জন্ম ও পারিবারিক পরিচয় :
আশাপূর্ণা দেবীর জন্ম হয় ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জানুয়ারি (বাংলা ২৪ পৌষ, ১৩১৫) শুক্রবার সকালে উত্তর কলকাতায় মাতুলালয়ে। পিতার নাম হরেন্দ্র নাথ গুপ্ত এবং মাতা সরলাসুন্দরী দেবী । হরেন্দ্রনাথ গুপ্ত ছিলেন কমর্শিয়াল আর্টিস্ট ; সেযুগের জনপ্রিয় বাংলা পত্রিকাগুলিতে ছবিও আঁকতেন। তার রাজভক্তি ও রক্ষণশীলতার বিপরীতে অবস্থান করতেন মা সরলাসুন্দরী দেবী। সাহিত্যপাঠই ছিল তার জীবনের একমাত্র ‘পরমার্থ’। রাজনৈতিক আদর্শে ছিলেন কট্টর ব্রিটিশ-বিদ্বেষী স্বদেশী।
গুপ্ত-পরিবারের আদিনিবাস ছিল হুগলি জেলার বেগমপুরে। যদিও আশাপূর্ণা দেবীর জীবনের সঙ্গে এই অঞ্চলটির কোনও প্রত্যক্ষ যোগ ছিল না। তার ছোটোবেলা কেটেছে উত্তর কলকাতাতেই, ঠাকুরমা নিস্তারিনী দেবীর পাঁচ পুত্রের একান্নবর্তী সংসারে। পরে হরেন্দ্রনাথ যখন তার আপার সার্কুলার রোডের (বর্তমান আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় রোড) নিজস্ব বাসভবনে উঠে আসেন আশাপূর্ণার বয়স তখন সাড়ে পাঁচ বছর। কিন্তু বাল্যের ওই কয়েকটি বছর তার মনে গভীর ছাপ রেখে যায়। পরবর্তীকালে সাহিত্যেও নানা ভাবে এঁকেছিলেন ‘দেহে ও মনে অসম্ভব শক্তিমতী’ তার সেই ঠাকুরমার ছবি।
শৈশব ও শিক্ষা : প্রথাগত শিক্ষার সৌভাগ্য আশাপূর্ণার হয়নি ঠাকুরমার কঠোর অনুশাসনে। পরবর্তীজীবনে এক স্মৃতিচারণায় এই প্রসঙ্গে আশাপূর্ণা বলেছিলেন, “...ইস্কুলে পড়লেই যে মেয়েরা... বাচাল হয়ে উঠবে, এ তথ্য আর কেউ না জানুক আমাদের ঠাকুমা ভালোভাবেই জানতেন, এবং তাঁর মাতৃভক্ত পুত্রদের পক্ষে ওই জানার বিরুদ্ধে কিছু করার শক্তি ছিল না।” তবে এই প্রতিকূল পরিবেশেও মাত্র আড়াই বছরের মধ্যে দাদাদের পড়া শুনে শুনে শিখে গিয়েছিলেন পড়তে। বর্ণপরিচয় আয়ত্ত করেছিলেন বিপরীত দিক থেকে।[৫] মা সরলাসুন্দরী ছিলেন একনিষ্ঠ সাহিত্য-পাঠিকা। সেই সাহিত্যপ্রীতি তিনি তার কন্যাদের মধ্যেও সঞ্চারিত করতে চেষ্টার ত্রুটি
রাখেননি। সাধনা, প্রবাসী, ভারতবর্ষ, সবুজপত্র, বঙ্গদর্শন, বসুমতী, সাহিত্য, বালক, শিশুসাথী, সন্দেশ প্রভৃতি ১৬-১৭টি পত্রিকা এবং দৈনিক পত্রিকা হিতবাদী তো বাড়িতে আসতই, তাছাড়াও সরলাসুন্দরী ছিলেন স্বনামধন্য বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, জ্ঞানপ্রকাশ লাইব্রেরি ও চৈতন্য লাইব্রেরির সদস্য। বাড়িতে সেযুগের সকল প্রসিদ্ধ গ্রন্থের একটি সমৃদ্ধ ভাণ্ডারও ছিল। এই অণুকূল পরিবেশে মাত্র ছয় বছর বয়স থেকেই পাঠ্য ও অপাঠ্য নির্বিশেষে পুরোদমে পড়াশোনা শুরু করে দেন আশাপূর্ণা। পরবর্তী কালে এই বাল্যকাল সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, “হিসেব মতো আমার ছেলেবেলাটা কেটেছে, সংসার ঊর্ধ্বের একটি স্বর্গীয় জগতে। বই পড়াই ছিল দৈনিক জীবনের আসল কাজ।”
১৯২৪ সালে, মাত্র ১৫ বছর ৮ মাস বয়সে কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা কালিদাস গুপ্তের সাথে বিবাহ সম্পন্ন হয়।
আশাপূর্ণা দেবী রচিত গ্রন্থাবলি : সুবর্ণলতা , বকুলকথা , অগ্নিপরীক্ষা , গজ উকিলের হত্যা রহস্য , ভূতুরে কুকুর , শুক্তিসাগর , সুখের চাবি ,
বলয়গ্রাস , যোগবিয়োগ , নির্জন পৃথিবী , ছাড়পত্র , প্রথম লগ্ন , সমুদ্র নীল আকাশ নীল , উত্তরলিপি , তিনছন্দ , আর এক ঝড় , নদী দিক হারা , একটি সন্ধ্যা একটি সকাল , উত্তরণ , জহুরী , মায়াজাল ।
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার
জ্ঞানপীঠ পুরস্কার , রবীন্দ্র পুরস্কার, সাহিত্য আকাদেমী ফেলোশিপ
মৃত্যু : ১৩ই জুলাই,১৯৯৫
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন