বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৯

তোমার জীবনের লক্ষ্য বাংলা রচনা




প্রারম্ভিকা: মানুষের নিজস্ব একটা লক্ষ্যস্থান থাকলে সেই স্থানেই সে নিজেকে উন্নীত করতে পারে। প্রত্যেক মানুষের জীবনে কোনো না কোনো স্বপ্ন থাকে। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য মানুষকে পরিশ্রম ও সাধনা করতে হয়। নির্দিষ্ট লক্ষ্য না থাকলে জীবনে সফলতা লাভ করা যায় না। কান্ডারি বিহীন তরী যেমন অকূল মহাসমুদ্রে তীর খুঁজে পায়না, তেমনি লক্ষ্যবিহীন জীবনও এ কন্টকাকীর্ণময় পৃথিবীতে সাফল্যের সোপান খুঁজে পায় না। মানুষের মনের মধ্যে লালিত স্বপ্নই তাকে তার লক্ষ্যের বন্দরে পৌঁছে দেয়। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকলে জীবনে বিপথগামী, লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তাই প্রত্যেক মানুষের জীবনে একটা অর্থবহ লক্ষ্য থাকা প্রয়োজন।

শৈশবে আমার ভাবনা: আমি যখন ছোট ছিলাম তখন বহু স্বপ্নই আমার অগোচরে আমার শিশুমনে ঘুরে বেড়াত। তখন অনেক কিছুই হওয়ার ইচ্ছে ছিল। যখন যা দেখতাম, যাকে দেখতাম, তাই হতে ইচ্ছে করত। ছোট বেলায় অনেক এলোমেলো স্বপ্ন দেখে তা হতে চাইতাম। কখনও ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার, কখনও বা কবি-সাহিত্যিক হতে চাইতাম। আবার কখনও ফুটবলার, ক্রিকেটার, পাইলট, উকিল প্রভৃতি হতে চাইতাম।

জীবনে লক্ষ্য স্থির করার প্রয়োজনীয়তা: জীবনে লক্ষ্য স্থির করে সে লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য দৃঢ় আকাক্সক্ষা আর কঠোর পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য না থাকলে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকা যায় না। এ প্রসঙ্গে ডা. লুৎফর রহমান বলেছেন- ‘জীবনের প্রথম থেকে ঠিক করে নাও তুমি কোন কাজের উপযুক্ত। এটা একবার, ওটা একবার করে যদি বেড়াও তাহলে তোমার জীবনের কোনো উন্নতি হবে না। এরূপ করে অনেক লোকের জীবন নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তোমার যেন তা না হয়।’ জৈন ধর্মের প্রবর্তক জরথস্ত্র বলেন- ‘লক্ষ্যবিহীন জীবন ব্যর্থতা আনে। নদী যেমন সাগরের দিকে নানাভাবে নানাগতিতে চলিয়াও শেষে সাগরে মেশে, তেমনি বিধাতার আদেশ শিরে রাখিয়া সংসারের কন্টকপথে স্থির লক্ষ্যে চলিবে।’

লক্ষ্য স্থির করার উপযুক্ত সময়: ছাত্রজীবন তপস্যার সময়। ছাত্রজীবনে কোনো অর্থবহ লক্ষ্যকে সামনে রেখে পরিশ্রম ও সাধনা করলেই লক্ষ্যে পৌঁছে জীবনকে সার্থক করা যায়। ছাত্রাবস্থায় লক্ষ্য স্থির করে তাকে বাস্তবায়ন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হয়।

আমার জীবনের লক্ষ্য: প্রত্যেক সচেতন মানুষের মতো আমার জীবনেও একটা লক্ষ্য আছে। আমি শৈশব পার করে কৈশোরে পদার্পণ করেছি। অনেক ভেবে চিন্তে এ লক্ষ্য স্থির করেছি। আমি বড় হয়ে একজন সুদক্ষ কৃষি কর্মকর্তা হতে চাই। আমার শিক্ষা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দ্বারা এদেশের কৃষকদের আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর কৃষি কাজে উদ্বুদ্ধ করব।

কৃষি কর্মকর্তা হওয়ার কারণ: সবার জীবনের লক্ষ্য থাকে বড় হয়ে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়া, বড় চাকুরী করা, শিক্ষক হওয়া, ওকালতি করা, বিচারক হওয়া। কখনও বা ইচ্ছে থাকে রাজনীতিবিদ হওয়ার। কিন্তু আমি এসবের বাইরে ব্যতিক্রম লক্ষ্য বেছে নিয়েছি। আমি আমার ভালোলাগা থেকে এ পেশায় নিজেকে যুক্ত করতে চাই। এক্ষেত্রে জনসনের কথার সাথে আমি একমত। তিনি বলেন, ‘যুক্তি দ্বারা হয়তো কোনো মানুষের মনে বিশ্বাস সৃষ্টি করা যায় কিন্তু ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করে কেউ কোনদিন সুখী হতে পারেনি’। আমাদের দেশের ৭০ শতাংশ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষিকাজের সাথে জড়িত। তারা পুরাতন আমলের পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করে। তারা দারিদ্র্যতার বেড়াজাল থেকে বের হতে পারেনি। অথচ তারাই আমাদের খাদ্যের যোগান দিতে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করছে। কৃষকরাই কৃষির মূলচালিকা শক্তি। তাদের গুরুত্বের কথা রাজিয়া খাতুনের পঙক্তিতে ফুটে উঠে-

‘সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা,
দেশ মাতারই মুক্তিকামী দেশের সে যে আশা।’এসব মুক্তিকামী মানুষরাই এখন শোষণ ও বঞ্চনার শিকার। তারা দিন-রাত পরিশ্রম করেও অধিক পরিমাণে ফসল উৎপাদন করতে পারে না। এর ফলে তাদের আর্থিক সমস্যার সাথে সাথে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থাও খুব নাজুক হয়ে উঠেছে। আমি একজন কৃষি কর্মকর্তা হয়ে কৃষকদের আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করার জন্য প্রশিক্ষণ দিব। তাদের আধুনিক উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদের জন্য উদ্বুদ্ধ করব। তাদেরকে উন্নতমানের বীজ ও সার ব্যবহারের সুফল সম্পর্কে অবহিত করব। তাদের মাধ্যমে আমি এদেশে ফসলের জোয়ার আনব। কৃষির মাধ্যমে তাদের অবস্থার উন্নতির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করব।

লক্ষ্য অর্জনের প্রস্তুতি: বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক-এ তিনটি বিভাগ রয়েছে। আমার ইচ্ছা পূরণের জন্য আমি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসিতে পড়ব। এসএসসি পরীক্ষা পাসের পর একটা ভালো কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করব। এইচএসসি পাসের পর আমি শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স করে সরকারের কৃষি বিভাগে যোগদান করব। আমি প্রথম কর্মস্থল নিব আমার নিজ জেলায়। নিজ জেলা থেকেই আমি আমার কার্যক্রম শুরু করতে চাই। আমার জেলার কৃষকদের অবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে আমি স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাব।

লক্ষ্য অর্জনে করণীয়: কঠোর সাধনা করে জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে হয়। কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে আমাকে অভিজ্ঞ হতে হবে। উন্নত ধরণের কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে আমাকে জ্ঞান লাভ করতে হবে। বর্তমানে কৃষকদের সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও তার সমাধানের উপায় বের করতে হবে। তাদের জমিতে অধিক ফসল ফলানোর যাবতীয় পরামর্শ দিতে হবে। আমার আদর্শকে মনে প্রাণে ধারণ করে আমি এখন থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমি সচেতন।

আমার জীবনের লক্ষ্যের সার্থকতা: আমার লক্ষ্য এদেশের কৃষকদের জীবনে আমূল পরিবর্তন আনা। তারা কৃষি সম্পর্কে অজ্ঞ। তারা জানে না উন্নত দেশে কিভাবে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে চাষাবাদ হচ্ছে, কিভাবে অল্প জমিতে অধিক ফসল ফলানো হচ্ছে। কৃষকদের উন্নতি হলেই কৃষি নির্ভর এদেশের সামগ্রিক উন্নতি হবে। কৃষকদের সাফল্য লাভেই আমার সার্থকতা। তাদের সেবা করাই হবে আমার লক্ষ্য। এক্ষেত্রে জর্জ ওয়াশিংটনের উক্তিটিই আমি লালন করি- ‘কোনো দেশের প্রকৃত সেবা সে দেশের মূল সম্পদ কৃষির উন্নতির চেষ্টা ছাড়া অন্য কিছুতে হতে পারে বলে আমি জানি না।’

উপসংহার: আমাদের দেশ কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের অর্থনীতি নির্ভর করে কৃষির উপর। কৃষিরই যদি উন্নতি না ঘটে তবে আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটবে না। তাই আমার জীবনের লক্ষ্য একজন কৃষি কর্মকর্তা হয়ে এ কৃষক সমাজের উন্নতি সাধনে সহায়তা করা। সবশেষে আমি ঈশ্বরচন্দ্র গুহের সাথে একমত। তিনি বলেন-‘কৃষিই সমাজের মেরুদন্ড, কৃষিই ভিত্তিমানব সমাজের মুখবন্ধনী। ফলত- কৃষি লইয়াই সমাজ; কৃষি কাজের উন্নতিতেই সমাজেরও সৃষ্টি ও স্থিতি; এবং কৃষির ক্রমোন্নতিতেই সমাজের ও দেশের সর্বাঙ্গীন উন্নতি।’




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন