Breaking News

ভাটিয়ালি গান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো ।

 


উত্তর :- ‘ভাটিয়ালি’ নদীমাতৃক বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান লোকসংগীত হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে । ভাটিয়ালি গানে মাঝি-মাল্লা , কৃষকের , মেহনতি মানুষের দুঃখ-সুখ , আশা- আকাঙ্ক্ষা , কামনা-ভালোবাসা , প্রেমভক্তির পরিচয় নিবিড়ভাবে ফুটে উঠেছে । তত্ত্বভারমুক্ত এই গানগুলি সুপ্রাচীন কাল থেকে পূর্ববঙ্গের মৈমনসিংহ , ঢাকা , ফরিদপুরের লোককবিদের রচিত ভাটিয়ালি সুরের প্রক্ষেপে গড়ে উঠেছে । সুরটির নাম ভাটিয়ালি; যা পরবর্তীকালে গানগুলিরও পরিচায়ক হয়ে উঠেছে । অঞ্চলবিশেষে এই সুরের পাঁচটি ধাঁচ — সুষঙ্গ , ভাওয়াইল্যা , বিক্রমপুইরা , বাখরগঞ্জা , গোপালগঞ্জ্যা— যা নির্ভর করে গায়কের কণ্ঠস্বর , উচ্চারণভঙ্গি ও শিক্ষার উপরে । প্রতিটি ধাঁচে রয়েছে চারটি ‘লহর’ বা টান: ‘বিচ্ছেদ লহর’, ‘সারী লহর’, ‘ঝাঁপ লহর’ ও ‘ফেরুসাই লহর’। এই লহর বা টান নির্ভর করে গানের ছন্দ রচনার উপর । এগুলির মধ্যে ‘বিচ্ছেদ লহর’ করুণরসাত্মক গানে একক কণ্ঠে, ‘সারী লহর’ হাস্যরসাত্মক গানে দলবদ্ধভাবে , ‘ঝাঁপ লহর’ করুণরসাত্মক ছাড়া অন্য গানে মানানসই । এই তিনটি লহর ছাড়া বাকী সবই ‘ফেরুসাই লহর’ নামে পরিচিত ।


গঠনভঙ্গির যে বৈশিষ্ট্য ভাটিয়ালিতে লক্ষ করা যায় , তা হল — (১) দু-তিনটি শব্দ নিয়ে একটি শব্দগুচ্ছ এক একবারে উচ্চারিত হয়ে থাকে । (২) এই উচ্চারণের পরেই দীর্ঘ টান থাকে । উচ্চারণের শেষ বর্ণটি দীর্ঘ হয় । (৩) আরম্ভেই তা প্রধানত চড়াসুরের দিকে চলে যায় , তারপর কখনো ধীর মন্দাক্রান্তালয়ে অথবা দ্রুত ছন্দে নেমে আসে ও বিশ্রাম লাভ করে । (৪) ভাটিয়ালিতে যন্ত্রানুষঙ্গ খুব একটা ব্যবহৃত হতে দেখা যায় না । এই গানে বৈঠার জল টানা শব্দ , নদীর ঢেউয়ের শব্দ , ছন্দ পেটানোর হাতুড়ির শব্দের পাশাপাশি বেহালা , বাঁশি বা সারিন্দার প্রয়োগ লক্ষ করা যায় ।


No comments