরকালই স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। রাম পিতৃসত্ব পালনের উদ্দেশ্যে চৌদ্দবছর বনবাস কাটিয়েছিলেন। হযরত আব্দুল কাদির জিলানী, হাজী মুহম্মদ মহসীন, জর্জ ওয়াশিংটন ও আলেকজান্ডার প্রমুখ মহান ব্যক্তিগণ মাতা-পিতার প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ইতিহাসে যুগ-যুগান্তর ধরে চির স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন এবং থাকবেন।

পিতা-মাতার প্রত্যাশা পূরণ: সন্তানের বেড়ে ওঠা, তার যথাযথ লালন-পালন, তাকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলা এসব ঘিরেই পিতা-মাতার জগৎ। পিতামাতা সন্তানের জন্য সীমাহীন কষ্ট স্বীকার করেন। সব বাবা-মার একটাই প্রত্যাশা-‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’। সন্তানের সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে ওঠার পেছনে বাবা-মার নিরলস সাধনা বিরাট ভূমিকা পালন করে। প্রত্যেক মাতা-পিতাই চান তাদের ছেলেমেয়েরা সুসন্তান হিসেবে সমাজে মাথা তুলে দাঁড়াক, সকল প্রকার অন্যায় ও মিথ্যাকে প্রতিহত করার ক্ষমতা অর্জন করুক। এসব প্রত্যাশা পূরণ করার মাধ্যমেও তাদের প্রতি কর্তব্য পালন করা যায়।

অনুগত ও সন্তুষ্ট থাকা: সব রকম পরিস্থিতিতে পিতামাতার প্রতি অনুগত থাকতে হবে এবং বিরক্ত হওয়া যাবে না। সন্তান যতো বড় মাপের মানুষই হোক না কেনো বাবা-মার কাছে সে শুধুমাত্র তাদের সন্তান। বাবা-মা তাদের সাধ্যমতো আমাদেরকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কখনও কিছু দিতে ব্যর্থ হলে তাদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করা যাবে না। সন্তানের কাছ থেকে তারা সন্তানস্বরূপ বিনয়ী আচরণই আশা করেন। পিতামাতা সন্তানের সর্বোত্তম বন্ধু তাদেরকে শান্তিতে এবং চিন্তামুক্ত অবস্থায় রাখা সন্তানের কর্তব্য।

পিতামাতার আদর্শ ও সম্মান বজায় রাখা: প্রত্যেক সন্তানেরই উচিত তাদের পিতামাতার আদর্শ ও ন্যায়নীতি অনুসরণ করে চলা। সমাজে তাদের মান সম্মান ক্ষুন্ন হয় এমন কোনো কাজ করা উচিত নয়। পিতামাতার ভালোবাসা এতটাই গভীর যে সন্তান বিপথগামী হলেও তাকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে না। তাই সব সময় তাদের আদেশ-নিষেধ মেনে চলতে হবে। তবে পিতামাতা যদি ধর্মবিরোধী কোনো কাজ যেমন-শিরক ও কুফরে লিপ্ত হতে বলে তবে সে ক্ষেত্রে তাদের নির্দেশ মানা যাবে না। সমাজে যারা পিতা-মাতার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও সহকর্মী তাদের সাথে সুসম্পর্ক রেখে পিতামাতার সম্মান বৃদ্ধি করা যায়।

সন্তান ও পিতামাতার মধ্যকার সম্পর্ক: সন্তান তার পিতামাতার সাথে সব সময় সদাচরণ করবে এবং কোমল কণ্ঠে ও মার্জিত ভাষায় কথা বলবে। কোনো অবস্থাতেই পিতামাতার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে না। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে পিতা তার ভরণ-পোষণ ও লালন পালনের ব্যবস্থা করে। মাতৃদুগ্ধ সন্তানের আহারের সংস্থান করেন। সুতরাং সন্তানের সাথে পিতামাতার রক্তের এবং নাড়ীর বন্ধন। বিপথগামীতা এবং অবাধ্যতার দ্বারা এই বন্ধনকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা উচিত নয়।

মৃত্যুর পর তাদের জন্য করণীয়: মৃত্যুর পর পিতামাতার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত ও শান্তিকামনা করে সন্তানের দোয়া করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেছেন- ‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ীয়ানী সাগীরা’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আমার পিতা-মাতার প্রতি রহমত বর্ষণ করুন যেমনিভাবে তারা আমাকে শৈশবে লালন পালন করেছেন’। মৃত্যুর পূর্বে পিতামাতার কোনো ঋণ বা দেনা থাকলে তা পরিশোধ করা সন্তানেরই কর্তব্য। ঋণ পরিশোধ করলে পিতামাতা ও সন্তান উভয়েই পরকালে লাভবান হবে। পূর্বে কারও সাথে ওয়াদাবদ্ধ হলে তা পূরণ করা সন্তানের দায়িত্ব।

উপসংহার: ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী- মাতা-পিতার সন্তুষ্টি অর্জন ব্যতীত কোনো ব্যক্তি বেহেশতে স্থান পাবে না। পিতামাতার সাথে নফরমানী করলে পার্থিব জীবনেও লাঞ্চনার স্বীকার হতে হবে এবং পরকালেও কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে। অন্যান্য ধর্মেও পিতামাতার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের ব্যাপারে কঠোর বাণী উচ্চারিত হয়েছে। সুতরাং ইহকালীন এবং পরকালীন মুক্তির পথ সুগম করতে হলে পিতামাতার প্রতি কর্তব্যগুলো ঠিকভাবে পালন করতে হবে। সব সময় মনে রাখতে হবে প্রত্যেক বাবা-মা তার সন্তানের ভালো চান। সুতরাং তাদেরকে মেনে চলতে হবে।





কৃষিকাজে বিজ্ঞান বাংলা রচনা




ভূমিকা: বিজ্ঞানের উৎকর্ষের ধারাবাহিকতায় কৃষির বিবর্তন মানুষের জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন এনেছে। কৃষি নির্ভরশীলতা, কৃষি উৎপাদন আজ এক অনন্য মাত্রায় স্থান পেয়েছে। বিজ্ঞানের জয়জয়কারের মাঝে সনাতনী কৃষি ব্যবস্থা আবির্ভূত হয়েছে বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থায়। এই বিবর্তনের সুফল যেমন কৃষক ভোগ করছে তেমনি সাধারণ মানুষ। যা একশ বছর আগের মানুষের কল্পনাতেও ছিল না। পৃথিবীর প্রাচীনতম পেশা কৃষিতে আধুনিক বিজ্ঞানের ছোঁয়া ফসলের সংরক্ষণ ব্যবস্থার এক বৈপ্লবিক উন্নয়ন সাধন করেছে। যা আধুনিক বিজ্ঞানের অন্যতম বিস্ময়।

কৃষির সনাতন পদ্ধতি: কৃষি সরাসরি মানুষের অস্তিত্বের সাথে সম্পর্কিত বিষয়। আদিম সমাজ থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত কৃষির গুরুত্ব অপরিবর্তিত রয়েছে টিকে থাকার প্রয়োজনে। প্রয়োজন যেমন উদ্ভাবন করতে অনুপ্রাণিত করে তেমনি আদিম সমাজের মানুষ বেঁচে থাকার জন্য কৃষির প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি তৈরি করেছে। যার মাধ্যমে তারা চাষাবাদ করত। প্রাথমিক অবস্থায় গরু, ঘোড়া, মহিষ প্রভৃতি জন্তুর সাহায্যে লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করা হতো। আবহাওয়া নির্ভরশীল কৃষি ব্যবস্থার কারণে প্রচ- খরায় ও অতিবৃষ্টিতে ফসলহানির কারণে দুর্ভিক্ষ দেখা দিত। একই ফসল একই জমিতে ধারাবাহিক উৎপাদনের ফলে জমির উর্বরতা হ্রাস পেত। ভাল ও উন্নত বীজের গুণগত মান নির্ণয় করা যেত না, যে কারণে ফসলের উৎপাদন ভাল হত না। বৃষ্টির উপর একক নির্ভরশীলতার কারণে কৃষকের ফসল পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াল। সনাতন পদ্ধতিতে সংরক্ষণ ব্যবস্থার কারণে মাঠের ফসলের উপর বেঁচে থাকার নির্ভরতা ছিল। যার মাধ্যমে কৃষক ও কৃষির প্রাচীন পদ্ধতিতে হতাশার প্রতিচ্ছবি সহজেই অনুমেয়।

বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থা: মানুষের খাদ্যের যোগান হয় কৃষি থেকে। আজ বিজ্ঞানের কল্যাণে কৃষিকাজের সনাতনী পদ্ধতির পরিবর্তে বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থার প্রবর্তন হয়েছে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে এবং উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে শিল্পবিপ্লবের মাধ্যমে কৃষির আধুনিকায়নের সূচনা ঘটে। তখন থেকে কৃষকেরা আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির সাথে পরিচিত হয়। লাঙ্গল-জোঁয়াল, গরু-মহিষ এর পরিবর্তে কৃষকের হাতে আসে কলের লাঙ্গল, ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার। সনাতনী সেচ পদ্ধতি ও প্রাকৃতিক বৃষ্টি নির্ভরতার বিপরীতে কৃষকের হাতে এসেছে গভীর ও অগভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ চালিত পাম্প ও কৃত্রিমভাবে বৃষ্টিপাত ঘটানোর মত যন্ত্র। উন্নতমানের বীজ উৎপাদন ও আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে এর মান নিয়ন্ত্রণসহ সঠিক বীজ নির্বাচন বিজ্ঞানের অন্যতম সাফল্য যা এখন কৃষকের হাতের নাগালে। রাসায়নিক সার আবিষ্কার ফসলের অধিক ফলনের ক্ষেত্রে এনেছে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন।

উন্নত বিশ্বে কৃষিকাজ: উন্নত বিশ্বে কৃষিকাজ একটি সম্মানজনক পেশা। কৃষির সাথে সম্পৃক্তরা সমাজের বিশেষ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। কারণ কৃষির মাধ্যমে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতাই তাদেরকে উন্নত জীবনযাত্রা দিয়েছে, কমিয়েছে পরনির্ভরশীলতা। মাটির উর্বর ক্ষমতা নির্ণয় থেকে শুরু করে ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণ পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার তাদের কৃষি ব্যবস্থাকে অনন্য মাত্রায় স্থান করে দিয়েছে। বর্তমানে তাদের দেশের কৃষিকাজ সম্পূর্ণভাবে প্রযুক্তি নির্ভর হওয়ায় একদিকে শ্রমশক্তি কম লাগছে, অন্যদিকে সময়ও কম অপচয় হচ্ছে। প্রযুক্তির কল্যাণে শীতপ্রধান দেশে তাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে শাক-সবজি ও ফলমূল উৎপাদন হচ্ছে। মরুভূমিতে বালি সরিয়ে মাটি ফেলে সেচের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে। কোনো কোনো উন্নত দেশে একটি মেশিনে দৈনিক ১০০ একর জমি চাষ হচ্ছে। জাপানের জমির উর্বরতা বাংলাদেশের জমির চেয়ে ৩গুণ কম হওয়া স্বত্তেও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে তারা বাংলাদেশের চেয়ে ৬ গুণ বেশি ফসল পায়।

অত্যাধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি: বিজ্ঞান নির্ভর কৃষি ব্যবস্থার অন্যতম চমক হলো অত্যাধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি। যা মানুষের সময় ও শ্রম বাঁচিয়েছে বহুগুণে। এরমধ্যে কয়েকটি হলো-

মোয়ার (শস্য ছেদনকারী যন্ত্র), রূপার (ফসল কাটার যন্ত্র), বাইন্ডার (ফসল বাধার যন্ত্র), থ্রেশিং মেশিন (মাড়াই যন্ত্র), ম্যানিউর স্প্রেডার (সার বিস্তারণ যন্ত্র), ট্রাক্টর (চাষাবাদ করার যন্ত্র)।

এছাড়াও রয়েছে মাটি পরীক্ষা করা, মাটির সাথে মিলিয়ে বীজ উৎপাদন করার আধুনিক সব যন্ত্রপাতি। আর কৃষি যন্ত্রের সর্বশেষ ব্যবহার হলো আধুনিক বিজ্ঞানের বিস্ময় কম্পিউটার। এর মাধ্যমে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। তাই কৃষি এখন কম্পিউটারাইজড বিজ্ঞানের অংশ।


কৃষিতে বিজ্ঞানের ক্ষতিকর প্রভাব: বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার পাশাপাশি কৃষিতে কিছু ক্ষতিসাধন হচ্ছে বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষিকাজের মাধ্যমে। তাই বলে বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থা থেকে পিছিয়ে আসার সুযোগ নেই বরং সর্বোচ্চ চেষ্টার মাধ্যমে ক্ষতিকর বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন:অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার কৃষি জমির স্বাভাবিক উর্বরতা কমাচ্ছে যা ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের কারণে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে এবং পানিতে মিশে গিয়ে মৎস সম্পদেরও ক্ষতি করছে। গ্রীষ্মপ্রধান দেশে কৃত্রিম ঘরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে সবুজ শাক-সবজি চাষাবাদ গ্রিন হাউজ ইফেক্টের কারণে বায়ুম-লের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এসব সমস্যা একসময় বড় আকার ধারণ করে রূপ নিচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগে, যাতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে প্রান্তিক কৃষকরা। তাই ইতিবাচক ব্যবহারই পারে অনাকাক্সিক্ষত ক্ষতি থেকে বাঁচাতে।

উপসংহার: মানব কল্যাণে বিজ্ঞানের ব্যবহারের অন্যতম প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো কৃষিবিজ্ঞান। মানুষের উদ্ভাবনী শক্তি কৃষিকে আজ এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে এসেছে। সনাতনী পদ্ধতি থেকে কম্পিউটার এই বিবর্তনের সবচেয়ে পুরনো সাক্ষী হিসেবে কৃষি তার আদিম নামেই পরিচিত। স্বল্প জায়গায় অধিক ফসলের প্রয়োজনীয়তা তাই কৃষিকে নিয়ে গেছে বিজ্ঞানীর ল্যাবরোটরিতে। যেখানে উন্নয়ন হয়েছে কৃষি ও কৃষকের পরিবর্তন হয়েছে পদ্ধতির। উঠে এসেছে আধুনিক সব ব্যবস্থাপত্র যার মাধ্যমে কৃষি ব্যবস্থায় এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। যে পরিবর্তনের সুফল পাচ্ছে সমগ্র পৃথিবীর মানুষ।



আমার প্রিয় বই বাংলা রচনা






ভূমিকাঃবই মানুষের সবচেয়ে ভালো বন্ধু । বই জ্ঞান দেয়, বই আলো দেয় এবং বই আমাদেরকের সুন্দর হতে শেখায় । তাছারা অনেক বই আছে যা মানুষকে অন্ধ করে এবং মানুষের মনকে বন্ধ করে দেয় । আমি সময় পেলে ভালো বই পড়ি ।

বইয়ের সাথে পরিচয়ঃছোট বেলা থেকে পড়ার বইয়ের পাশাপাশি আব্বা আমাকে গল্পের বই কিনে দিচ্ছে । আমার অনেক গল্পের বই আছে যেমন ইশপের গল্প, ঠাকুর মার ঝুলি, বিদেশি রুপকথার গল্প ইত্যাদি । প্রতি বছর বই কিনা ছাড়াও আমাকে অনেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বই উপহার দেয় ।

কোথা থেকে বই কিনিঃআমরা প্রতি বছর বই মেলায় যাই । সেখানে অনেক বইয়ের স্টল থাকে । অনেক ছোটদের বইয়ের স্টলও থাকে । আমরা সব স্টল ঘুরে ঘুরে পছন্দের বই কিনি । ২০১৫ সালের বই মেলা থেকে আব্বা আমাকে নাসিরুদ্দিন হোজ্জার হাসির গল্পের বই কিনে দিয়েছে ।

আমার প্রিয় বইঃআমার আনন্দের বই পড়তে ভালো লাগে । ভুতের বা ভয়ের বা কষ্টের বই আমার ভালো লাগে না । নাসিরুদ্দিন হোজ্জার হাসির বইটি আমার খুব ভাল লেগেছে । এখানের গল্প গুলি হাসির আর আমার বুঝতে অসুবিধা হয় না । বইটি পড়ে আমি খুব মজা পেয়েছি । বইয়ের গল্প গুলি আমি আমার বন্ধুদের বলেছি । তারাও মজা পেয়েছে । আমার অনেক বন্ধু বইটি কিনেছে ।

আমার প্রিয় গল্পঃনাসিরুদ্দিন হোজ্জার গল্পের বইয়ের একটি গল্প আমার খুব প্রিয় । গল্পে আছে একদিন রাজা তার মন্ত্রীকে জিজ্ঞেশ করলো দেশে কয়টি কাক আছে । মন্ত্রী একটি সংখ্যা বলে রাজাকে জানাল কাক কম হোলে বুঝতে হবে কিছু কাক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গেছে আর বেশি হোলে বুঝতে হবে অন্য কাক বেড়াতে এসেছে । মন্ত্রীর উত্তরটা আমার ভাল লেগেছে ।

উপসংহারঃআমরা সেই বই পড়ব যে বই আমাদের আলো দেয়, যে বই আমাদের ভালো শেখায় । যে বই আমাদের অন্ধ করে, যে বই আমাদের বন্ধ করে সেই বই আমরা পড়ব না । আমাদের সবাইকে বই পড়ার অভ্যাস করতে হবে তবেই আমরা নিজেদের গড়তে পারবো ।





বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৯

নারী শিক্ষার গুরুত্ব বাংলা রচনা






ভূমিকা: ‘আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি শিক্ষিত জাতি দিব’ -নেপোলিয়ান বোনাপোর্ট এর এই চিরস্মরণীয় উক্তিটি আমাদের সবার জানা। একজন শিক্ষিত নারী একটি পরিবারকে শিক্ষিত করতে পারে। এ জন্য আরবিতে একটি প্রবাদ আছে, ‘একজন পুরুষ মানুষকে শিক্ষা দেওয়া মানে একজন ব্যক্তিকে শিক্ষিত করে তোলা, আর একজন মেয়েকে শিক্ষা দেওয়া মানে একটি গোটা পরিবারকে শিক্ষিত করে তোলা।’ পৃথিবীর অর্ধেক জনসমষ্টি নারী। তাই মানব জাতির সামগ্রিক কল্যাণের কথা মাথায় রেখে বলা যায়, নারী শিক্ষার
নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব: নারী শিক্ষার গুরুত্ব বর্ণনাতীত। কেননা নারী মানব জাতির অর্ধেক অংশ। জনসমষ্টির অর্ধেককে শিক্ষার বাইরে রেখে সমাজের পক্ষে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এই অর্ধেক জনগণকে সুশিক্ষিত করতে না পারলে জাতীয় উন্নয়ন, অগ্রগতি ও কল্যাণ আসতে পারে না। নিম্নে নারী শিক্ষার গুরুত্ব আলোচনা করা হলোঃ

নারীর উন্নয়নে নারী শিক্ষা: যুগের পরিক্রমায় নারী শিক্ষার গুরুত্ব বর্তমানে অনস্বীকার্য হয়ে উঠেছে। নারীর অবস্থান সমাজে চিরকাল ধরেই অবহেলিত এবং পশ্চাদপদ। নারীর এই অবস্থান থেকে উত্তরণের জন্য শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষা অর্জন করে নারী তার নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হবে, স্বাস্থ্য সচেতন হবে। তাই নারীর উন্নয়নের জন্য প্রাথমিক উপাদান হলো নারী শিক্ষা।

কর্মসংস্থানের জন্য নারী শিক্ষা: নারীকে স্বাবলম্বী হতে হলে কর্মসংস্থানের প্রয়োজন। কেননা কর্মসংস্থানই নারীর আর্থিক নিরাপত্তা দিতে পারে। নারীর জন্য যুগোপযোগী কর্মসংস্থানের জন্য শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমান সময়ে সরকার নারীর জন্য কোটা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছে যা শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে নারীর কর্মে প্রবেশাধিকারের নিশ্চয়তা দেয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে ৬০% নারী শিক্ষক নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যা নারীর কর্মসংস্থানের একটি বিরাট সুযোগ।

পরিবারের সুরক্ষায় নারী শিক্ষা: একটি পরিবারের সুরক্ষায় একজন শিক্ষিত নারী একটি সুরক্ষিত দুর্গের মতো কাজ করে। কারণ একজন সুশিক্ষিত নারী স্বাস্থ্য সচেতন। আর একজন স্বাস্থ্য সচেতন মা, স্ত্রী বা বোন তার সন্তান, স্বামী বা ভাই-বোনকে সব সময় সুরক্ষিত রাখতে সচেষ্ট থাকেন। আবার একজন শিক্ষিত মা সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য সর্বদা চিন্তিত থাকেন এবং সে অনুযায়ী সন্তানকে চালিত করেন। সন্তানের চলাফেরা, নিয়মানুবর্তীতাসহ যাবতীয় বিষয় খেয়াল করেন। ফলে সন্তান মানুষের মতো মানুষ হতে পারে। একজন সুশিক্ষিত নারী সুরক্ষিত পরিবারের জন্য খুবই প্রয়োজন।

সন্তানের শিক্ষার জন্য নারী শিক্ষা: সন্তান জন্মের পর থেকে মায়ের সংস্পর্শেই বেশির ভাগ সময় থাকে। মায়ের আচার-আচরণ, চাল-চলন, কথাবার্তা সব কিছুই সন্তানকে প্রভাবিত করে। মায়ের হাতে সন্তানের শিক্ষার হাতে খড়ি। মা যদি শিক্ষিত হন তাহলে সন্তান অবশ্যই শিক্ষিত হবে। একজন নারী শিক্ষিত হওয়ার অর্থ ওই পরিবারের পরবর্তী প্রজন্ম শিক্ষিত হবে।

দেশ গঠনে নারী শিক্ষা: বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। এই বিশাল জনসমষ্টিকে শিক্ষার মাধ্যমে সম্পদে পরিণত করে দেশকে এগিয়ে নেওয়া বর্তমানে সময়ের দাবী। নারীকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করলে দেশ গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এজন্য বাংলাদেশ সরকার নারী শিক্ষার প্রসারে বিভিন্ন ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

ইসলাম ধর্ম-মতে নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা: মানুষ জ্ঞানী বা শিক্ষিত হয়ে জš§গ্রহণ করে না। মানুষকে জ্ঞান অর্জন করতে হয়। এ জন্য হাদিসে বলা হয়েছে ‘জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক নর-নারীর উপর ফরজ।’ ইসলামে পুরুষের মতো নারীর জন্যও শিক্ষা লাভ করা ফরজ করা হয়েছে। যেখানে পুরুষের শিক্ষার প্রসঙ্গে এসেছে সেখানে নারীদের শিক্ষার কথাও বলা হয়েছে। নবী করিম (স.) এর সহধর্মিনী হযরত আয়েশা (রা.) ছিলেন তৎকালীন সময়ে সবচেয়ে বেশি শিক্ষিত নারী। বিয়ে করার সময় মেয়ের শিক্ষার দিকে নজর দেওয়ার জন্য রাসূল (স.) নির্দেশ দিয়েছেন।

সামাজিক সচেতনতায় নারী শিক্ষা: যেকোনো সমাজকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিকে এগিয়ে নিতে হলে নারী ও পুরুষ উভয়কেই তার অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। নারী শিক্ষাই পারে সমাজের সকল স্তরের নারীদেরকে তাদের সামাজিক অধিকার ও করণীয় সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে।

নারী শিক্ষার প্রসারে বাধাসমূহ: নারী শিক্ষার বিষয়টি এখনও আমাদের সমাজে বেশ কন্টকাকীর্ণ। এ ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতাগুলো নিম্নরূপ-

সচেতনতার অভাব: নারী শিক্ষার প্রসারে প্রধান অন্তরায় হলো গণসচেতনতার অভাব। নারী শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষ এখনো অসচেতন।

বাল্য বিবাহ: মেয়েদেরকে অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া হয়। বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরানোর আগেই বাবা-মা মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করেন ফলে এক মেয়ের পক্ষে কাংক্ষিত শিক্ষা অর্জন করা সম্ভব হয় না।

ধর্মীয় গোঁড়ামী: ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে নারীকে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করে রাখা হচ্ছে। নারী ঘরে থাকার জন্য বা নারী ঘরের বাইরে গেলে পাপ এসব কথা বলে মেয়েকে বিদ্যা অর্জন থেকে বিরত রাখা হয়।

মেয়েদের প্রতি নীচু ধারণা: মেয়েরা ছেলেদের থেকে দুর্বল, কম মেধাবী মেয়েদের সম্পর্কে এ ধরণের ধারণা নারী শিক্ষার জন্য বাধা।

নারী শিক্ষার প্রসারে আমাদের করণীয়: নারী শিক্ষার প্রসারে আমাদের করণীয় সমূহ নিম্নরূপ-

সচেতনতা বৃদ্ধি:নারী শিক্ষার গুরুত্ব বুঝিয়ে জনসাধারণের মধ্যে প্রচারনা চালাতে হবে। নারীকে শিক্ষিত করে তুললে কী ধরণের লাভ হবে আর না করলে কী ক্ষতি হবে তা সবাইকে বুঝাতে হবে।

মানসিকতার পরিবর্তন: নারী শিক্ষার প্রসারে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার। নারীকে পুরুষের থেকে উত্তম মনে করে নারী বা মেয়েদেরকে অবহেলা করার মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে।

ধর্মীয় নেতাদের এগিয়ে আসা দরকার: শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীদের পশ্চাদপদতার অন্যতম কারণ হলো ধর্মীয় গোঁড়ামী। এই গোঁড়ামী দূর করার জন্য ধর্মীয় নেতাদের এগিয়ে আসতে হবে। কারণ সাধারণ মানুষ ধর্মীয় নেতাদের দ্বারা বেশি প্রভাবিত হয়।

মেয়ে ছেলে বৈষম্য হ্রাস: শিক্ষার ক্ষেত্রে নারী পুরুষ বা ছেলেমেয়ের মধ্যে কোনো ধরণের বৈষম্য করা উচিত নয়। ছেলে হোক মেয়ে হোক সব সন্তানকে শিক্ষিত করার জন্য বাবা-মাকে এগিয়ে আসতে হবে।

উপসংহার: একটি সমাজের সার্বিক অগ্রগতির জন্য নারী শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। নারী শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে প্রচলিত ধ্যান ধারণা ও মানসিকতা সবচেয়ে বড় বাধা। প্রত্যন্ত গ্রাম ও মফস্বল থেকে যে সব মেয়ে উচ্চ শিক্ষার আশায় শহরে পাড়ি জমায় অনেক ক্ষেত্রেই তারা আশাহত হয়। দীর্ঘমেয়াদী বিষয় কোর্স, আবাসন সমস্যা, সেশন জট, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা প্রভৃতি বিষয় ছাত্রীদেরকে মানসিক ও আর্থিক দিক থেকে বিপর্যস্ত করে তোলে। তাই এ সব বাধা দূর করে আমাদের নিজেদের সাথেই নারী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। আর এ জন্য নারীকেও এগিয়ে আসতে হবে।






তোমার জীবনের লক্ষ্য বাংলা রচনা




প্রারম্ভিকা: মানুষের নিজস্ব একটা লক্ষ্যস্থান থাকলে সেই স্থানেই সে নিজেকে উন্নীত করতে পারে। প্রত্যেক মানুষের জীবনে কোনো না কোনো স্বপ্ন থাকে। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য মানুষকে পরিশ্রম ও সাধনা করতে হয়। নির্দিষ্ট লক্ষ্য না থাকলে জীবনে সফলতা লাভ করা যায় না। কান্ডারি বিহীন তরী যেমন অকূল মহাসমুদ্রে তীর খুঁজে পায়না, তেমনি লক্ষ্যবিহীন জীবনও এ কন্টকাকীর্ণময় পৃথিবীতে সাফল্যের সোপান খুঁজে পায় না। মানুষের মনের মধ্যে লালিত স্বপ্নই তাকে তার লক্ষ্যের বন্দরে পৌঁছে দেয়। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকলে জীবনে বিপথগামী, লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তাই প্রত্যেক মানুষের জীবনে একটা অর্থবহ লক্ষ্য থাকা প্রয়োজন।

শৈশবে আমার ভাবনা: আমি যখন ছোট ছিলাম তখন বহু স্বপ্নই আমার অগোচরে আমার শিশুমনে ঘুরে বেড়াত। তখন অনেক কিছুই হওয়ার ইচ্ছে ছিল। যখন যা দেখতাম, যাকে দেখতাম, তাই হতে ইচ্ছে করত। ছোট বেলায় অনেক এলোমেলো স্বপ্ন দেখে তা হতে চাইতাম। কখনও ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার, কখনও বা কবি-সাহিত্যিক হতে চাইতাম। আবার কখনও ফুটবলার, ক্রিকেটার, পাইলট, উকিল প্রভৃতি হতে চাইতাম।

জীবনে লক্ষ্য স্থির করার প্রয়োজনীয়তা: জীবনে লক্ষ্য স্থির করে সে লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য দৃঢ় আকাক্সক্ষা আর কঠোর পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য না থাকলে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকা যায় না। এ প্রসঙ্গে ডা. লুৎফর রহমান বলেছেন- ‘জীবনের প্রথম থেকে ঠিক করে নাও তুমি কোন কাজের উপযুক্ত। এটা একবার, ওটা একবার করে যদি বেড়াও তাহলে তোমার জীবনের কোনো উন্নতি হবে না। এরূপ করে অনেক লোকের জীবন নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তোমার যেন তা না হয়।’ জৈন ধর্মের প্রবর্তক জরথস্ত্র বলেন- ‘লক্ষ্যবিহীন জীবন ব্যর্থতা আনে। নদী যেমন সাগরের দিকে নানাভাবে নানাগতিতে চলিয়াও শেষে সাগরে মেশে, তেমনি বিধাতার আদেশ শিরে রাখিয়া সংসারের কন্টকপথে স্থির লক্ষ্যে চলিবে।’

লক্ষ্য স্থির করার উপযুক্ত সময়: ছাত্রজীবন তপস্যার সময়। ছাত্রজীবনে কোনো অর্থবহ লক্ষ্যকে সামনে রেখে পরিশ্রম ও সাধনা করলেই লক্ষ্যে পৌঁছে জীবনকে সার্থক করা যায়। ছাত্রাবস্থায় লক্ষ্য স্থির করে তাকে বাস্তবায়ন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হয়।

আমার জীবনের লক্ষ্য: প্রত্যেক সচেতন মানুষের মতো আমার জীবনেও একটা লক্ষ্য আছে। আমি শৈশব পার করে কৈশোরে পদার্পণ করেছি। অনেক ভেবে চিন্তে এ লক্ষ্য স্থির করেছি। আমি বড় হয়ে একজন সুদক্ষ কৃষি কর্মকর্তা হতে চাই। আমার শিক্ষা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দ্বারা এদেশের কৃষকদের আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর কৃষি কাজে উদ্বুদ্ধ করব।

কৃষি কর্মকর্তা হওয়ার কারণ: সবার জীবনের লক্ষ্য থাকে বড় হয়ে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়া, বড় চাকুরী করা, শিক্ষক হওয়া, ওকালতি করা, বিচারক হওয়া। কখনও বা ইচ্ছে থাকে রাজনীতিবিদ হওয়ার। কিন্তু আমি এসবের বাইরে ব্যতিক্রম লক্ষ্য বেছে নিয়েছি। আমি আমার ভালোলাগা থেকে এ পেশায় নিজেকে যুক্ত করতে চাই। এক্ষেত্রে জনসনের কথার সাথে আমি একমত। তিনি বলেন, ‘যুক্তি দ্বারা হয়তো কোনো মানুষের মনে বিশ্বাস সৃষ্টি করা যায় কিন্তু ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করে কেউ কোনদিন সুখী হতে পারেনি’। আমাদের দেশের ৭০ শতাংশ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষিকাজের সাথে জড়িত। তারা পুরাতন আমলের পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করে। তারা দারিদ্র্যতার বেড়াজাল থেকে বের হতে পারেনি। অথচ তারাই আমাদের খাদ্যের যোগান দিতে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করছে। কৃষকরাই কৃষির মূলচালিকা শক্তি। তাদের গুরুত্বের কথা রাজিয়া খাতুনের পঙক্তিতে ফুটে উঠে-

‘সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা,
দেশ মাতারই মুক্তিকামী দেশের সে যে আশা।’এসব মুক্তিকামী মানুষরাই এখন শোষণ ও বঞ্চনার শিকার। তারা দিন-রাত পরিশ্রম করেও অধিক পরিমাণে ফসল উৎপাদন করতে পারে না। এর ফলে তাদের আর্থিক সমস্যার সাথে সাথে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থাও খুব নাজুক হয়ে উঠেছে। আমি একজন কৃষি কর্মকর্তা হয়ে কৃষকদের আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করার জন্য প্রশিক্ষণ দিব। তাদের আধুনিক উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদের জন্য উদ্বুদ্ধ করব। তাদেরকে উন্নতমানের বীজ ও সার ব্যবহারের সুফল সম্পর্কে অবহিত করব। তাদের মাধ্যমে আমি এদেশে ফসলের জোয়ার আনব। কৃষির মাধ্যমে তাদের অবস্থার উন্নতির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করব।

লক্ষ্য অর্জনের প্রস্তুতি: বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক-এ তিনটি বিভাগ রয়েছে। আমার ইচ্ছা পূরণের জন্য আমি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসিতে পড়ব। এসএসসি পরীক্ষা পাসের পর একটা ভালো কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করব। এইচএসসি পাসের পর আমি শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স করে সরকারের কৃষি বিভাগে যোগদান করব। আমি প্রথম কর্মস্থল নিব আমার নিজ জেলায়। নিজ জেলা থেকেই আমি আমার কার্যক্রম শুরু করতে চাই। আমার জেলার কৃষকদের অবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে আমি স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাব।

লক্ষ্য অর্জনে করণীয়: কঠোর সাধনা করে জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে হয়। কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে আমাকে অভিজ্ঞ হতে হবে। উন্নত ধরণের কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে আমাকে জ্ঞান লাভ করতে হবে। বর্তমানে কৃষকদের সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও তার সমাধানের উপায় বের করতে হবে। তাদের জমিতে অধিক ফসল ফলানোর যাবতীয় পরামর্শ দিতে হবে। আমার আদর্শকে মনে প্রাণে ধারণ করে আমি এখন থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমি সচেতন।

আমার জীবনের লক্ষ্যের সার্থকতা: আমার লক্ষ্য এদেশের কৃষকদের জীবনে আমূল পরিবর্তন আনা। তারা কৃষি সম্পর্কে অজ্ঞ। তারা জানে না উন্নত দেশে কিভাবে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে চাষাবাদ হচ্ছে, কিভাবে অল্প জমিতে অধিক ফসল ফলানো হচ্ছে। কৃষকদের উন্নতি হলেই কৃষি নির্ভর এদেশের সামগ্রিক উন্নতি হবে। কৃষকদের সাফল্য লাভেই আমার সার্থকতা। তাদের সেবা করাই হবে আমার লক্ষ্য। এক্ষেত্রে জর্জ ওয়াশিংটনের উক্তিটিই আমি লালন করি- ‘কোনো দেশের প্রকৃত সেবা সে দেশের মূল সম্পদ কৃষির উন্নতির চেষ্টা ছাড়া অন্য কিছুতে হতে পারে বলে আমি জানি না।’

উপসংহার: আমাদের দেশ কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের অর্থনীতি নির্ভর করে কৃষির উপর। কৃষিরই যদি উন্নতি না ঘটে তবে আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটবে না। তাই আমার জীবনের লক্ষ্য একজন কৃষি কর্মকর্তা হয়ে এ কৃষক সমাজের উন্নতি সাধনে সহায়তা করা। সবশেষে আমি ঈশ্বরচন্দ্র গুহের সাথে একমত। তিনি বলেন-‘কৃষিই সমাজের মেরুদন্ড, কৃষিই ভিত্তিমানব সমাজের মুখবন্ধনী। ফলত- কৃষি লইয়াই সমাজ; কৃষি কাজের উন্নতিতেই সমাজেরও সৃষ্টি ও স্থিতি; এবং কৃষির ক্রমোন্নতিতেই সমাজের ও দেশের সর্বাঙ্গীন উন্নতি।’




আন্তর্জাতিক নারী দিবস বাংলা রচনা




ভূমিকা:

কোনো কালে একা হয়নিকো জয়ী পুরুষের তরবারী,
প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে, বিজয়ী লক্ষ্মী নারী।
-কবি নজরুল ইসলামপৃথিবীর মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। এই নারীর অবদান পুরুষ কখনই অস্বীকার করতে পারবে না। পুরুষের প্রতিটি সৃষ্টিকর্মের মধ্যে রয়েছে নারীর ভূমিকা। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের উপরিউক্ত বিখ্যাত চরণদুটি আমাদেরকে একথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। অথচ যুগ যুগ ধরে নারীর এই অবদানকে অবদমিত করে রাখা হয়েছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারী সমাজের মুক্তির একটি পদক্ষেপ মাত্র।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস: প্রতি বছর ৮ মার্চ সারাবিশ্বে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়। দিবসটির পূর্ব নাম ছিল ‘আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস’। বিশ্বব্যাপী এই দিবস পালনের কেন্দ্রীয় বিষয় নারী। কিন্তু আঞ্চলিক ভিত্তিতে দিবসটি পালনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভিন্ন রকম হয়। কোথাও নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ প্রাধান্য পায়, আবার কোথাও নারীর আর্থিক, সামাজিক, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা বেশি গুরুত্ব পায়। কোথাও বা নারীর নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষার বিষয়টিকে মুখ্য হিসেবে রেখে দিবসটি উদযাপিত হয়।

ইতিহাস: ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ নারীদের জন্য একটি স্মরণীয় দিন। এ দিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের একটি সূচ তৈরি করখানার নারী শ্রমিকেরা আন্দোলন শুরু করেন। কারখানার মানবেতর পরিবেশ, ১২ ঘণ্টার কর্মসময়, অপর্যাপ্ত বেতন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিরুদ্ধে তাদের এক প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। কিন্তু পুলিশ এই শান্তিপূর্ণ মিছিলে মহিলা শ্রমিকদের উপর নির্যাতন চালায়। বহু শ্রমিককে আটক করা হয়। এই ঘটনার স্মরণে ১৮৬০ সালের ৮ মার্চ মহিলা শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করে নিউইয়র্ক সূচ শ্রমিকেরা। এভাবেই সংঘবদ্ধ হতে থাকে মহিলা শ্রমিকদের আন্দোলন। এক সময় তা কারখানা ও ইউনিয়নের গন্ডি অতিক্রম করে। ১৯০৮ সালে জার্মান সমাজতন্ত্রী নারী নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় জার্মানিতে। এই সম্মেলনে নারীদের ন্যায্য মজুরী, কর্মঘণ্টা এবং ভোটাধিকারের দাবী উত্থাপিত হয়। ১৯১০ সালের ২য় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ডেনমার্কের কোপেনহেগেন-এ। এতে ১৭টি দেশের প্রতিনিধিরা যোগ দেয়। এ সম্মেলনেই ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯১১ সালে প্রথম ৮ মার্চ দিবসটি পালিত হয়। ১৯১৪ সাল থেকে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলিতে দিবসটি বেশ গুরুত্বের সাথে পালিত হতে থাকে। ১৯৭৫ সাল থেকে জাতিসংঘ দিবসটি পালন করতে থাকে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দিবসটি পালনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয় ১৯৭৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর। এ সময় জাতিসংঘ দিবসটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে দিবসটি পালনের আহবান জানায়। এর ফলে অধিকার বঞ্চিত নারী সমাজের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির পথ সুগম হয়। নারীর অধিকার রক্ষা ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এটি এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।

নারীর বর্তমান অবস্থা: বর্তমান যুগকে বলা হয় গণতান্ত্রিক যুগ, সমতার যুগ। কিন্তু এ সময়েও নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নারীরা এখন কাজের জন্য ঘরের বাইরে যাচ্ছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গবেষণা, শিল্প-সাহিত্য ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই নারীর পদচারণা লক্ষণীয়। কিন্তু তারপরও নারীরা এখনও বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। পরিবারের মধ্যে আপনজন কর্তৃক নারীর নির্যাতিত হওয়া ঠেকানো যাচ্ছে না। কর্মস্থল, পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থায়, পথেঘাটে নারীরা বিভিন্নভাবে ইভ টিজিং এবং যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। নারী দিবস উদযাপন করে এসব অবস্থার উন্নতি করা না গেলেও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে নারী নির্যাতন অনেক হ্রাস পেয়েছে। নারীর নিরাপদ কর্ম পরিবেশ, কর্মঘণ্টা, মজুরি ইত্যাদি বিষয় নিশ্চিত করা গেছে অনেক ক্ষেত্রেই। সারাবিশ্বে নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে এই দিবসটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। নির্যাতন প্রতিরোধ এবং নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে নারী উন্নয়ন সম্ভব। কিন্তু বিভিন্ন দেশে এ ক্ষেত্রে এখনও বহু বাধা রয়েছে। এই বাধাগুলির মধ্যে প্রধান হলো-

- নারী উন্নয়নের প্রথম এবং প্রধান বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে সব সময় পুরুষের অধীন এবং ছোট করে দেখা হয়।

- সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে না। এটিও নারী উন্নয়নের পথে এক বড় অন্তরায়।

- নারী যদি শিক্ষার আলোয় আলোকিত না হয় তবে সে সচেতন হয় না। তার আয় বাড়ে না। ফলে সে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়। এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়।

- নারীর ক্ষমতায়ন না থাকা।

- নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকা।

- কৃষিভিত্তিক সমাজ।

নারী উন্নয়নে করণীয়: নারী উন্নয়ন বলতে নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং কাজের যথাযথ মূল্যায়নকে বুঝানো হয়। নারী উন্নয়নে সমাজ ও রাষ্ট্রকে একসাথে কাজ করতে হবে। এজন্য করণীয় হলো-

- নারীর প্রধান শক্তি হলো শিক্ষা। নারীশিক্ষার বিস্তার ঘটলে নারীর কর্মসংস্থান হবে, আয় বাড়বে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে। তাই নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিৎ নারী শিক্ষা বিস্তার।

- নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে নারীর উন্নয়ন সাধন করা সম্ভব।

- নারী-পুরুষের বিদ্যমান বৈষম্য দূর করা।

- নারীর নিরাপদ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।

- রাজনৈতিকভাবে নারীর ক্ষমতায়ন করা।

- নারী স্বার্থের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।

- নারীর উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সহায়ক সেবা প্রদান করা ইত্যাদি।



দিবসটির তাৎপর্য: বিশ্বজুড়ে নারীর অধিকার ও নারীদের অগ্রাধিকার একটি বহুল আলোচিত বিষয়। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ছিল নারীদের অধিকার, বিশেষত কর্মজীবী নারীদের অধিকার আদায়ের প্রথম প্রচেষ্টা। এর সূত্র ধরে নারীদের প্রতি বৈষম্য দূরীকরণে সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন গোষ্ঠীর। জাতিসংঘের মাধ্যমে সাক্ষরিত হয়েছে বিভিন্ন চুক্তি ও সনদ। নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এসব চুক্তি ও সনদ কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে। অনেক ক্ষেত্রে নারীর সুরক্ষায় এসব চুক্তি-সনদ আইনে পরিণত হয়েছে। বাধ্য করেছে মালিকপক্ষ এবং সরকারকে নারীদের দাবী মেনে নিতে। তাই সমালোচনা থাকলেও আন্তর্জাতিক নারী দিবসের তাৎপর্য অপরিসীম।

উপসংহার: আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস। নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ করতে পারি, তবেই দিবসটির উদযাপন সার্থক হবে।