“কেন তবে লেখা , কেন গান গাওয়া / কেন তবে আঁকাআঁকি ?” – এই মন্তব্যটির মধ্যে দিয়ে কবির কোন্ বিশেষ মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে আলোচনা করো ।
উত্তর : মৃদুল দাশগুপ্তের ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতাটি সামাজিক অবক্ষয়ের জ্বলন্ত স্বরূপ । সমাজে ঘটে যাওয়া অজস্র ঘটনার প্রবাহকে নিজের মতো করে কবিতায় রূপ দেন কবি । কিন্তু তা শুধু ঘটনাকে তুলে ধরার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না , সঙ্গে যুক্ত হয় কবির নিজস্ব প্রতিক্রিয়াও । সেই প্রতিক্রিয়ায় ক্রোধ আর ঘৃণাও মিশে যায় প্রায়ই । যে কবি একদা লিখেছিলেন “আমি মৃদুল দাশগুপ্ত , আমি আরব গেরিলাদের সমর্থন করি ,” তিনি যখন নিহত ভাই-এর মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন , তখন তাঁর ক্রোধ হওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক । মানুষের প্রতি ভালোবাসা , দায়বদ্ধতা আর মূল্যবোধই তাঁর এই ক্রোধের উৎস । নিখোঁজ মেয়ের ছিন্নভিন্ন শরীর যখন জঙ্গলে পাওয়া যায় , তখন কবিতার মাধ্যমেই নিজের বিবেককে জাগিয়ে রাখতে চান কবি । যে অনুভূতি থেকে নজরুল লিখেছিলেন “রক্ত ঝরাতে পারি না তো একা/তাই লিখে যাই এ রক্ত লেখা”, কবি সেই একই প্রেরণা থেকেই লিখে চলেন প্রতিবাদধর্মী কবিতা , কবিতার মধ্যে মজুত করে দেন প্রতিবাদের বারুদ , সামান্য আগুনের ছোঁয়াতেই যা থেকে নিশ্চিতভাবে ঘটে যাবে প্রতিবাদের বিস্ফোরণ । এই মৃত্যু , এই নারকীয় অত্যাচার প্রতিনিয়ত কবির দেশমাতাকে করে তোলে ‘ক্রন্দনরতা জননী’ । আর কবি চান সেই জননীর পাশে দাঁড়াতে । এই পাশে দাঁড়ানো আসলে সেই দায়বদ্ধতা যা একজন কবি , শিল্পী বা গায়কের কাছে প্রত্যাশিত । কবি বিশ্বাস করেন — “সমস্ত কবিতাই জীবন ও জীবনযাপনের ”। তাই জীবন যখন লাঞ্ছিত এবং রক্তাক্ত হয় , তখন তার পাশে দাঁড়ানোকেই তিনি কবির ধর্ম বলে মনে করেছেন ।
No comments