শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৯

আমার প্রিয় বই বাংলা রচনা






ভূমিকাঃবই মানুষের সবচেয়ে ভালো বন্ধু । বই জ্ঞান দেয়, বই আলো দেয় এবং বই আমাদেরকের সুন্দর হতে শেখায় । তাছারা অনেক বই আছে যা মানুষকে অন্ধ করে এবং মানুষের মনকে বন্ধ করে দেয় । আমি সময় পেলে ভালো বই পড়ি ।

বইয়ের সাথে পরিচয়ঃছোট বেলা থেকে পড়ার বইয়ের পাশাপাশি আব্বা আমাকে গল্পের বই কিনে দিচ্ছে । আমার অনেক গল্পের বই আছে যেমন ইশপের গল্প, ঠাকুর মার ঝুলি, বিদেশি রুপকথার গল্প ইত্যাদি । প্রতি বছর বই কিনা ছাড়াও আমাকে অনেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বই উপহার দেয় ।

কোথা থেকে বই কিনিঃআমরা প্রতি বছর বই মেলায় যাই । সেখানে অনেক বইয়ের স্টল থাকে । অনেক ছোটদের বইয়ের স্টলও থাকে । আমরা সব স্টল ঘুরে ঘুরে পছন্দের বই কিনি । ২০১৫ সালের বই মেলা থেকে আব্বা আমাকে নাসিরুদ্দিন হোজ্জার হাসির গল্পের বই কিনে দিয়েছে ।

আমার প্রিয় বইঃআমার আনন্দের বই পড়তে ভালো লাগে । ভুতের বা ভয়ের বা কষ্টের বই আমার ভালো লাগে না । নাসিরুদ্দিন হোজ্জার হাসির বইটি আমার খুব ভাল লেগেছে । এখানের গল্প গুলি হাসির আর আমার বুঝতে অসুবিধা হয় না । বইটি পড়ে আমি খুব মজা পেয়েছি । বইয়ের গল্প গুলি আমি আমার বন্ধুদের বলেছি । তারাও মজা পেয়েছে । আমার অনেক বন্ধু বইটি কিনেছে ।

আমার প্রিয় গল্পঃনাসিরুদ্দিন হোজ্জার গল্পের বইয়ের একটি গল্প আমার খুব প্রিয় । গল্পে আছে একদিন রাজা তার মন্ত্রীকে জিজ্ঞেশ করলো দেশে কয়টি কাক আছে । মন্ত্রী একটি সংখ্যা বলে রাজাকে জানাল কাক কম হোলে বুঝতে হবে কিছু কাক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গেছে আর বেশি হোলে বুঝতে হবে অন্য কাক বেড়াতে এসেছে । মন্ত্রীর উত্তরটা আমার ভাল লেগেছে ।

উপসংহারঃআমরা সেই বই পড়ব যে বই আমাদের আলো দেয়, যে বই আমাদের ভালো শেখায় । যে বই আমাদের অন্ধ করে, যে বই আমাদের বন্ধ করে সেই বই আমরা পড়ব না । আমাদের সবাইকে বই পড়ার অভ্যাস করতে হবে তবেই আমরা নিজেদের গড়তে পারবো ।





বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৯

নারী শিক্ষার গুরুত্ব বাংলা রচনা






ভূমিকা: ‘আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি শিক্ষিত জাতি দিব’ -নেপোলিয়ান বোনাপোর্ট এর এই চিরস্মরণীয় উক্তিটি আমাদের সবার জানা। একজন শিক্ষিত নারী একটি পরিবারকে শিক্ষিত করতে পারে। এ জন্য আরবিতে একটি প্রবাদ আছে, ‘একজন পুরুষ মানুষকে শিক্ষা দেওয়া মানে একজন ব্যক্তিকে শিক্ষিত করে তোলা, আর একজন মেয়েকে শিক্ষা দেওয়া মানে একটি গোটা পরিবারকে শিক্ষিত করে তোলা।’ পৃথিবীর অর্ধেক জনসমষ্টি নারী। তাই মানব জাতির সামগ্রিক কল্যাণের কথা মাথায় রেখে বলা যায়, নারী শিক্ষার
নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব: নারী শিক্ষার গুরুত্ব বর্ণনাতীত। কেননা নারী মানব জাতির অর্ধেক অংশ। জনসমষ্টির অর্ধেককে শিক্ষার বাইরে রেখে সমাজের পক্ষে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এই অর্ধেক জনগণকে সুশিক্ষিত করতে না পারলে জাতীয় উন্নয়ন, অগ্রগতি ও কল্যাণ আসতে পারে না। নিম্নে নারী শিক্ষার গুরুত্ব আলোচনা করা হলোঃ

নারীর উন্নয়নে নারী শিক্ষা: যুগের পরিক্রমায় নারী শিক্ষার গুরুত্ব বর্তমানে অনস্বীকার্য হয়ে উঠেছে। নারীর অবস্থান সমাজে চিরকাল ধরেই অবহেলিত এবং পশ্চাদপদ। নারীর এই অবস্থান থেকে উত্তরণের জন্য শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষা অর্জন করে নারী তার নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হবে, স্বাস্থ্য সচেতন হবে। তাই নারীর উন্নয়নের জন্য প্রাথমিক উপাদান হলো নারী শিক্ষা।

কর্মসংস্থানের জন্য নারী শিক্ষা: নারীকে স্বাবলম্বী হতে হলে কর্মসংস্থানের প্রয়োজন। কেননা কর্মসংস্থানই নারীর আর্থিক নিরাপত্তা দিতে পারে। নারীর জন্য যুগোপযোগী কর্মসংস্থানের জন্য শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমান সময়ে সরকার নারীর জন্য কোটা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছে যা শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে নারীর কর্মে প্রবেশাধিকারের নিশ্চয়তা দেয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে ৬০% নারী শিক্ষক নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যা নারীর কর্মসংস্থানের একটি বিরাট সুযোগ।

পরিবারের সুরক্ষায় নারী শিক্ষা: একটি পরিবারের সুরক্ষায় একজন শিক্ষিত নারী একটি সুরক্ষিত দুর্গের মতো কাজ করে। কারণ একজন সুশিক্ষিত নারী স্বাস্থ্য সচেতন। আর একজন স্বাস্থ্য সচেতন মা, স্ত্রী বা বোন তার সন্তান, স্বামী বা ভাই-বোনকে সব সময় সুরক্ষিত রাখতে সচেষ্ট থাকেন। আবার একজন শিক্ষিত মা সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য সর্বদা চিন্তিত থাকেন এবং সে অনুযায়ী সন্তানকে চালিত করেন। সন্তানের চলাফেরা, নিয়মানুবর্তীতাসহ যাবতীয় বিষয় খেয়াল করেন। ফলে সন্তান মানুষের মতো মানুষ হতে পারে। একজন সুশিক্ষিত নারী সুরক্ষিত পরিবারের জন্য খুবই প্রয়োজন।

সন্তানের শিক্ষার জন্য নারী শিক্ষা: সন্তান জন্মের পর থেকে মায়ের সংস্পর্শেই বেশির ভাগ সময় থাকে। মায়ের আচার-আচরণ, চাল-চলন, কথাবার্তা সব কিছুই সন্তানকে প্রভাবিত করে। মায়ের হাতে সন্তানের শিক্ষার হাতে খড়ি। মা যদি শিক্ষিত হন তাহলে সন্তান অবশ্যই শিক্ষিত হবে। একজন নারী শিক্ষিত হওয়ার অর্থ ওই পরিবারের পরবর্তী প্রজন্ম শিক্ষিত হবে।

দেশ গঠনে নারী শিক্ষা: বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। এই বিশাল জনসমষ্টিকে শিক্ষার মাধ্যমে সম্পদে পরিণত করে দেশকে এগিয়ে নেওয়া বর্তমানে সময়ের দাবী। নারীকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করলে দেশ গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এজন্য বাংলাদেশ সরকার নারী শিক্ষার প্রসারে বিভিন্ন ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

ইসলাম ধর্ম-মতে নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা: মানুষ জ্ঞানী বা শিক্ষিত হয়ে জš§গ্রহণ করে না। মানুষকে জ্ঞান অর্জন করতে হয়। এ জন্য হাদিসে বলা হয়েছে ‘জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক নর-নারীর উপর ফরজ।’ ইসলামে পুরুষের মতো নারীর জন্যও শিক্ষা লাভ করা ফরজ করা হয়েছে। যেখানে পুরুষের শিক্ষার প্রসঙ্গে এসেছে সেখানে নারীদের শিক্ষার কথাও বলা হয়েছে। নবী করিম (স.) এর সহধর্মিনী হযরত আয়েশা (রা.) ছিলেন তৎকালীন সময়ে সবচেয়ে বেশি শিক্ষিত নারী। বিয়ে করার সময় মেয়ের শিক্ষার দিকে নজর দেওয়ার জন্য রাসূল (স.) নির্দেশ দিয়েছেন।

সামাজিক সচেতনতায় নারী শিক্ষা: যেকোনো সমাজকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিকে এগিয়ে নিতে হলে নারী ও পুরুষ উভয়কেই তার অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। নারী শিক্ষাই পারে সমাজের সকল স্তরের নারীদেরকে তাদের সামাজিক অধিকার ও করণীয় সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে।

নারী শিক্ষার প্রসারে বাধাসমূহ: নারী শিক্ষার বিষয়টি এখনও আমাদের সমাজে বেশ কন্টকাকীর্ণ। এ ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতাগুলো নিম্নরূপ-

সচেতনতার অভাব: নারী শিক্ষার প্রসারে প্রধান অন্তরায় হলো গণসচেতনতার অভাব। নারী শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষ এখনো অসচেতন।

বাল্য বিবাহ: মেয়েদেরকে অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া হয়। বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরানোর আগেই বাবা-মা মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করেন ফলে এক মেয়ের পক্ষে কাংক্ষিত শিক্ষা অর্জন করা সম্ভব হয় না।

ধর্মীয় গোঁড়ামী: ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে নারীকে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করে রাখা হচ্ছে। নারী ঘরে থাকার জন্য বা নারী ঘরের বাইরে গেলে পাপ এসব কথা বলে মেয়েকে বিদ্যা অর্জন থেকে বিরত রাখা হয়।

মেয়েদের প্রতি নীচু ধারণা: মেয়েরা ছেলেদের থেকে দুর্বল, কম মেধাবী মেয়েদের সম্পর্কে এ ধরণের ধারণা নারী শিক্ষার জন্য বাধা।

নারী শিক্ষার প্রসারে আমাদের করণীয়: নারী শিক্ষার প্রসারে আমাদের করণীয় সমূহ নিম্নরূপ-

সচেতনতা বৃদ্ধি:নারী শিক্ষার গুরুত্ব বুঝিয়ে জনসাধারণের মধ্যে প্রচারনা চালাতে হবে। নারীকে শিক্ষিত করে তুললে কী ধরণের লাভ হবে আর না করলে কী ক্ষতি হবে তা সবাইকে বুঝাতে হবে।

মানসিকতার পরিবর্তন: নারী শিক্ষার প্রসারে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার। নারীকে পুরুষের থেকে উত্তম মনে করে নারী বা মেয়েদেরকে অবহেলা করার মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে।

ধর্মীয় নেতাদের এগিয়ে আসা দরকার: শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীদের পশ্চাদপদতার অন্যতম কারণ হলো ধর্মীয় গোঁড়ামী। এই গোঁড়ামী দূর করার জন্য ধর্মীয় নেতাদের এগিয়ে আসতে হবে। কারণ সাধারণ মানুষ ধর্মীয় নেতাদের দ্বারা বেশি প্রভাবিত হয়।

মেয়ে ছেলে বৈষম্য হ্রাস: শিক্ষার ক্ষেত্রে নারী পুরুষ বা ছেলেমেয়ের মধ্যে কোনো ধরণের বৈষম্য করা উচিত নয়। ছেলে হোক মেয়ে হোক সব সন্তানকে শিক্ষিত করার জন্য বাবা-মাকে এগিয়ে আসতে হবে।

উপসংহার: একটি সমাজের সার্বিক অগ্রগতির জন্য নারী শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। নারী শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে প্রচলিত ধ্যান ধারণা ও মানসিকতা সবচেয়ে বড় বাধা। প্রত্যন্ত গ্রাম ও মফস্বল থেকে যে সব মেয়ে উচ্চ শিক্ষার আশায় শহরে পাড়ি জমায় অনেক ক্ষেত্রেই তারা আশাহত হয়। দীর্ঘমেয়াদী বিষয় কোর্স, আবাসন সমস্যা, সেশন জট, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা প্রভৃতি বিষয় ছাত্রীদেরকে মানসিক ও আর্থিক দিক থেকে বিপর্যস্ত করে তোলে। তাই এ সব বাধা দূর করে আমাদের নিজেদের সাথেই নারী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। আর এ জন্য নারীকেও এগিয়ে আসতে হবে।






তোমার জীবনের লক্ষ্য বাংলা রচনা




প্রারম্ভিকা: মানুষের নিজস্ব একটা লক্ষ্যস্থান থাকলে সেই স্থানেই সে নিজেকে উন্নীত করতে পারে। প্রত্যেক মানুষের জীবনে কোনো না কোনো স্বপ্ন থাকে। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য মানুষকে পরিশ্রম ও সাধনা করতে হয়। নির্দিষ্ট লক্ষ্য না থাকলে জীবনে সফলতা লাভ করা যায় না। কান্ডারি বিহীন তরী যেমন অকূল মহাসমুদ্রে তীর খুঁজে পায়না, তেমনি লক্ষ্যবিহীন জীবনও এ কন্টকাকীর্ণময় পৃথিবীতে সাফল্যের সোপান খুঁজে পায় না। মানুষের মনের মধ্যে লালিত স্বপ্নই তাকে তার লক্ষ্যের বন্দরে পৌঁছে দেয়। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকলে জীবনে বিপথগামী, লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তাই প্রত্যেক মানুষের জীবনে একটা অর্থবহ লক্ষ্য থাকা প্রয়োজন।

শৈশবে আমার ভাবনা: আমি যখন ছোট ছিলাম তখন বহু স্বপ্নই আমার অগোচরে আমার শিশুমনে ঘুরে বেড়াত। তখন অনেক কিছুই হওয়ার ইচ্ছে ছিল। যখন যা দেখতাম, যাকে দেখতাম, তাই হতে ইচ্ছে করত। ছোট বেলায় অনেক এলোমেলো স্বপ্ন দেখে তা হতে চাইতাম। কখনও ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার, কখনও বা কবি-সাহিত্যিক হতে চাইতাম। আবার কখনও ফুটবলার, ক্রিকেটার, পাইলট, উকিল প্রভৃতি হতে চাইতাম।

জীবনে লক্ষ্য স্থির করার প্রয়োজনীয়তা: জীবনে লক্ষ্য স্থির করে সে লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য দৃঢ় আকাক্সক্ষা আর কঠোর পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য না থাকলে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকা যায় না। এ প্রসঙ্গে ডা. লুৎফর রহমান বলেছেন- ‘জীবনের প্রথম থেকে ঠিক করে নাও তুমি কোন কাজের উপযুক্ত। এটা একবার, ওটা একবার করে যদি বেড়াও তাহলে তোমার জীবনের কোনো উন্নতি হবে না। এরূপ করে অনেক লোকের জীবন নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তোমার যেন তা না হয়।’ জৈন ধর্মের প্রবর্তক জরথস্ত্র বলেন- ‘লক্ষ্যবিহীন জীবন ব্যর্থতা আনে। নদী যেমন সাগরের দিকে নানাভাবে নানাগতিতে চলিয়াও শেষে সাগরে মেশে, তেমনি বিধাতার আদেশ শিরে রাখিয়া সংসারের কন্টকপথে স্থির লক্ষ্যে চলিবে।’

লক্ষ্য স্থির করার উপযুক্ত সময়: ছাত্রজীবন তপস্যার সময়। ছাত্রজীবনে কোনো অর্থবহ লক্ষ্যকে সামনে রেখে পরিশ্রম ও সাধনা করলেই লক্ষ্যে পৌঁছে জীবনকে সার্থক করা যায়। ছাত্রাবস্থায় লক্ষ্য স্থির করে তাকে বাস্তবায়ন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হয়।

আমার জীবনের লক্ষ্য: প্রত্যেক সচেতন মানুষের মতো আমার জীবনেও একটা লক্ষ্য আছে। আমি শৈশব পার করে কৈশোরে পদার্পণ করেছি। অনেক ভেবে চিন্তে এ লক্ষ্য স্থির করেছি। আমি বড় হয়ে একজন সুদক্ষ কৃষি কর্মকর্তা হতে চাই। আমার শিক্ষা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দ্বারা এদেশের কৃষকদের আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর কৃষি কাজে উদ্বুদ্ধ করব।

কৃষি কর্মকর্তা হওয়ার কারণ: সবার জীবনের লক্ষ্য থাকে বড় হয়ে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়া, বড় চাকুরী করা, শিক্ষক হওয়া, ওকালতি করা, বিচারক হওয়া। কখনও বা ইচ্ছে থাকে রাজনীতিবিদ হওয়ার। কিন্তু আমি এসবের বাইরে ব্যতিক্রম লক্ষ্য বেছে নিয়েছি। আমি আমার ভালোলাগা থেকে এ পেশায় নিজেকে যুক্ত করতে চাই। এক্ষেত্রে জনসনের কথার সাথে আমি একমত। তিনি বলেন, ‘যুক্তি দ্বারা হয়তো কোনো মানুষের মনে বিশ্বাস সৃষ্টি করা যায় কিন্তু ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করে কেউ কোনদিন সুখী হতে পারেনি’। আমাদের দেশের ৭০ শতাংশ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষিকাজের সাথে জড়িত। তারা পুরাতন আমলের পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করে। তারা দারিদ্র্যতার বেড়াজাল থেকে বের হতে পারেনি। অথচ তারাই আমাদের খাদ্যের যোগান দিতে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করছে। কৃষকরাই কৃষির মূলচালিকা শক্তি। তাদের গুরুত্বের কথা রাজিয়া খাতুনের পঙক্তিতে ফুটে উঠে-

‘সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা,
দেশ মাতারই মুক্তিকামী দেশের সে যে আশা।’এসব মুক্তিকামী মানুষরাই এখন শোষণ ও বঞ্চনার শিকার। তারা দিন-রাত পরিশ্রম করেও অধিক পরিমাণে ফসল উৎপাদন করতে পারে না। এর ফলে তাদের আর্থিক সমস্যার সাথে সাথে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থাও খুব নাজুক হয়ে উঠেছে। আমি একজন কৃষি কর্মকর্তা হয়ে কৃষকদের আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করার জন্য প্রশিক্ষণ দিব। তাদের আধুনিক উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদের জন্য উদ্বুদ্ধ করব। তাদেরকে উন্নতমানের বীজ ও সার ব্যবহারের সুফল সম্পর্কে অবহিত করব। তাদের মাধ্যমে আমি এদেশে ফসলের জোয়ার আনব। কৃষির মাধ্যমে তাদের অবস্থার উন্নতির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করব।

লক্ষ্য অর্জনের প্রস্তুতি: বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক-এ তিনটি বিভাগ রয়েছে। আমার ইচ্ছা পূরণের জন্য আমি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসিতে পড়ব। এসএসসি পরীক্ষা পাসের পর একটা ভালো কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করব। এইচএসসি পাসের পর আমি শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স করে সরকারের কৃষি বিভাগে যোগদান করব। আমি প্রথম কর্মস্থল নিব আমার নিজ জেলায়। নিজ জেলা থেকেই আমি আমার কার্যক্রম শুরু করতে চাই। আমার জেলার কৃষকদের অবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে আমি স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাব।

লক্ষ্য অর্জনে করণীয়: কঠোর সাধনা করে জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে হয়। কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে আমাকে অভিজ্ঞ হতে হবে। উন্নত ধরণের কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে আমাকে জ্ঞান লাভ করতে হবে। বর্তমানে কৃষকদের সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও তার সমাধানের উপায় বের করতে হবে। তাদের জমিতে অধিক ফসল ফলানোর যাবতীয় পরামর্শ দিতে হবে। আমার আদর্শকে মনে প্রাণে ধারণ করে আমি এখন থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমি সচেতন।

আমার জীবনের লক্ষ্যের সার্থকতা: আমার লক্ষ্য এদেশের কৃষকদের জীবনে আমূল পরিবর্তন আনা। তারা কৃষি সম্পর্কে অজ্ঞ। তারা জানে না উন্নত দেশে কিভাবে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে চাষাবাদ হচ্ছে, কিভাবে অল্প জমিতে অধিক ফসল ফলানো হচ্ছে। কৃষকদের উন্নতি হলেই কৃষি নির্ভর এদেশের সামগ্রিক উন্নতি হবে। কৃষকদের সাফল্য লাভেই আমার সার্থকতা। তাদের সেবা করাই হবে আমার লক্ষ্য। এক্ষেত্রে জর্জ ওয়াশিংটনের উক্তিটিই আমি লালন করি- ‘কোনো দেশের প্রকৃত সেবা সে দেশের মূল সম্পদ কৃষির উন্নতির চেষ্টা ছাড়া অন্য কিছুতে হতে পারে বলে আমি জানি না।’

উপসংহার: আমাদের দেশ কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের অর্থনীতি নির্ভর করে কৃষির উপর। কৃষিরই যদি উন্নতি না ঘটে তবে আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটবে না। তাই আমার জীবনের লক্ষ্য একজন কৃষি কর্মকর্তা হয়ে এ কৃষক সমাজের উন্নতি সাধনে সহায়তা করা। সবশেষে আমি ঈশ্বরচন্দ্র গুহের সাথে একমত। তিনি বলেন-‘কৃষিই সমাজের মেরুদন্ড, কৃষিই ভিত্তিমানব সমাজের মুখবন্ধনী। ফলত- কৃষি লইয়াই সমাজ; কৃষি কাজের উন্নতিতেই সমাজেরও সৃষ্টি ও স্থিতি; এবং কৃষির ক্রমোন্নতিতেই সমাজের ও দেশের সর্বাঙ্গীন উন্নতি।’




আন্তর্জাতিক নারী দিবস বাংলা রচনা




ভূমিকা:

কোনো কালে একা হয়নিকো জয়ী পুরুষের তরবারী,
প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে, বিজয়ী লক্ষ্মী নারী।
-কবি নজরুল ইসলামপৃথিবীর মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। এই নারীর অবদান পুরুষ কখনই অস্বীকার করতে পারবে না। পুরুষের প্রতিটি সৃষ্টিকর্মের মধ্যে রয়েছে নারীর ভূমিকা। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের উপরিউক্ত বিখ্যাত চরণদুটি আমাদেরকে একথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। অথচ যুগ যুগ ধরে নারীর এই অবদানকে অবদমিত করে রাখা হয়েছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারী সমাজের মুক্তির একটি পদক্ষেপ মাত্র।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস: প্রতি বছর ৮ মার্চ সারাবিশ্বে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়। দিবসটির পূর্ব নাম ছিল ‘আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস’। বিশ্বব্যাপী এই দিবস পালনের কেন্দ্রীয় বিষয় নারী। কিন্তু আঞ্চলিক ভিত্তিতে দিবসটি পালনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভিন্ন রকম হয়। কোথাও নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ প্রাধান্য পায়, আবার কোথাও নারীর আর্থিক, সামাজিক, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা বেশি গুরুত্ব পায়। কোথাও বা নারীর নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষার বিষয়টিকে মুখ্য হিসেবে রেখে দিবসটি উদযাপিত হয়।

ইতিহাস: ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ নারীদের জন্য একটি স্মরণীয় দিন। এ দিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের একটি সূচ তৈরি করখানার নারী শ্রমিকেরা আন্দোলন শুরু করেন। কারখানার মানবেতর পরিবেশ, ১২ ঘণ্টার কর্মসময়, অপর্যাপ্ত বেতন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিরুদ্ধে তাদের এক প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। কিন্তু পুলিশ এই শান্তিপূর্ণ মিছিলে মহিলা শ্রমিকদের উপর নির্যাতন চালায়। বহু শ্রমিককে আটক করা হয়। এই ঘটনার স্মরণে ১৮৬০ সালের ৮ মার্চ মহিলা শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করে নিউইয়র্ক সূচ শ্রমিকেরা। এভাবেই সংঘবদ্ধ হতে থাকে মহিলা শ্রমিকদের আন্দোলন। এক সময় তা কারখানা ও ইউনিয়নের গন্ডি অতিক্রম করে। ১৯০৮ সালে জার্মান সমাজতন্ত্রী নারী নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় জার্মানিতে। এই সম্মেলনে নারীদের ন্যায্য মজুরী, কর্মঘণ্টা এবং ভোটাধিকারের দাবী উত্থাপিত হয়। ১৯১০ সালের ২য় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ডেনমার্কের কোপেনহেগেন-এ। এতে ১৭টি দেশের প্রতিনিধিরা যোগ দেয়। এ সম্মেলনেই ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯১১ সালে প্রথম ৮ মার্চ দিবসটি পালিত হয়। ১৯১৪ সাল থেকে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলিতে দিবসটি বেশ গুরুত্বের সাথে পালিত হতে থাকে। ১৯৭৫ সাল থেকে জাতিসংঘ দিবসটি পালন করতে থাকে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দিবসটি পালনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয় ১৯৭৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর। এ সময় জাতিসংঘ দিবসটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে দিবসটি পালনের আহবান জানায়। এর ফলে অধিকার বঞ্চিত নারী সমাজের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির পথ সুগম হয়। নারীর অধিকার রক্ষা ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এটি এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।

নারীর বর্তমান অবস্থা: বর্তমান যুগকে বলা হয় গণতান্ত্রিক যুগ, সমতার যুগ। কিন্তু এ সময়েও নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নারীরা এখন কাজের জন্য ঘরের বাইরে যাচ্ছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গবেষণা, শিল্প-সাহিত্য ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই নারীর পদচারণা লক্ষণীয়। কিন্তু তারপরও নারীরা এখনও বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। পরিবারের মধ্যে আপনজন কর্তৃক নারীর নির্যাতিত হওয়া ঠেকানো যাচ্ছে না। কর্মস্থল, পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থায়, পথেঘাটে নারীরা বিভিন্নভাবে ইভ টিজিং এবং যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। নারী দিবস উদযাপন করে এসব অবস্থার উন্নতি করা না গেলেও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে নারী নির্যাতন অনেক হ্রাস পেয়েছে। নারীর নিরাপদ কর্ম পরিবেশ, কর্মঘণ্টা, মজুরি ইত্যাদি বিষয় নিশ্চিত করা গেছে অনেক ক্ষেত্রেই। সারাবিশ্বে নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে এই দিবসটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। নির্যাতন প্রতিরোধ এবং নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে নারী উন্নয়ন সম্ভব। কিন্তু বিভিন্ন দেশে এ ক্ষেত্রে এখনও বহু বাধা রয়েছে। এই বাধাগুলির মধ্যে প্রধান হলো-

- নারী উন্নয়নের প্রথম এবং প্রধান বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে সব সময় পুরুষের অধীন এবং ছোট করে দেখা হয়।

- সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে না। এটিও নারী উন্নয়নের পথে এক বড় অন্তরায়।

- নারী যদি শিক্ষার আলোয় আলোকিত না হয় তবে সে সচেতন হয় না। তার আয় বাড়ে না। ফলে সে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়। এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়।

- নারীর ক্ষমতায়ন না থাকা।

- নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকা।

- কৃষিভিত্তিক সমাজ।

নারী উন্নয়নে করণীয়: নারী উন্নয়ন বলতে নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং কাজের যথাযথ মূল্যায়নকে বুঝানো হয়। নারী উন্নয়নে সমাজ ও রাষ্ট্রকে একসাথে কাজ করতে হবে। এজন্য করণীয় হলো-

- নারীর প্রধান শক্তি হলো শিক্ষা। নারীশিক্ষার বিস্তার ঘটলে নারীর কর্মসংস্থান হবে, আয় বাড়বে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে। তাই নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিৎ নারী শিক্ষা বিস্তার।

- নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে নারীর উন্নয়ন সাধন করা সম্ভব।

- নারী-পুরুষের বিদ্যমান বৈষম্য দূর করা।

- নারীর নিরাপদ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।

- রাজনৈতিকভাবে নারীর ক্ষমতায়ন করা।

- নারী স্বার্থের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।

- নারীর উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সহায়ক সেবা প্রদান করা ইত্যাদি।



দিবসটির তাৎপর্য: বিশ্বজুড়ে নারীর অধিকার ও নারীদের অগ্রাধিকার একটি বহুল আলোচিত বিষয়। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ছিল নারীদের অধিকার, বিশেষত কর্মজীবী নারীদের অধিকার আদায়ের প্রথম প্রচেষ্টা। এর সূত্র ধরে নারীদের প্রতি বৈষম্য দূরীকরণে সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন গোষ্ঠীর। জাতিসংঘের মাধ্যমে সাক্ষরিত হয়েছে বিভিন্ন চুক্তি ও সনদ। নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এসব চুক্তি ও সনদ কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে। অনেক ক্ষেত্রে নারীর সুরক্ষায় এসব চুক্তি-সনদ আইনে পরিণত হয়েছে। বাধ্য করেছে মালিকপক্ষ এবং সরকারকে নারীদের দাবী মেনে নিতে। তাই সমালোচনা থাকলেও আন্তর্জাতিক নারী দিবসের তাৎপর্য অপরিসীম।

উপসংহার: আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস। নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ করতে পারি, তবেই দিবসটির উদযাপন সার্থক হবে।





বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ বাংলা রচনা




বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ

ভূমিকা :– বিজ্ঞান কি সকলের জন্য ? বিজ্ঞান কি মানুষকে সার্বিক মুক্তির পথ দেখাতে পেরেছে  ? তা কি মানুষকে কিত্রিম করে দিচ্ছে না ? এসব প্রশ্ন বর্তমানে প্রতিভাত হচ্ছে । কেননা বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ধনী হচ্ছে আরো ধনী । শিল্পাঞ্চলে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হচ্ছে , মানুষ হয়ে যাচ্ছে যন্ত্র । গান্ধীজি বলেছিলেন – " যন্ত্র পাপ " । কিন্তু রবীন্দ্রনাথের মতে , যন্ত্র যদি মানব কল্যাণে নিয়োজিত হয় তবে তা পাপ নয় । তবে বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে যেভাবে দেশে দেশে পরমাণু শক্তি ও যুদ্ধাস্ত্র তৈরি হচ্ছে , তার ক্ষতিকর দিক গুলিকে আমাদের ভাবতে হবে । মনে রাখতে হবে , পরমাণু শক্তি দিয়ে আর যেন হিরোশিমা – নাগাসাকি তৈরি না হয় । পরমাণু শক্তি কাজে লাগিয়ে দেশে দেশে যেন হিংসাক্ত কাজ করে সন্ত্রাসবাদ না ছড়ানো হয় । বিজ্ঞানের শক্তিতে মানুষ যেন বলদর্পী না হয় । বিজ্ঞানকে স্বাস্থ্যসিদ্ধির কাজে লাগাতে গিয়ে অনেকেই আজ যান্ত্রিক হয়ে উঠেছে । দেখা দিচ্ছে অবিশ্বাস , হিংসা আর পরশ্রীকাতরতা । মনে রাখতে হবে , বিজ্ঞানের শক্তি ততটাই যতটা সে কল্যাণমুখী ।




প্রগতির ক্ষেত্রে বিজ্ঞান :– আগুন জ্বালাবার মধ্যে দিয়েই বিজ্ঞানের যাত্রার সূচনা । এরপর বিজ্ঞান সৃষ্টি করে চলেছে বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কার । বিজ্ঞানের জন্যই তৈরি হয়েছে ছাপার মেশিন । এই ছাপা বই আমদের শিক্ষার কাজে প্রধান অবলম্বন । উচ্চতর শিক্ষার জন্য বিজ্ঞানের তৈরি বিভিন্ন যন্ত্রপাতি , ল্যাবরেটরীর শিক্ষাথীদের এক স্থিতিদায়ক জায়গায় নিয়ে গেছে । অন্ধদের জন্য বিজ্ঞান বসে থাকেনি । তারা যাতে শিক্ষিত হতে পারে তারই জন্য ১৯০০ সালে বিজ্ঞানী স্ট্রাশম্যান আবিষ্কার করেন ব্রেইল পদ্ধতি । তাছাড়া মস্তিষ্কের অস্ত্র প্রচার , হৃৎপিণ্ড পরিবর্তন প্রভুতি ক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের যাদুকরী অবদানের কথা অস্বীকার করা যায় না । কৃত্রিম উপগ্রহ যেমন ইনসাট – ১ এ , ইনসাট – ১ বি প্রভুতির মাধ্যমে দুর – দূরান্তের বিভিন্ন খবরা খবরও জানতে পারি । এই সমস্ত উপগ্রহের দ্বারা আমরা বাড়িতে বসে খেলা ধুলাও দেখি ।




সমাজের সবত্র বিজ্ঞানের দান :– সভ্য সমাজের যে কোন ক্ষেত্রে চোখ মেললেই দেখা যায় , সভ্যতার রন্ধে রন্ধে বিজ্ঞানের অবদান । গ্রামের মাঠের মধ্যে দিয়ে পথে চলছে বাস , লোরী , ট্যাক্সি , স্কুটার ইত্যাদি । পথের দুপাশে বৃহত বৃহত অট্টালিকা । বাড়িতে বাড়িতে আলো জ্বলছে , পাখা ঘুরছে । গ্রামের মধ্যে ও মিলে তৈরী হচ্ছে কাপড় , কৃষকরা ব্যাবহার করছে লাঙ্গলের পরিবর্তে পাওয়ার টিলার , ট্র্যাক্টর , করছে রাসায়নিক সার । বিজ্ঞানকে বাদ দিয়ে গভীর অরন্য , নির্জন সমুদ্র এবং এমনকি নিস্তব্ধ হিমবাহে পযন্ত চলবার জো নেই । কৃষি , শিল্প , শিক্ষা , যানবাহন , আমোদ – প্রমোদ , খেলা ধুলা সব ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানের দান । বিজ্ঞান আজ মানব সভ্যতায় এনেছে যুগান্তর । সভ্যতার ঊষালগ্নে মানুষ ছিল অরন্যচারি ও গুহাবাসী । কিন্তু সে সময়ে মানুষকে বিরুদ্ধ শক্তির সঙ্গে পদে পদে সংগ্রাম করতে হয়েছে । কিন্তু বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কারে মানবসভ্যতার সুরম্য ইমারত আজ প্রতিষ্ঠিত । তবুও বলবো , বিজ্ঞানের উন্নতি সব ক্ষেত্রে মানব কল্যাণে নিয়োজিত হয়নি । বিজ্ঞানের অভিশাপের ফলও তাই যত্রতএ । তাই এখন প্রয়োজন বিজ্ঞানের কুফল গুলি দূর করে তার সুফল গুলিকে আপামর জনসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া । তৃনমুলস্তরে বিজ্ঞানের সুযোগ – সুবিধাকে পৌঁছে দেওয়া ।





শান্তির ক্ষেত্রে বিজ্ঞান :– বিজ্ঞান তার বহুল আবিষ্কারের মধ্যে দিয়ে মানবজীবনকে দান করেছে প্রশান্তি । কিন্তু বর্তমান সভ্যতায় বিজ্ঞানের আবিষ্কার ভয়ানক মারনাস্ত্র । যা নিমিষে ধ্বংস করে দিতে পারে কত অমূল্য তাজা জীবন । বিজ্ঞান তৈরি করেছে পরমাণু বোমা , রাসায়নিক বোমা , যা যুদ্ধপ্রিয় দেশগুলি নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করছে এবং পৃথিবী থেকে শান্তির নিশান মুছতে চাইছে । কিন্তু চুলচেরা বিশ্লেষণে দেখা যায় , বিজ্ঞানীরা ঐ সমস্ত পরামানবিক অস্ত্রশস্ত্র আবিষ্কার করলেও প্রকৃত দায়ী কিন্তু প্রয়োগকর্তারাই । পরমাণু বোমার ধ্বংসস্তূপ রূপ আমরা জানতে পারি হিরোশিমা ও নাগাসাকি থেকে – আজও যেখানে বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হয় । তাই মর নাস্ত্র আবিষ্কার বন্ধ করে বিজ্ঞান আজ পৃথিবীর বুকে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট হয়েছে ।



অনুসরণে লেখা যায় :– বিজ্ঞানের শান্তি ততটাই যতটা সে কল্যাণমুখী ।




ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য বাংলা রচনা




ভূমিকাঃ “আমরা শক্তি আমরা বল/ আমরা ছাত্রদল/ মোদের পায়ের তলায় মূর্চে তুফান/ ঊর্ধ্বে বিমান ঝড়-বাদল/ আমরা ছাত্রদল।” কাজী নজরুল ইসলামছাত্ররাই একটি দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের দিকেই তাকিয়ে থাকে দেশ ও সমাজ। তারা ভোরের শিশির, প্রভাতের আলোর মতো নবজীবনের দ্যুতি ছড়ায়। তারা তাদের কর্মে দেশ ও সমাজের সব অনাচার, অবিচার, অসঙ্গতি দূরে ঠেলে দেয়। তাদের মধ্যে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। তারা পারে না এমন কাজ পৃথিবীতে নেই। ছাত্রসমাজ জেগে উঠলে পুরো জাতি, দেশ ও পৃথিবী জেগে উঠে। তারা তাদের সংগ্রাম দিয়ে যেমন দেশকে সংঘাত মুক্ত করে তোলে, তেমনি নৈতিকতা, শিষ্টাচার, সৌজন্যতা দিয়ে দেশকে সুখী ও সুন্দর করে তোলে।

ছাত্রজীবনঃ অধ্যায়নের জীবনটাই ছাত্রজীবন। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে দেশের বাইরে বিভিন্ন গবষেণামূলক অধ্যয়নের সবটুকুই ছাত্রজীবনের অন্তর্ভুক্ত। একজন ছাত্র কোনো কিছুতেই পিছপা হয় না। ছাত্রজীবন মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। ছাত্রজীবনেই মানুষ ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত গড়ে তোলে। জীবনকে প্রাণপ্রাচুর্যে ভরে তোলার শিক্ষা মানুষ ছাত্রজীবন থেকে পায়। বদান্যতা, সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা, নিয়মানুবর্তিতা, দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ, মহানুভবতার শুরু ছাত্র জীবন থেকেই। প্রতিটি ছাত্রই দেশগড়ার হাতিয়ার। ভবিষ্যতে তারাই দেশের নেতৃত্ব দিবে। M.K Gandhi বলেন, "The students are the Future leaders of the country who could fullill country's hopes being capable."

ছাত্রদের দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ “ছাত্র নং অধ্যয়নং তপ” এটিই ছাত্রদের মূলমন্ত্র। সংস্কৃত এই কথাটির অর্থ- অধ্যয়নেই ছাত্রদের একমাত্র তপস্যা। ছাত্রজীবন মানেই জ্ঞান-বিজ্ঞানের জগৎ। যেখান থেকে ছাত্ররা প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শিখবে। আর এ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে কর্মমুখী জীবনে প্রবেশ করবে। স্বাস্থ্যকর, মানসম্পন্ন, সুন্দর পরিবেশে কাজ করতে চাইলে ছাত্রজীবন থেকেই সেই মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। ছাত্রজীবনে পড়াশোনার কোনো বিকল্প নেই। তার পাশাপাশি মানুষ্যত্ববোধও অর্জন করতে হবে। শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে। শিক্ষকের আদেশ পালন করলে একটি ছাত্র অবশ্যই ভালো গুণের অধিকারী হতে পারবে। কেননা শিক্ষকই একটি ছাত্রকে সৎ ও মেধাবী করে তোলে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, "None but those who have the spirit of forbearance are fit to be teaehcr." তাই শিক্ষককে সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে আসীন করতে হবে। ছাত্রদের অন্যতম প্রধান কর্তব্য শুধুমাত্র পাঠ্যপুস্তকে সীমাবদ্ধ না থাকা। পাঠ্যপুস্তকের বাইরেও অনেক কিছু শেখার রয়েছে যা তাদেরকে প্রকৃত জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করবে।

সামাজিক ক্ষেত্রে ছাত্রসমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্যঃএকটি দেশের সচেতন নাগরিক হচ্ছে ছাত্রসমাজ। অধ্যয়ন ছাত্রদের মূল লক্ষ্য হলেও সামাজিক ক্ষেত্রে তাদের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। তারাই দেশকে সঠিক পথ অনুসরণে সহায়তা করতে পারে। আমাদের দেশে এমন অনেক দরিদ্র সুবিধাবঞ্চিত পরিবার রয়েছে যেখানে একটি মাত্র সদস্য শিক্ষিত। সেই সদস্যটি পুরো পরিবারে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয় এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলে। শুধু পরিবার কিংবা সমাজ নয় ছাত্রসমাজকে পুরো জাতির নিরক্ষরতা দূরীকরণে সহায়তা করতে হবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার মারাত্মক আকার ধারণ করছে সেসব দেশের ছাত্রসমাজের উচিত সংঘবদ্ধভাবে জনগণকে পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে এবং অধিক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কুফল সম্পর্কে সচেতন করে তোলা। সমাজকে এবং শিক্ষাঙ্গনকে সন্ত্রাসমুক্ত করার দায়িত্ব ছাত্রদেরই কাঁধে নিতে হবে। আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামোর কারণে শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান দেওয়া সম্ভব হয় না ফলে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু ছাত্রসমাজের উচিত নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি করা। শিক্ষিত যুবকরা যদি কৃষি কাজ, মৎস্য চাষ, পশুপালন, নার্সারি ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাদের মেধা ও শ্রমকে কাজে লাগায় তাহলে দেশের উন্নয়ন যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি বেকারত্বও হ্রাস পাবে।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ ছাত্রসমাজ অনাচার, অবিচার, অত্যাচার ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সবসময়ই সোচ্চার। আদর্শগতভাবেই তারা রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। রাজনীতির বিষবৃক্ষের মূলোৎপাটন করা ছাত্রদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। যুগে যুগে ছাত্রসমাজ দেশের স্বাধীনতা অর্জনে এবং স্বাধীনতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে। শিক্ষিত, ব্যক্তিত্ববোধসম্পন্ন ছাত্রসমাজ কখনো পরাধীনতার গ্লানি বয়ে বেড়াতে চায় না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ছাত্রদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। তাছাড়া মাতৃভাষার জন্য তারা যে ত্যাগ স্বীকার করেছে তা ইতিহাসের পাতায় বিরল। ১৯৬২ সালের হামিদুর রহমানের শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রসমাজ গৌরবময় ভূমিকা পালন করেছিল। তবে বর্তমানে ছাত্ররা রাজনীতির প্রকৃত আদর্শ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে সন্ত্রাসবাজি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন দুষ্কৃতিমূলক কাজে জড়িয়ে নিজেদের মেধাকে নষ্ট করে ফেলছে।

পারিবারিক ক্ষেত্রে দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ "Charity begins at home" ছাত্ররা পরিবারের কাছ থেকে যেমন অনেক কিছু পায় তেমনি পরিবারের প্রতিও তাদের অনেক দায়িত্ব থাকে। পরিবারের সকলেই তাদের কাছ থেকে ভালো আচার ব্যবহার প্রত্যাশা করে। আব্বু-আম্মু এবং পরিবারের বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা, ছোটদের প্রতি স্নেহ করা তাদের কর্তব্য।

দেশাত্মবোধঃ ছাত্ররা দেশপ্রেমকে তাদের অন্তরে লালিত করে। তারা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের জীবন পর্যন্ত বাজি রাখতে পারে দ্বিধাহীনভাবে। ছাত্রদের দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকায় তারা দেশকে আরও বেশি আপন করে নিতে পারে। ছাত্রসমাজ মানেই তরুণ সমাজ। প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর এই তরুণসমাজকে দেশের ও দেশের মানুষের সেবায় মগ্ন থাকতে হবে। তাদের মধ্যে কোনো ক্লান্তি, কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা উচিত নয়। বন্যা-দুর্গত, ঝড়ে কবলিত এলাকায়, দুঃস্থ মানুষের পাশে সবসময় তাদের সেবার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।

নিয়মানুবর্তিতাঃ "Work while you work, play while you play, And that is the way to be happy;"-এ নীতি মেনে চললে ছাত্ররা তাদের সাফল্যের চরম শিখরে আরোহণ করতে পারবে। ছাত্রদের প্রথম কাজ পড়াশোনা। কখনোই তাদের একদিনের কাজ অন্যদিনের জন্য রেখে দিলে চলবে না। ব্যক্তিজীবনে, সমাজ জীবনে, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ছাত্রদের অবশ্যই নিয়মানুবর্তিতার সাথে সুষ্ঠুভাবে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হবে। ছাত্রজীবন থেকেই নিয়মানুবর্তিতায় বেড়ে উঠলে কর্মজীবনও এর প্রভাব পড়বে।

নৈতিক মূল্যবোধ ও শিষ্টাচারঃ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের শুধু পরীক্ষা পাসের শিক্ষাই দেওয়া হয় না। তাদেরকে নৈতিক মূল্যবোধ এবং শিষ্টাচারের শিক্ষা দেয়া হয়। নৈতিক মূল্যবোধ ছাত্রকে সৎ, কর্তব্যনিষ্ঠ, নিয়মনিষ্ঠ, পরিশ্রমী সর্বোপরি সুন্দর চরিত্রের অধিকারী করে তোলে। প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠার জন্য চাই নৈতিকতা। শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ ছাত্রসমাজকে নম্র-ভদ্র ও নির্মল চরিত্রের অধিকারী করে। পরিবারের সকলের প্রতি, শিক্ষকদের প্রতি, সহপাঠীদের প্রতি মার্জিত আচরণে ছাত্ররা সকলের কাছ থেকে ভালোবাসা, দোয়া এবং সাহায্য-সহযোগিতা পায়। নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন এবং শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধসম্পন্ন ছাত্রসমাজই পারে ভবিষ্যতে জাতির সুষ্ঠু নেতৃত্ব দিতে। তাই ছাত্রদের শিষ্টাচার ও নৈতিক মূল্যবোধের গুণে অর্জন করতে হবে।

উপসংহারঃ দেশ ও জাতি সৎ, চরিত্রবান, নিয়মনিষ্ঠ, কর্তব্যপরায়ণ, সৌজন্যবোধসম্পন্ন পরিশ্রমী ছাত্রসমাজের কামনা করে। সাম্প্রতিককালে ছাত্রসমাজ আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে বিভিন্ন ধরণের অপরাধমূলক কাজ করছে। ছাত্র-রাজনীতির নামে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে। যা দেশ ও জাতির কাছে মোটেও কাম্য নয়। এভাবে চলতে থাকলে জাতি শেকড়হীন হয়ে পড়বে। তাই ছাত্রসমাজের উচিত তাদের প্রকৃত আদর্শে আলোকিত হওয়া। যে শিক্ষা ও মূল্যবোধ ছাত্ররা অর্জন করে ভবিষ্যতে তা পরিপূর্ণ ভাবে কাজে লাগানো, ছাত্রদের প্রকৃত উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।





পরিবেশ উন্নয়নে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা বাংলা রচনা







ভূমিকা :– বানিজ্যিক বাজার ও কাঁচা মালের প্রভূত সম্ভাবনার ক্ষেত্র ভারতবর্ষে থাকায় ভারতবর্ষ বিদেশিদের দ্বারা বারবার লুণ্ঠিত হয়েছে । বর্তমানে বিশ্বয়নের কুফলের ফলে সেই লুণ্ঠনের পরিমাণ আরো বেড়েছে । যে ভারতের পরিবেশ ও সংস্কৃতি বিশ্বের আঙিনায় নিজেকে প্রমাণ করে নিজেদের গৌরব প্রতিষ্ঠা করেছে , সেই পরিবেশ ও সংস্কৃতি আজ লুণ্ঠিত । আমাদের দেশের নিমগাছ , হলুদগাছ , বাসমতি চাল , অবিশ্বাস্য হলেও আর আমাদের নেই , এমনকি আমাদের দেশের মাটি আজ অপরের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত । ভারতের আকাশে , বাতাসে দূষণের ছড়াছড়ি । ভারতের মাটিতে যে চাষ হয় তা নিয়ন্ত্রণ করে ধনী দেশ , আর সেই সব ধনী দেশ যে সব মারাত্মক গ্যাস উৎপাদন করে, তা পৌঁছে যায় আমাদের মতো গরীব দেশগুলিতে । সেই প্রেক্ষিতে পরিবেশ উন্নয়নে দেশের ছাত্র সমাজের একটি বিশিষ্ঠ ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না ।



আইনগত দিক :– ভারতীয় সংবিধানের ৫১ ( ক ) ধারায় ভারতীয় নাগরিকদের ভারতীয় পরিবেশ রক্ষার কথা বলা হয়েছে । ছাত্র ছাত্রী ভারতীয় নাগরিক হিসেবে সেই দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ । আসলে লোকসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় নাগরিকের চেতনা ব্যাক্তিগত স্বার্থ দেখতে গিয়ে জাতীয়  স্বার্থ তথা পরিবেশগত দায়বদ্ধতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে , দেখা দিচ্ছে নানান দূষণ । সেক্ষেত্রে সচেতন নাগরিক হিসেবে পরিবেশ রক্ষায় ও উন্নয়নে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য ।



পরিবেশ সচেতনায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা :– সচেতনতাই পারে যে কোন উন্নয়নকে গতিশীল করতে । সেই উন্নয়নে ছাত্র ছাত্রীকেই অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে । সেজন্য যা করতে হবে তাহলো – ক) পারিপাশ্বিক পরিবেশ সমন্ধে নিজেদের সচেতন হওয়া । খ) জন সাস্থ্য সম্পকে অবহিত হয়ে , সেই বিষয়ে প্রচার করা । গ) সবরকম দূষণ ও তার কারন সমন্ধে পারস্পরিক আলোচনা করে যথাসম্ভব তা বন্ধ করার জন্যে কর্মসূচি গ্রহণ । ঘ) নিজেদের বাড়িতে পয়ঃ প্রণালী ঠিক রাখা । ঙ) যে সব কারণে ব্যাক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি বিঘ্নিত হয় সেসব কাজ না করা । আহার , নিদ্রা , পরিষ্কার – পরিছন্নতা , বিষয়ে সচেতন হওয়া । সুষম খাদ্য সমন্ধে চেতনা গড়ে তোলা । চ ) অবৈজ্ঞানিক মানসিকতা ও কুসংস্কার দূরীকরনে সচেষ্ট হওয়া । ছ) ঘর গৃহস্থালির বজ্য পদার্থ যেখানে সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা । জ) হাসপাতাল , নার্সিংহোম বি, স্কুল , কলেজ প্রভুতি জায়গায় সবসময় পরিচ্ছন্ন রাখা । ঝ) ধূমপান , মদ্যপান , ড্রাগ সেবন প্রভুতি থেকে বিরত থাকা । স্কুল , কলেজ , রাস্তাঘাট , পার্ক ,বাস , ট্রাম , ট্রেন , প্রভুতি জায়গায় খাবারের পরিত্যক্ত প্যাকেট না ফেলা । বাড়ির সংলগ্ন পরিবেশের পক্ষে উপযোগী – গাছ লাগানো  ও পুরানো গাছ না কাটা । রোগ প্রতিরোধে গাছপালার যে ভূমিকা আছে , সেই সব গাছ যে আমদের বন্ধু তা জেনে , সবাইকে জানানো ।