‘শিকার’ কবিতায় ‘ভোর’ শব্দটি কীভাবে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে আলোচনা করো ।
উত্তর > জীবনানন্দ দাশ তাঁর ‘মহাপৃথিবী’ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া ‘শিকার’ কবিতায় রাত্রিশেষে ‘ভোর’ হওয়ার ঘটনাকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণভাবে ব্যবহার করেছেন । কবিতার প্রথম অংশে ‘ভোর’ যেন নির্মল প্রকৃতির আত্মপ্রকাশের উপযুক্ত পটভূমি । তখন আকাশের রং “ঘাসফড়িঙের দেহের মতো কোমল নীল” ; চারিদিকের পেয়ারা ও নোনার গাছের রং টিয়ার পালকের মতো সবুজ । সেই ভোরেই আকাশে জেগে থাকা একমাত্র তারাটি কবির মনে বিপরীত অনুভবের ভালোলাগা তৈরি করে । এই ভোরেই বিবর্ণ হয়ে যায় হিমের রাতে দেশোয়ালিদের জ্বালানো আগুনের শিখা , আগের রাতে যা ছিল মোরগ ফুলের মতো লাল , রাত পোহানোর পর ভোর এলে আগুনের সেই রং আর কুমকুমের মতো থাকে না । নিভে-আসা সেই আগুন হয়ে যায় অল্পপ্রাণ শালিকের হৃদয়ের বিবর্ণ ইচ্ছার মতো । সকালের আলোয় টলমল শিশিরে ঝিলমিল করে ওঠে চারপাশের বন ও আকাশ । এই ভোরের পটভূমিতেই আগমন ঘটে একটি ‘সুন্দর বাদামী' হরিণের । তার কচি বাতাবি লেবুর মতো সুন্দর , সুগন্ধি সবুজ ঘাস ছিঁড়ে খাওয়ায় বা নদীর জলে ঘুমহীন , ক্লান্ত শরীর ভেজানোর মধ্য দিয়ে জীবনের স্বচ্ছন্দ বিচরণকেই প্রত্যক্ষ করা যায় কিন্তু সুন্দরের এই সহজ প্রকাশকে ছিন্নভিন্ন করে দেয় একটি ‘অদ্ভুত শব্দ’। নদীর জল এরপর মচকাফুলের মতো লাল হয়ে ওঠে হরিণের রক্তে । শিকারি মানুষের লোভের শিকার হয়ে হরিণকে চলে যেতে হয় নিস্পন্দ নিরপরাধ ঘুম-এর দেশে । তৈরি হয় ‘ভোর’-এর আর এক ছবি । এই ভোরকে প্রকৃতি লালন করেনি; কিংবা সারারাত চিতাবাঘিনীর হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে হরিণও এই ভোরের জন্য অপেক্ষা করেনি । ক্ষুধার ও হিংস্রতার সাক্ষী হয়ে থাকে এই ভোর ।
No comments