“সেই রাত্রে জীবনে প্রথম মোক্ষম বুঝলুম যে যারা বলে ‘নাট্যাভিনয় একটি পবিত্র শিল্প’— তারা সব গাধা — গাধা ।” বক্তা কখন এবং কেন এরকম সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন নিজের ভাষায় আলোচনা করো ।
উত্তর :- অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নানা রঙের দিন’ নাটকের শুরুতে দেখা যায় , বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় একদিন নাটকের অভিনয় শেষে মদ্যপান করে গভীর রাতে শূন্য প্রেক্ষাগৃহে মঞ্চের উপরে আবির্ভূত হয়ে , নিজেই নিজের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছেন । প্রম্পটার কাশীনাথ সেনের সঙ্গে অনেকটা স্বগতোক্তির ভঙ্গিতে কথা বলতে বলতে তাঁর মনে পড়ে যায় নিজের অতীত জীবনের কথা । অভিনয় জীবনের সূচনায় তিনি জড়িয়ে গিয়েছিলেন একটি প্রেম সম্পর্কে । তাঁর অভিনয় দেখেই মেয়েটির মধ্যে মুগ্ধতার সৃষ্টি হয়েছিল । যেমনভাবে পাহাড়ি নদীর দুর্গম খরস্রোত পাহাড় কাঁপিয়ে দেয় — সেভাবেই সেদিন কেঁপে উঠেছিলেন তরুণ রজনীকান্ত । অভিনয়ের জগতে সেদিন নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নিশ্চিত রজনীকান্ত একসময় সেই মেয়েটিকে বিয়ের প্রস্তাব দেন । কিন্তু মেয়েটি শর্ত দেয় যে , শুধুমাত্র থিয়েটার ছাড়লেই তার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব । মুহূর্তের মধ্যে এতদিনের অভিনয়ের মাধ্যমে সঞ্চয় করা গর্ব , খ্যাতি , মোহ আর অহংকারের প্রাচীর যেন ভেঙে পড়ে । অভিনয়কে ছেড়ে থাকতে পারবেন না বলেই প্রেমের সম্পর্ককে ভেঙে দেন রজনীকান্ত ।
>>> আর সেদিনই রাতে একটি হালকা হাসির নাটক অভিনয় করতে গিয়ে বক্তা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় মন্তব্যটি করেছেন । অভিনয়কে আঁকড়ে থেকেও তাঁর মনে হয় যে , অভিনেতারা আসলে চাকরের মতো , কিংবা জোকার । ফাঁকা হাততালি , মেডেল , সার্টিফিকেট —স বই তাঁদের জীবনে অর্থহীন । যতক্ষণ তিনি স্টেজের উপরে থাকেন , ততক্ষণই তাঁর কদর । কিন্তু সমাজীবনে কোনো স্বীকৃতি বা সম্মান তাঁর জন্য অপেক্ষা করে থাকে না । নিজের জীবন দিয়ে এই সত্যকে বুঝেছিলেন বলেই অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেছেন ।
No comments