উত্তর :– লৌকিক আরহের ক্ষেত্রে কার্য কারনের উপর এ নির্ভর না করে কেবলমাত্র অবাদ অভিজ্ঞার ভীতিতে দ্রুত সামান্নি করন করা হয় এবং তার মাধ্যমেই একটি সামান্য বচন প্রতিষ্টা করা হয় । এর ফলে যুক্তিতে যে দোষ ঘটে তাকে বলা হয় অবৈধ সামান্নি করন দোষ ।
উদাহরন :– অমুখ করলে ডাক্তার ডাকার প্রয়োজন নেই , কারন যারা ডাক্তারের পরামর্শ নেয় তারাও মারা যায় ।
ব্যাখা :– এই যুক্তিটি অবৈধ সামান্নি করন দোষে দুষ্ট । অভিজ্ঞতার মাধ্যমে দেখা গেছে যে , বেশ কিছু লোক ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা সত্বেও মারা গেছে । এর থেকে সিদ্ধান্ত করা হয়েছে যে , ডাক্তার ডাকার প্রয়োজন নেই কিন্তু যুক্তিটি অবৈধ কেননা অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে এবং পরামর্শ গ্রহণকারী ব্যাক্তি মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে । সেই বিরোধী দৃষ্টান্ত গুলি পর্যবেক্ষণ না করার জন্য যুক্তি টিতে অবৈধসামান্নি করন দোষ ঘটেছে ।
২) মন্দ উপমা যুক্তি । ( টিকা )
উত্তর :– দুই বা ততোধিক বস্তুর মধ্যে কয়েকটি বিষয়ে সাদৃশ্য দেখে এবং সেই সাদৃশ্যর ভীতিতে যখন তাদের অপর কোনো নতুন সাদৃশ্যর অস্তিত্ব অনুমান করা হয় তখন তাদের কে বলা হয় উপমা যুক্তি । যদি সাদৃশ্যর সংখ্যা ও গুরুত্ব কম হয় তাহলে সেই উপমা যুক্তিতে যে দোষ ঘটে এবং সেইরূপ যুক্তিকে বলা হয় মন্দ উপমা যুক্তি ।
উদাহরণ :– কুকুর এবং চেয়ার উভয়ের চারটি করে পা আছে । যেহেতু কুকুর কামড়াতে পারে তাই চেয়ার ও কামড়াতে পারে ।
ব্যাখা :– এই যুক্তিটি হলো মন্দ উপমা যুক্তির দৃষ্টান্ত । এখানে কুকুরের সঙ্গে চেয়ারের সাদৃশ্য দেখে সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে । কিন্তু কুকুর ও চেয়ারের মধ্যে এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাদৃশ্য যার ভিত্তিতে উক্ত সিদ্ধান্ত যুক্তি যুক্ত হবে । বস্তুত , কুকুর ও চেয়ারের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বৈসাদৃশ্য গুলি উপেক্ষা করা হয়েছে । এই যুক্তিটিতে হেতু সাদৃশ্য র সঙ্গে সিদ্ধান্তের অনুমিত ধর্মের প্রাসঙ্গিকতার অভাব আছে । সেজন্য এই যুক্তিতে মন্দ উপমা যুক্তির দোষ আছে ।
৩) আবশ্যিকশর্তকে সমগ্র কারন বলে মনে করার দোষ । ( টিকা )
উত্তর :– কারন হলো কতক গুলি আবশ্যিক শর্তের সমষ্টি । এই সব শর্তের মধ্যে একটিকে যদি কারন হিসেবে গন্য করা হয় তাহলে যুক্তিতে যে দোষ ঘটে তাকে বলা হয় , " শর্তকে সমগ্র কারন বলে গন্য করার দোষ । "
উদাহরন :– একজন ব্যাক্তি মই থেকে পা ফসকে মাটিতে পড়ে মারা যায় । সুতরাং মই থেকে পড়ে যাওয়ায় ব্যক্তিটির মৃত্যুর কারণ ।
ব্যাখা :– এই যুক্তিতে একটি আবশ্যিক শর্তকে কারন বলার গণ্য করার জন্য দোষ ঘটেছে । একথা সত্য যে মই থেকে পড়ে যাওয়ায় ব্যক্তিটির মৃত্যুর একটি আবশ্যিক শর্ত । কিন্তু এটিকে পর্যাপ্ত শর্ত বলা যাবে না । এই শর্তের সঙ্গে আরও কতক গুলি শর্ত যুক্ত আছে । যেমন – মইটির উচ্চতা , লোকটির শারীরিক দুর্বলতা , দৃষ্টি শক্তির অভাব , প্রাথমিক চিকিৎসার অভাব ইত্যাদি । এইসব শর্তকে উপেক্ষা করে কেবলমাত্র একটি শর্তকে সমগ্র কারন বলে মনে করার জন্য এই দোষ ঘটেছে ।
৪) কোনো অবান্তর বা অপ্রাসঙ্গিক ঘটনাকে কারন বলে গণ্য করার দোষ । ( টিকা )
উত্তর :– কোনো কার্যের যে কোনো পূর্বগামি ঘটনা সেই কার্যের কারন হিসেবে গণ্য হতে পারে না । তাই সেটি প্রকৃত কারণ তাকে কারন বলে গণ্য না করে যদি কোনো অপ্রাসঙ্গিক বা অবান্তর বিষয় কে কারন হিসেবে গণ্য করা হয় , তাহলে কারন সংক্রান্ত দোষ দেখা দেয় , এই দোষ কে বলে কোনো অবান্তর বা অপ্রাসঙ্গিক ঘটনাকে কারন বলে গণ্য করার দোষ ।
উদাহরন :– রাশিয়াতে যখন গমের ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে তখন কলকাতা শহরে জন্ম হার বৃদ্ধি পাচ্ছে সুতরাং রাশিয়ায় গমের ফলন হলো কলকাতা শহরে জন্ম হার বৃদ্ধি কারন ।
ব্যাখা :– এই যুক্তিটি অপ্রাসঙ্গিক বিষয়কে কারন বলে গণ্য করার দোষ এ দুষ্ট , এক্ষেত্রে দুটি ঘটনার মধ্যে সহ পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেলেও সেই সহ পরিবর্তন প্রাসঙ্গিক নয় । প্রস্তুত দুটি ঘটনা অথাৎ রাশিয়াতে গমের ফলন এবং কলকাতা শহরে জন্ম হার বৃদ্ধি সহ পরিবর্তিত হলেও এদের মধ্যে কোনো কার্য কারন সম্পর্ক নেই কাজেই সহ পরিবর্তন পদ্ধতি যা সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক ঘটনা কারন বলার জন্য এই যুক্তিটিতে দোষ দেখা দিয়েছে ।
৫) কাকতালীয় দোষ ( টিকা )
উত্তর :– কারন হলো কার্যের পূর্বগামী ঘটনা এবং কার্য হলো কারনের অনুগামী ঘটনা কিন্তু তাই বলে যে কোনো পূর্বগামী ঘটনা কারন বলে গণ্য করা যায় না । কারন হবে কার্যের নিয়ত শতান্তরহীন পূর্বগামি ঘটনা । যে কোনো পূর্বগামি ঘটনাকে কারন হিসেবে গ্রহণ করলে যে দোষের উদ্ভব হয় তাকে বলে কাকতালীয় দোষ ।
উদাহরন :– বাড়িতে নববধূ আসার পরদিনে শাশুড়ি মারা গেলো সুতরাং নববধূর আগমন শাশুড়ির মৃত্যুর কারণ ।
ব্যাখা :– এই যুক্তিটি কাকতালীয় দোষে দুষ্ট । এক্ষেত্রে বাড়িতে নববধূ আগমনই ঠিকই যে বাড়িতে নববধূর আগমনে পরদিনই শাশুড়ির মৃত্যু হয়েছে । কিন্তু এই দুটি ঘটনার মধ্যে কোনো কার্য কারন সম্পর্ক নেই এক্ষেত্রে প্রথম ঘটনাটি হলো ( নববধূর আগমন ) এবং দ্বিতীয় ঘটনাটি হলো ( শাশুড়ির মৃত্যু ) নিয়ত পূর্ববতি নয় । কিন্তু কারন হতে হলে কোনো ঘটনাকে নিয়ত পূর্ববতী হতে হবে । বস্তুত নিচ্ছক পূর্ববতী ঘটনাকে কারন বলে গণ্য করা যায় না । তাই যুক্তিটিতে কাকতালীয় দোষ ঘটেছে ।
৬) অপর্যবেক্ষণ দোষ ( টিকা )
উত্তর :– কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্যে যে ঘটনা বা বিষয় পর্যবেক্ষণ করা উচিত ছিল তা যদি পর্যবেক্ষণ করা না হয় তবে যে দোষ ঘটে , তাকে বলে অপর্যবেক্ষণ দোষ । এই অপর্যবেক্ষণ দোষ হলো নর্থক প্রকৃতির । কারন এক্ষেত্রে যেসব বিষয় আমাদের দেখা উচিত , অথচ আমরা দেখিনা এবং সেগুলিকে না দেখার জন্যে ভ্রান্তি বা দোষ ঘটে ।
উদাহরন :– অনেকেই বিছানায় মারা গেছে সুতরাং বিছানায় শুয় না ।
ব্যাখা :– এক্ষেত্রে যুক্তিটি ভ্রান্ত এবং অপর্যবেক্ষণ দোষে দুষ্ট । এখানে আমরা কেবলমাত্র সদর্থক দৃষ্টান্ত গুলিকে
পর্যবেক্ষণ করেছি । অথাৎ যেসব ক্ষেত্রে মানুষ বিছানায় শুয়ে মারা গেছে সেগুলিকে পর্যবেক্ষণ করেছি । কিন্তু নর্থক দৃষ্টান্ত গুলি পর্যবেক্ষণ করা হয়নি । তাই যুক্তিটি ভ্রান্ত বা অপর্যবেক্ষণ দোষে দুষ্ট হয়েছে ।
Nice
উত্তরমুছুনsuch a helpful website.. thank you.
উত্তরমুছুনখুব ভালো লাগলো, খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপনা করেছেন
উত্তরমুছুন