“এবার নিশ্চয়ই লোকের খুব হাসি পাবে ?”- সমগ্র নাট্যকাহিনির নিরিখে মন্তব্যটির তাৎপর্য আলোচনা করো ।
উত্তর >> অভিনেতা ও নাট্যকার শম্ভু মিত্রের ‘বিভাব’ নাটকের প্রেক্ষাপটে রয়েছে হাসির নাটক মঞ্চস্থ করার জন্য হাসির উপকরণের সন্ধান । কিন্তু কোনো বিশেষ ভঙ্গি বা ‘লভ সিন’ বা ‘প্রগেসিভ লাভ সিন’ তৈরি করে এই হাসি সৃষ্টিতে ব্যর্থ হন শম্ভু মিত্র , তৃপ্তি মিত্র বা সহ-অভিনেতা অমর গাঙ্গুলি । তখন শম্ভু মিত্ৰই প্রস্তাব দিয়েছিলেন ঘরের বাইরে বেরোনোর জন্য । চার দেওয়ালের মধ্যে জীবনকে উপলব্ধি করা সম্ভব নয় , ফলে নাট্যদলের সম্পাদকের চাহিদা অনুযায়ী হাসির উপকরণও সেখানে খুঁজে পাওয়া যাবে না — এই ছিল তাঁর যুক্তি । কিন্তু বাইরে বেরিয়ে , ব্যস্ত গতিশীল জীবনে তাঁরা হাসির কোনো উপকরণই খুঁজে পান না । এমন সময়ে ‘চাল’, ‘কাপড়’ - এর দাবি জানিয়ে মিছিল আসে । উলটো দিক থেকে পুলিশও চলে আসে । মিছিলকে ফিরে যাবার নির্দেশ দেয় সার্জেন্ট । কিন্তু স্লোগান চলতেই থাকে । ফলে পুলিশ নিরস্ত্র জনগণের ওপর গুলি চালায় এবং একটি ছেলে ও একটি মেয়ে পড়ে যায় । হাহাকার আর গোঙানির শব্দে ভরে যায় চারপাশ । পুলিশ চলে গেলে এতক্ষণ পালিয়ে থাকা অমর গাঙ্গুলি এবং শম্ভু মিত্রের পুনরায় আগমন ঘটে । শম্ভু মিত্র দর্শকদের দিকে তাকিয়ে বলেন — “এবার নিশ্চয়ই লোকের খুব হাসি পাবে ?” — কোথাও যেন সাধারণ মানুষ সম্পর্কে উন্নাসিক নাগরিক সমাজের আত্মকেন্দ্রিক মানসিকতাকে চাবুক মারা হয় এই মন্তব্যে । যারা সস্তা মনোরঞ্জনকে উপভোগ করতে চায় , জীবনের গভীরতাকে ছুঁতে চায় না — হাসির উপকরণ খুঁজতে থাকা অভিনেতা শম্ভু মিত্রের বিবেক যেন তাদের সেই উদাসীনতাকেই তাচ্ছিল্য করে ।
No comments