বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৯

বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ বাংলা রচনা




বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ

ভূমিকা :– বিজ্ঞান কি সকলের জন্য ? বিজ্ঞান কি মানুষকে সার্বিক মুক্তির পথ দেখাতে পেরেছে  ? তা কি মানুষকে কিত্রিম করে দিচ্ছে না ? এসব প্রশ্ন বর্তমানে প্রতিভাত হচ্ছে । কেননা বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ধনী হচ্ছে আরো ধনী । শিল্পাঞ্চলে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হচ্ছে , মানুষ হয়ে যাচ্ছে যন্ত্র । গান্ধীজি বলেছিলেন – " যন্ত্র পাপ " । কিন্তু রবীন্দ্রনাথের মতে , যন্ত্র যদি মানব কল্যাণে নিয়োজিত হয় তবে তা পাপ নয় । তবে বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে যেভাবে দেশে দেশে পরমাণু শক্তি ও যুদ্ধাস্ত্র তৈরি হচ্ছে , তার ক্ষতিকর দিক গুলিকে আমাদের ভাবতে হবে । মনে রাখতে হবে , পরমাণু শক্তি দিয়ে আর যেন হিরোশিমা – নাগাসাকি তৈরি না হয় । পরমাণু শক্তি কাজে লাগিয়ে দেশে দেশে যেন হিংসাক্ত কাজ করে সন্ত্রাসবাদ না ছড়ানো হয় । বিজ্ঞানের শক্তিতে মানুষ যেন বলদর্পী না হয় । বিজ্ঞানকে স্বাস্থ্যসিদ্ধির কাজে লাগাতে গিয়ে অনেকেই আজ যান্ত্রিক হয়ে উঠেছে । দেখা দিচ্ছে অবিশ্বাস , হিংসা আর পরশ্রীকাতরতা । মনে রাখতে হবে , বিজ্ঞানের শক্তি ততটাই যতটা সে কল্যাণমুখী ।




প্রগতির ক্ষেত্রে বিজ্ঞান :– আগুন জ্বালাবার মধ্যে দিয়েই বিজ্ঞানের যাত্রার সূচনা । এরপর বিজ্ঞান সৃষ্টি করে চলেছে বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কার । বিজ্ঞানের জন্যই তৈরি হয়েছে ছাপার মেশিন । এই ছাপা বই আমদের শিক্ষার কাজে প্রধান অবলম্বন । উচ্চতর শিক্ষার জন্য বিজ্ঞানের তৈরি বিভিন্ন যন্ত্রপাতি , ল্যাবরেটরীর শিক্ষাথীদের এক স্থিতিদায়ক জায়গায় নিয়ে গেছে । অন্ধদের জন্য বিজ্ঞান বসে থাকেনি । তারা যাতে শিক্ষিত হতে পারে তারই জন্য ১৯০০ সালে বিজ্ঞানী স্ট্রাশম্যান আবিষ্কার করেন ব্রেইল পদ্ধতি । তাছাড়া মস্তিষ্কের অস্ত্র প্রচার , হৃৎপিণ্ড পরিবর্তন প্রভুতি ক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের যাদুকরী অবদানের কথা অস্বীকার করা যায় না । কৃত্রিম উপগ্রহ যেমন ইনসাট – ১ এ , ইনসাট – ১ বি প্রভুতির মাধ্যমে দুর – দূরান্তের বিভিন্ন খবরা খবরও জানতে পারি । এই সমস্ত উপগ্রহের দ্বারা আমরা বাড়িতে বসে খেলা ধুলাও দেখি ।




সমাজের সবত্র বিজ্ঞানের দান :– সভ্য সমাজের যে কোন ক্ষেত্রে চোখ মেললেই দেখা যায় , সভ্যতার রন্ধে রন্ধে বিজ্ঞানের অবদান । গ্রামের মাঠের মধ্যে দিয়ে পথে চলছে বাস , লোরী , ট্যাক্সি , স্কুটার ইত্যাদি । পথের দুপাশে বৃহত বৃহত অট্টালিকা । বাড়িতে বাড়িতে আলো জ্বলছে , পাখা ঘুরছে । গ্রামের মধ্যে ও মিলে তৈরী হচ্ছে কাপড় , কৃষকরা ব্যাবহার করছে লাঙ্গলের পরিবর্তে পাওয়ার টিলার , ট্র্যাক্টর , করছে রাসায়নিক সার । বিজ্ঞানকে বাদ দিয়ে গভীর অরন্য , নির্জন সমুদ্র এবং এমনকি নিস্তব্ধ হিমবাহে পযন্ত চলবার জো নেই । কৃষি , শিল্প , শিক্ষা , যানবাহন , আমোদ – প্রমোদ , খেলা ধুলা সব ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানের দান । বিজ্ঞান আজ মানব সভ্যতায় এনেছে যুগান্তর । সভ্যতার ঊষালগ্নে মানুষ ছিল অরন্যচারি ও গুহাবাসী । কিন্তু সে সময়ে মানুষকে বিরুদ্ধ শক্তির সঙ্গে পদে পদে সংগ্রাম করতে হয়েছে । কিন্তু বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কারে মানবসভ্যতার সুরম্য ইমারত আজ প্রতিষ্ঠিত । তবুও বলবো , বিজ্ঞানের উন্নতি সব ক্ষেত্রে মানব কল্যাণে নিয়োজিত হয়নি । বিজ্ঞানের অভিশাপের ফলও তাই যত্রতএ । তাই এখন প্রয়োজন বিজ্ঞানের কুফল গুলি দূর করে তার সুফল গুলিকে আপামর জনসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া । তৃনমুলস্তরে বিজ্ঞানের সুযোগ – সুবিধাকে পৌঁছে দেওয়া ।





শান্তির ক্ষেত্রে বিজ্ঞান :– বিজ্ঞান তার বহুল আবিষ্কারের মধ্যে দিয়ে মানবজীবনকে দান করেছে প্রশান্তি । কিন্তু বর্তমান সভ্যতায় বিজ্ঞানের আবিষ্কার ভয়ানক মারনাস্ত্র । যা নিমিষে ধ্বংস করে দিতে পারে কত অমূল্য তাজা জীবন । বিজ্ঞান তৈরি করেছে পরমাণু বোমা , রাসায়নিক বোমা , যা যুদ্ধপ্রিয় দেশগুলি নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করছে এবং পৃথিবী থেকে শান্তির নিশান মুছতে চাইছে । কিন্তু চুলচেরা বিশ্লেষণে দেখা যায় , বিজ্ঞানীরা ঐ সমস্ত পরামানবিক অস্ত্রশস্ত্র আবিষ্কার করলেও প্রকৃত দায়ী কিন্তু প্রয়োগকর্তারাই । পরমাণু বোমার ধ্বংসস্তূপ রূপ আমরা জানতে পারি হিরোশিমা ও নাগাসাকি থেকে – আজও যেখানে বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হয় । তাই মর নাস্ত্র আবিষ্কার বন্ধ করে বিজ্ঞান আজ পৃথিবীর বুকে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট হয়েছে ।



অনুসরণে লেখা যায় :– বিজ্ঞানের শান্তি ততটাই যতটা সে কল্যাণমুখী ।




ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য বাংলা রচনা




ভূমিকাঃ “আমরা শক্তি আমরা বল/ আমরা ছাত্রদল/ মোদের পায়ের তলায় মূর্চে তুফান/ ঊর্ধ্বে বিমান ঝড়-বাদল/ আমরা ছাত্রদল।” কাজী নজরুল ইসলামছাত্ররাই একটি দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের দিকেই তাকিয়ে থাকে দেশ ও সমাজ। তারা ভোরের শিশির, প্রভাতের আলোর মতো নবজীবনের দ্যুতি ছড়ায়। তারা তাদের কর্মে দেশ ও সমাজের সব অনাচার, অবিচার, অসঙ্গতি দূরে ঠেলে দেয়। তাদের মধ্যে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। তারা পারে না এমন কাজ পৃথিবীতে নেই। ছাত্রসমাজ জেগে উঠলে পুরো জাতি, দেশ ও পৃথিবী জেগে উঠে। তারা তাদের সংগ্রাম দিয়ে যেমন দেশকে সংঘাত মুক্ত করে তোলে, তেমনি নৈতিকতা, শিষ্টাচার, সৌজন্যতা দিয়ে দেশকে সুখী ও সুন্দর করে তোলে।

ছাত্রজীবনঃ অধ্যায়নের জীবনটাই ছাত্রজীবন। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে দেশের বাইরে বিভিন্ন গবষেণামূলক অধ্যয়নের সবটুকুই ছাত্রজীবনের অন্তর্ভুক্ত। একজন ছাত্র কোনো কিছুতেই পিছপা হয় না। ছাত্রজীবন মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। ছাত্রজীবনেই মানুষ ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত গড়ে তোলে। জীবনকে প্রাণপ্রাচুর্যে ভরে তোলার শিক্ষা মানুষ ছাত্রজীবন থেকে পায়। বদান্যতা, সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা, নিয়মানুবর্তিতা, দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ, মহানুভবতার শুরু ছাত্র জীবন থেকেই। প্রতিটি ছাত্রই দেশগড়ার হাতিয়ার। ভবিষ্যতে তারাই দেশের নেতৃত্ব দিবে। M.K Gandhi বলেন, "The students are the Future leaders of the country who could fullill country's hopes being capable."

ছাত্রদের দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ “ছাত্র নং অধ্যয়নং তপ” এটিই ছাত্রদের মূলমন্ত্র। সংস্কৃত এই কথাটির অর্থ- অধ্যয়নেই ছাত্রদের একমাত্র তপস্যা। ছাত্রজীবন মানেই জ্ঞান-বিজ্ঞানের জগৎ। যেখান থেকে ছাত্ররা প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শিখবে। আর এ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে কর্মমুখী জীবনে প্রবেশ করবে। স্বাস্থ্যকর, মানসম্পন্ন, সুন্দর পরিবেশে কাজ করতে চাইলে ছাত্রজীবন থেকেই সেই মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। ছাত্রজীবনে পড়াশোনার কোনো বিকল্প নেই। তার পাশাপাশি মানুষ্যত্ববোধও অর্জন করতে হবে। শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে। শিক্ষকের আদেশ পালন করলে একটি ছাত্র অবশ্যই ভালো গুণের অধিকারী হতে পারবে। কেননা শিক্ষকই একটি ছাত্রকে সৎ ও মেধাবী করে তোলে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, "None but those who have the spirit of forbearance are fit to be teaehcr." তাই শিক্ষককে সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে আসীন করতে হবে। ছাত্রদের অন্যতম প্রধান কর্তব্য শুধুমাত্র পাঠ্যপুস্তকে সীমাবদ্ধ না থাকা। পাঠ্যপুস্তকের বাইরেও অনেক কিছু শেখার রয়েছে যা তাদেরকে প্রকৃত জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করবে।

সামাজিক ক্ষেত্রে ছাত্রসমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্যঃএকটি দেশের সচেতন নাগরিক হচ্ছে ছাত্রসমাজ। অধ্যয়ন ছাত্রদের মূল লক্ষ্য হলেও সামাজিক ক্ষেত্রে তাদের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। তারাই দেশকে সঠিক পথ অনুসরণে সহায়তা করতে পারে। আমাদের দেশে এমন অনেক দরিদ্র সুবিধাবঞ্চিত পরিবার রয়েছে যেখানে একটি মাত্র সদস্য শিক্ষিত। সেই সদস্যটি পুরো পরিবারে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয় এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলে। শুধু পরিবার কিংবা সমাজ নয় ছাত্রসমাজকে পুরো জাতির নিরক্ষরতা দূরীকরণে সহায়তা করতে হবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার মারাত্মক আকার ধারণ করছে সেসব দেশের ছাত্রসমাজের উচিত সংঘবদ্ধভাবে জনগণকে পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে এবং অধিক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কুফল সম্পর্কে সচেতন করে তোলা। সমাজকে এবং শিক্ষাঙ্গনকে সন্ত্রাসমুক্ত করার দায়িত্ব ছাত্রদেরই কাঁধে নিতে হবে। আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামোর কারণে শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান দেওয়া সম্ভব হয় না ফলে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু ছাত্রসমাজের উচিত নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি করা। শিক্ষিত যুবকরা যদি কৃষি কাজ, মৎস্য চাষ, পশুপালন, নার্সারি ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাদের মেধা ও শ্রমকে কাজে লাগায় তাহলে দেশের উন্নয়ন যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি বেকারত্বও হ্রাস পাবে।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ ছাত্রসমাজ অনাচার, অবিচার, অত্যাচার ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সবসময়ই সোচ্চার। আদর্শগতভাবেই তারা রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। রাজনীতির বিষবৃক্ষের মূলোৎপাটন করা ছাত্রদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। যুগে যুগে ছাত্রসমাজ দেশের স্বাধীনতা অর্জনে এবং স্বাধীনতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে। শিক্ষিত, ব্যক্তিত্ববোধসম্পন্ন ছাত্রসমাজ কখনো পরাধীনতার গ্লানি বয়ে বেড়াতে চায় না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ছাত্রদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। তাছাড়া মাতৃভাষার জন্য তারা যে ত্যাগ স্বীকার করেছে তা ইতিহাসের পাতায় বিরল। ১৯৬২ সালের হামিদুর রহমানের শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রসমাজ গৌরবময় ভূমিকা পালন করেছিল। তবে বর্তমানে ছাত্ররা রাজনীতির প্রকৃত আদর্শ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে সন্ত্রাসবাজি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন দুষ্কৃতিমূলক কাজে জড়িয়ে নিজেদের মেধাকে নষ্ট করে ফেলছে।

পারিবারিক ক্ষেত্রে দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ "Charity begins at home" ছাত্ররা পরিবারের কাছ থেকে যেমন অনেক কিছু পায় তেমনি পরিবারের প্রতিও তাদের অনেক দায়িত্ব থাকে। পরিবারের সকলেই তাদের কাছ থেকে ভালো আচার ব্যবহার প্রত্যাশা করে। আব্বু-আম্মু এবং পরিবারের বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা, ছোটদের প্রতি স্নেহ করা তাদের কর্তব্য।

দেশাত্মবোধঃ ছাত্ররা দেশপ্রেমকে তাদের অন্তরে লালিত করে। তারা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের জীবন পর্যন্ত বাজি রাখতে পারে দ্বিধাহীনভাবে। ছাত্রদের দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকায় তারা দেশকে আরও বেশি আপন করে নিতে পারে। ছাত্রসমাজ মানেই তরুণ সমাজ। প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর এই তরুণসমাজকে দেশের ও দেশের মানুষের সেবায় মগ্ন থাকতে হবে। তাদের মধ্যে কোনো ক্লান্তি, কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা উচিত নয়। বন্যা-দুর্গত, ঝড়ে কবলিত এলাকায়, দুঃস্থ মানুষের পাশে সবসময় তাদের সেবার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।

নিয়মানুবর্তিতাঃ "Work while you work, play while you play, And that is the way to be happy;"-এ নীতি মেনে চললে ছাত্ররা তাদের সাফল্যের চরম শিখরে আরোহণ করতে পারবে। ছাত্রদের প্রথম কাজ পড়াশোনা। কখনোই তাদের একদিনের কাজ অন্যদিনের জন্য রেখে দিলে চলবে না। ব্যক্তিজীবনে, সমাজ জীবনে, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ছাত্রদের অবশ্যই নিয়মানুবর্তিতার সাথে সুষ্ঠুভাবে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হবে। ছাত্রজীবন থেকেই নিয়মানুবর্তিতায় বেড়ে উঠলে কর্মজীবনও এর প্রভাব পড়বে।

নৈতিক মূল্যবোধ ও শিষ্টাচারঃ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের শুধু পরীক্ষা পাসের শিক্ষাই দেওয়া হয় না। তাদেরকে নৈতিক মূল্যবোধ এবং শিষ্টাচারের শিক্ষা দেয়া হয়। নৈতিক মূল্যবোধ ছাত্রকে সৎ, কর্তব্যনিষ্ঠ, নিয়মনিষ্ঠ, পরিশ্রমী সর্বোপরি সুন্দর চরিত্রের অধিকারী করে তোলে। প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠার জন্য চাই নৈতিকতা। শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ ছাত্রসমাজকে নম্র-ভদ্র ও নির্মল চরিত্রের অধিকারী করে। পরিবারের সকলের প্রতি, শিক্ষকদের প্রতি, সহপাঠীদের প্রতি মার্জিত আচরণে ছাত্ররা সকলের কাছ থেকে ভালোবাসা, দোয়া এবং সাহায্য-সহযোগিতা পায়। নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন এবং শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধসম্পন্ন ছাত্রসমাজই পারে ভবিষ্যতে জাতির সুষ্ঠু নেতৃত্ব দিতে। তাই ছাত্রদের শিষ্টাচার ও নৈতিক মূল্যবোধের গুণে অর্জন করতে হবে।

উপসংহারঃ দেশ ও জাতি সৎ, চরিত্রবান, নিয়মনিষ্ঠ, কর্তব্যপরায়ণ, সৌজন্যবোধসম্পন্ন পরিশ্রমী ছাত্রসমাজের কামনা করে। সাম্প্রতিককালে ছাত্রসমাজ আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে বিভিন্ন ধরণের অপরাধমূলক কাজ করছে। ছাত্র-রাজনীতির নামে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে। যা দেশ ও জাতির কাছে মোটেও কাম্য নয়। এভাবে চলতে থাকলে জাতি শেকড়হীন হয়ে পড়বে। তাই ছাত্রসমাজের উচিত তাদের প্রকৃত আদর্শে আলোকিত হওয়া। যে শিক্ষা ও মূল্যবোধ ছাত্ররা অর্জন করে ভবিষ্যতে তা পরিপূর্ণ ভাবে কাজে লাগানো, ছাত্রদের প্রকৃত উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।





পরিবেশ উন্নয়নে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা বাংলা রচনা







ভূমিকা :– বানিজ্যিক বাজার ও কাঁচা মালের প্রভূত সম্ভাবনার ক্ষেত্র ভারতবর্ষে থাকায় ভারতবর্ষ বিদেশিদের দ্বারা বারবার লুণ্ঠিত হয়েছে । বর্তমানে বিশ্বয়নের কুফলের ফলে সেই লুণ্ঠনের পরিমাণ আরো বেড়েছে । যে ভারতের পরিবেশ ও সংস্কৃতি বিশ্বের আঙিনায় নিজেকে প্রমাণ করে নিজেদের গৌরব প্রতিষ্ঠা করেছে , সেই পরিবেশ ও সংস্কৃতি আজ লুণ্ঠিত । আমাদের দেশের নিমগাছ , হলুদগাছ , বাসমতি চাল , অবিশ্বাস্য হলেও আর আমাদের নেই , এমনকি আমাদের দেশের মাটি আজ অপরের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত । ভারতের আকাশে , বাতাসে দূষণের ছড়াছড়ি । ভারতের মাটিতে যে চাষ হয় তা নিয়ন্ত্রণ করে ধনী দেশ , আর সেই সব ধনী দেশ যে সব মারাত্মক গ্যাস উৎপাদন করে, তা পৌঁছে যায় আমাদের মতো গরীব দেশগুলিতে । সেই প্রেক্ষিতে পরিবেশ উন্নয়নে দেশের ছাত্র সমাজের একটি বিশিষ্ঠ ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না ।



আইনগত দিক :– ভারতীয় সংবিধানের ৫১ ( ক ) ধারায় ভারতীয় নাগরিকদের ভারতীয় পরিবেশ রক্ষার কথা বলা হয়েছে । ছাত্র ছাত্রী ভারতীয় নাগরিক হিসেবে সেই দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ । আসলে লোকসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় নাগরিকের চেতনা ব্যাক্তিগত স্বার্থ দেখতে গিয়ে জাতীয়  স্বার্থ তথা পরিবেশগত দায়বদ্ধতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে , দেখা দিচ্ছে নানান দূষণ । সেক্ষেত্রে সচেতন নাগরিক হিসেবে পরিবেশ রক্ষায় ও উন্নয়নে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য ।



পরিবেশ সচেতনায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা :– সচেতনতাই পারে যে কোন উন্নয়নকে গতিশীল করতে । সেই উন্নয়নে ছাত্র ছাত্রীকেই অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে । সেজন্য যা করতে হবে তাহলো – ক) পারিপাশ্বিক পরিবেশ সমন্ধে নিজেদের সচেতন হওয়া । খ) জন সাস্থ্য সম্পকে অবহিত হয়ে , সেই বিষয়ে প্রচার করা । গ) সবরকম দূষণ ও তার কারন সমন্ধে পারস্পরিক আলোচনা করে যথাসম্ভব তা বন্ধ করার জন্যে কর্মসূচি গ্রহণ । ঘ) নিজেদের বাড়িতে পয়ঃ প্রণালী ঠিক রাখা । ঙ) যে সব কারণে ব্যাক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি বিঘ্নিত হয় সেসব কাজ না করা । আহার , নিদ্রা , পরিষ্কার – পরিছন্নতা , বিষয়ে সচেতন হওয়া । সুষম খাদ্য সমন্ধে চেতনা গড়ে তোলা । চ ) অবৈজ্ঞানিক মানসিকতা ও কুসংস্কার দূরীকরনে সচেষ্ট হওয়া । ছ) ঘর গৃহস্থালির বজ্য পদার্থ যেখানে সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা । জ) হাসপাতাল , নার্সিংহোম বি, স্কুল , কলেজ প্রভুতি জায়গায় সবসময় পরিচ্ছন্ন রাখা । ঝ) ধূমপান , মদ্যপান , ড্রাগ সেবন প্রভুতি থেকে বিরত থাকা । স্কুল , কলেজ , রাস্তাঘাট , পার্ক ,বাস , ট্রাম , ট্রেন , প্রভুতি জায়গায় খাবারের পরিত্যক্ত প্যাকেট না ফেলা । বাড়ির সংলগ্ন পরিবেশের পক্ষে উপযোগী – গাছ লাগানো  ও পুরানো গাছ না কাটা । রোগ প্রতিরোধে গাছপালার যে ভূমিকা আছে , সেই সব গাছ যে আমদের বন্ধু তা জেনে , সবাইকে জানানো ।



প্রতিবন্ধীদের প্রতি সামাজিক দায়িত্ব বাংলা রচনা






ভূমিকা: বৈচিত্র্যময় উপাদান নিয়ে মানব সমাজ গঠিত। সমাজের সদস্যদের মধ্যে বৈচিত্র্য আরো বেশি। সমাজে বসবাসরত মানুষদের মধ্যে পৃথক পৃথক সত্ত্বা বিদ্যমান। অভ্যন্তরীণ গুণাগুণ, দোষ-ত্রুটি ছাড়া বাহ্যিকভাবেও রয়েছে অনেক পার্থক্য। মানুষের মধ্যে কেউ লম্বা, কেউ খাটো, কেউ ফর্সা, কেউ কালো আবার অনেকেই আছে এমন যাদের মধ্যে কারো হাত নেই কারো পা নেই, কারও বা দৃষ্টি শক্তি নেই। আবার অনেকে কানে শোনে না কথাও বলতে পারে না। সমাজে এসব মানুষ হলো ব্যতিক্রম। এদেরকে সাধারণভাবে প্রতিবন্ধী বলা হয়।

প্রতিবন্ধী কারা: স্বাভাবিক মানুষের বাইরে যেসব মানুষের শারীরিক ও মানসিক ত্রুটির কারণে জীবনের স্বাভাবিক গতি বাধাগ্রস্ত তাদের বলা হয় প্রতিবন্ধী। অন্যভাবে বলা যায় জীবনে চলার পথে স্বাভাবিক কাজকর্ম ও চিন্তা করতে যাদের প্রতিবন্ধকতা আছে তাদেরকেই প্রতিবন্ধী বলা হয়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO)-এর মতে “একজন প্রতিবন্ধী হচ্ছেন তিনি, যার স্বীকৃত শারীরিক ও মানসিক ক্ষতিগ্রস্ততার দরুন যথোপযুক্ত কর্মসংস্থানের প্রত্যাশা কমে যায়।” জাতিসংঘের প্রদত্ত সংজ্ঞানুযায়ী প্রতিবন্ধীতা হলো এমন কোনো বাঁধা বা সীমাবদ্ধতা (শারীরিক বা মানসিক ক্ষতিগ্রস্ততার কারণে উদ্ভুত), যা একজন মানুষের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে পুর্ণভাবে ব্যাহত করে। আবার অন্যভাবে বলা যায়, কতিপয় প্রতিবন্ধকতার কারণে ব্যক্তি যদি সামাজিক নেতিবাচক মনোভাব ও কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতার দরুন স্বাভাবিক জীবনযাপনে বাঁধার সম্মুখীন হয় তাহলে তাকে প্রতিবন্ধী বলা হয়। মোট কথা, বয়স, লিঙ্গ, জাতি, সংস্কৃতি বা সামাজিক অবস্থান অনুযায়ী আর দশজন যে কাজগুলো করতে পারে অসামর্থ্যরে কারণে সে কাজগুলো প্রাত্যহিক জীবনে করতে না পারার অবস্থাই হলো প্রতিবন্ধীতা।

প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা: UNDP (United Nations Development Programm) এর মতে, বর্তমান বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫% কোনো না কোনো ভাবে প্রতিবন্ধীতার শিকার। ২০১৩ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর জরিপে পৃথিবীতে মোট জনসংখ্যার ১০ ভাগ প্রতিবন্ধী। সেই হিসেবে বাংলাদেশে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ১ কোটি ৬০ লাখ। পুরুষ-নারী প্রতিবন্ধীর অনুপাত ৪৮ঃ৫২। শারীরিক প্রতিবন্ধী ৩৮ লাখ, মানসিক প্রতিবন্ধী ৪২ লাখ, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ৩৩ লাখ, শ্রবণ ও অন্যান্য প্রতিবন্ধী ২৫ লাখ। সিএসআইডি পরিচালিত গবেষণায় প্রকাশ করা হয়েছে যে, দেশের ৪০.৯৫ ভাগ নারী ও কিশোরী প্রতিবন্ধীতার শিকার জন্মগত কারণে, ৩.৩২ ভাগ শিকার হয় ভুল ও অপচিকিৎসায়। এ ছাড়া বিভিন্ন অসুখ, জ্বর, পোড়া ও দুর্ঘটনায় ৫৫.৭৪ ভাগ মানুষ প্রতিবন্ধী হয়ে যায়।

প্রতিবন্ধীদের সামাজিক অবস্থান: সমাজে প্রতিবন্ধীদের অবস্থান অত্যন্ত অবহেলিত। পরিবার থেকে শুরু করে সব স্থানেই প্রতিবন্ধীদেরকে খাটো করে দেখা হয়। আর দশজন স্বাভাবিক মানুষের মতো প্রতিবন্ধীদের সামাজিক সব অধিকার ভোগ করার কথা থাকলেও বরাবরই তারা তা থেকে বঞ্চিত। আত্মীয়-স্বজন সামাজিক মান মর্যাদার ভয়ে তাদের দূরে সরিয়ে রাখেন। সমাজে তাদের অবাধ চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। শিক্ষা, চাকরি, কর্মসংস্থান, বিয়ে, স্বাস্থ্যসেবা প্রভৃতি ক্ষেত্রে তারা বৈষম্যের শিকার হয়। বিভিন্ন ধরণের বৈষম্যের শিকার হয়ে তারা সমাজে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করতে পারে না।

পরিবারের মধ্যে প্রতিবন্ধীদের অবস্থান: যেকোনো মানুষের সামাজিক অবস্থান তৈরি হয় পরিবার থেকেই। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে একথা আরো বেশি প্রযোজ্য। আমাদের দেশের প্রতিবন্ধীরা কোনো না কোনোভাবে পরিবারে অবহেলার শিকার। তবে কোনো পরিবারে বেশি, কোনো পরিবারে কম। অবহেলার কারণে প্রতিবন্ধীতাকে অভিশাপ মেনে নিয়ে তারা অবহেলিত বঞ্চিত জীবনযাপনে বাধ্য হয়। দরিদ্র পরিবারগুলোতে প্রতিবন্ধীদের অবস্থা আরো করুণ। অনেক সময় তাদের অনাহার অর্ধাহারে থেকে দিন পার করতে হয়। অধিকাংশ পরিবারেই প্রতিবন্ধীদের বোঝা হিসেবে গণ্য করা হয়।

প্রতিবন্ধীদের প্রতি দায়িত্ব: প্রতিবন্ধীরা আমাদের সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদেরকে অবহেলায় পিছনে ফেলে রেখে সমাজ এগিয়ে যাবে তা কখনই সম্ভব নয়। সমাজের অংশ হিসেবে তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। এ দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে পালন করলে প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয় বরং সম্পদে পরিণত হবে। নিন্মে প্রতিবন্ধীদের প্রতি দায়িত্বগুলো আলোচনা করা হলো-

দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন: প্রতিবন্ধীদের প্রতি দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রথম করণীয় হলো তাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। অনেক বাবা মা আছেন যারা তাদের প্রতিবন্ধী শিশুদের বাইরে আনতে এবং অন্য শিশুদের সাথে মিশতে দিতে লজ্জা পান। কিন্তু আমাদেরকে এ ধরণের মন মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে।

প্রতিবন্ধীদেরকে সামাজিক স্বীকৃতিদান:প্রতিবন্ধীদেরকে সমাজের অংশ হিসেবে মেনে নিতে হবে। সামগ্রিক সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে প্রতিবন্ধীদের স্বীকৃতি দিতে হবে। সমাজের যাবতীয় সুযোগ সুবিধা ভোগের ক্ষেত্রে তাদেরকে গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে তাদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

শিক্ষার ব্যবস্থা: বাংলাদেশে ৯৭% শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও মোট প্রতিবন্ধী শিশুদের মাত্র ১১% স্কুলে ভর্তির সুযোগ পায়। যা সময়ের প্রেক্ষাপটে খুবই নগণ্য। এ জন্য প্রতিবন্ধীদের প্রতিবন্ধীতার ভিত্তিতে শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে দায়িত্ব: বেশির ভাগ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল এমন কি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজের মতো চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধীদের জন্য হুইল চেয়ার প্রবেশ করার মতো ঢালু পথ নেই। যা খুবই দুঃখজনক। প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসা দেশের সর্বত্র বিনামূল্যে করা, চিকিৎসকদের চেম্বারে দেখানোর ক্ষেত্রে, তাদেরকে আগে সুযোগ করে দেয়া আমাদের সকলের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব।

প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা: ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রতিবন্ধীদের জন্য মাসিক ২০০ টাকা হারে বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করে। কিন্তু এ ভাতা বর্তমান সময়ের তুলনায় অনেক কম। তাই এ ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করে প্রতিবন্ধীদেরকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতার পরিধি বাড়াতে হবে।

চলার পথে সহায়তা করা: আমাদের চলার পথে বিভিন্ন প্রতিবন্ধী দেখতে পাই। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদেরকে রাস্তা পারাপারে, শারীরিক প্রতিবন্ধীদেরকে হাত ধরে বা অন্যভাবে সহযোগিতা করা আমাদের সামাজিক দায়িত্ব। এছাড়া আরো কিছু দায়িত্ব হলো-

- সামাজিক গণসচেতনতা বৃদ্ধির কর্মসূচী গ্রহণ করতে হবে।

- প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানে আলাদা শিল্প কারখানা স্থাপন করা উচিত।

- শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের বিশেষ সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে।

- প্রতিবন্ধীদের বিনোদনের জন্য তাদের উপযোগী খেলাধুলা বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে।

- চাকরি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী কোটা বৃদ্ধি করা উচিত।

- প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষায় বিশেষ আইন প্রণয়ন করে তার যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে।

উপসংহার: যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সমাজে অবহেলিত ও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বঞ্চিত। অনেকের পারিবারিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। জীবনযাত্রার মান অনেক নিম্ন। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে এতো বিপুল সংখ্যক প্রতিবন্ধীকে পুনর্বাসন করা অত্যন্ত দূরহ। তাই সমাজের সচেতন সকল স্তরের বিশেষ করে বিত্তবান মানুষদের প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে এগিয়ে আসা উচিত।




একটি ছুটির দিন বাংলা রচনা






ভূমিকা :– নিত্য – নৈমিত্তিক একঘেয়ে জীবনের মাঝে একটি ছুটির দিন আনন্দের দিন , বিনোদনের দিন , কর্মব্যস্ততার মাঝে ক্লান্তি অপনোদনের দিন । ছুটির আনন্দ মুক্তির আনন্দ । তাই সারা সপ্তাহের ক্লান্তির ভাব নিঃশেষে হালকা করে নেবার জন্য ছুটির প্রয়োজন ও আয়োজন । তবু ছুটির একটা অন্য মজা আছে । অবশ্য সেই ছুটি যদি হয় ওট অতিরিক্ত সংযোজন , তবেই । হটাৎ করে অপ্রত্যাশিত ভাবেই ছুটিটা পেয়ে গেলাম । মা - বাবাও যান অসুস্থ এক বন্ধুকে দেখতে । অথাৎ ষোলো আনা ছুটি ।




গুরুত্ব :– ছুটির দিন মানেই সবার সঙ্গে জমিয়ে গল্প করার দিন , প্রিয় শখের চর্চার দিন , ভালোভাবে সবাইকে নিয়ে ভোজনের দিন , সেই সঙ্গে অলস ভাবে সময় কাটাবারও দিন । আসলে ছুটি মানেই নির্দিষ্ট নিয়ম বন্ধ্ণের বাইরে নিজের মতো করে স্বাধীন বিচরণের এক অফুরন্ত অবসর । সেদিন মানুষের কাছে তা হয়ে ওঠে আনন্দের দিন ।



বর্ণনা :– সাত সকালেই লেখাপড়া সঙ্গো করে জানালার ধারে বসলাম । মেঘ না চাইতেই জল । দিনটা আমারই জন্য কিনা কে জানে । জানালার ধারে বসতেই আরম্ভ হয় ঝরঝর ঝিরিঝিরি অকাল বর্ষণ । দমকা একটা হাওয়া এসে হটাৎ বৃষ্টি ধারায় আমাকে ভিজিয়ে দিয়ে যায় । হটাৎ মনে পড়ে যায় দুটো পংক্তি – " ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এল , বৃষ্টি এল খাতার পর । "
অমনি উপন্যাসের আবহের মতোই বাজ পড়ে কাছে কোথাও । বৃষ্টির অবিরাম ধারাপাত, সঙ্গে উদ্দাম হাওয়ার তাণ্ডব । প্রবল বাতাস যেন যুদ্ধ ঘোসনা করে চলেছে সমস্ত পুরাতনের বিরুদ্ধে । পুরাতনির প্রথাভঙ্গে তার অসীম আগ্রহ । বিশাল বিশাল দ্বৈতের মতো গাছগুলো অপরূপ ভঙ্গিমায় কার কাছে যেন জানাতে থাকে সকরুণ মিনতি । মেঘদূতের আকাশের শ্যামল কৃষ্ণ আভা যেন মনে করিয়ে দেয় রাধিকা – দয়িতকে । মনে পড়ে যায় আরো এক মুহুতের কথা । আষাঢ় মাসের মেঘের প্রথম উন্নেষে বিরহী যক্ষের সেই অমর অভিব্যক্তির চিরন্তন কাহিনীর প্রারমবক্ষণ ।




উপলদ্ধি :– বৃষ্টির খামখেয়ালীতে মানুষ জনের আনন্দ আছে , কিন্তু দুর্দশারও সীমা নেই । পায়ে কাদার আশ্লেষ নিয়ে কমরত মানুষজনের বিব্রত মুখেই দুর্দশার যথেষ্ট বদ্ধ প্রকাশ । দিনের বিচিত্র লীলা শেষ হয় । রাত্রি আসে । এখনো বাইরে বৃষ্টির ছিটেফোটা । শোবার আয়োজন ও সারা । শুনে যাব , হটাৎ বাধা পড়ে । পাশের বাড়ির ভদ্রলোক গান চেঁচিয়ে  ধরেছেন । ইন্দ্রণাথের নতুনদার ' ঠুন ঠুন পেয়ালা ' কত মধুর ছিল জানি না , তবে কিনা এই বৃষ্টিতে কুকুরের দল নিজেদের নিয়েই ব্যাস্ত , নইলে শ্রেষ্টতের পরীক্ষা হয়ে যেত আজই । যদিও বা ভদ্রলোক থামেন , এতক্ষন ধরে যাদের প্রায় অগ্রাহ করে এসেছি , সেই ব্যাঙ মশাইয়ের দল যেন আমার এই অপরাধের প্রতিবাদটাই আরো জোড়ে জানান দিতে থাকে । ঘুম আসেনা –নিদ্রাহীন রাত । ' রজনী শাওন ঘন / ঘন দেয়া গরজন ' ও কেবল কবির কাব্যই মানায় । বাদল রানীর এই বিকৃতিটা সুবিধা ঠেকে না আদো । আজকের দিনটার সব ভালো , কিন্তু ব্যাঙের ডাক ?




অনুসরণে লেখা যায় :– একটি ছুটির দিনের উপলদ্ধি




স্বেচ্ছায় রক্তদান বাংলা রচনা




ভূমিকা: সভ্যতার উষালগ্ন থেকেই মানুষ আপদে-বিপদে একে অন্যের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এবং সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। দুঃস্থ মানবতার পাশে এসে দাঁড়ানো এবং ব্যথিত জনের দুঃখ-কষ্ট, যন্ত্রণা এবং হাহাকার দূর করে মুখে হাসি ফুটানোই হলো মহৎ হৃদয়ের মানুষের স্বভাবজাত ধর্ম। আজকের দিনে অন্যের জীবন বাঁচাতে ‘স্বেচ্ছায় রক্তদান’ কর্মসূচি মানবতার নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে। নিজের রক্ত দিয়ে অন্যের জীবন বাঁচানোর উদ্যোগ মানুষকে মানবতাবোধে সমৃদ্ধ করে তোলে।

রক্তদান কী: কোনো কারণে মানবদেহে প্রয়োজনীয় রক্তের অভাব ঘটলে তার জীবন সংকটময় হয়ে পড়ে। হঠাৎ করে কোনো দুর্ঘটনা অথবা আঘাতের ফলে অত্যধিক রক্তপাত হলে প্রাণের সংশয় দেখা দেয়। কোনো অসুখের ফলে শরীরের রক্তের পরিমাণ কমে যেতে পারে। আবার কখনও অপারেশনের সময় রক্তের অভাব পূরণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। আর প্রয়োজনীয় রক্তের অভাব দূর করার জন্য যে ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে তাই হলো রক্তদান। এটি অন্যতম একটি মহৎ কাজ।

রক্তের গ্রুপ: মানুষের রক্তের ৪টি গ্রুপ আছে। সে গুলো হলো- A, B, AB এবং O গ্রুপ। বিজ্ঞানী Landois রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ে প্রথম কৃতিত্ব দেখান। রক্ত নেওয়ার সময় প্রথমে রোগীর রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করা হয়। তারপর রক্তের গ্রুপের সঙ্গে মিলিয়ে সুস্থ দেহের রক্ত রোগীর দেহে সঞ্চালন করা হয়। তবে তার আগে অবশ্য Rh গ্রুপও দেখা হয়।

রক্তদানের নিয়ম: রক্তদানের মাধ্যমে রোগীর জীবন বাঁচানোর প্রক্রিয়াটি একটু জটিল ধরণের হয়। উপযুক্ত বৈশিষ্ট্যের রক্ত হলেই তা রোগীর শরীরে সঞ্চালন করা যাবে। রক্তগ্রহণের জন্য কিছু আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতি প্রচলিত আছে। প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ সবল দেহের অধিকারী যেকোনো ব্যক্তি রক্ত দিতে পারে। তবে তার কোনো মারাত্মক রোগ থাকবে না। তার বয়স ১৮-৫৭ বছরের মধ্যে হতে হবে। একজন রক্তদাতা প্রতি তিন মাস পর পর রক্ত দিতে পারে। রক্তদাতার শরীরের তাপমাত্রা থাকতে হবে ৯৯ ডিগ্রির নিচে। রক্তচাপ থাকবে ১০০/৬০ থেকে ২০০/৯০ এর মধ্যে। অনেক সময় রক্তদাতার শরীর থেকে রক্ত নিয়ে ব্লাড ব্যাংকে সংরক্ষণ করা হয় এবং প্রয়োজন বিবেচনা করে তা ব্যবহার করা হয়।

রক্তদান ও সংরক্ষণ নীতি: রক্তদান হলো শুভ চেতনাসম্পন্ন মানুষের কাছে এক মহান ব্রত। এ মহান কাজে অংশগ্রহণের জন্য একজন সুস্থ ব্যক্তির দেহ থেকে ২৫০ সি.সি. রক্ত একসাথে টেনে নেয়া যায়। এতে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা রক্ত সংরক্ষণের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে। প্রতিটি চিকিৎসা কেন্দ্রে এবং হাসপাতালে এখন ব্লাড ব্যাংক রয়েছে। ১৯৩৭ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরে প্রথম ব্লাড ব্যাংক স্থাপিত হয়। একজন সুস্থ মানুষের দেহ থেকে ২৫০ সি.সি রক্ত নিয়ে একটি ব্যাগে রাখা হয়। এ ব্যাগটি ৫০ সি. সি. অ্যাসিড সাইট্রেট ডেক্সট্রোজ সম্বলিত থাকে। ১৯১৪ সালে বৈজ্ঞানিক Houstain ব্যাগে রক্ত জমাট না বাঁধার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। রক্তের বিশুদ্ধ থাকা নির্ভর করে উপযুক্ত তাপমাত্রা এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর। সাধারণত ৪ ডিগ্রি থেকে ৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপ সমন্বিত ফ্রিজে তিন মাস পর্যন্ত রক্ত বিশুদ্ধ থাকে।

রক্তদানে সমস্যা: রক্তদান একটি স্পর্শকাতর বিষয়। সে জন্য এর নিয়ম-নীতি সুষ্ঠুভাবে মেনে চলা উচিত। অনেক সময় রক্ত সংগ্রহের ভালো কোনো ব্যবস্থা না থাকায় সমস্যা দেখা দেয়। রক্ত যাতে দূষিত না হয় সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে। রক্ত দূষিত হলে তা ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। আবার কিছু পেশাদার রক্তদাতাগণ অর্থের জন্য রক্ত বিক্রি করে এবং একে লাভজনক ব্যবসা মনে করে। লোভের ফলে এখানে দুর্নীতি প্রবেশ করতে পারে। এতে রোগীর মৃত্যু হতে পারে।

রক্ত গ্রহণে সতর্কতা: রক্ত গ্রহণের সময় রক্ত গ্রহীতা এবং রক্তদাতাকে একই শ্রেণির রক্তের অধিকারী হতে হয়। রক্তের গ্রুপ যদি না মিলে তাহলে গ্রহীতার রক্তে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এতে করে রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কাও তৈরি হয়। তাছাড়া রক্ত গ্রহণের সময় কোনো প্রকার ব্যবহৃত সুই বা সিরিঞ্জ ব্যবহার করা যাবে না। নতুন সুই বা সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে হবে।

রক্তদানে বিভিন্ন কর্মসূচি: স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে রক্তদান কর্মসূচির কাজ শুরু হয়। বর্তমানে এদেশের প্রত্যেক জেলায় ব্লাড ব্যাংক স্থাপিত হয়েছে। এখন মানুষের মধ্যে স্বেচ্ছায় রক্তদানের প্রবণতা বেড়েছে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে সাধারণ মানুষকে রক্তদানে অনুপ্রাণিত করা হচ্ছে। বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানও রক্তদানের কাজে এগিয়ে আসছে। এদের মধ্যে রেড ক্রিসেন্ট, সন্ধানী ও বাঁধন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়াও বিভিন্ন ক্লাব-সংঘ, স্কুল, কলেজ থেকে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও আলোচনা সভা থেকে রক্ত সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।



রক্তদান সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা: আমাদের দেশে অনেকের মধ্যে রক্তদান সম্পর্কে কিছু ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে। রক্তদানের কথা শুনলে অনেকে ভয়ে চমকে উঠে। তারা মনে করে রক্তদান স্বাস্থ্যহানি ঘটায়। তাদের ধারণা পুরোটাই ভ্রান্ত। কারণ আমাদের দেহে প্রতিদিন রক্ত কোষ সৃষ্টি হচ্ছে এবং পুরাতন রক্ত কোষ অকেজো হয়ে পড়ছে। রক্ত না দিলেও পুরাতন রক্ত কোষ অকেজো হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পায় না। তাই প্রতি তিন মাস পর পর যে কোনো প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ সবল মানুষ রক্ত দিতে পারে।

উপসংহার: রক্তদান ধনী-গরীবের বৈষম্য, সাদা-কালোর ভেদাভেদ এবং ধর্মীয় ব্যবধান ঘুচিয়ে দেয়। রক্তদান মানব জাতির জন্য এক মহান সেবাকর্ম। এক ব্যাগ রক্তই একজন মুমূর্ষু ব্যক্তির জীবন বাঁচাতে পারে। এ জন্য আমাদের সকলকে রক্তদানে এগিয়ে আসতে হবে এবং এ ব্যাপারে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।




ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক বাংলা রচনা





ভূমিকা: সূর্যের আলো পুরো পৃথিবীকে আলোকিত করে। পৃথিবীর রূপ-বৈচিত্র্য আমাদের সামনে দৃশ্যমান করে।তেমনি, শিক্ষা থেকে অর্জিত জ্ঞান আমাদের মন ও জীবনকে আলোকিত করে। জন্মের পর একটি শিশুর শিক্ষা গ্রহণের প্রথম পাঠ শুরু হয় তার পরিবারে। কিন্তু তার পরেই তাকে শিক্ষাদানের মহান দায়িত্ব অর্পিত হয় শিক্ষকের ওপর। শিক্ষক তার নিজের অর্জিত শিক্ষা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দিয়ে গড়ে তোলেন তার শিক্ষার্থীকে। নিজের সমস্ত জ্ঞান তিনি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেন। এই শিক্ষা দান ও গ্রহণের মধ্য দিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে গড়ে ওঠে সম্পর্কের এক অটুট বন্ধন। যে সম্পর্কের সামনে শ্রদ্ধায়, ভালবাসায় মাথা নত করি আমরা সবাই।

ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক: যিনি শেখান তিনি শিক্ষক, যিনি শেখেন তিনি শিক্ষার্থী বা ছাত্র। তাই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে দাতা-গ্রহীতার সম্পর্ক বিদ্যমান। তবে সেই দান ও গ্রহণের বিষয় হলো শিক্ষা ও জ্ঞান। একজন শিক্ষার্থীর কাছে তার শিক্ষক সর্বোচ্চ সম্মানিত আসনে অধিষ্ঠিত ব্যক্তি। আবার শিক্ষকের কাছে তার শিক্ষার্থীরা সন্তানের মতো প্রিয়। নিজের বিদ্যা-বুদ্ধি ও শ্রম দিয়ে একজন শিক্ষক তার শিক্ষার্থীকে গড়ে তোলেন এবং নিজেকে সেই শিক্ষার্থীর আলোকিত জীবনের গর্বিত অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। শিক্ষার্থীরাও তাদের শিক্ষা জীবন এমন কি ব্যক্তি জীবনেরও প্রতিটি পদক্ষেপে, সাফল্যে-ব্যর্থতায় শিক্ষককে স্মরণ করে। শিক্ষক যেমন ছাত্রকে সফল করেন তেমনি ছাত্রের ব্যর্থতার দায়ভারও তিনি নিজের কাঁধে তুলে নেন। তাই ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক হলো সাফল্য-ব্যর্থতা, গ্লানি কিংবা গর্বে সমান অংশীদারিত্বের সম্পর্ক।

ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের স্বরূপ: খুব আশ্চর্য সুন্দর একটি সম্পর্ক হলো ছাত্র ও শিক্ষকের সম্পর্ক। এই সম্পর্ক একই সাথে খুবই সাবলীল, মধুর, স্বতঃস্ফুর্ত আবার গাম্ভীর্যপূর্ণ। শিক্ষক প্রয়োজনে শিক্ষার্থীর ওপর অবিভাবকসূলভ কঠোরতা, শাসন আরোপ করেন। আবার কখনো বা বন্ধুর মতো ভালবাসেন, পরামর্শ দেন, উৎসাহ যোগান, সব সময়ই পাশে থাকেন। শিক্ষার্থীরা শিক্ষককে অবিভাবকের মতো সম্মান করে, আদেশ-উপদেশ মেনে চলে, শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। শিক্ষকের সাথে ছাত্রের সম্পর্ক পথ প্রদর্শক আর পথিকের সম্পর্কের মতো। শিক্ষক পথ দেখান, ভবিষ্যতের দিক-নির্দেশনা দেন। আর শিক্ষার্থী সেই দেখানো পথে চলে, নির্দেশনা মেনে চলে। উদারতা স্নেহের, মায়া, ভালবাসা আর শাসনের মধ্য দিয়ে একজন শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের ভেতরে স্বপ্নের বীজ বপন করেন। শিক্ষার্থীরা সেই স্বপ্নকে লালন করে। তাই ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক স্বপ্নদ্রষ্টা ও স্বপ্ন স্রষ্টারও।

ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের গুরুত্ব: শিক্ষক হলেন মানুষ গড়ার কারিগর। তাই শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকের সম্পর্ক যত বেশি ভাল হবে, সুন্দর হবে, বন্ধুত্বপূর্ণ হবে শিক্ষক তার শিক্ষার্থীকে তত ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন। শিক্ষকের সান্নিধ্যে এসে শিক্ষার্থীরা জীবনকে জনতে, চিনতে ও বুঝতে শেখে। সব কিছুকে নতুন করে দেখতে শেখে। শিক্ষক শিক্ষার্থীর দেখার চোখ খুলে দেয়, জ্ঞানের দরজা খুলে দেয়। তাদেরকে জ্ঞানের পথে, আলোর পথে নিয়ে যায়। শিক্ষক জীবন সম্পর্কে যে দর্শন চিন্তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয় তার ভিত্তিতেই তারা তাদের জীবনের ব্রত ঠিক করে। একজন ভাল শিক্ষক একজন বখে যাওয়া শিক্ষার্থীকেও সঠিক পথে নিয়ে আসতে পারেন, তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন।

সম্পর্ক যেমন ছিল: আগের দিনে ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক ছিল অকৃত্রিম। শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষককে শ্রদ্ধা করত দেবতার মতো। শিক্ষকের এক একটি আদেশ-উপদেশকে তারা বেদবাক্য বলে মনে করত। শিক্ষকেরাও শিক্ষার্থীদেরকে ভালবাসত আপন সন্তানের মতো। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের নির্দেশনা অলঙ্গণীয় মনে করে অক্ষরে অক্ষরে তা পালন করতো। শিক্ষকদের সেবা করাও তাদের শিক্ষার অংশ ছিল। শিক্ষকেরাও তার শিক্ষার্থীকে সঠিক শিক্ষা দিতে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অটুট বন্ধনের উদাহরণ পাওয়া যায় মহাভারতে। পঞ্চপান্ডব তাদের গুরু অর্থাৎ শিক্ষককে এত শ্রদ্ধা করতো যে শত্রুপক্ষে থাকা সত্ত্বেও যুদ্ধক্ষেত্রে অস্ত্রত্যাগ করে তারা তাকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে। গুরুও তাদেরকে বিজয়ী হওয়ার আশীর্বাদ করেন। ছাত্র শিক্ষক সম্পর্কের নজির স্থাপনকারী বাদশা আলমগীরের কথাও আমরা জানি। দ্বিগ্বীবিজয়ী আলেকজেন্ডারের শিক্ষক ছিলেন দার্শনিক এরিস্টটল। তাদের মধ্যে ছিল দৃঢ় সম্পর্ক। তাই আলেকজেন্ডার তার শিক্ষককে তার হৃদয় দিয়ে সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা করতেন। এরিস্টটলও তাকে ভীষণ ভালবাসতেন। আর তাইতো আলেকজেন্ডারের মৃত্যুতে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েন।

সম্পর্কের বর্তমান প্রেক্ষাপট: ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কে এখন প্রবেশ করেছে কৃত্রিমতা, ব্যক্তিগত স্বার্থ আর লাভের হিসেব। একটা সময় ছিল যখন ছাত্ররা নিজ হাতে শিক্ষকের পা ধুয়ে দিত। আজ সেই হাতে তারা শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে। আবার শিক্ষক যে হাত আশীর্বাদে, উৎসাহে, শুভকামনায় ছাত্রের মাথায় রাখত, সেই হাতে তারা কোমলমতি শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাতে ক্ষতবিক্ষত করছে। শিক্ষার্থীরা এখন শিক্ষককে ব্যবহার করতে চায় অসদুপায়ে ভাল ফল লাভের আশায়। অন্যদিকে শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদেরকে ব্যবহার করে অর্থ লাভের হাতিয়ার হিসেবে। আগে যেখানে শিক্ষকতা মহান পেশা ছিল এখন তা ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে এখন স্বার্থের সম্পর্ক বিদ্যমান। ছাত্র শিক্ষক উভয়ই এখন শিক্ষাঙ্গনের রাজনীতিতে যুক্ত। ফলে সেখানেও তাদের মধ্যে রয়েছে আপোসের সম্পর্ক। তবে প্রতিটি ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক এমন নয়, এখনও সৎ শিক্ষক ও ভাল ছাত্ররা আছে। তবে তাদের পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে।

সম্পর্কে অবনতির কারণ: শিক্ষক-ছাত্রের সম্পর্কে যে চরম অবনতির সৃষ্টি হয়েছে তার অন্যতম প্রধান কারণ হলো মানুষের সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়। একজন শিক্ষক তার মূল্যবোধকে ভুলে গিয়ে, নীতি নৈতিকতাকে বিসর্জন দিয়ে ছাত্রদেরকে শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনের জন্য ব্যবহার করছেন। ছাত্রদেরকে জিম্মি করে তাদের কাছ থেকে বাড়তি সুবিধা আদায় করছেন। এমনকি শিক্ষার্থীরা তাদের পাশবিকতারও শিকার হচ্ছে। যাকে মানুষ গড়ার কারিগর বলা হয় তিনি তার নীতি ভুলে ছাত্রদেরকে ডিগ্রী লাভের শর্টকার্ট উপায় বলে দিচ্ছেন। শিক্ষক এবং ছাত্রের মধ্যে নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধের চর্চা নেই। অবিভাবকেরাও সচেতন নন। ফলে ছাত্ররা বিনাশ্রমে সর্বোচ্চ ফলাফলের জন্য শিক্ষকের সঙ্গে আঁতাত করছে। শিক্ষক-ছাত্রের লেনদেনের সম্পর্কের কারণে সৃষ্টি হচ্ছে প্রশ্ন ফাঁসের মতো অপরাধ।

শিক্ষকের কাছে প্রত্যাশা: একজন শিক্ষকের কাছে তার শিক্ষার্থীর প্রত্যাশা হলো শিক্ষক তাকে জীবনোপযোগী, যুগোপযোগী শিক্ষা দেবেন। তাকে জ্ঞান অর্জনের পথ দেখাবেন, আলোর পথের যাত্রী করবেন। শিক্ষক তার ছাত্রের ভেতর জ্ঞান লাভের, অজানাকে জানার, অদেখাকে দেখার এবং চেনা-জানা বিষয়গুলোকে নতুন করে চেনার আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করে দেবেন, ভবিষ্যতের দিক নির্দেশনা দেবেন। তাদেরকে উৎসাহ, প্রেরণা, শক্তি যোগাবেন। সব সময় ছায়া হয়ে মাথার ওপরে থাকবেন। শিক্ষক তাদেরকে ভাল মন্দ, ভুল-সঠিকের দৃষ্টিভঙ্গি শেখাবেন। সর্বোপরি শিক্ষকের কাছে প্রত্যাশা হলো তিনি তার ছাত্রকে ভালমানুষ হিসেবে, সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবেন।

ছাত্রের কাছে প্রত্যাশা: শিক্ষক জ্ঞানদাতা, তাই বলে তিনি কেবল দিয়েই যাবেন তা নয়। বরং শিক্ষার্থীর কাছে তারও কিছু প্রত্যাশা থাকে। শিক্ষার্থীর কাছে শিক্ষকের সব চেয়ে বড় প্রত্যাশা হলো শিক্ষার্থীরা তার দেয়া শিক্ষায় প্রকৃত অর্থেই শিক্ষিত হবে। তার দেখানো পথে চলবে। ছাত্ররা তাকে সম্মান করবে, শ্রদ্ধা করবে, শিক্ষক হিসেবে তার প্রাপ্য মর্যাদা দেবে। শিক্ষক যেমন ছাত্রের অনেক বড় শুভাকাঙ্ক্ষী। তেমনি শিক্ষক প্রত্যাশা করেন তার ছাত্ররাও তাকে ভালবাসবে, তার প্রতি অনুগত থাকবে।

ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক উন্নয়নে করণীয়: একজন শিক্ষক তখনই সফল হন যখন তিনি নিজ শিক্ষায় তার ছাত্রকে শিক্ষিত করতে পারেন। আর ছাত্রও তখনই সফল হয় যখন সে সেই শিক্ষাকে আত্মস্থ করতে পারে, উপলব্ধি করতে পারে। আর এ জন্য প্রয়োজন ছাত্র শিক্ষক সুসম্পর্ক। কিন্তু বর্তমানে এই সম্পর্ক খুবই নাজুক। তাই এই সম্পর্ক উন্নয়নে যা করতে হবে তা হলো-

- শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে অবশ্যই পরস্পরের উপর অর্পিত দায়িত্ব-কর্তব্যগুলো পালন করতে হবে।

- পরস্পরের কাছে যে প্রত্যাশাগুলো রয়েছে সেগুলো পুরণ করতে হবে।

- কোনো পরিস্থিতিতেই কেউ কারো প্রতি অসাদাচরণ করবে না। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে। শিক্ষক তাদের প্রতি স্নেহশীল থাকবেন।

- শিক্ষকদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। তাদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে যাতে তারা স্বচ্ছল জীবনযাপন করতে পারে।

- শিক্ষকের দ্বারা শিক্ষার্থী অনেক বেশি প্রভাবিত হয় তাই শিক্ষকের উচিত নিজের গুণাবলীগুলো শিক্ষার্থীর ভেতরে ছড়িয়ে দেয়া।

- শিক্ষকতাকে শুধুমাত্র মহান পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিলেই হবে না বরং তা সামাজিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

- অবিভাবকের উচিত সন্তানকে নৈতিক শিক্ষা দেয়া। যেন তারা শিক্ষককে সম্মান করে।

- সর্বোপরি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে সকলেরই উচিত একসাথে কাজ করা।

উপসংহার: একজন ভাল শিক্ষক একজন ছাত্রের জীবন আমূল বদলে দিতে পারেন। তাকে নবজন্ম দিতে পারেন। সম্ভাবনা আর সাফল্যের দুয়ারে পৌঁছে দিতে পারেন। তাই ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের ভিত্তি মজবুত ও দৃঢ় হওয়া প্রয়োজন। স্মেহভালবাসা আর শ্রদ্ধা-সম্মানে যে সম্পর্ক রচিত হয় সেই সম্পর্ক যেন সর্বদাই অটুট থাকে। ছাত্র-শিক্ষকের পবিত্র সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখা সকলেরই নৈতিক দায়িত্ব।