Breaking News

বাঙালির চিত্রকলা চর্চার ধারায় যামিনী রায়ের ভূমিকা কতখানি তা বুঝিয়ে দাও ।

 


উত্তর :- ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দের ১১ এপ্রিল বাঁকুড়া জেলার বেলিয়াতোড় গ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে যামিনী রায়ের জন্ম হয় । তাঁর পিতা রামতারণ রায় একজন শৌখিন শিল্পী ছিলেন । যামিনী রায়ের উপর মূলত তাঁর এবং বেলিয়াতোড়ের নিসর্গ আর জীবনের গভীর প্রভাব লক্ষ করা যায় । গ্রামে মাটির মূর্তি শিল্পীদের সঙ্গে সময় কাটিয়েই তাঁর শিল্পীজীবনের সূচনা হয় । ১৯০৬ থেকে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি গভর্নমেন্ট আর্ট স্কুলে শিক্ষাগ্রহণ করেন , ফাইন আর্ট বিভাগে ইউরোপীয় অ্যাকাডেমিক রীতির চিত্রবিদ্যা শেখেন । ১৯১৮ - ১৯ থেকে তাঁর ছবি ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টের পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে । গ্রামবাংলার নিসর্গচিত্র , আদিবাসী জীবন ও জীবিকা , ধর্মীয় সম্প্রদায়িকতা ও ধর্মকাহিনিনির্ভর ছবি আর পটচিত্র অঙ্কনে তিনি ছিলেন অনবদ্য । ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে তাঁর ছবি সর্বভারতীয় প্রদর্শনীতে ভাইসরয়ের স্বর্ণপদক লাভ করে । ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘পদ্মভূষণ’ উপাধিতে ভূষিত হন । আর্ট স্কুলে গিলার্ডি সাহেবের কাছে তেলরঙে আঁকায় অভ্যস্ত হয়ে উঠলেও পরবর্তীকালে যামিনী রায় জলরঙে অসামান্য সব ছবি এঁকেছেন । কালীঘাটের পটুয়াদের শৈলীর দ্বারা তিনি বিশেষভাবে প্রভাবিত হন । ফরাসি চিত্রধারার মধ্যে যাঁরা সরলরেখার পরিবর্তে ছবিতে ‘কার্ভ’ ব্যবহার করেন , তাঁদের চিত্রকলা তাঁকে অনুপ্রাণিত করে । সেজান , ভ্যান গগ আর গগ্যার মতো পোস্ট ইম্প্রেশনিস্ট শিল্পীদের ছবি দেখে তিনি আকৃষ্ট হয়েছেন । ছবি আঁকার ক্ষেত্রে তাঁর মূল লক্ষ্যটিকে তিনি নিজেই নির্দিষ্ট করেছেন , তা যেন ‘অন্য সকলের ছবির থেকে আলাদা হয় — তা সে ভালোই হোক বা মন্দই হোক ।’ পরবর্তী শিল্পীদের অনেকেই তাঁর দেখানো পথে নিজের নিজের চিত্রভাষা গড়ে তুলতে লোকশিল্পের দিকে ঝুঁকেছেন ।

 

No comments