‘নানা রঙের দিন’ নাটকে বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের মধ্যে যে দুটি সত্তার প্রকাশ দেখা যায় তা আলোচনা করো ।
উত্তর : অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর অনুবাদ-নাটক ‘নানা রঙের দিন’-এ দেখা যায় , নাটক শেষে শূন্য প্রেক্ষাগৃহে মঞ্চের উপরে একা বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় । সম্পূর্ণ নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তাঁর ভেতরের সত্তার জাগরণ ঘটে । সে রজনীবাবুকে অর্থাৎ নিজেকে শরীরের দিকে নজর দিতে বলে , বৃদ্ধ বয়সের কথা ভেবে মদ ছেড়ে দিতে বলে । যখন অন্য প্রবীণ মানুষেরা সংযত জীবন কাটান , পরিমাণমতো খাওয়া-দাওয়া করেন , ঈশ্বরের নাম করেন – তখন দিলদারের পোশাক পরে রজনীবাবুর ‘পেট ভর্তি মদ গিলে’ ‘থিয়েটারি ভাষায়’ ‘আবোল-তাবোল’ বকা একেবারেই সমর্থন পায় না তাঁর অন্তঃসত্তার কাছে । কিন্তু এই অন্তর-সত্যের অন্যপিঠে আছে আর-এক বাস্তব । সেখানে রয়েছে বয়সের ভারে ক্রমশ জীর্ণ হয়ে আসা এক বৃদ্ধ অভিনেতা । সে অভিনেতার গলায় একদিকে শোনা যায় ব্যক্তিজীবনের নিঃসঙ্গতার হাহাকার , অন্যদিকে থাকে অভিনেতা হিসেবে ক্রমশ নিজের ক্ষমতা হারানোর যন্ত্রণা । সেই যন্ত্রণা থেকেই রজনীকান্ত স্মৃতির পথে হেঁটে যান । তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য চরিত্ররা ভিড় করে আসে মনে । আর এই হতাশাই চূড়ান্ত হয়ে ওঠে অভিনেতা রজনীকান্তের বাইরের চেতনায় ।

No comments