“ধূ ধূ করা দুপুরে জ্বলন্ত মাঠে বাতাস যেমন একা যেমন সঙ্গীহীন—তেমনি—” বক্তা কে ? কোন্ প্রসঙ্গে বক্ত একথা বলেছেন আলোচনা করো ।
উত্তর >> অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নানা রঙের দিন’ নাটকে অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেছেন ।
>> নাটকের অভিনয় শেষে প্রেক্ষাগৃহ যখন নিস্তব্ধ ও জনশূন্য , তখন রাতে মঞ্চের উপরে তিনি একা আবির্ভূত হয়েছেন । নেশার ঝোঁকে নিজের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছেন তিনি । নিজের বৃদ্ধবয়স , অভিনয়ের স্বর্ণসময় ক্রমশ পিছনে চলে যাওয়া — এসব অভিনেতা রজনীকান্তকে চঞ্চল করে তুলেছে । মনের যন্ত্রণাকে ভুলে থাকার জন্যই নেশার ঘোরে ডুবে যান তিনি । ফলস্বরূপ , শিরদাঁড়া নুয়ে পড়েছে , বুকের ভিতর কাপতে থাকে । জীবন যে ক্রমশ শেষ হয়ে আসছে , তা নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারেন বৃদ্ধ অভিনেতা । কলপ লাগিয়ে বাইরে চেহারাকে সাময়িক আড়াল করা যায় , বয়সকে লোকের চোখের সামনে থেকে লুকিয়ে রাখা যায় , কিন্তু “যা গেল , সে কি আর ফিরবে ?” আটষট্টি বছরের মানুষটা এক নিদারুণ একাকিত্বের মুখোমুখি হন , যে একাকিত্বের দোসর অভিনেতার যন্ত্রণা । যতক্ষণ মঞ্চের অভিনয় ততক্ষণই তাঁর কদর । তার বাইরে অভিনেতার খোঁজ কেউই রাখে না । ঘুমের ঘোরে কোনো দর্শকই তাঁকে স্বপ্ন দেখে না বলে রজনীকান্তের অভিমত । গভীর রাতে মাতাল অবস্থায় মঞ্চে দাঁড়িয়ে থাকা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়কে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য তাই কেউ থাকে না । আর যন্ত্রণার অন্যদিকে আছে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের একাকিত্ব । সংসার - পরিজনহীন রজনীকান্ত উপলব্ধি করেন যে , আদর করে তাঁর সঙ্গে কথা বলার মতো কোনো লোক নেই । মরার সময় দু-ফোঁটা জল দেওয়ার জন্যও কেউ নেই । এই একাকিত্ব রজনীকান্তের বুকের রক্তকে হিম করে দেয় । তীব্র হতাশা আর নিরাশ্রয়তার বোধ থেকে যে যন্ত্রণা সৃষ্টি হয় , রজনীকান্তের মনে তার উল্লেখ প্রসঙ্গেই তিনি উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেছেন ।
No comments