Breaking News

কালীঘাটের পটের বিষয়বৈচিত্র্য সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো ।

 


উত্তর :- ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে কালীঘাটের মন্দির প্রতিষ্ঠিত হলে ভক্তমহলে ও দর্শনার্থীদের কাছে পট বিক্রির অভিপ্রায়ে গ্রামীন পটুয়ারা সেই এলাকায় বসবাস শুরু করেন । তাঁদের কাছে থাকত দেবদেবীর মুখের মূর্তি , পুতুল , সরাচিত্র ইত্যাদি । পরবর্তীতে ক্রমশ চৌকো পটে দেবতার মূর্তি আঁকা শুরু হয় । কালীঘাটের পটুয়াদের পটচিত্রের ক্রমবিকাশের রূপটিকে দেবদেবীর মুখের অবয়ব ও পুতুল , সরায় আঁকা দেবদেবীর ছবি , ধর্মীয় পট , পৌরাণিক পট , দৈনন্দিন জীবনের ছবি , ব্যঙ্গচিত্র ইত্যাদি ধারায় বিন্যস্ত করা যেতে পারে  । পটের বিষয়বস্তুর মধ্যে ছিল — দাঁড়ে বাঁধা কাকাতুয়া , পাকানো চাদর গায়ে বিলাসী বাবু , পটের বিবি , গড়গড়ার নলমুখে সাহেব , মাছকুটুনী বাঙালি গিন্নি , বীণাবাদনরতা যুবতী , সালংকারা গৃহবধূর সামনে হুঁকো হাতে চেয়ারে বসা গৃহকর্তা , মোহন্ত এলোকেশী , মহাদেবের কোলে ঘুমন্ত পার্বতী ও বৃক্ষশাখায় শুকপাখি ইত্যাদি । ১৮০০ থেকে ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কলকাতার সমাজে লক্ষণীয় বাবু-কালচারের ক্ষয়িষ্ণু রূপের প্রতিফলন পটচিত্রে ধরা পড়েছিল । বস্তুত , পটুয়ারা সমাজ পরিবর্তনের ধারাটিকেই তাঁদের শিল্পের মাধ্যমে প্রকাশ করার চেষ্টা করেছেন এবং যাবতীয় সামাজিক অন্যায় ও অসংগতির বিরুদ্ধে ব্যঙ্গের কশাঘাত হেনেছেন । এক্ষেত্রে সমাজ সংশোধনই ছিল তাঁদের মুখ্য উদ্দেশ্য । মুসলিম ও ইংরেজ শাসনের যুগসন্ধিক্ষণে যে কালীঘাটের পটের উদ্ভব ঘটেছিল , দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগেই তা বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যায় ।

 


No comments