Breaking News

“এই চার দেওয়ালের মধ্যে , এই ঘরের মধ্যে জীবনকে উপলব্ধি করা যাবে না — হাসিও পাবে না ।” বক্তার এই মন্তব্যের তাৎপর্য আলোচনা করো ।

 


উত্তর  >> অভিনেতা ও নাট্যকার শম্ভু মিত্রের ‘বিভাব’ নাটকে দেখা যায় , নাট্যদলের সম্পাদকের নির্দেশ ছিল হাসির নাটক মঞ্চস্থ করার , কারণ ‘তার নাকি দারুণ বক্স অফিস’ । সেই হাসির নাটকের উপকরণ খুঁজতে শম্ভু মিত্র এসে পৌঁছোন সহ-অভিনেতা অমর গাঙ্গুলির বাড়িতে । প্রথমে শম্ভু মিত্র বসার ভঙ্গির মাধ্যমে হাসি সৃষ্টির চেষ্টা করেন , কিন্তু অমর গাঙ্গুলি এবং ‘বউদি’ তৃপ্তি মিত্র জানিয়ে দেন ‘এতে হবে না’, কারণ এর কোনো ‘পপুলার অ্যাপিল’ নেই । এরপর সাধারণ মানুষের কথা ভেবে ‘লভ সিন’ তৈরির কথা বলেন তৃপ্তি মিত্র , কিন্তু অভিনয় শেষে শম্ভু মিত্র ও অমর গাঙ্গুলি স্পষ্টই জানান — ‘এতে লোক হাসবে না ।’  তৃপ্তি মিত্রের প্রস্তাবমত এরপর ‘প্রগ্রেসিভ লভ সিন’  তৈরি হয় । কিন্তু তাও সার্থক হাসি তৈরি করতে পারে না । তখনই শম্ভু মিত্র নাটককে চার দেওয়াল থেকে বের করে বাইরে মানুষের মধ্যে নিয়ে যেতে বলেন । সেখানেই ‘হাসির খোরাক’ , পপুলার জিনিসের খোরাক পাওয়া যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন । লক্ষণীয় এখানে জীবনের গভীরতাকে খোঁজার বদলে তার লঘু ব্যঞ্জনা বা ‘খোরাক’-কে খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে । এখানে বাংলা নাটকের সস্তা জনপ্রিয়তা খোঁজার যে চেষ্টা , সেদিকেই নাট্যকারের ইঙ্গিত রয়েছে । শম্ভু মিত্র তাঁর নাট্যচিন্তায় এরই প্রতিবাদ করেছেন সারা জীবন । তিনি লিখেছেন — “পারিপার্শ্বিক জীবন শিল্পীর মনে আলোড়ন জাগায় । ... কিছু গভীর কথা যদি গভীরভাবে বলবার থাকে তার , তবেই সে শিল্পী , আর কেবলই যদি লোকের কোল কেড়ে চেপে বসবার চেষ্টা করে সে , কেবল যদি মনোহরণ করাটাই উদ্দেশ্য হয় তার , তাহলে সে ভাঁড় মাত্র ।” এই সস্তা জনপ্রিয়তা খোঁজার প্রবণতাকেই নাটকে পরোক্ষ শ্লেষের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে ।


No comments