Breaking News

“কিন্তু হাতি-বেগার আর চলল না” — হাতি-বেগার আইন কী তা আলোচনা করো । তা কেন আর চলল না ?

 


উত্তর  >>> লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘আমার বাংলা’ গ্রন্থের ‘গারো পাহাড়ের নীচে’ রচনায় আমরা হাতি-বেগার আইনের বিবরণ পাই । উনিশ শতকের শেষদিকে গারো পাহাড়ে এই জমিদারি আইন চালু ছিল । গারো পাহাড়ের ওপর মাচা বেঁধে সশস্ত্র জমিদার সেখানে সেপাই-সান্ত্রি-সহ বসে থাকতেন হাতি শিকারের উদ্দেশ্যে । সেখানে যাতে তার কোনো বিপদ না ঘটে , সে কারণেই তিনি প্রচলন করেছিলেন হাতি-বেগার আইনের । এই নিয়ম অনুসারে প্রতিটি গ্রামের ছেলে-বুড়ো-সহ প্রতিটি পুরুষ প্রজাকে সেখানে আসতে হত আর যে জঙ্গলে হাতি আছে , সেই জঙ্গলটা তাদের সার বেঁধে দাঁড়িয়ে ঘিরে ফেলতে হত । এরজন্য জমিদারের তরফ থেকে প্রজাদের কোনো কিছুই , এমনকি খাবারও দেওয়া হত না । নিজেদের খাবার-দাবার ইত্যাদি প্রজাদের নিজেদেরকেই নিয়ে আসতে হত । কিন্তু জমিদারের এতটুকু অসুবিধা যাতে না হয় তার ঢালাও ব্যবস্থা থাকত ৷ এইভাবে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় সাপের বা বাঘের কামড়ে তাদের অনেকেরই মৃত্যু হত ।

 

>>> জমিদারের হাতি-শিকারের শখ মেটানোর উদ্দেশ্যে তৈরি এই নৃশংস হাতি-বেগার আইন গারো পাহাড়িরা বেশিদিন সহ্য করেনি । তারা জনৈক গোরাচাঁদ মাস্টারের নেতৃত্বে এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে । গারো পাহাড় সংলগ্ন প্রতিটি চাকলায় তাই ক্রমে ক্রমে মিটিং শুরু হয় । প্রতিটি কামারশালায় তৈরি হতে থাকে অস্ত্রশস্ত্র । কিন্তু এতসব প্রস্তুতি সত্ত্বেও সেই বিদ্রোহে জমিদারের সৈন্যদলের কাছে বিদ্রোহী প্রজারা পরাজিত হয় । সেই বিদ্রোহ দমন করতে পারলেও হাতি-বেগার আইন চালু রাখতে কিন্তু জমিদারেরা আর সাহস পেলেন না । গারো পাহাড়ে হাতি-বেগার এভাবেই অবলুপ্ত হয়ে গেছে ।

No comments