‘ ভারতবর্ষ ’ ছোটোগল্পের বৃদ্ধার চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো । বৃদ্ধার চরিত্রের মধ্যে দিয়ে লেখকের অভিপ্রায় সংক্ষেপে লেখো ।
উত্তর »»» পরিচিতি : সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ভারতবর্ষ’ গল্পের বৃদ্ধাটি ছিল রাক্ষসীর মতো দেখতে , কোলকুঁজো এক থুথুড়ে ভিখারিনি । তার ক্ষয়ে যাওয়া ছোট্ট মুখমণ্ডলের বলিরেখাগুলি স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান ছিল । মাথা ভরতি সাদা চুলের অধিকারী এই বৃদ্ধার পরনে ছিল ছেঁড়া নোংরা একটি কাপড় , গায়ে জড়ানো ছিল তুলোর এক চিটচিটে কম্বল , হাতে একটি ছোটো লাঠি । তাকে হাঁটতে দেখলে মনে হত তক্ষুনি সে পড়ে যাবে ।
আত্মসম্মানবোধ ও মেজাজ : অসহায় ভিখারিনি হলেও অত্যন্ত তেজি , মেজাজি এবং আত্মসম্মানসম্পন্ন মহিলা ছিল সে । চায়ের দোকানে ঢুকবার পর একজন আড্ডাধারী যখন সে কোথা থেকে এসেছে জিজ্ঞাসা করে , তখন সে মেজাজের সঙ্গেই জানায় যে , “সে কথায় তোমাদের কাজ কী বাছারা ?” তার তেজ এবং চালচলন নিয়ে আড্ডাধারীরা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করলে তাই সে তাদের তীব্রভাবে ভর্ৎসনা করে এবং গালাগালও দেয় । চায়ের দাম মিটিয়ে সে যখন বৃষ্টির মধ্যেই রাস্তায় নামে , তখন একজন তাকে উদ্দেশ্য করে যখন জানায় যে , সে নির্ঘাত মরবে , তখন সে ঘুরে দাঁড়িয়ে তাদের এবং তাদের শতগুষ্টির মৃত্যুকামনা করে ।
রসিকতাবোধ : বৃদ্ধার রসিকতাবোধের প্রমাণ আমরা পাই , যখন দীর্ঘ ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর চারপাশের মারমুখী হিন্দু-মুসলিম জনতাকে দেখে শুনে সে ফ্যাকফ্যাক করে হেসে ফেলে ।
লেখকের অভিপ্রায় : লেখক এই বৃদ্ধা চরিত্রের মধ্য দিয়েই ভারতমাতার প্রাচীনত্ব , দারিদ্র্য এবং অসহায়তা যেমন প্রকাশ করেছেন , তেমনি প্রকাশিত হয়েছে এ গল্পে লেখকের ধর্মনিরপেক্ষতা । তাই গল্পের শেষে ভিড়ের মধ্য থেকে একজন যখন বুড়ি হিন্দু না মুসলমান তা জিজ্ঞাসা করে, তখন বুড়ি ক্ষিপ্ত হয়ে জানায় — “চোখের মাথা খেয়েছিস মিনষেরা? দেখতে পাচ্ছিস নে ? ... আমি কী তা দেখতে পাচ্ছিস নে ?” সুতরাং বৃদ্ধা চরিত্রের মধ্য দিয়েই লেখক গল্পের জনতাকে এবং পাঠকদের এই চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছেন যে , এদেশ হিন্দুর নয় , মুসলমানের নয় , এ দেশ আপামর ভারতবাসীর ।
সুতরাং ‘ভারতবর্ষ’ গল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় চরিত্র হল বৃদ্ধা ৷
No comments