মঙ্গলবার, ৬ আগস্ট, ২০১৯

কন্যাশ্রী প্রকল্প বাংলা রচনা



ভূমিকা :– প্রাচীন কাল থেকে শুরু করে কন্যা সন্তানের প্রতি অবহেলা ভারতীয় সংস্কৃতিতে বোদ্ধ মূল হয়ে রয়েছে । বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে বর্তমান কালে সেই অবহেলার স্বরূপ অনেকটা স্থিমিত হলেও দরিদ্র মানুষদের মধ্যে আর্থ – সামাজিক কারণে আর তা হয়নি বলেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার কন্যাশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যর কন্যা সন্তানের প্রতি গুরুত্ব আরপ করতে এবং বাল্যবিবাহ বন্ধ করে কন্যা সন্তানদের বিদ্যালয়মুখী করতে " কন্যাশ্রী " প্রকল্পের যে অবতারনা করেছেন তা যথেষ্ট প্রসংশিত হয়েছে ।

প্রেক্ষাপট :– কবি কালিদাস লিখেছেন –' অর্থো হি কন্যা পরকীয়া এব ' । অথাৎ কন্যা মানে পরের ধন । এই মনোভাব থেকেই কন্যা সন্তানকে অপরের হাতে সম্প্রদান করে ক্ষান্ত হতেন কন্যার পিতামাতারা । এর ফলে সমাজ ও রাষ্ট্রের সার্বিক অগ্রগতি সম্ভব হয়নি । কারন নজরুল তার " নারী " কবিতায় লিখেছেন ,  ' বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির – কল্যাণকর ,/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর । অথচ মেয়েদেরকে সার্বিক উন্নয়নে র সঙ্গে সমন্ধিত না করে তাদের অ সূর্যম্পশা রূপে রেখে তাদের অন্তনিহিত শক্তির অপচয় সাধন করা হয়েছে । তাই তো নজরুল নারীদের আহ্বান জানিয়ে লিখেছিলেন , ' মাথার ঘোমটা ছিড়ে ফেল নারী , ভেঙ্গে ফেল ও শিকল ! দুর করে দাও দাসীর চিহ্ন আছে যত আভরণ ।

তাৎপর্য :–" কন্যাশ্রী " শব্দটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ । কন্যা শব্দের অর্থ হলো তনয়া , দুহিতা , মেয়ে ইত্যাদি । অন্যদিকে " শ্রী " শব্দের অর্থ হলো সুন্দর , লক্ষী , সরস্বতী ইত্যাদি । অথাৎ মেয়েরা এই প্রকল্পের মাধ্যমে হয়ে উঠবে সুন্দর বিদ্বান ও সয়ংস্পূর্ন ( লক্ষী ) । কন্যা সন্তানদের আত্মবিশ্বাসী , সনির্ভর ও সয়ংস্পূর্ন করে গড়ে তুলতে তাদের মধ্যে নিহিত অন্তনিহিত সতার বিকাশ ঘটাতে প্রয়োজন উপযুক্ত পরিকল্পনা সেই পরিকল্পনারই অঙ্গ হলো “ কন্যাশ্রী প্রকল্প ” ।



উদ্দেশ্য :– এই প্রকল্পের প্ররক্ষ উদ্দেশ্যে বহুমুখী হলেও প্রত্যক্ষ উদ্দেশ্যে কিন্তু দ্বিবিধ – মেয়েদের বাল্যবিবাহ রোধ করা এবং তাদের মেধার বিকাশের জন্য বিদ্যালয়মুখী করা । শুধু তাই নয় , শিক্ষাক্ষেত্রে যে " স্কুল ছুট " এর সংখ্যা বাড়ছে তার গতিরোধ করাও এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য । সর্বপরি সমাজের সবাঙ্গিন অগ্রগতিতে মেয়েদেরকে সামিল করতে ও সামাজিক স্থিতিশিলতা ও ভারসাম্য বজায় রাখতে এই প্রকল্পের জুড়ি মেলা ভার ।

লক্ষ্য :– এই প্রকল্পের লক্ষ্য মাত্রা পুরনের জন্য দুটি দিককে সামনে রাখা হয়েছে ।( এক)  অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পাঠরতা ছাত্রীদের যাদের বয়স ১৩ থেকে ১৮ _এর মধ্যে তাদেরকে বছরে পাঁচশত টাকা অনুদান দেওয়া হবে । ( দুই ) যাদের বয়স ১৮ থেকে ১৯ বছর তাদেরকে এককালীন পঁচিশ হাজার টাকা দেওয়া হবে । বাৎসরিক পাঁচশত  টাকা অনুদান দেওয়ার জন্য প্রতি বছরে ১৮ লক্ষ মেয়েদেরকে এই প্রকল্পের সামিল করানো হবে । অন্যদিকে এককালীন অনুদানের জন্য সাড়ে তিন লক্ষ ছাত্রীদের জন্য লক্ষমাত্রা ধার্য করা হয়েছে । তবে যারা এই সুবিধা পাবে তাদের পিতা বা অভিভাবকদের আয় বছরে এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকার বেশি হবে না এবং সন্তানটিকে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী হতে হবে ।


সুফল :– ২০০৭ –৮ সালের হিসাব অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ বাল্য বিবাহের ক্ষেত্রে পঞ্চম হওয়ায় কন্যা সন্তানের অপরিনত বয়সে বিবাহ দেওয়ার শিশুমৃত্যু , অপুষ্টি প্রভূতির শিকার হতো । তাছাড়া বিয়ের নাম করে অল্পবয়সী মেয়েদের পাচার হয়ে যাওয়ার হাত থেকে এই প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ । এমনকি মুর্শিদাবাদে (৬১.০৪ ) , বীরভূমে ( ৫৮.০৩ ) , মালদহ ( ৫৬.০৭ ) এবং পুরুলিয়ায় ( ৫৪.০৩ ) কন্যার বয়স আঠারো হওয়ার আগেই বেশিরভাগ মেয়ের বিবাহ সম্পন্ন হয় । এই প্রকল্প সেই বাল্যবিবাহের হারকে কমিয়ে দিতে যে পারবে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই । দ্বিতীয় আমাদের রাজ্য যে স্কুল ছুট _এর সংখ্যা বাড়ছে তার মধ্যে মেয়েদের হার বেশি হওয়ায় এই প্রকল্প সেই স্কুলছুটের প্রবণতার হার কমাতে পারবে । তৃতীয়ত কন্যা সন্তান হত্যা বা কন্যা প্রতি অবহেলা তথা বিভেদ সৃষ্টিও এই প্রকল্পের মাধ্যমে অনেকটা স্থিমিত হবে । চর্তুথত , আঠারো বছরের ঊর্ধ্বে মেয়েদের বিয়ে সুনিশ্চিত করতে পারলে মা ও শিশু দের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির ক্ষেত্রে কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সম্ভব হবে ।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন