সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘ছাতির বদলে হাতি’ রচনা অবলম্বনে গারো পাহাড়ের অধিবাসীদের ওপর মহাজনদের শোষণ বর্ণনা করো ।
উত্তর :- লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘ছাতির বদলে হাতি’ রচনায় গারো পাহাড়ের অধিবাসীদের ওপর মহাজনদের শোষণের ছবি তুলে ধরতে গিয়ে কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন ।
>>> গারো পাহাড়তলির ব্যবসায়ী চেংমান একবার হালুয়াঘাট বন্দরে ব্যবসার সওদা করতে এসে ফেরার পথে প্রবল বর্ষায় আটকে পড়ে মহাজন মনমোহনের গদির ঝাঁপের তলায় আশ্রয় নেয় । বৃষ্টি কমার কোনো লক্ষণ না দেখে মনমোহন কলকাতা থেকে কেনা একটি নতুন ছাতা তাকে একপ্রকার জোর করেই গছিয়ে দেন । এরপর আশ্বাসের সুরে চেংমানকে তিনি এও জানান যে , পয়সার ব্যাপারে সে যেন বিন্দুমাত্র চিন্তা না করে । এরপর হাটবারে যেদিনই মনমোহনের সঙ্গে চেংমানের দেখা হয় , সেদিনই সে তাঁকে ছাতার দাম নিতে অনুরোধ করে । যদিও মনমোহন প্রতিবারই তাকে ছাতার দাম অর্থাৎ পাওনাগণ্ডা মিটিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করতে নিষেধ করেন । কয়েক বছর পর হাটেই একদিন মনমোহন তাই যখন চেংমানকে পাকড়াও করে তাঁর দেনা মিটিয়ে দিতে বলেন , তখন আকাশ থেকে পড়ে সে । লাল খেরোর খাতা খুলে মনমোহন তাকে জানান যে , ছাতার দাম এবং তার চক্রবৃদ্ধি সুদ-সহ বর্তমানে এক হাজার টাকা প্রাপ্য , যে টাকা একটা হাতির দামের সমতুল্য ।
>>> ডালু উপজাতির গ্রাম কুমারগাঁতির ব্যবসায়ী নিবেদন সরকার তার মুদিখানার মশলাপাতি কেনার জন্য কয়েক বছর ধরে টাকা ধার করে চলেছিল মহাজন কুটিশ্বর সাহার কাছ থেকে । সেই ধারের টাকা তুলতে কুটিশ্বর সাহা নিবেদনের ছেষট্টি বিঘে জমি দেনার দায়ে কেড়ে নিয়েছিলেন ।
>>> আর-এক ধুরন্ধর মহাজন এক চাষিকে বাকিতে একটি কোদাল বিক্রি করেছিলেন । সেই টাকা তুলতে তিনি সেই চাষির কাছ থেকে পনেরো বিঘা জমি কেড়ে নেন ।
>>> স্থানীয় মানুষদের কাছে শোনা এই তিনটি সত্য ঘটনার উল্লেখের মধ্য দিয়েই লেখক মহাজনদের শোষণের ইতিহাস তাঁর রচনায় তুলে ধরেছেন ।
No comments