সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘কলের কলকাতা’ রচনা অবলম্বন করে লেখকের জেলখানা ভ্রমণের বর্ণনা দাও ।
উত্তর >>> সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘কলের কলকাতা’ রচনায় আমরা দেখি যে , স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় ইংরেজ পুলিশের হাতে বন্দি হওয়া লেখকদের বাড়িওয়ালা রামদুলালবাবুকে দেখতে তাঁর দাদার সঙ্গে জেলে গেছিলেন বালক লেখক । লেখকরা ট্রাম থেকে নেমে জেলখানার সিংহদুয়ার অতিক্রম করে জেলের সিপাই-এর কাছে চিঠি পেশ করেন । কিছুক্ষণ পর জেলে ঢোকার অনুমতি পেয়ে মাথা নীচু করে জেলের ভেতর ঢোকেন তাঁরা । তাঁরা যখন ভিতরে ঢুকছিলেন , তখন একটি কয়েদি ভ্যান জেলের সামনে এসে উপস্থিত হয় । সেই ভ্যানের কয়েদিদের ‘বন্দেমাতরম’ ধ্বনিতে জেলখানা কেঁপে ওঠে ।
>>> জেলখানায় ঢুকে একটু এগিয়ে বাঁ-হাতে শেষে যে ঘর , সেই ঘরেই সবাই কয়েদিদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ করে । ঘরটিতে ঢুকে লেখক দেখেন যে , মেঝের ওপর সতরঞ্জি পাতা । লোকে-লোকারণ্য সেই ঘরে একটিমাত্র চেয়ার-টেবিল রয়েছে । আর সেই চেয়ারে যিনি বসে আছেন , তাকে দেখে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না লেখক । তিনি স্বয়ং সুভাষচন্দ্র বসু । এক-একটি কয়েদি ভ্যান আসছিল , আর তিনি সেই ঘর থেকে ছুটে বাইরে বেরিয়ে নবাগতদের জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন— “তোমরা এসেছ ?”
>>> জেলের ভেতরে থাকা বন্দিরা জালের জানলায় মাঝে মাঝে এসে ভিড় করছিল এসব দেখতে । জানলার ভেতর থেকে একজন কয়েদি বালক লেখককে ‘শোনো খোকা’ বলে ডাকে । লেখক কাছে গেলে সে তাকে জানায় যে , তার বৃদ্ধা মা তার জন্য কেঁদে একশর হচ্ছে । লেখক যেন তার মাকে গিয়ে খবর দেন , সে ভালো আছে । লোকটি তার বাড়ির নম্বরও জানিয়ে দেয় ।
>>> জেল থেকে ফেরার সময় জেলের অন্ধকার গুহায় থাকা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কথা এবং দেশের স্বাধীনতার কথা ভেবে লেখক হতাশ হয়ে পড়লেও তাঁর মার শেখানো এই গানটি গাইতে গাইতে তিনি তাজা হয়ে ওঠেন — ‘ও তোর শিকল পরা ছল । শিকল পরে শিকলরে তুই করবি রে বিকল’ ।
No comments