Breaking News

‘বিভাব’ নাটকে শম্ভু মিত্রের নাট্যভাবনার যে প্রকাশ ঘটেছে তা নিজের ভাষায় আলোচনা করো ।

 


উত্তর :- শম্ভু মিত্র তাঁর ‘বিভাব’ নাটকে শুধু প্রচলিত নাট্যরীতিরই বদল ঘটাননি , সেই সঙ্গে তাঁর নিজের নাট্যবিষয়ক ভাবনারও প্রকাশ ঘটিয়েছেন । নাটকের সূচনায় শম্ভু মিত্র নিজেই অন্য ধারার নাটকের অভিনয়ের নানা সমস্যার কথা বলেছেন । তার মধ্যে অন্যতম সমস্যা মঞ্চের । সারাজীবনই একটা নিজস্ব মঞ্চের আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেছেন শম্ভু মিত্র— “নিজেদের একটা মঞ্চ থাকবে , যেখানে মনের সাধে নানা রকম প্রয়োগকৌশল পরীক্ষা করা যাবে ।” ( গান্ধার/৩ জুন, ১৯৭৩ ) । অন্য ধারার নাটকের কাছ থেকে সরকারের কর আদায় , অথচ পেশাদারি থিয়েটারকে করমুক্ত রাখার বিরুদ্ধেও ‘বিভাব’ নাটকে প্রতিবাদী ভূমিকায় দেখা যায় শম্ভু মিত্রকে । এই প্রতিবাদও তাঁর নাট্যজীবনে বারবার শোনা গিয়েছে । “ব্যাবসার জন্যে সস্তা নাট্যাভিনয় করলেও সেটার কর মকুব । কিন্তু অব্যাবসায়িক উদ্দেশ্যেও যদি রবীন্দ্রনাথ বা ইবসেন করা হোত তাহলে খাজনা রূপ জরিমানা দিতে হোত ।” ( সমস্যার একটা দিক/সন্মার্গ সপর্যা ) ।

 

>>> আপাতভাবে হাসির নাটক মঞ্চস্থ করার যে অভিপ্রায় নিয়ে নাটকের সংলাপ শুরু হয়েছে , তার সঙ্গে বক্স অফিসের চাহিদাকে জুড়ে দেওয়া হয় । নাটকের গুণগত মানের থেকে দর্শক চাহিদাকে গুরুত্ব দেওয়ার যে প্রয়াস নাট্যাভিনয়ে দেখা যায় , তাকেই এখানে নাট্যকার তুলে ধরতে চেয়েছেন । কেবল হাসির খোরাক হিসেবে জীবনকে দেখা , মানুষের সমস্যাকে উপলব্ধি না করা ইত্যাদি শম্ভু মিত্রের শিল্পদর্শন ছিল না । তিনি নিজেই লিখেছেন — “শিল্প তো নিছক প্রমোদের বা আপ্তবাক্যের আফিম হিসেবে ব্যবহৃত হবার নয় । শিল্প মানুষের বোধের একটা হাতিয়ার ।” নাট্য-কাহিনির শেষে খাদ্য ও বস্ত্রের দাবিতে এগিয়ে আসা মিছিলের ওপরে পুলিশের নির্বিচারে গুলিচালনা দেখে যখন নাট্যকার শম্ভু মিত্র বলেন , “এইবার বোধ হয় বাঙালি হাসবে ।” – তখন নাট্যকারের বোধের সম্পূর্ণতা তৈরি হয় , মধ্যবিত্তের সস্তা মানসিকতাকে আঘাত করার মধ্যে দিয়ে ।

 


No comments