Breaking News

“থিয়েটারের দেওয়ালে দেওয়ালে অঙ্গারের গভীর কালো কালো অক্ষরে লেখা । আমার জীবনের পঁয়তাল্লিশটা বছর...” - এই জীবনের যে কাহিনি বক্তা উল্লেখ করেছেন তা নিজের ভাষায় লেখো ।

 


উত্তর  >> অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নানা রঙের দিন’ নাটকে দেখা যায় , অভিনয় শেষে দর্শকশূন্য প্রেক্ষাগৃহে একলা মঞ্চের উপরে এসে দাঁড়িয়েছেন আটষট্টি বছরের বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় । অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে তিনি নিজের মুখোমুখি হয়েছেন , আর তাঁর মনে পড়েছে ফেলে আসা জীবন , নাটকের জন্য তাঁর আত্মত্যাগ —সাফল্য ব্যর্থতার কাহিনি । ব্যক্তিগত জীবন আর অভিনয় জীবন রজনীকান্তের জীবনে এক সুতোয় গাঁথা হয়ে গেছে । পুলিশ ইনস্পেকটারের চাকরি ছেড়ে নাটকের জগতে এসেছিলেন তিনি । তখন তাঁর চেহারায় ছিল যুবক বয়সের জেল্লা , আর শরীরে ছিল প্রবল শক্তি । মনের অদম্য সাহস ছিল তখন তাঁর পাথেয় । বর্তমানের চেয়ে চারগুণ বেশি কাজ করার ক্ষমতা রাখতেন তিনি । পুলিশের চাকরি ত্যাগ করে নাটকে এসেও তাঁর নামডাক হয়েছিল যথেষ্টই । কিন্তু কালক্রমে সবই যেন ফুরিয়ে যেতে থাকল । নাটকের সূত্রেই প্রেম এসেছিল তাঁর জীবনে । বেশ বড়োলোকের একটি মেয়ে থিয়েটার দেখে তাঁর প্রেমে পড়েছিল । মেয়েটির স্মৃতি আজও সজীব রজনীকান্তের মনে – “বেশ লম্বা , ফর্সা , সুন্দর , ছিপছিপে গড়নের , উঠতি বয়স – আর মনটা ছিল দারুণ ভালো , কোন ঘোরপ্যাঁচ নেই” । আলমাগীর চরিত্রে অভিনয় দেখেই মেয়েটি আলাপ করেছিল রজনীকান্তের সঙ্গে । সেই আলাপই ঘনিষ্ঠ হয়ে প্রেমে রূপান্তরিত হয়েছিল । রজনীকান্তের সামনে তখন উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ , মনে অসম্ভব জোর । এই সময়েই রজনীবাবু মেয়েটিকে বিয়ের প্রস্তাব দেন । কিন্তু মেয়েটি থিয়েটার ছাড়ার শর্তে তাঁকে বিয়ে করার সম্মতি দেয় । থিয়েটার আর সম্পর্কের দ্বন্দ্বে সেদিন থিয়েটারকেই আঁকড়ে ধরেছিলেন রজনীবাবু । কিন্তু তিনি বুঝেছিলেন অভিনেতা-জীবনের অর্থহীনতা । অভিনেতার যা কিছু মূল্য তা শুধুমাত্র মঞ্চেই , সমাজজীবনে তাঁর কোনো গুরুত্বই নেই । এভাবেই নাটকের মঞ্চে অভিনয়-জীবনে যে নিঃসঙ্গতা আর হতাশাকে সঙ্গে নিয়ে তাঁকে দীর্ঘসময় কাটাতে হয়েছে তা বিবৃত করেছেন অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় ৷

No comments