Breaking News

বাংলা পটচিত্রের ইতিহাসে কালীঘাটের পটের গুরুত্ব ও অবস্থানটি নির্দেশ করো ।

 


উত্তর  >> প্রাচীন পটশিল্পের এবং পটশিল্পীদের উল্লেখ সুপ্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্যের পাতায় পাওয়া যায় । পটুয়াদের আঁকা ছবি ও তার কাহিনি বর্ণনাধর্মী পটের গান ধর্মপ্রচারে একান্ত সহায়ক হয়েছিল । এ প্রসঙ্গে মঙ্গলকাব্যের পট উল্লেখযোগ্য । মুসলিম শাসকেরাও ইসলাম ধর্মপ্রচারে পটুয়াদের সাহায্য গ্রহণ করেছিলেন । পশ্চিমবঙ্গের চিত্রকরদের মূল দুটি ঘরানা হল — (১) তমলুক-কালীঘাট-ত্রিবেণী সামাজিক শৈলী , (২) বীরভূম-কান্দি-কাটোয়া সামাজিক শৈলী ।  

>>> কালীঘাটের পট — ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় কালীঘাটে মন্দির প্রতিষ্ঠিত হলে ক্রমশ পটুয়ারা তার সংলগ্ন বাজারে তাঁদের আঁকা পট ও পুতুলের পসরা সাজিয়ে তোলেন । মিশ্রজীবিকার মানুষের অংশগ্রহণে পটে অপরূপ বৈচিত্র্য দেখা দিয়েছিল । দেবদেবীর মুখাবয়ব , সরা , চৌকো পটে আঁকা মূর্তি পূজায় ব্যবহৃত হত । পরবর্তী সময়ে পৌরাণিক কাহিনি সংবলিত দীঘল পট তৈরি হতে দেখা যায় । সংগ্রহে ও গৃহসজ্জায় এগুলির যেমন চল ছিল , আজও তা আছে । ধর্মীয় বিষয় থেকে সরে সামাজিক প্রসঙ্গে পট আঁকা হয়েছে , যার বিষয় হিসেবে শিল্পীরা বেছে নিয়েছেন সামাজিক অবক্ষয় , নব্য বাবু-কালচারের বিকৃতি , ব্যভিচার , সাজসজ্জাকে । ব্যঙ্গের কশাঘাতে সমাজ সংশোধনের দায়িত্ব নেন তাঁরা । সমসাময়িক আলোড়নসৃষ্টিকারী ঘটনা নিয়েও পটুয়ারা পটচিত্র এঁকেছেন । সমাজ পরিবর্তনশীলতার ধারাটি তাঁদের শিল্পে স্পষ্টভাবে ধরা দিয়েছে । সমাজ সচেতনতার কাজেও ( যেমন নিরক্ষরতা দূরীকরণ , গাছ বাঁচাও প্রভৃতি ) পটচিত্রের ব্যবহার লক্ষ করা যায় । ক্রমশ বিদেশি শিল্পীদের উজ্জ্বল রঙের ছবির সঙ্গে সমতা রক্ষা করতে না পেরে পটশিল্প হারিয়ে যেতে থাকে । কালীঘাটের পটের উৎস থেকে বিলুপ্তি (১৮১৫-১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দ) পর্যন্ত মোট তিনটি প্রধান ধারা প্রচলিত ।  

(১) ইন্দ্ৰমোহন ঘোষ তথা কালীচরণ ঘোষ , নিবারণ ঘোষদের ধারা

(২) বলরাম নীলমণি ও গোপাল দাসের ধারা

(৩) চিত্রকর সম্প্রদায়ের ধারা - কার্তিক চিত্রকর , গদাধর চিত্রকর , গৌরাঙ্গ চিত্রকর , গণেশ চিত্রকর , প্রভাস চিত্রকর , নারায়ণ চিত্রকর প্রমুখ ।

>>> ভারত সরকার স্বীকৃত কালীঘাট পটের শেষ শিল্পী হিসেবে রজনী চিত্রকর ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের হাত থেকে পুরস্কার লাভ করেন ।


 

No comments