মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৩

শম্ভু মিত্র জীবনী বা জীবনী মূলক রচনা



জন্ম ও পারিবারিক পরিচয় :– বাংলা তথা ভারতীয় নাট্য জগতের কিংবদন্তি ব্যাক্তিত্ব শম্ভু মিত্রের জন্ম হয় ১৯১৫ সালে ২২ আগস্ট । তার পিতার নাম শরৎ কুমার মিত্র এবং মাতা শতদল বাসিনী দেবী । শম্ভু মিত্রের পৈতৃক নিবাস ছিল হুগলি জেলায় । কিন্তু কলকাতায় ভবানীপুরে মাতামহ আদিনাথ বসুর বাড়িতেই তার জন্ম হয় । ১৯৪৫ সালে তিনি প্রখ্যাত মঞ্চাভিনেত্রী তৃপ্তি মিত্রর সঙ্গে পরিনয়সূত্রে আবদ্ধ হন ।


ছাত্রজীবন :– শম্ভু মিত্রের প্রথম জীবনের পড়াশোনা শুরু হয় চক্রবেরিয়া মিডল ইংলিশ স্কুলে । এরপরে তিনি বালিগঞ্জ গভর্মেন্ট স্কুলে ভরতি হন । বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে এরপর সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভরতি হলেও তিনি পড়াশোনা সমাপ্ত করেননি ।


নাট্যজীবন :– ১৯৩৯ সালে " রঙমহল " থিয়েটার - এ যোগদানের মাধ্যমে শম্ভু মিত্রের বানিজ্যিক নাট্য মঞ্চে পর্দাপন । এখানেই মহর্ষি মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় তার । রঙমহল বন্ধ হয়ে গেলে প্রথমে তিনি যোগদেন " মিনাভায় " । সেখানে অল্পদিন থেকে তারপর যোগদেন " নাট্য নিকেতন " এ । নাট্য নিকতনে " কালিন্দী " নাটকে অভিনয়ের সূত্রে সে যুগের প্রতি তজশা নাট্য ব্যক্তিত্ব শিশির কুমার ভাদুড়ীর সঙ্গে তার আলাপ হয় । পরবর্তীকালে শিশির কুমার ভাদুড়ী প্রযোজিত " আলমগীর " নাটকে অভিনয় করলেও সম্পূর্ণ নতুন এক নাট্যঘরানা তৈরীতে উদ্যোগী হন তিনি । এরপর নাট্যনিকেতন ও বন্ধ হয়ে গেলে তিনি " শ্রী রঙ্গম " এ যোগ দেন । কিন্তু পেশাদার মঞ্চের সঙ্গে শম্ভু মিত্র একাত্ম হতে পারছিলেন না । এই পর্বেই ১৯৪২ সালের শেষ দিকে বিনয় ঘোষ এবং বিজন ভট্টাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগের সূত্রে ফ্রাসি বিরোধী লেখক শিল্পী সংঘ হয়ে তিনি যোগদেন " ভারতীয় গননাট্য সংঘ " এ । ১৯৪৪ এ " নবান্ন " নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে বাংলা নাটকের যে নবযুগের সূচনা হয় তাতে অভিনেতা ও সহ পরিচালক হিসেবে শম্ভু মিত্রের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । শুধু রাজনৈতিক আদর্শ প্রচারের পরিবর্তে স্বাধীন এবং মুক্তচিন্তা সমৃদ্ধ নাটকে অভিনয়ের লক্ষ্য শম্ভু মিত্র গণনাট্য ত্যাগ করেন ।



[ ] ১৯৪৮ সালে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের সঙ্গে শম্ভু মিত্র গড়ে তোলেন তার নিজের নাট্য দল " বহুরূপী " । ১৯৫০ - এ অভিনীত হয় " ছেড়া তার " এবং উলুখাগরা । ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত " বহুরূপী " প্রযোজনায় সফোক্লিস , হেনরিক ইবসেন , তুলসী লাহিড়ী প্রমুখ বিশিষ্ট নাট্যকারের রচনা তার পরিচালনায় মঞ্চস্থ হয় । শম্ভু মিত্র বাংলা রঙ্গ মঞ্চে রবীন্দ্রনাথ কে নতুনভাবে আবিষ্কার করেন – " রক্তকরবী " , চার অধ্যায় , বিসর্জন , রাজা ইত্যাদি একের পর এক রবীন্দ্রনাটকের অসামান্য উপস্থাপনা বাংলা নাটকের ইতিহাসে মাইলফলক । অভিনেতা ও পরিচালক শম্ভু মিত্রের মতোই নাট্যকার শম্ভু মিত্রও  বাংলা নাটকে স্মরনীয় । চাঁদ বনিকের পালা ইত্যাদি অসামান্য  নাটকের রচনাকারও তিনি । এছাড়া তিনি নাটক বিষয়ক বেশ কয়েকটি বইও লিখেছেন । অভিনয় , নাট্য মঞ্চ , প্রসঙ্গ নাট্য , ইত্যাদি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য । ১৯৭০ সালে একটি আর্ট কম্পেলেক্স নির্মাণের উদ্দেশ্যে তিনি " বঙ্গীয় নাট্যমঞ্চ সমিতি " গঠন করেন । যদিও পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হয়নি ।

[ ] কন্যা শাওলী মিত্রের নাট্যসংস্থা " পঞ্চম বৈদিক " এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি । জীবনের শেষ পর্যায়েও এই সংস্থার সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন ।
আবৃত্তি :–  একজন স্বনামধন্য আবৃত্তিকার হিসেবে শম্ভু মিত্রের পরিচিতি ছিল সর্বব্যাপী । তার কণ্ঠে জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্রের " মধুবংশীর  গলি " আজও অমর । " রবীন্দ্রনাথের কবিতা পাঠ " , দিনান্তের প্রণাম , এই দুটি তার অতিপ্রসিদ্ধ বাংলা কবিতা আবৃত্তির রেকর্ড ।
চলচ্চিত্র :– কেবলমাত্র নাটক নয় , চলচ্চিত্রেও তিনি অত্যন্ত দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন । মানিক , শুভ বিবাহ , পথিক , অভিযাত্রী , ধাত্রী দেবতা , আবত , মরনের পারে , ইত্যাদি তার অভিনীত কিছু বিখ্যাত চলচ্চিত্র । খাজা আহমেদ আব্বাসের পরিচালনায় " ধরতি কে লাল " হিন্দি ছবিটির সহকারী পরিচালক ছিলেন তিনি ।


সম্মান ও স্বীকৃতি :– নাট্য জগতে তার অসামান্য অবদানের জন্য শম্ভু মিত্র স্বীকৃতিও পেয়েছেন অনেক । ১৯৭৬ সালে তিনি পান " ম্যাগসেস পুরষ্কার " । ওই বছরই ভারত সরকার তাকে " পদ্মভূষণ " উপাধিতে ভূষিত করে । ১৯৮৩ সালে বিশ্বভারতী তাকে " দেশিকোওম " উপাধি দেয় । যাদব পুর বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সাম্মানিক ডি. লিট . উপাধিতে ভূষিত করে ।
জীবনবসান :– ১৯৯৭ সালে ১৯ মে কলকাতায় নিজের বাসভবনে শম্ভু মিত্র প্রয়াত হন ।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন