Breaking News

‘শিকার’ কবিতাটির প্রথম স্তবকে ব্যবহৃত উপমাগুলি ব্যাখ্যাসহ আলোচনা করো ।

 


উত্তর  >> চিত্ররূপময় কবি জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতাটি কবির ‘মহাপৃথিবী’ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে । কবিতাটি শুরুই হয়েছে একটি ভোরের দৃশ্যকে পটভূমি করে । এই ভোরের রূপময় পরিচয় দিতে গিয়ে কবি জানাচ্ছেন যে , সেই ভোরবেলায় আকাশের রং ঘাসফড়িঙের শরীরের মতো কোমল নীল । ঘাসফড়িঙের সঙ্গে ভোরের আকাশকে তুলনা করায় প্রকৃতির মধ্যে প্রাণের একটি চাঞ্চল্য বা সংযোগ স্পষ্টভাবে অনুভব করা যায় । এই ভোরের বেলায় চারদিকের পেয়ারা আর নোনার গাছ টিয়ার পালকের মতো সবুজ । এই উপমায় গাছের পাতা পাখির পালকের সঙ্গে উপমিত হওয়ায় প্রকৃতিরাজ্যে এল এক ধরনের প্রাণের স্পর্শ এবং গতিশীলতা । একটি তারা তখনও আকাশে জেগে রয়ে গেছে — যেন সে রাতের বিদায়ী অস্তিত্বকে নিজের মধ্যে ধারণ করে রেখেছে । ভোরের এই তারাকে কবি তুলনা করেছেন পাড়াগাঁ-র বাসরঘরে  “সবচেয়ে গোধূলি-মদির মেয়েটির” সঙ্গে । অর্থাৎ তার উপস্থিতিতে কবি ধরে রাখতে চান গ্রামবাংলার মেয়েদের মতো লজ্জা এবং কুণ্ঠাকে । মেয়েটির আচরণের এই কোমলতা আর পেলবতার সঙ্গেই ‘বাসরঘরে’ আর ‘মদির’ শব্দের ব্যবহারে কবি মিশিয়ে দিতে চান এক ধরনের যৌণ মাদকতাও । এরপরে তারাটির উপস্থিতিকে কবি তুলনা করেছেন ‘মিশরের মানসী’র সঙ্গে , যে হাজার হাজার বছর আগে এক রাতে তার বুকের থেকে মুক্তা রেখেছিল কবির নীল মদের গ্লাসে । নীল আকাশের ক্যানভাসে রাত জাগা তারা আর নীল মদের পাত্রে রাখা সাদা মুক্তা যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় এই উপমার মাধ্যমে । একটু আগে গ্রাম্য মেয়ের সঙ্গে তুলনায় যে সহজতা ছিল , তাও ভেঙে যায় এই ঐতিহাসিক আড়ম্বরে । ‘ মিশরের মানসী ’ আর ‘ হাজার হাজার বছর ’ মিলে ছবিটি এভাবেই সর্বজাগতিক এবং সর্বকালীন বিস্তৃতি পায় । 



No comments