বাউল সংগীত সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো ।
উত্তর >> বাউল সাধনা বিশ্বের অন্যতম মরমিয়া সাধনা । এই সাধকেরা বৈদিক হিন্দু এবং শরিয়তি ইসলাম থেকে বহুদূরে অবস্থান করেন । আসলে তারা সংস্কারমুক্ত এবং ধর্ম নামক প্রতিষ্ঠান থেকে সরে থাকেন । বাউলের মরমিয়া প্রেম আসলে রূপের মধ্যে অরূপ সাধনা । রূপ বা দেহ সাধনার মাধ্যমে অরূপ অর্থাৎ নিরাকার পরমাত্মার সন্ধানই বাউল সাধনার মূলমন্ত্র । বাংলার লৌকিক ধর্ম ও লোকজীবন পরিচয়ের অন্যতম শিল্পমাধ্যম এই বাউলগান । এই গানে বাংলার আধ্যাত্মিকতা , আচার-অনুষ্ঠান , শরীরসাধনা তথা দেহবাদ , জাদুবিদ্যাচর্চা সমস্ত কিছুই প্রত্যক্ষ করা যায় ৷ তাঁদের গান একাধারে সাহিত্য ও সংগীত হিসেবে একটি স্বতন্ত্র স্থান অধিকার করে আছে । বাউলরা কেবল ধর্মীয় সম্প্রদায় নয় , তাঁরা গায়ক সম্প্রদায়ও । তবে তাঁদের ধর্মসাধনার মাধ্যম গান । অক্ষয়কুমার দত্ত বাউলদের ‘উপাসক সম্প্রদায়’ বলে উল্লেখ করেছেন । এঁরা গেরুয়া বস্ত্র পরিধান করেন , হাতে একতারা । নির্দিষ্ট আখড়ায় তাঁরা সমবেত হন । তাঁদের সাধনসঙ্গিনীও থাকে । যদিও তাঁরা আত্মভোলা , বিবাগী , ঘরছাড়া এবং বৈরাগ্যপন্থী । তাঁরা গান গেয়ে ‘মনের মানুষে’র সন্ধান করেন । গৃহহীন বাউল ভিক্ষাজীবী , গৃহী বাউল জাত পেশায় নিয়োজিত থেকে জীবিকা নির্বাহ করেন । বাউলরা ভাবের পাগল । তাঁদের প্রেমভাবই মুখ্য । বাউলদের পাগল , ক্ষ্যাপা বা গোঁসাইও বলা হয় । বাউলদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ফকির লালন শাহ । তিনি প্রতিভাবান কবি । দু-আড়াই হাজার গান রচনা করেন । রবীন্দ্রনাথ তাঁর গানে মুগ্ধ ছিলেন । তিনি হিন্দু না মুসলমান সেই বিতর্ক আজও চলছে । আসলে তিনি সর্বসংস্কারমুক্ত এক মরমিয়া সাধক । তাঁর গানে পাই—“সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে , লালন কয় জাতের কীরূপ দেখলাম না এই নজরে ।” তাঁর একটি বিখ্যাত গান — “খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়/ ধরতে পারলে মনো বেড়ি দিতাম তাহার পায় ।”

No comments