বাংলা গানের ধারায় রজনীকান্ত সেনের অবদান সংক্ষেপে অলোচনা করো ।
উত্তর >> রজনীকান্ত সেন (২৭.৭.১৮৬৫ – ১৩.৯.১৯১০) মূলত ভক্তিগীতি এবং দেশপ্রেমমূলক গান রচনা করেছেন । বেশ কিছু হাসির গানও লিখেছিলেন । তাঁর কৈশোরে শ্যামাসংগীত রচনার মাধ্যমে তিনি আপন প্রতিভার প্রকাশ ঘটান । রাজশাহীতে থাকবার সময় তাঁর পরিচয় ঘটে অক্ষয়কুমার মৈত্রের সঙ্গে । অক্ষয়কুমারের বাড়ির গানের আসরে তিনি নিজের তৈরি গানগুলি গাইতেন । এখানেই তিনি কবি দ্বিজেন্দ্রলালের রচিত হাসির গানগুলি শোনেন ।
রজনীকান্ত সেন দ্রুত গান রচনা করতে পারতেন । তাঁর কবিসত্তা এবং গীতিকারসত্তা একসাথে তাঁর সৃষ্টিকে পূর্ণ করে তুলেছে । অক্ষয়কুমার মৈত্র রজনীকান্ত সম্পর্কে বলেছেন— “কাহারও বাণী গদ্যে , কাহারও পদে , কাহারও বা সঙ্গীতে অভিব্যস্ত । রজনীকান্তের কান্ত পদাবলী কেবল সঙ্গীত ।” তাঁর আধ্যাত্মিক গান —— ‘কেন বঞ্চিত হব চরণে’, ‘তুমি অরূপ , স্বরূপ , সগুণ , নির্গুণ’, ‘তুমি আমার অন্তঃস্থলের খবর জান’ ইত্যাদি । তাঁর রচিত সংগীতগ্রন্থ ‘কল্যাণী’ (১৯০৫), ‘অমৃত’ (১৯১০), ‘আনন্দময়ী’ (১৯১০), ‘বিশ্রাম’ (১৯১০), ‘অভয়া’ (১৯১০), ‘সদ্ভাবকুসুম’ (১৯১৩), ‘শেষদান’ (১৯২৭) ইত্যাদি । তাঁর ‘মায়ের দেওয়া মোটা কাপড়' গানটি সম্বন্ধে সুরেশচন্দ্র সমাজপতি বলেছেন — “ইহাতে মিনতির অশ্রু আছে — নিয়তির বিধান আছে ।” বাঙালির মনের কাছাকাছি রজনীকান্তের গানগুলি । তাঁর ভক্তিমূলক গানের আত্মনিবেদনের আকুতি আজও বাঙালি শ্রোতাকে মুগ্ধ করে ।

No comments