Breaking News

বাংলা সংগীতের ধারায় কাজী নজরুল ইসলামের অবদান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো ।

 


উত্তর :- একাধারে প্রেমিক কবি এবং বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম (২৫.৫.১৮৯৮২৯.৮.১৯৭৬) । রবীন্দ্র যুগে তিনি রবীন্দ্রনাথের প্রভাববৃত্তের সম্পূর্ণ বাইরে থেকে গান রচনা করেছেন ও সুরারোপ করেছেন । বাংলার সুরের আকাশে অগ্নিবীণা হাতে তাঁর প্রবেশ , ‘ধূমকেতুর’ মতো তাঁর প্রকাশ । তাঁর রচিত গানগুলি ‘নজরুলগীতি’ নামে পরিচিত । তাঁর কবিতা এবং গানগুলিতে তাঁর চিরবিদ্রোহী সত্তার দৃপ্ত ঘোষণা আমরা পাই । অন্যদিকে , আবার বহু গানে তাঁর রোমান্টিকতা , আবেগমুগ্ধতার আভাস আছে । তাঁর চিন্তায় আর প্রকাশভঙ্গিতে ছিল এক নতুন বিরুদ্ধবাদ , এক বিদ্রোহের বাণী । তাঁর রচনাগুলি স্থবির সমাজের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল । তাঁর বিরুদ্ধতা শুধু বিষয়ের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয় , তা ছিল প্রকাশভঙ্গি এবং সুরের ক্ষেত্রেও । গানের ভাষাকে গতি আর দ্যুতি দেবার জন্য তিনি শব্দসৃজনের পরীক্ষানিরীক্ষাও করেছেন । তিনি অজস্র আরবি , ফারসি , উর্দু শব্দ ব্যবহার করেছেন গানে । রবীন্দ্রনাথ থেকে সরে এসে সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রায় ভিন্ন মেরুতে পৌঁছেছিলেন নজরুল । তাতে সবথেকে খুশি হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং । নজরুলকে ‘উৎসর্গ’ করেছিলেন ‘বসন্ত’ নাটকটি । জীবনানন্দ দাশ নজরুল সম্পর্কে বলেছেন — “বাংলার এ মাটি থেকে জেগে , এ মৃত্তিকাকে সত্যিই ভালোবেসে আমাদের দেশে ১৯ শতকের ইতিহাস প্রান্তিক শেষ নিঃসংশয়বাদী কবি নজরুল ইসলাম ।” তাঁর ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ অথবা ‘দুর্গমগিরি কান্তার মরু’ গানগুলি ছিল সে সময়ের বিপ্লবীদের জীবনসংগীত , তিনি মূলত ‘ভাঙার গান’ গেয়েছেন । যে ভাঙনের পথেই আসবে নতুন দেশ , নতুন জাতি , নতুন এক সমাজব্যবস্থা । বাংলা গানের যাত্রাপথে নজরুল ইসলাম নামটি তাই অবিনশ্বর ।

 

No comments