রচনা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
রচনা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৯

আন্তর্জাতিক নারী দিবস বাংলা রচনা




ভূমিকা:

কোনো কালে একা হয়নিকো জয়ী পুরুষের তরবারী,
প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে, বিজয়ী লক্ষ্মী নারী।
-কবি নজরুল ইসলামপৃথিবীর মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। এই নারীর অবদান পুরুষ কখনই অস্বীকার করতে পারবে না। পুরুষের প্রতিটি সৃষ্টিকর্মের মধ্যে রয়েছে নারীর ভূমিকা। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের উপরিউক্ত বিখ্যাত চরণদুটি আমাদেরকে একথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। অথচ যুগ যুগ ধরে নারীর এই অবদানকে অবদমিত করে রাখা হয়েছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারী সমাজের মুক্তির একটি পদক্ষেপ মাত্র।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস: প্রতি বছর ৮ মার্চ সারাবিশ্বে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়। দিবসটির পূর্ব নাম ছিল ‘আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস’। বিশ্বব্যাপী এই দিবস পালনের কেন্দ্রীয় বিষয় নারী। কিন্তু আঞ্চলিক ভিত্তিতে দিবসটি পালনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভিন্ন রকম হয়। কোথাও নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ প্রাধান্য পায়, আবার কোথাও নারীর আর্থিক, সামাজিক, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা বেশি গুরুত্ব পায়। কোথাও বা নারীর নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষার বিষয়টিকে মুখ্য হিসেবে রেখে দিবসটি উদযাপিত হয়।

ইতিহাস: ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ নারীদের জন্য একটি স্মরণীয় দিন। এ দিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের একটি সূচ তৈরি করখানার নারী শ্রমিকেরা আন্দোলন শুরু করেন। কারখানার মানবেতর পরিবেশ, ১২ ঘণ্টার কর্মসময়, অপর্যাপ্ত বেতন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিরুদ্ধে তাদের এক প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। কিন্তু পুলিশ এই শান্তিপূর্ণ মিছিলে মহিলা শ্রমিকদের উপর নির্যাতন চালায়। বহু শ্রমিককে আটক করা হয়। এই ঘটনার স্মরণে ১৮৬০ সালের ৮ মার্চ মহিলা শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করে নিউইয়র্ক সূচ শ্রমিকেরা। এভাবেই সংঘবদ্ধ হতে থাকে মহিলা শ্রমিকদের আন্দোলন। এক সময় তা কারখানা ও ইউনিয়নের গন্ডি অতিক্রম করে। ১৯০৮ সালে জার্মান সমাজতন্ত্রী নারী নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় জার্মানিতে। এই সম্মেলনে নারীদের ন্যায্য মজুরী, কর্মঘণ্টা এবং ভোটাধিকারের দাবী উত্থাপিত হয়। ১৯১০ সালের ২য় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ডেনমার্কের কোপেনহেগেন-এ। এতে ১৭টি দেশের প্রতিনিধিরা যোগ দেয়। এ সম্মেলনেই ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯১১ সালে প্রথম ৮ মার্চ দিবসটি পালিত হয়। ১৯১৪ সাল থেকে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলিতে দিবসটি বেশ গুরুত্বের সাথে পালিত হতে থাকে। ১৯৭৫ সাল থেকে জাতিসংঘ দিবসটি পালন করতে থাকে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দিবসটি পালনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয় ১৯৭৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর। এ সময় জাতিসংঘ দিবসটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে দিবসটি পালনের আহবান জানায়। এর ফলে অধিকার বঞ্চিত নারী সমাজের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির পথ সুগম হয়। নারীর অধিকার রক্ষা ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এটি এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।

নারীর বর্তমান অবস্থা: বর্তমান যুগকে বলা হয় গণতান্ত্রিক যুগ, সমতার যুগ। কিন্তু এ সময়েও নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নারীরা এখন কাজের জন্য ঘরের বাইরে যাচ্ছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গবেষণা, শিল্প-সাহিত্য ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই নারীর পদচারণা লক্ষণীয়। কিন্তু তারপরও নারীরা এখনও বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। পরিবারের মধ্যে আপনজন কর্তৃক নারীর নির্যাতিত হওয়া ঠেকানো যাচ্ছে না। কর্মস্থল, পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থায়, পথেঘাটে নারীরা বিভিন্নভাবে ইভ টিজিং এবং যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। নারী দিবস উদযাপন করে এসব অবস্থার উন্নতি করা না গেলেও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে নারী নির্যাতন অনেক হ্রাস পেয়েছে। নারীর নিরাপদ কর্ম পরিবেশ, কর্মঘণ্টা, মজুরি ইত্যাদি বিষয় নিশ্চিত করা গেছে অনেক ক্ষেত্রেই। সারাবিশ্বে নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে এই দিবসটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। নির্যাতন প্রতিরোধ এবং নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে নারী উন্নয়ন সম্ভব। কিন্তু বিভিন্ন দেশে এ ক্ষেত্রে এখনও বহু বাধা রয়েছে। এই বাধাগুলির মধ্যে প্রধান হলো-

- নারী উন্নয়নের প্রথম এবং প্রধান বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে সব সময় পুরুষের অধীন এবং ছোট করে দেখা হয়।

- সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে না। এটিও নারী উন্নয়নের পথে এক বড় অন্তরায়।

- নারী যদি শিক্ষার আলোয় আলোকিত না হয় তবে সে সচেতন হয় না। তার আয় বাড়ে না। ফলে সে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়। এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়।

- নারীর ক্ষমতায়ন না থাকা।

- নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকা।

- কৃষিভিত্তিক সমাজ।

নারী উন্নয়নে করণীয়: নারী উন্নয়ন বলতে নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং কাজের যথাযথ মূল্যায়নকে বুঝানো হয়। নারী উন্নয়নে সমাজ ও রাষ্ট্রকে একসাথে কাজ করতে হবে। এজন্য করণীয় হলো-

- নারীর প্রধান শক্তি হলো শিক্ষা। নারীশিক্ষার বিস্তার ঘটলে নারীর কর্মসংস্থান হবে, আয় বাড়বে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে। তাই নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিৎ নারী শিক্ষা বিস্তার।

- নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে নারীর উন্নয়ন সাধন করা সম্ভব।

- নারী-পুরুষের বিদ্যমান বৈষম্য দূর করা।

- নারীর নিরাপদ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।

- রাজনৈতিকভাবে নারীর ক্ষমতায়ন করা।

- নারী স্বার্থের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।

- নারীর উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সহায়ক সেবা প্রদান করা ইত্যাদি।



দিবসটির তাৎপর্য: বিশ্বজুড়ে নারীর অধিকার ও নারীদের অগ্রাধিকার একটি বহুল আলোচিত বিষয়। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ছিল নারীদের অধিকার, বিশেষত কর্মজীবী নারীদের অধিকার আদায়ের প্রথম প্রচেষ্টা। এর সূত্র ধরে নারীদের প্রতি বৈষম্য দূরীকরণে সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন গোষ্ঠীর। জাতিসংঘের মাধ্যমে সাক্ষরিত হয়েছে বিভিন্ন চুক্তি ও সনদ। নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এসব চুক্তি ও সনদ কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে। অনেক ক্ষেত্রে নারীর সুরক্ষায় এসব চুক্তি-সনদ আইনে পরিণত হয়েছে। বাধ্য করেছে মালিকপক্ষ এবং সরকারকে নারীদের দাবী মেনে নিতে। তাই সমালোচনা থাকলেও আন্তর্জাতিক নারী দিবসের তাৎপর্য অপরিসীম।

উপসংহার: আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস। নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ করতে পারি, তবেই দিবসটির উদযাপন সার্থক হবে।





বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ বাংলা রচনা




বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ

ভূমিকা :– বিজ্ঞান কি সকলের জন্য ? বিজ্ঞান কি মানুষকে সার্বিক মুক্তির পথ দেখাতে পেরেছে  ? তা কি মানুষকে কিত্রিম করে দিচ্ছে না ? এসব প্রশ্ন বর্তমানে প্রতিভাত হচ্ছে । কেননা বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ধনী হচ্ছে আরো ধনী । শিল্পাঞ্চলে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হচ্ছে , মানুষ হয়ে যাচ্ছে যন্ত্র । গান্ধীজি বলেছিলেন – " যন্ত্র পাপ " । কিন্তু রবীন্দ্রনাথের মতে , যন্ত্র যদি মানব কল্যাণে নিয়োজিত হয় তবে তা পাপ নয় । তবে বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে যেভাবে দেশে দেশে পরমাণু শক্তি ও যুদ্ধাস্ত্র তৈরি হচ্ছে , তার ক্ষতিকর দিক গুলিকে আমাদের ভাবতে হবে । মনে রাখতে হবে , পরমাণু শক্তি দিয়ে আর যেন হিরোশিমা – নাগাসাকি তৈরি না হয় । পরমাণু শক্তি কাজে লাগিয়ে দেশে দেশে যেন হিংসাক্ত কাজ করে সন্ত্রাসবাদ না ছড়ানো হয় । বিজ্ঞানের শক্তিতে মানুষ যেন বলদর্পী না হয় । বিজ্ঞানকে স্বাস্থ্যসিদ্ধির কাজে লাগাতে গিয়ে অনেকেই আজ যান্ত্রিক হয়ে উঠেছে । দেখা দিচ্ছে অবিশ্বাস , হিংসা আর পরশ্রীকাতরতা । মনে রাখতে হবে , বিজ্ঞানের শক্তি ততটাই যতটা সে কল্যাণমুখী ।




প্রগতির ক্ষেত্রে বিজ্ঞান :– আগুন জ্বালাবার মধ্যে দিয়েই বিজ্ঞানের যাত্রার সূচনা । এরপর বিজ্ঞান সৃষ্টি করে চলেছে বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কার । বিজ্ঞানের জন্যই তৈরি হয়েছে ছাপার মেশিন । এই ছাপা বই আমদের শিক্ষার কাজে প্রধান অবলম্বন । উচ্চতর শিক্ষার জন্য বিজ্ঞানের তৈরি বিভিন্ন যন্ত্রপাতি , ল্যাবরেটরীর শিক্ষাথীদের এক স্থিতিদায়ক জায়গায় নিয়ে গেছে । অন্ধদের জন্য বিজ্ঞান বসে থাকেনি । তারা যাতে শিক্ষিত হতে পারে তারই জন্য ১৯০০ সালে বিজ্ঞানী স্ট্রাশম্যান আবিষ্কার করেন ব্রেইল পদ্ধতি । তাছাড়া মস্তিষ্কের অস্ত্র প্রচার , হৃৎপিণ্ড পরিবর্তন প্রভুতি ক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের যাদুকরী অবদানের কথা অস্বীকার করা যায় না । কৃত্রিম উপগ্রহ যেমন ইনসাট – ১ এ , ইনসাট – ১ বি প্রভুতির মাধ্যমে দুর – দূরান্তের বিভিন্ন খবরা খবরও জানতে পারি । এই সমস্ত উপগ্রহের দ্বারা আমরা বাড়িতে বসে খেলা ধুলাও দেখি ।




সমাজের সবত্র বিজ্ঞানের দান :– সভ্য সমাজের যে কোন ক্ষেত্রে চোখ মেললেই দেখা যায় , সভ্যতার রন্ধে রন্ধে বিজ্ঞানের অবদান । গ্রামের মাঠের মধ্যে দিয়ে পথে চলছে বাস , লোরী , ট্যাক্সি , স্কুটার ইত্যাদি । পথের দুপাশে বৃহত বৃহত অট্টালিকা । বাড়িতে বাড়িতে আলো জ্বলছে , পাখা ঘুরছে । গ্রামের মধ্যে ও মিলে তৈরী হচ্ছে কাপড় , কৃষকরা ব্যাবহার করছে লাঙ্গলের পরিবর্তে পাওয়ার টিলার , ট্র্যাক্টর , করছে রাসায়নিক সার । বিজ্ঞানকে বাদ দিয়ে গভীর অরন্য , নির্জন সমুদ্র এবং এমনকি নিস্তব্ধ হিমবাহে পযন্ত চলবার জো নেই । কৃষি , শিল্প , শিক্ষা , যানবাহন , আমোদ – প্রমোদ , খেলা ধুলা সব ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানের দান । বিজ্ঞান আজ মানব সভ্যতায় এনেছে যুগান্তর । সভ্যতার ঊষালগ্নে মানুষ ছিল অরন্যচারি ও গুহাবাসী । কিন্তু সে সময়ে মানুষকে বিরুদ্ধ শক্তির সঙ্গে পদে পদে সংগ্রাম করতে হয়েছে । কিন্তু বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কারে মানবসভ্যতার সুরম্য ইমারত আজ প্রতিষ্ঠিত । তবুও বলবো , বিজ্ঞানের উন্নতি সব ক্ষেত্রে মানব কল্যাণে নিয়োজিত হয়নি । বিজ্ঞানের অভিশাপের ফলও তাই যত্রতএ । তাই এখন প্রয়োজন বিজ্ঞানের কুফল গুলি দূর করে তার সুফল গুলিকে আপামর জনসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া । তৃনমুলস্তরে বিজ্ঞানের সুযোগ – সুবিধাকে পৌঁছে দেওয়া ।





শান্তির ক্ষেত্রে বিজ্ঞান :– বিজ্ঞান তার বহুল আবিষ্কারের মধ্যে দিয়ে মানবজীবনকে দান করেছে প্রশান্তি । কিন্তু বর্তমান সভ্যতায় বিজ্ঞানের আবিষ্কার ভয়ানক মারনাস্ত্র । যা নিমিষে ধ্বংস করে দিতে পারে কত অমূল্য তাজা জীবন । বিজ্ঞান তৈরি করেছে পরমাণু বোমা , রাসায়নিক বোমা , যা যুদ্ধপ্রিয় দেশগুলি নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করছে এবং পৃথিবী থেকে শান্তির নিশান মুছতে চাইছে । কিন্তু চুলচেরা বিশ্লেষণে দেখা যায় , বিজ্ঞানীরা ঐ সমস্ত পরামানবিক অস্ত্রশস্ত্র আবিষ্কার করলেও প্রকৃত দায়ী কিন্তু প্রয়োগকর্তারাই । পরমাণু বোমার ধ্বংসস্তূপ রূপ আমরা জানতে পারি হিরোশিমা ও নাগাসাকি থেকে – আজও যেখানে বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হয় । তাই মর নাস্ত্র আবিষ্কার বন্ধ করে বিজ্ঞান আজ পৃথিবীর বুকে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট হয়েছে ।



অনুসরণে লেখা যায় :– বিজ্ঞানের শান্তি ততটাই যতটা সে কল্যাণমুখী ।




ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য বাংলা রচনা




ভূমিকাঃ “আমরা শক্তি আমরা বল/ আমরা ছাত্রদল/ মোদের পায়ের তলায় মূর্চে তুফান/ ঊর্ধ্বে বিমান ঝড়-বাদল/ আমরা ছাত্রদল।” কাজী নজরুল ইসলামছাত্ররাই একটি দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের দিকেই তাকিয়ে থাকে দেশ ও সমাজ। তারা ভোরের শিশির, প্রভাতের আলোর মতো নবজীবনের দ্যুতি ছড়ায়। তারা তাদের কর্মে দেশ ও সমাজের সব অনাচার, অবিচার, অসঙ্গতি দূরে ঠেলে দেয়। তাদের মধ্যে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। তারা পারে না এমন কাজ পৃথিবীতে নেই। ছাত্রসমাজ জেগে উঠলে পুরো জাতি, দেশ ও পৃথিবী জেগে উঠে। তারা তাদের সংগ্রাম দিয়ে যেমন দেশকে সংঘাত মুক্ত করে তোলে, তেমনি নৈতিকতা, শিষ্টাচার, সৌজন্যতা দিয়ে দেশকে সুখী ও সুন্দর করে তোলে।

ছাত্রজীবনঃ অধ্যায়নের জীবনটাই ছাত্রজীবন। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে দেশের বাইরে বিভিন্ন গবষেণামূলক অধ্যয়নের সবটুকুই ছাত্রজীবনের অন্তর্ভুক্ত। একজন ছাত্র কোনো কিছুতেই পিছপা হয় না। ছাত্রজীবন মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। ছাত্রজীবনেই মানুষ ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত গড়ে তোলে। জীবনকে প্রাণপ্রাচুর্যে ভরে তোলার শিক্ষা মানুষ ছাত্রজীবন থেকে পায়। বদান্যতা, সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা, নিয়মানুবর্তিতা, দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ, মহানুভবতার শুরু ছাত্র জীবন থেকেই। প্রতিটি ছাত্রই দেশগড়ার হাতিয়ার। ভবিষ্যতে তারাই দেশের নেতৃত্ব দিবে। M.K Gandhi বলেন, "The students are the Future leaders of the country who could fullill country's hopes being capable."

ছাত্রদের দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ “ছাত্র নং অধ্যয়নং তপ” এটিই ছাত্রদের মূলমন্ত্র। সংস্কৃত এই কথাটির অর্থ- অধ্যয়নেই ছাত্রদের একমাত্র তপস্যা। ছাত্রজীবন মানেই জ্ঞান-বিজ্ঞানের জগৎ। যেখান থেকে ছাত্ররা প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শিখবে। আর এ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে কর্মমুখী জীবনে প্রবেশ করবে। স্বাস্থ্যকর, মানসম্পন্ন, সুন্দর পরিবেশে কাজ করতে চাইলে ছাত্রজীবন থেকেই সেই মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। ছাত্রজীবনে পড়াশোনার কোনো বিকল্প নেই। তার পাশাপাশি মানুষ্যত্ববোধও অর্জন করতে হবে। শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে। শিক্ষকের আদেশ পালন করলে একটি ছাত্র অবশ্যই ভালো গুণের অধিকারী হতে পারবে। কেননা শিক্ষকই একটি ছাত্রকে সৎ ও মেধাবী করে তোলে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, "None but those who have the spirit of forbearance are fit to be teaehcr." তাই শিক্ষককে সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে আসীন করতে হবে। ছাত্রদের অন্যতম প্রধান কর্তব্য শুধুমাত্র পাঠ্যপুস্তকে সীমাবদ্ধ না থাকা। পাঠ্যপুস্তকের বাইরেও অনেক কিছু শেখার রয়েছে যা তাদেরকে প্রকৃত জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করবে।

সামাজিক ক্ষেত্রে ছাত্রসমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্যঃএকটি দেশের সচেতন নাগরিক হচ্ছে ছাত্রসমাজ। অধ্যয়ন ছাত্রদের মূল লক্ষ্য হলেও সামাজিক ক্ষেত্রে তাদের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। তারাই দেশকে সঠিক পথ অনুসরণে সহায়তা করতে পারে। আমাদের দেশে এমন অনেক দরিদ্র সুবিধাবঞ্চিত পরিবার রয়েছে যেখানে একটি মাত্র সদস্য শিক্ষিত। সেই সদস্যটি পুরো পরিবারে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয় এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলে। শুধু পরিবার কিংবা সমাজ নয় ছাত্রসমাজকে পুরো জাতির নিরক্ষরতা দূরীকরণে সহায়তা করতে হবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার মারাত্মক আকার ধারণ করছে সেসব দেশের ছাত্রসমাজের উচিত সংঘবদ্ধভাবে জনগণকে পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে এবং অধিক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কুফল সম্পর্কে সচেতন করে তোলা। সমাজকে এবং শিক্ষাঙ্গনকে সন্ত্রাসমুক্ত করার দায়িত্ব ছাত্রদেরই কাঁধে নিতে হবে। আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামোর কারণে শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান দেওয়া সম্ভব হয় না ফলে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু ছাত্রসমাজের উচিত নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি করা। শিক্ষিত যুবকরা যদি কৃষি কাজ, মৎস্য চাষ, পশুপালন, নার্সারি ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাদের মেধা ও শ্রমকে কাজে লাগায় তাহলে দেশের উন্নয়ন যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি বেকারত্বও হ্রাস পাবে।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ ছাত্রসমাজ অনাচার, অবিচার, অত্যাচার ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সবসময়ই সোচ্চার। আদর্শগতভাবেই তারা রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। রাজনীতির বিষবৃক্ষের মূলোৎপাটন করা ছাত্রদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। যুগে যুগে ছাত্রসমাজ দেশের স্বাধীনতা অর্জনে এবং স্বাধীনতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে। শিক্ষিত, ব্যক্তিত্ববোধসম্পন্ন ছাত্রসমাজ কখনো পরাধীনতার গ্লানি বয়ে বেড়াতে চায় না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ছাত্রদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। তাছাড়া মাতৃভাষার জন্য তারা যে ত্যাগ স্বীকার করেছে তা ইতিহাসের পাতায় বিরল। ১৯৬২ সালের হামিদুর রহমানের শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রসমাজ গৌরবময় ভূমিকা পালন করেছিল। তবে বর্তমানে ছাত্ররা রাজনীতির প্রকৃত আদর্শ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে সন্ত্রাসবাজি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন দুষ্কৃতিমূলক কাজে জড়িয়ে নিজেদের মেধাকে নষ্ট করে ফেলছে।

পারিবারিক ক্ষেত্রে দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ "Charity begins at home" ছাত্ররা পরিবারের কাছ থেকে যেমন অনেক কিছু পায় তেমনি পরিবারের প্রতিও তাদের অনেক দায়িত্ব থাকে। পরিবারের সকলেই তাদের কাছ থেকে ভালো আচার ব্যবহার প্রত্যাশা করে। আব্বু-আম্মু এবং পরিবারের বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা, ছোটদের প্রতি স্নেহ করা তাদের কর্তব্য।

দেশাত্মবোধঃ ছাত্ররা দেশপ্রেমকে তাদের অন্তরে লালিত করে। তারা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের জীবন পর্যন্ত বাজি রাখতে পারে দ্বিধাহীনভাবে। ছাত্রদের দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকায় তারা দেশকে আরও বেশি আপন করে নিতে পারে। ছাত্রসমাজ মানেই তরুণ সমাজ। প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর এই তরুণসমাজকে দেশের ও দেশের মানুষের সেবায় মগ্ন থাকতে হবে। তাদের মধ্যে কোনো ক্লান্তি, কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা উচিত নয়। বন্যা-দুর্গত, ঝড়ে কবলিত এলাকায়, দুঃস্থ মানুষের পাশে সবসময় তাদের সেবার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।

নিয়মানুবর্তিতাঃ "Work while you work, play while you play, And that is the way to be happy;"-এ নীতি মেনে চললে ছাত্ররা তাদের সাফল্যের চরম শিখরে আরোহণ করতে পারবে। ছাত্রদের প্রথম কাজ পড়াশোনা। কখনোই তাদের একদিনের কাজ অন্যদিনের জন্য রেখে দিলে চলবে না। ব্যক্তিজীবনে, সমাজ জীবনে, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ছাত্রদের অবশ্যই নিয়মানুবর্তিতার সাথে সুষ্ঠুভাবে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হবে। ছাত্রজীবন থেকেই নিয়মানুবর্তিতায় বেড়ে উঠলে কর্মজীবনও এর প্রভাব পড়বে।

নৈতিক মূল্যবোধ ও শিষ্টাচারঃ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের শুধু পরীক্ষা পাসের শিক্ষাই দেওয়া হয় না। তাদেরকে নৈতিক মূল্যবোধ এবং শিষ্টাচারের শিক্ষা দেয়া হয়। নৈতিক মূল্যবোধ ছাত্রকে সৎ, কর্তব্যনিষ্ঠ, নিয়মনিষ্ঠ, পরিশ্রমী সর্বোপরি সুন্দর চরিত্রের অধিকারী করে তোলে। প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠার জন্য চাই নৈতিকতা। শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ ছাত্রসমাজকে নম্র-ভদ্র ও নির্মল চরিত্রের অধিকারী করে। পরিবারের সকলের প্রতি, শিক্ষকদের প্রতি, সহপাঠীদের প্রতি মার্জিত আচরণে ছাত্ররা সকলের কাছ থেকে ভালোবাসা, দোয়া এবং সাহায্য-সহযোগিতা পায়। নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন এবং শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধসম্পন্ন ছাত্রসমাজই পারে ভবিষ্যতে জাতির সুষ্ঠু নেতৃত্ব দিতে। তাই ছাত্রদের শিষ্টাচার ও নৈতিক মূল্যবোধের গুণে অর্জন করতে হবে।

উপসংহারঃ দেশ ও জাতি সৎ, চরিত্রবান, নিয়মনিষ্ঠ, কর্তব্যপরায়ণ, সৌজন্যবোধসম্পন্ন পরিশ্রমী ছাত্রসমাজের কামনা করে। সাম্প্রতিককালে ছাত্রসমাজ আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে বিভিন্ন ধরণের অপরাধমূলক কাজ করছে। ছাত্র-রাজনীতির নামে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে। যা দেশ ও জাতির কাছে মোটেও কাম্য নয়। এভাবে চলতে থাকলে জাতি শেকড়হীন হয়ে পড়বে। তাই ছাত্রসমাজের উচিত তাদের প্রকৃত আদর্শে আলোকিত হওয়া। যে শিক্ষা ও মূল্যবোধ ছাত্ররা অর্জন করে ভবিষ্যতে তা পরিপূর্ণ ভাবে কাজে লাগানো, ছাত্রদের প্রকৃত উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।





পরিবেশ উন্নয়নে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা বাংলা রচনা







ভূমিকা :– বানিজ্যিক বাজার ও কাঁচা মালের প্রভূত সম্ভাবনার ক্ষেত্র ভারতবর্ষে থাকায় ভারতবর্ষ বিদেশিদের দ্বারা বারবার লুণ্ঠিত হয়েছে । বর্তমানে বিশ্বয়নের কুফলের ফলে সেই লুণ্ঠনের পরিমাণ আরো বেড়েছে । যে ভারতের পরিবেশ ও সংস্কৃতি বিশ্বের আঙিনায় নিজেকে প্রমাণ করে নিজেদের গৌরব প্রতিষ্ঠা করেছে , সেই পরিবেশ ও সংস্কৃতি আজ লুণ্ঠিত । আমাদের দেশের নিমগাছ , হলুদগাছ , বাসমতি চাল , অবিশ্বাস্য হলেও আর আমাদের নেই , এমনকি আমাদের দেশের মাটি আজ অপরের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত । ভারতের আকাশে , বাতাসে দূষণের ছড়াছড়ি । ভারতের মাটিতে যে চাষ হয় তা নিয়ন্ত্রণ করে ধনী দেশ , আর সেই সব ধনী দেশ যে সব মারাত্মক গ্যাস উৎপাদন করে, তা পৌঁছে যায় আমাদের মতো গরীব দেশগুলিতে । সেই প্রেক্ষিতে পরিবেশ উন্নয়নে দেশের ছাত্র সমাজের একটি বিশিষ্ঠ ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না ।



আইনগত দিক :– ভারতীয় সংবিধানের ৫১ ( ক ) ধারায় ভারতীয় নাগরিকদের ভারতীয় পরিবেশ রক্ষার কথা বলা হয়েছে । ছাত্র ছাত্রী ভারতীয় নাগরিক হিসেবে সেই দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ । আসলে লোকসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় নাগরিকের চেতনা ব্যাক্তিগত স্বার্থ দেখতে গিয়ে জাতীয়  স্বার্থ তথা পরিবেশগত দায়বদ্ধতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে , দেখা দিচ্ছে নানান দূষণ । সেক্ষেত্রে সচেতন নাগরিক হিসেবে পরিবেশ রক্ষায় ও উন্নয়নে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য ।



পরিবেশ সচেতনায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা :– সচেতনতাই পারে যে কোন উন্নয়নকে গতিশীল করতে । সেই উন্নয়নে ছাত্র ছাত্রীকেই অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে । সেজন্য যা করতে হবে তাহলো – ক) পারিপাশ্বিক পরিবেশ সমন্ধে নিজেদের সচেতন হওয়া । খ) জন সাস্থ্য সম্পকে অবহিত হয়ে , সেই বিষয়ে প্রচার করা । গ) সবরকম দূষণ ও তার কারন সমন্ধে পারস্পরিক আলোচনা করে যথাসম্ভব তা বন্ধ করার জন্যে কর্মসূচি গ্রহণ । ঘ) নিজেদের বাড়িতে পয়ঃ প্রণালী ঠিক রাখা । ঙ) যে সব কারণে ব্যাক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি বিঘ্নিত হয় সেসব কাজ না করা । আহার , নিদ্রা , পরিষ্কার – পরিছন্নতা , বিষয়ে সচেতন হওয়া । সুষম খাদ্য সমন্ধে চেতনা গড়ে তোলা । চ ) অবৈজ্ঞানিক মানসিকতা ও কুসংস্কার দূরীকরনে সচেষ্ট হওয়া । ছ) ঘর গৃহস্থালির বজ্য পদার্থ যেখানে সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা । জ) হাসপাতাল , নার্সিংহোম বি, স্কুল , কলেজ প্রভুতি জায়গায় সবসময় পরিচ্ছন্ন রাখা । ঝ) ধূমপান , মদ্যপান , ড্রাগ সেবন প্রভুতি থেকে বিরত থাকা । স্কুল , কলেজ , রাস্তাঘাট , পার্ক ,বাস , ট্রাম , ট্রেন , প্রভুতি জায়গায় খাবারের পরিত্যক্ত প্যাকেট না ফেলা । বাড়ির সংলগ্ন পরিবেশের পক্ষে উপযোগী – গাছ লাগানো  ও পুরানো গাছ না কাটা । রোগ প্রতিরোধে গাছপালার যে ভূমিকা আছে , সেই সব গাছ যে আমদের বন্ধু তা জেনে , সবাইকে জানানো ।



প্রতিবন্ধীদের প্রতি সামাজিক দায়িত্ব বাংলা রচনা






ভূমিকা: বৈচিত্র্যময় উপাদান নিয়ে মানব সমাজ গঠিত। সমাজের সদস্যদের মধ্যে বৈচিত্র্য আরো বেশি। সমাজে বসবাসরত মানুষদের মধ্যে পৃথক পৃথক সত্ত্বা বিদ্যমান। অভ্যন্তরীণ গুণাগুণ, দোষ-ত্রুটি ছাড়া বাহ্যিকভাবেও রয়েছে অনেক পার্থক্য। মানুষের মধ্যে কেউ লম্বা, কেউ খাটো, কেউ ফর্সা, কেউ কালো আবার অনেকেই আছে এমন যাদের মধ্যে কারো হাত নেই কারো পা নেই, কারও বা দৃষ্টি শক্তি নেই। আবার অনেকে কানে শোনে না কথাও বলতে পারে না। সমাজে এসব মানুষ হলো ব্যতিক্রম। এদেরকে সাধারণভাবে প্রতিবন্ধী বলা হয়।

প্রতিবন্ধী কারা: স্বাভাবিক মানুষের বাইরে যেসব মানুষের শারীরিক ও মানসিক ত্রুটির কারণে জীবনের স্বাভাবিক গতি বাধাগ্রস্ত তাদের বলা হয় প্রতিবন্ধী। অন্যভাবে বলা যায় জীবনে চলার পথে স্বাভাবিক কাজকর্ম ও চিন্তা করতে যাদের প্রতিবন্ধকতা আছে তাদেরকেই প্রতিবন্ধী বলা হয়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO)-এর মতে “একজন প্রতিবন্ধী হচ্ছেন তিনি, যার স্বীকৃত শারীরিক ও মানসিক ক্ষতিগ্রস্ততার দরুন যথোপযুক্ত কর্মসংস্থানের প্রত্যাশা কমে যায়।” জাতিসংঘের প্রদত্ত সংজ্ঞানুযায়ী প্রতিবন্ধীতা হলো এমন কোনো বাঁধা বা সীমাবদ্ধতা (শারীরিক বা মানসিক ক্ষতিগ্রস্ততার কারণে উদ্ভুত), যা একজন মানুষের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে পুর্ণভাবে ব্যাহত করে। আবার অন্যভাবে বলা যায়, কতিপয় প্রতিবন্ধকতার কারণে ব্যক্তি যদি সামাজিক নেতিবাচক মনোভাব ও কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতার দরুন স্বাভাবিক জীবনযাপনে বাঁধার সম্মুখীন হয় তাহলে তাকে প্রতিবন্ধী বলা হয়। মোট কথা, বয়স, লিঙ্গ, জাতি, সংস্কৃতি বা সামাজিক অবস্থান অনুযায়ী আর দশজন যে কাজগুলো করতে পারে অসামর্থ্যরে কারণে সে কাজগুলো প্রাত্যহিক জীবনে করতে না পারার অবস্থাই হলো প্রতিবন্ধীতা।

প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা: UNDP (United Nations Development Programm) এর মতে, বর্তমান বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫% কোনো না কোনো ভাবে প্রতিবন্ধীতার শিকার। ২০১৩ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর জরিপে পৃথিবীতে মোট জনসংখ্যার ১০ ভাগ প্রতিবন্ধী। সেই হিসেবে বাংলাদেশে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ১ কোটি ৬০ লাখ। পুরুষ-নারী প্রতিবন্ধীর অনুপাত ৪৮ঃ৫২। শারীরিক প্রতিবন্ধী ৩৮ লাখ, মানসিক প্রতিবন্ধী ৪২ লাখ, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ৩৩ লাখ, শ্রবণ ও অন্যান্য প্রতিবন্ধী ২৫ লাখ। সিএসআইডি পরিচালিত গবেষণায় প্রকাশ করা হয়েছে যে, দেশের ৪০.৯৫ ভাগ নারী ও কিশোরী প্রতিবন্ধীতার শিকার জন্মগত কারণে, ৩.৩২ ভাগ শিকার হয় ভুল ও অপচিকিৎসায়। এ ছাড়া বিভিন্ন অসুখ, জ্বর, পোড়া ও দুর্ঘটনায় ৫৫.৭৪ ভাগ মানুষ প্রতিবন্ধী হয়ে যায়।

প্রতিবন্ধীদের সামাজিক অবস্থান: সমাজে প্রতিবন্ধীদের অবস্থান অত্যন্ত অবহেলিত। পরিবার থেকে শুরু করে সব স্থানেই প্রতিবন্ধীদেরকে খাটো করে দেখা হয়। আর দশজন স্বাভাবিক মানুষের মতো প্রতিবন্ধীদের সামাজিক সব অধিকার ভোগ করার কথা থাকলেও বরাবরই তারা তা থেকে বঞ্চিত। আত্মীয়-স্বজন সামাজিক মান মর্যাদার ভয়ে তাদের দূরে সরিয়ে রাখেন। সমাজে তাদের অবাধ চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। শিক্ষা, চাকরি, কর্মসংস্থান, বিয়ে, স্বাস্থ্যসেবা প্রভৃতি ক্ষেত্রে তারা বৈষম্যের শিকার হয়। বিভিন্ন ধরণের বৈষম্যের শিকার হয়ে তারা সমাজে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করতে পারে না।

পরিবারের মধ্যে প্রতিবন্ধীদের অবস্থান: যেকোনো মানুষের সামাজিক অবস্থান তৈরি হয় পরিবার থেকেই। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে একথা আরো বেশি প্রযোজ্য। আমাদের দেশের প্রতিবন্ধীরা কোনো না কোনোভাবে পরিবারে অবহেলার শিকার। তবে কোনো পরিবারে বেশি, কোনো পরিবারে কম। অবহেলার কারণে প্রতিবন্ধীতাকে অভিশাপ মেনে নিয়ে তারা অবহেলিত বঞ্চিত জীবনযাপনে বাধ্য হয়। দরিদ্র পরিবারগুলোতে প্রতিবন্ধীদের অবস্থা আরো করুণ। অনেক সময় তাদের অনাহার অর্ধাহারে থেকে দিন পার করতে হয়। অধিকাংশ পরিবারেই প্রতিবন্ধীদের বোঝা হিসেবে গণ্য করা হয়।

প্রতিবন্ধীদের প্রতি দায়িত্ব: প্রতিবন্ধীরা আমাদের সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদেরকে অবহেলায় পিছনে ফেলে রেখে সমাজ এগিয়ে যাবে তা কখনই সম্ভব নয়। সমাজের অংশ হিসেবে তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। এ দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে পালন করলে প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয় বরং সম্পদে পরিণত হবে। নিন্মে প্রতিবন্ধীদের প্রতি দায়িত্বগুলো আলোচনা করা হলো-

দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন: প্রতিবন্ধীদের প্রতি দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রথম করণীয় হলো তাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। অনেক বাবা মা আছেন যারা তাদের প্রতিবন্ধী শিশুদের বাইরে আনতে এবং অন্য শিশুদের সাথে মিশতে দিতে লজ্জা পান। কিন্তু আমাদেরকে এ ধরণের মন মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে।

প্রতিবন্ধীদেরকে সামাজিক স্বীকৃতিদান:প্রতিবন্ধীদেরকে সমাজের অংশ হিসেবে মেনে নিতে হবে। সামগ্রিক সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে প্রতিবন্ধীদের স্বীকৃতি দিতে হবে। সমাজের যাবতীয় সুযোগ সুবিধা ভোগের ক্ষেত্রে তাদেরকে গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে তাদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

শিক্ষার ব্যবস্থা: বাংলাদেশে ৯৭% শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও মোট প্রতিবন্ধী শিশুদের মাত্র ১১% স্কুলে ভর্তির সুযোগ পায়। যা সময়ের প্রেক্ষাপটে খুবই নগণ্য। এ জন্য প্রতিবন্ধীদের প্রতিবন্ধীতার ভিত্তিতে শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে দায়িত্ব: বেশির ভাগ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল এমন কি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজের মতো চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধীদের জন্য হুইল চেয়ার প্রবেশ করার মতো ঢালু পথ নেই। যা খুবই দুঃখজনক। প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসা দেশের সর্বত্র বিনামূল্যে করা, চিকিৎসকদের চেম্বারে দেখানোর ক্ষেত্রে, তাদেরকে আগে সুযোগ করে দেয়া আমাদের সকলের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব।

প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা: ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রতিবন্ধীদের জন্য মাসিক ২০০ টাকা হারে বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করে। কিন্তু এ ভাতা বর্তমান সময়ের তুলনায় অনেক কম। তাই এ ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করে প্রতিবন্ধীদেরকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতার পরিধি বাড়াতে হবে।

চলার পথে সহায়তা করা: আমাদের চলার পথে বিভিন্ন প্রতিবন্ধী দেখতে পাই। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদেরকে রাস্তা পারাপারে, শারীরিক প্রতিবন্ধীদেরকে হাত ধরে বা অন্যভাবে সহযোগিতা করা আমাদের সামাজিক দায়িত্ব। এছাড়া আরো কিছু দায়িত্ব হলো-

- সামাজিক গণসচেতনতা বৃদ্ধির কর্মসূচী গ্রহণ করতে হবে।

- প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানে আলাদা শিল্প কারখানা স্থাপন করা উচিত।

- শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের বিশেষ সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে।

- প্রতিবন্ধীদের বিনোদনের জন্য তাদের উপযোগী খেলাধুলা বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে।

- চাকরি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী কোটা বৃদ্ধি করা উচিত।

- প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষায় বিশেষ আইন প্রণয়ন করে তার যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে।

উপসংহার: যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সমাজে অবহেলিত ও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বঞ্চিত। অনেকের পারিবারিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। জীবনযাত্রার মান অনেক নিম্ন। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে এতো বিপুল সংখ্যক প্রতিবন্ধীকে পুনর্বাসন করা অত্যন্ত দূরহ। তাই সমাজের সচেতন সকল স্তরের বিশেষ করে বিত্তবান মানুষদের প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে এগিয়ে আসা উচিত।