Breaking News

“ রক্তের অক্ষরে দেখিলাম / আপনার রূপ , ” — এই মন্তব্যের মধ্যে দিয়ে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন ?

 


উত্তর  >> ‘শেষ লেখা’ কাব্যগ্রন্থের ১১ সংখ্যক কবিতা রচনার কিছুদিন আগে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন ‘ সভ্যতার সংকট ’ । সেখানে কবি লিখেছিলেন — “মনুষ্যত্বের প্রতিকারহীন পরাভবকে চরম বলে বিশ্বাস করাকে আমি অপরাধ মনে করি ।” এই প্রবন্ধেরই উপসংহারে রবীন্দ্রনাথ লেখেন —


              “নরলোকে বাজে জয়ডঙ্ক ,

              এল মহাজন্মের লগ্ন ।

           আজি অমারাত্রির দুর্গতোরণ যত 

           ধূলি তলে হয়ে গেল ভগ্ন।”

 

‘রূপনারানের কূলে’ অর্থাৎ এই পৃথিবীতে যখন কবিচেতনার জাগরণ ঘটে তখন তিনি স্বপ্নের মায়া থেকে সরে আসেন তখন তিনি — আর তখনই জীবন ও জগতের যথার্থ স্বরূপ তাঁর চোখে ধরা পড়ে । এ জীবন আঘাতে-সংঘাতে নিত্য নতুন হয়ে ওঠে । দ্বন্দ্বময় বাস্তবে সামাজিক ও রাজনৈতিক অজস্র সংঘাতের মধ্য দিয়েই জীবনের যে বিকাশ সেটাই সত্য । মায়া , ছলনা বা প্রবঞ্চনার ফাঁদ অতিক্রম করে মানুষ তখনই উপলব্ধি করতে পারে তার যথার্থ স্বরূপ , এই রূপময় বিশ্বের প্রকৃত পরিচয় । জীবনের যে স্বাভাবিক গতি বা বিকাশ , তাকে কল্পনা বা স্বপ্নবিলাসের দ্বারা উপলব্ধি করা যায় না । সত্য কঠিন , কিন্তু তাকেই কবি গ্রহণ করেছেন , কারণ সেখানে বঞ্চিত হবার আর কোনো সম্ভাবনা থাকে না । ‘রক্তের অক্ষরে' অর্থাৎ যন্ত্রণার পথ ধরে এই গতিশীল অথচ কঠিন জীবনকেই কবি দেখতে চান । ‘আপনার রূপ’ বলতে কবি আসলে মানবাত্মার বা মানবচৈতন্যের যথাযথ স্বরূপকেই বোঝাতে চেয়েছেন ।


 

No comments