বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ঋত্বিক ঘটকের অবদান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো ৷
উত্তর > >> বাংলা চলচ্চিত্রের বিস্ময়কর প্রতিভা ঋত্বিক ঘটক (৪.১১.১৯২৫–৬.২.১৯৭৬) । বিমল রায়ের সহযোগী হিসেবে চলচ্চিত্র সৃষ্টিতে তাঁর হাতে খড়ি । ১৯৫২ সালে তৈরি হওয়া ‘নাগরিক’ ছবিটি আর্থিক কারণে মুক্তি পায়নি । ১৯৫৭ সালে মুক্তি পায় ‘অযান্ত্রিক’। তিনি পরিচিতি লাভ করেন সফল চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে । তাঁর পরিচালিত ছবির তালিকা — ‘নাগরিক’ (১৯৫২), ‘অযান্ত্রিক’ (১৯৫৭), ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’ (১৯৫৯), ‘মেঘে ঢাকা তারা’ (১৯৬০), ‘কোমল গান্ধার’ (১৯৬১), ‘সুবর্ণরেখা’ (১৯৬২), ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ (১৯৭৩), ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’ (১৯৭৪) । সংখ্যায় খুবই অল্প তাঁর পরিচালিত ছবির তালিকা , কিন্তু প্রতিটি ছবিই শিল্পনিষ্ঠ এবং নতুনত্বের সন্ধানী । তাঁর ‘মেঘে ঢাকা তারা’ প্রতিটি বাঙালি নারীর আত্মদর্শন । আসলে ঋত্বিক ঘটকের ছবিগুলির দুটি প্রধান রূপাদর্শ চোখে পড়ে । একটি হল অবিভক্ত বাংলার স্মৃতি , দেশবিভাগের যন্ত্রণা । এর মধ্যে অন্তর্নিহিত থাকে পূর্ববঙ্গের জন্য একরাশ নস্টালজিয়া । অন্যটি বাংলার মেয়েরা , যাঁরা মহান এবং সর্বংসহা হয় । ঋত্বিক ঘটক সম্পর্কে সত্যজিৎ রায় বলেছেন — “ঋত্বিক মনেপ্রাণে বাঙালি পরিচালক , বাঙালি শিল্পী , আমার থেকেও অনেক বেশি বাঙালি । আমার কাছে সেইটেই তার সবচেয়ে বড়ো পরিচয় ।” ঋত্বিকের ‘অযান্ত্রিক’ ছবিটি সম্পর্কে তাঁর উক্তি — “ঋত্বিক এই ছবির বিষয় নির্বাচনে অসম সাহসের পরিচয় দিয়েছিলেন , ঠিক সেই জাতীয় ছবি তাঁর আগে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে কেউ করেনি ।” আর এটাই ঋত্বিকের বিশেষত্ব , এখানেই তিনি ব্যতিক্রমী ।

No comments