মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৩

শক্তি চট্টোপাধ্যায় জীবনী মূলক রচনা




জন্ম ও পারিবারিক পরিচয় :– জীবানন্দ পরবর্তী বাংলা  সাহিত্যর অন্যতম প্রধান আধুনিক কবি ছিলেন শক্তি চট্টোপাধ্যায় । ১৯৩৩ সালে ২৫ নভেম্বর দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বহরুতে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম হয় । তার পিতা বামানাথ চট্টোপাধ্যায় এবং মাতা কমলাদেবী । কবির শৈশবের কিছুটা অংশ কেটেছে তার মামার বাড়িতে । চল্লিশের দশকে তিনি কলকাতার বাগবাজারে মামার বাড়িতে থাকতেন ।


ছাত্রজীবন :– হাতের কাজের প্রতি আগ্রহ থাকায় ছোটোবেলায় কবি ভরতি হন কাশিমবাজার পলিটেকনিক স্কুলে । ছাত্রজীবন থেকেই কবিতা লেখা শুরু করেন তিনি । অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় হরিপদ কুশারীর প্রভাবে কবি কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন । তিনি " রূপচাঁদ পক্ষী " ছদ্ম নামে কবিতা লেখা শুরু করেন । স্কুলে পড়াকালীনই শক্তি চট্টোপাধ্যায় " নবোদয় " নামের একটি হাতে লেখা পত্রিকা বের করেন । স্কুলের পাঠ সমাপ্ত করে এরপর তিনি বাংলা সাহিত্যে অনাস নিয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভরতি হন । কিন্তু কমিউনিস্ট আন্দোলনের সক্রিয় সদস্য শক্তি চট্টোপাধ্যায় ছাত্র রাজনীতির কারনেই ডিসকলেজিয়েট হন । ফলে কলেজের পাঠ তার শেষ করা হয়নি । পরবর্তীকালে কবি বুদ্ধদেব বসুর প্রেরনায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য ভরতি হলেও কয়েক মাসের মধ্যেই সেখানের পরাতেও তিনি ইতি টানেন ।


কর্মজীবন :– কবির প্রথম চাকরি ছিল " ক্লারিয়ণ " নামক এক বিজ্ঞাপন কোম্পানিতে কপিরাইটার কাজ । পরবর্তীকালে তিনি " ভারবি " প্রকাশনা সংস্থায় যোগ দেন । শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের পরিকল্পনাতেই এই প্রকাশনা সংস্থা থেকে " শ্রেষ্ট কবিতা " সিরিজটি প্রকাশিত হতে শুরু করে । এই সময়ে বন্ধু পৃথ্বীশ গঙ্গোপাধ্যায়ের সহযোগিতায় একটি টিউটোরিয়াল হোম খোলেন তিনি । পরবর্তীকালে বিশ্বভারতীতে তিনি অতিথি অধ্যাপক হিসেবে যুক্ত ছিলেন ।


সাহিত্যকর্ম :– বুদ্ধদেব বসুর " কবিতা " পত্রিকার প্রকাশিত হয় শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের " যম " কবিতাটি । এটিই তার প্রথম প্রকাশিত কবিতা । সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর তিনি তার " কৃত্তিবাস " পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন  এবং এই পত্রিকার অন্যতম প্রধান কবি হয়ে ওঠেন ।

[         ] ধীরে ধীরে শক্তি চট্টোপাধ্যায় পঞ্চাশের দশকের একজন শক্তিশালী ও জনপ্রিয় কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন । কবিতা রচনাই তার একমাত্র আশ্রয় । তিনি কবিতাকে " পদ্য " বলতেন ।  "স্ফুলিঙ্গ সমাদ্দার " নামে তিনি গদ্যচর্চাও করেছেন । ১৯৬১ সালে তিনি " কুয়োতলা " নামে তার প্রথম উপন্যাসটি লেখেন । প্রকৃতির পাশাপাশি প্রেম , নারী এবং মানুষকে নিয়েও তিনি কবিতা লিখেছেন । তার জীবন ছিল বেপরোয়া এবং বন্ধহীন । যুগের যন্ত্রণাকে গায়ে মেখে তিনি অস্থিরতায় ছট্ফট করেছেন । কবির উল্লেখযোগ্য কাব্য গুলি হলো – " ধর্মে আছো জিরাফেও আছো " ঈশ্বর থাকেন জ্বলে " সোনার মাছি খুন করেছি " প্রভু নষ্ট হয়ে যায় " ইত্যাদি । তার লেখা উল্লেখযোগ্য ছোটো গল্প " নিরূপমের দুঃখ " । এছাড়াও তিনি " মেঘদূত " গালিব প্রমুখের কবিতা অনুবাদ করেছেন ।

সম্মান ও স্বীকৃতি :– " যেতে পারি কিন্তু কেন যাবো " কাব্য গ্রন্থের জন্য ১৯৮৩ সালে তিনি " একাডেমী পুরস্কার " লাভ করেন ।

জীবনাবসান :– ১৯৯৫ সালে ২৩ মার্চ শান্তিনিকেতনে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যু ঘটে ।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন